ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পাহাড়মুখী হচ্ছে রোহিঙ্গারা, সেটেলারদের সঙ্গে মিশে যেতে তৎপর

প্রকাশিত: ২১:৩২, ২০ জুলাই ২০২১

পাহাড়মুখী হচ্ছে রোহিঙ্গারা, সেটেলারদের সঙ্গে মিশে যেতে তৎপর

মোয়াজ্জেমুল হক/জীতেন বড়ুয়া ॥ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রিত রোিহঙ্গারা উখিয়া টেকনাফের শিবির থেকে প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে যাচ্ছে। ভাসানচরে ১৮ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের পর সেখান থেকেও পালানোর প্রবণতা লক্ষ্যণীয়। পালিয়ে যাওয়া সর্বশেষ দুটি দলে ৪২ জন ধরা পড়েছে মৌলভীবাজার ও চট্টগ্রামের মীরসরাইতে। এর আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় রোহিঙ্গা পরিবারের বহু সদস্য ধরা পড়ার ঘটনা রয়েছে। বর্তমানে রোহিঙ্গাদের একটি অংশ পাহাড়মুখী। সুবিধা বাঙালী স্যাটেলারদের সঙ্গে মিশে গিয়ে অবৈধ অথচ স্থায়ী বসতি গড়ে তোলা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকা বিস্তৃত থাকায় শুধু আশ্রয় ক্যাম্প নয়, সে দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়েও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে রোহিঙ্গাদের প্রবেশের ঘটনা রয়েছে। পাহাড়ে রোিহঙ্গাদের বসতি গড়ার কারণ হিসেবে রয়েছে, সেখানে বাঙালী সেটেলারদের সঙ্গে এরা সহজে মিশে যায় আকৃতিগত ও চেহারার মধ্যে মিল থাকার কারণে। আরও একটি প্রধান কারণ হচ্ছে ভাষাও প্রায় একই ধরনের। যদিও রোহিঙ্গাদের ভাষায় শব্দগত পার্থক্য থাকে। এ পার্থক্য শুধু চট্টগ্রামের যারা স্থায়ী বাসিন্দা, তারাই বুঝতে সক্ষম হন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রোহিঙ্গারা এদেশে আসার পর থেকে উদ্বাস্তু হিসেবে সব ধরনের সহযোগিতা পেয়ে আসছে। এরপরও তারা আশ্রয় ক্যাম্পে না থেকে সমুদ্র পথে বিদেশে এবং স্থলপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে যেতে আগ্রহী। মূলত তারা এদেশের স্থায়ী নাগরিকত্বের সনদ পেতে প্রতিনিয়ত মুখিয়ে আছে। ইতোমধ্যে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার জাতীয় সনদপত্র পাওয়ার ঘটনা উদ্ঘাটন করেছে দুদক। এ বিষয়ে ২০টি মামলাও হয়েছে। দুদকের একটি টিম এ কাজ উদ্ঘাটনে লিপ্ত। অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যে বেশকিছু রোহিঙ্গা অবৈধভাবে বসতি গেড়েছে। আবার পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টিও বেরিয়ে এসেছে। যদিও এখনও বিষয়টি একেবারে উদ্বেগজনক পর্যায়ে যায়নি, এরপরও দিন দিন যেভাবে এরা ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে এদেশের বিভিন্ন স্থানে বসতি গড়ার প্রচেষ্টায় রত তা ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হয়েই দাঁড়াতে পারে। সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় স্থায়ী বসতির জন্য কিছু প্রভাবশালীর সহযোগিতা পাচ্ছে রোহিঙ্গারা। অর্থের বিনিময়ে এদেশের জাতীয় পরিচয়পত্রও কেউ কেউ ইতোমধ্যে পেয়ে গেছে। জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পরও এরা কিভাবে তা পেয়ে যায় তা রীতিমতো বিস্ময়কর। এ বিষয়টি দুদকের তদন্তে ইতোমধ্যে উদ্ঘাটিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, রোহিঙ্গারা স্থায়ীভাবে বসতি গড়তে ৩ পার্বত্য জেলাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। জানা গেছে, তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে বিভিন্ন সময়ে ১৭৬ রোহিঙ্গা স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য অনুপ্রবেশ করেছে। রাঙ্গামাটি জেলার ৭ উপজেলায় সর্বমোট ১২০ রোহিঙ্গা পরিবারের সন্ধান পাওয়া গেছে। তন্মধ্যে রাঙ্গামাটি পৌরসভায় ১৫, কাউখালী উপজেলায় ৭২, কাপ্তাই উপজেলায় ১১, বিলাইছড়ি উপজেলায় ১৩, রাজস্থলী উপজেলায় ৩, লংগদু উপজেলায় ৫ এবং বরকল উপজেলায় ১ পরিবার রয়েছে। অপরদিকে, খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলায় ৫৬ রোহিঙ্গা পরিবারের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মানিকছড়ি উপজেলায় ৩০, মহালছড়ি উপজেলায় ১৫, গুইমারা উপজেলায় ৫ এবং রামগড়, দীঘিনালা ও খাগড়াছড়ি সদরে ২ রোহিঙ্গা পরিবার রয়েছে। তবে স্থানীয় প্রশাসনের তীক্ষè নজরদারির কারণে এ সব রোহিঙ্গারা ধরা পড়ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলাটি মিয়ানমার এবং কক্সবাজারের অতি নিকটে হওয়ায় রোহিঙ্গারা অনেক আগে থেকেই এ জেলায় অনুপ্রবেশ করছে। বিশেষ করে নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা, আলিকদম ও বান্দরবান সদরে রোহিঙ্গারা এখন অবস্থান করছে। তাদের হাতে রয়েছে বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয়পত্রও। এই এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির আশ্রয়ে তারা এখন বাংলাদেশের নাগরিক। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও দুর্নীতিবাজরা রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র করতে সাহায্য করে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে সরকারী বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাও এখন তারা ভোগ করছে। নির্বাচনের সময়ে ভোটের ব্যালট হিসেবে ব্যবহার করতেই রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। বান্দরবানের আলিকদম উপজেলায় ‘গত সাত থেকে আট বছর ধরে প্রায় ৫শ’ রোহিঙ্গা পরিবার বসতি স্থাপন করেছে। এমনকি আলিকদমে বার্মাইয়া (বার্মিজ) পাড়া নামে একটি গ্রামও আছে। বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উক্যনু মারমা বলেন, ‘২০০৭-২০০৮ সালের আগে এখানে কোন রোহিঙ্গা পরিবার ছিল না। তবে এখন এই ইউনিয়নে দুশ’রও বেশি রোহিঙ্গা পরিবার বসবাস করছে। তাদের মধ্যে প্রায় ৫০ রোহিঙ্গা পরিবার ভোটার তালিকায়ও নিবন্ধিত আছে।’
×