অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনা মহামারীর মধ্যে সারাদেশে এবার ৯০ লাখ ৯৩ হাজার গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে। সর্বোচ্চ সংখ্যক ২২ লাখ ৩৯ হাজার কোরবানি হয়েছে ঢাকা বিভাগে এবং সবচেয়ে কম ৩ লাখ ৪৭ হাজার গবাদিপশুর কোরবানি হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে। তবে গরু-মহিষের কোরবানি সবচেয়ে বেশি হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। এই সংখ্যা ১০ লাখ ৭১ হাজার, যা ঢাকা বিভাগের চেয়ে প্রায় ১ লাখ বেশি। অনলাইনে এবার রেকর্ডসংখ্যক ২ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকার ৩ লাখ ৮৭ হাজার গবাদিপশু বেচাকেনা হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ৫ গুণ বেশি। আগামী বছর অনলাইন মার্কেট আরও বড় করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
শনিবার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, এ বছর পবিত্র ঈদ-উল-আজহায় সারাদেশে মোট ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ লাখ ৫৩ হাজার ৬৭৯টি গরু-মহিষ, ৫০ লাখ ৩৮ হাজার ৮৪৮টি ছাগল-ভেড়া ও অন্যান্য ৭১৫টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে। ঢাকা বিভাগে ৯ লাখ ৭৩ হাজার ৮৩৩টি গরু-মহিষ, ১২ লাখ ৬৫ হাজার ৫৬টি ছাগল-ভেড়া ও অন্যান্য ৩৬৩টিসহ মোট ২২ লাখ ৩৯ হাজার ২৫২টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগে ১০ লাখ ৭১ হাজার ২৩১টি গরু-মহিষ, ৮ লাখ ২৮ হাজার ৮৬টি ছাগল-ভেড়া ও অন্যান্য ২০১টিসহ মোট ১৮ লাখ ৯৯ হাজার ৫১৮টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে। এতে ঢাকা বিভাগের চেয়ে প্রায় ১ লাখ বেশি গরু-মহিষ কোরবানি হয়েছে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে। তবে সেই তুলনায় ছাগল-ভেড়ার কোরবানি কম হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ৬ লাখ ১৬ হাজার ৭৩৩টি গরু-মহিষ, ১২ লাখ ১৬ হাজার ২৮৩টি ছাগল-ভেড়া ও অন্যান্য ১২৯টিসহ মোট ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ১৪৫টি, খুলনা বিভাগে ২ লাখ ৩৯ হাজার ১৪৭টি গরু-মহিষ, ৬ লাখ ১৮ হাজার ৪৪৩টি ছাগল-ভেড়া ও অন্যান্য ১১টিসহ মোট ৮ লাখ ৫৭ হাজার ৬০১টি, বরিশাল বিভাগে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬২১টি গরু-মহিষ, ১ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৮টি ছাগল-ভেড়াসহ মোট ৪ লাখ ৬১ হাজার ৯৭৯টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে।
সিলেট বিভাগে ২ লাখ ৯ হাজার ৫৬৯টি গরু-মহিষ, ১ লাখ ৯৯ হাজার ৩৬৪টি ছাগল-ভেড়া ও অন্যান্য ৮টিসহ মোট ৪ লাখ ৮ হাজার ৯৪১টি, রংপুর বিভাগে ৪ লাখ ৯৬ হাজার ২২০টি গরু-মহিষ, ৫ লাখ ৪৮ হাজার ৬৩৯টি ছাগল-ভেড়াসহ মোট ১০ লাখ ৪৪ হাজার ৮৫৯টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১ লাখ ৮০ হাজার ৩২৫টি গরু-মহিষ, ১ লাখ ৬৭ হাজার ৬১৯টি ছাগল-ভেড়া ও অন্যান্য ৩টিসহ মোট ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯৪৭টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে।
সারাদেশের করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে এ বছর অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গবাদিপশু ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও আইসিটি বিভাগসহ অন্যান্য দফতর-সংস্থা, জেলা-উপজেলা প্রশাসন, ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ অন্যান্য বেসরকারী সংগঠন ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে গবাদিপশুর ডিজিটাল হাট পরিচালনা করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে এ বছর অনলাইনে মোট ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫৭৯টি গবাদিপশু বিক্রি হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য ২ হাজার ৭৩৫ কোটি ১১ লাখ ১৫ হাজার ৬৭৮ টাকা। গত বছর অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গবাদিপশু বিক্রি হয়েছিল ৮৬ হাজার ৮৭৪টি, যার আর্থিক মূল্য ছিল ৫৯৫ কোটি ৭৬ লাখ ৭৪ হাজার ৮২৯ টাকা। এ বছর গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫ গুণ বেশি গবাদিপশু অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিক্রি হয়েছে। আগামী বছর অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গবাদিপশুর বেচাকেনার পরিসর আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কাজ করবে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনা মহামারীর মধ্যেও গবাদিপশু উৎপাদন, কোরবানির পশু প্রস্তুতকরণ, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিপণন কার্যক্রম পরিচালনা ও খামারিদের উদ্বুদ্ধকরণ, পশুর হাটে ভেটেরিনারি মেডিক্যাল সেবা প্রদানসহ সুষ্ঠুভাবে কোরবানির সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য সংশ্লিষ্ট সব প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রওনক মাহমুদ। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রাণিসম্পদ খাতের খামারি, উদ্যোক্তা, ডেইরি এ্যাসোসিয়েশনসহ কোরবানির সঙ্গে সম্পৃক্ত সব সরকারী-বেসরকারী দফতর-সংস্থা ও সংগঠনকেও ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।
