ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঘোরাঘুরি করে দেখাদেখির সময় নেই

চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর হাটে কেনাবেচার ধুম

প্রকাশিত: ২১:২৬, ২০ জুলাই ২০২১

চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর হাটে কেনাবেচার ধুম

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ কোরবানির পশুরহাটে এখন শেষ সময়ের বিকিকিনি। হাটে হাটে ঘোরাঘুরি বা দেখাদেখি করে নষ্ট করার মতো সময় আর নেই। ফলে এখন চলছে বেচাকেনার হাঁকডাক। চট্টগ্রাম মহানগরীর ছয়টি হাট নির্ধারিত থাকলেও বাজার ছড়িয়ে পড়েছে নগরজুড়ে। অনেকেই ভিড় এড়াতে ছোটখাটো বিক্রয় কেন্দ্র থেকে পশু কিনে নিচ্ছেন। অবৈধ হাট বসানোর ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বিভিন্ন স্থানে এ কার্যক্রম দৃশ্যমান। সোমবার সাগরিকা, বিবিরহাটসহ বড় বাজারগুলোতে সকাল থেকেই ভিড় পরিলক্ষিত হয়। বিক্রেতাকে বেচতে হবে, আবার ক্রেতাদেরও কিনতে হবে। সুতরাং দাম হাঁকিয়ে বসে থাকার সময় আর নেই। ফলে প্রত্যেকটি হাটই জমে উঠেছে। চট্টগ্রামের পশুর বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, শেষ সময়ে প্রচুর গরু আসছে বিভিন্ন এলাকা থেকে। ট্রাকে ট্রাকে আসা গরুগুলো নামছে বেপারিদের পছন্দের বাজারে। বিক্রিও অনেক বেশি। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মান্য করার বালাই তেমন দেখা যাচ্ছে না। প্রায় প্রতিটি বাজারেই গিজগিজ করা মানুষ। একটি গরু কিনতে বেশ কয়েকজনের প্রবেশের কারণে এ অবস্থা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এক প্রকার হাল ছেড়ে দিয়েছে। সাগরিকা গরুরবাজার চট্টগ্রাম মহানগরীর সবচেয়ে বড় পশুরহাট। সোমবার দুপুরে এ বাজারে লোকে লোকারণ্য। বাজারকে কেন্দ্র করে দক্ষিণে সরাইপাড়া এবং উত্তরে কর্নেলহাট পর্যন্ত যানবাহনের জট সৃষ্টি হয়েছে। এতবেশি মানুষ এবং গরু আনা নেয়ার কারণেই এ অবস্থা। পশুর মধ্যে গরুর দামের কোন স্থিতিশীলতা নেই। ঘণ্টায় ঘণ্টায় মূল্য ওঠানামা। গরু কিনে কেউ জিতেছেন তো কেউ ঠকেছেন। তবে সোমবার গরুর বাজার কিছুটা কম বলে জানাচ্ছেন বিক্রেতারা। ক্রেতাদের কাছ থেকেও এমন অভিমত পাওয়া যায়। এর কারণ হতে পারে করোনা সতর্কতার কারণে অনেকেই আগেভাগে খামার ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরু কেনার কাজটি সেরে নিয়েছেন। এছাড়া মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট খাইন, যেখানে পশু বিক্রি হয়। প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনের কড়াকড়িতেও অবৈধ হাট বন্ধ করা যায়নি। তবে গত রবিবার অবৈধ খাইনগুলোতে অভিযান চালিয়ে ২২টি মামলা দায়ের এবং ৫৮ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। চট্টগ্রাম মহানগরীর হাটগুলো হচ্ছে সাগরিকা, বিবিরহাট, পোস্তার পাড়, কর্ণফুলী পশুরহাট, সল্টগোলা রেলক্রসিং এবং পতেঙ্গা বাটারফ্লাই দক্ষিণের খালি মাঠ। এরমধ্যে প্রথম তিনটি স্থায়ী পশুর বাজার এবং শেষোক্ত তিনটি অস্থায়ী হাট, যা কোরবানির ঈদ উপলক্ষে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পোস্তার পাড়ের পশুর হাটটি ছাগল বিকিকিনির জন্য। শেষ সময়ে প্রতিটি হাটই জমজমাট রূপ ধারণ করেছে। সোমবার বিকেল থেকে শুরু হয় বেচাকেনার ধুম। কারণ, ক্রেতা বিক্রেতা কারও হাতেই আর সময় নেই। মহানগরীর বাইরে উপজেলা পর্যায়ে পশু বেচাকেনার কাজ শেষ পর্যায়ে। ফলে অবিক্রিত পশুগুলো এখন শহরমুখী। ছোট-বড় ট্রাকে অসংখ্য পশু আসছে শহরের বাজারগুলোতে। এতে করে গত কয়েকদিন ধরে মূল্য যেভাবে অত্যন্ত চড়া হবে ধারণা করা হয়েছিল সোমবার সকাল থেকে তা আর মনে হচ্ছে না। তারপরও একেবারে শেষ পর্যন্ত চাহিদা ও জোগানের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকে কিনা তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কারণ, গত কয়েক বছর ধরেই দেখা গেছে একেবারে শেষদিনে পশুর অভাব। লাখ টাকা দিয়ে বাছুর কেনার নজিরও রয়েছে। কোরবানির পশুরহাটে এবার ভারতীয় বা বিদেশী গরুর পরিমাণ খুবই কম। গত কয়েকবছর ধরে সীমান্ত পথে গবাদি পশু আসা কমতে কমতে এ বছর তা একেবারে সর্বনিম্ন পর্যায়ে ঠেকেছে। ফলে দেশী গরুতেই মিটছে কোরবানির পশুর চাহিদা। ভারতীয় গরু আসা বন্ধ হওয়ায় অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে ছোট বড় খামার গড়ার দিকে মনোযোগী হয়েছে। বিশেষ করে গ্রাম এলাকায় এখন পশু পালন এতবেশি যে, তার সঠিক পরিসংখ্যান প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কাছেও নেই। বৈধ ও অবৈধভাবে বিদেশী গরুর আগমন কম হওয়ায় খামারিরা লাভবান হচ্ছেন। এতে করে সৃষ্টি হচ্ছে পশু পালনে নতুন নতুন উদ্যোক্তা। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকে লেখাপড়া শেষ করা অনেক শিক্ষিত যুবকও চাকরির পথে না হেঁটে উদ্যোক্তা হয়েছেন। বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অর্থনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। কেননা, কোরবানি ছাড়াও মাংসের চাহিদা সারা বছরই থাকায় পশুর খামারে লোকসানের ঝুঁকি খুবই কম।
×