ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চীনে আকস্মিক বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, ৫১ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত: ২২:১২, ২৪ জুলাই ২০২১

চীনে আকস্মিক বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, ৫১ জনের প্রাণহানি

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে চীন। বন্যায় এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫১ জনে পৌঁছেছে। মৃত্যু আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশটির হেনান প্রদেশের ঝেংঝু শহরের বহু সড়ক পানিতে ডুবে দৃশ্যত নদীতে পরিণত হয়েছে। ঘরবাড়ি ও সড়কে চলমান গাড়ি স্রোতের তোড়ে ভেসে যেতে দেখা গেছে। মাত্র তিনদিনের টানা বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় এক দশদিক ২২ বিলিয়ন ইওয়ানের সমপরিমাণ অর্থের সম্পদ নষ্ট হয়েছে। ২০ লাখ লোককে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। উদ্ধার কাজে সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে। চীনের একটি সাবওয়ে ট্রেনে বন্যার পানি ঢুকে শ’ শ’ যাত্রী আটকা পড়ে। উদ্ধারকারীরা ট্রেনগুলোর জানালা ভেঙ্গে এবং ছাদ কেটে যাত্রীদের বের করে আনেন। আপাতত অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ও কয়েকটি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। হেনান প্রদেশে ৯ কোটির বেশি লোকের বসবাস। প্রদেশটিতে আরও কয়েকদিন এ বন্যা অব্যাহত থাকতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস সতর্ক করেছে। স্থানীয়রা বলেছেন, তারা জীবনে কখনও এমন বৃষ্টি দেখেননি। কর্তৃপক্ষ বলছে, এ রকম বন্যার কথা আগে শোনা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও নদীর তীরে বেশি মাত্রায় বাঁধ নির্মাণই এই ধরনের দুর্যোগের কারণ। তারা বলেন, বন্যার অনেক কারণ আছে তবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে এরকম অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়া চীনের ইয়োলো রিভার নদীর অববাহিকায় ব্যাপক বাঁধ নির্মাণের ফলে পানি নেমে যাওয়ার স্বাভাবিক পথগুলো ব্যাহত হওয়ার ফলে এই বন্যা হতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। খবর পিপলস টাইমস, আলজাজিরা ও বিবিসি অনলাইনের। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছে। এই বন্যায় ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রাণহানি ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মানুষের জীবন এবং সম্পত্তির রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হেনান প্রদেশের ওয়াংজংডিয়ান গ্রামে শিশুসন্তানকে বাঁচাতে প্রাণ গেছে এক মায়ের। উদ্ধারকারীরা জানান, প্রবল বৃষ্টি ও বন্যা যখন বাড়িতে আঘাত হানে তখনও সেই মা তার শিশুসন্তানকে নিরাপদে আগলে রাখেন। পরে সেই মায়ের মৃত্যু হলেও শিশু সন্তানকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। শিশুটিকে উদ্ধারের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে শিশুটিকে জীবিত অবস্থায় বের করা হচ্ছে। শিশুটির বয়স তিন থেকে চার মাসের মতো। উদ্ধারের পর শিশুটিকে হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছে, শিশুটি সুস্থ আছে। চীনের পাশাপাশি ইউরোপেও ভয়াবহ বন্যা চলছে। মহাদেশটির কয়েক দেশে বন্যায় অন্তত দুই শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। টানা বৃষ্টিতে জার্মানি, বেলজিয়াম, অস্ট্রিয়া, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডে বন্যা দেখা দেয়। এসব দেশের বহু মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের উদ্ধারে কাজ চলছে। জার্মানির বাভারিয়ার পূর্বাঞ্চলে জরুরী অবস্থা জারি করা হয়। খবরে বলা হয়, জার্মানিতে অনেক আবাসিক ভবন প্লাবিত হয়েছে। বাসিন্দারা তাদের বাসার নিচ তলা ছেড়ে ওপর তলায় চলে যান। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রবল বর্ষণজনিত কারণে বিভিন্ন নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে আরও বেড়ে যেতে পারে। সেখানে কিছু নদীর পানি ধারণার চেয়েও ১ দশমিক ৫ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডি ক্রো বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লায়েনও জার্মান সীমান্তের কাছে পূর্ব বেলজিয়ামের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি এলাকা পরিদর্শন করেন। ইউরোপে কয়েক দশকের মধ্যে এমন বন্যা ও প্রাণহানি দেখা যায়নি। ওই অঞ্চলের নেতারা দুর্যোগের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেন।
×