ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

একাত্তরের কণ্ঠযোদ্ধা ফকির আলমগীর আর নেই

প্রকাশিত: ০১:২৯, ২৪ জুলাই ২০২১

একাত্তরের কণ্ঠযোদ্ধা ফকির আলমগীর আর নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের কণ্ঠযোদ্ধা, গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর আর নেই। ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে শুক্রবার রাত ১০টা ৫৬ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। এ খবরটি নিশ্চিত করেন তার বড় ছেলে মাশুক আলমগীর রাজিব। গত চারদিন ধরে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন এই শিল্পী। তার ডান ফুসফুসের ক্রমশ উন্নতি হলেও বাঁ ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে শুক্রবার। পাশাপাশি রক্তে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় শঙ্কিত ছিলেন চিকিৎসকরা। তার মধ্যেই রাত সাড়ে ৯টার দিকে কার্ডিয়াক এ্যারেস্ট হলে সব আশা শেষ হয়ে যায়। করোনাভাইরাসের দুই ডোজ টিকা নেয়ার পরও ১৪ জুলাই এই সঙ্গীত শিল্পীর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকলে পরদিন তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। সেখান থেকে তার আর বাসায় ফেরা হলো না। ইউনাইটেড হাসপাতালের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার সাজ্জাদুর রহমান শুভ বলেন, করোনাভাইরাস তো ছিলই। তার মধ্যে কার্ডিয়াক এ্যারেস্টে তার মৃত্যু হয়েছে। রাজিব জানান, সরকারের তরফ থেকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে একটি সূত্রে জানা গেছে, ফকির আলমগীরের প্রথম জানাজা খিলগাঁও পল্লীমা সংসদ চত্বরে বেলা ১১টায় এবং বাদ জোহর ২য় জানাজা শেষে খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হবে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক ও দেশবরেণ্য গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীরের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেন, ফকির আলমগীরের মৃত্যুতে দেশের সঙ্গীত অঙ্গনে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো তা কখনও পূরণ হওয়ার নয়। তার গান তরুণ প্রজন্মের মাঝে দেশপ্রেমের নবজাগরণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। রাষ্ট্রপতি ফকির আলমগীরের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। শুক্রবার আরেক শোকবার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, এ দেশের সঙ্গীতাঙ্গনে বিশেষ করে গণসঙ্গীতকে জনপ্রিয় করে তুলতে তার ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। ষাটের দশক থেকে গণসঙ্গীতের সঙ্গে যুক্ত ফকির আলমগীর ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী ও গণশিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে শামিল হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। স্বাধীনতার পর পাশ্চাত্য সঙ্গীতের সঙ্গে দেশজ সুরের মেলবন্ধন ঘটিয়ে বাংলা পপ গানের বিকাশে ভূমিকা রাখেন ৭১ বছর বয়সী এ শিল্পী। সঙ্গীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সরকার ১৯৯৯ সালে ফকির আলমগীরকে একুশে পদক দেয়। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার কণ্ঠের কয়েকটি গান দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এর মধ্যে ‘ও সখিনা’ গানটি এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ১৯৮২ সালের বিটিভির আনন্দমেলা অনুষ্ঠানে গানটি প্রচারের পর দর্শকদের মাঝে সাড়া ফেলে। গানটি লিখেছেন আলতাফ আলী হাসু। কণ্ঠ দেয়ার পাশাপাশি গানটির সুরও করেছেন ফকির আলমগীর। তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। গণসঙ্গীত চর্চার আরেক সংগঠন গণসঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করা ফকির আলমগীর গানের পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখিও করেন। ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও বিজয়ের গান’, ‘গণসংগীতের অতীত ও বর্তমান’, ‘আমার কথা’, ‘যারা আছেন হৃদয় পটে’সহ কয়েকটি বই প্রকাশ হয়েছে তার। এছাড়া ফকির আলমগীরের মৃত্যুতে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ মন্ত্রিপরিষদের অধিকাংশ সদস্য গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
×