ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ১৯:৫৮, ২০ জুলাই ২০২১

ঢাকার দিনরাত

প্রতি ঈদের আগে ঢাকার নিয়মিত চিত্র বিষয়ে শুরুতে না বললেই নয়। শনিবার এই কলাম লিখতে বসার আগে অনলাইনে দুঃখজনক খবরটি পড়লাম। বকেয়া বেতন ভাতা ও ঈদ বোনাস না পেয়ে গাজীপুরে সকাল থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেছেন একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিক-কর্মচারীরা জয়দেবপুর-ঢাকা সড়ক অবরোধ করেন। এর আগেও তাঁরা বেতন ভাতার দাবিতে কয়েক দফায় বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেন। করোনাভাইরাসে মানুষের মৃত্যু নিয়ে প্রতিদিনই আমরা শঙ্কিত হচ্ছি। কিন্তু পৃথিবী নামের এই গ্রহে শুধু আমরাই বসবাস করি? তা তো নয়। পশুপাখিদের জন্য করোনাভাইরাস হুমকি নয়। কিন্তু নানাভাবে নানা দেশে তাদের অপমৃত্যু ঘটছে। ঢাকাতে এমন অপমৃত্যুর সংবাদ পড়লাম ঢাকা ট্রিবিউনে। সচেতনতা ও সাবধানতার জন্য এখানে পুরো খবরটিই পাঠকের সঙ্গে শেয়ার করছি। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে জারি করা কঠোর লকডাউন চলাকালীন দোকান খুলতে না পেরে রাজধানীর কাঁটাবনে বৃহত্তম পোষা প্রাণীর মার্কেটে চার শতাধিক প্রাণী মারা গেছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দোকানের মালিক ও অধিকার কর্মীরা। বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে দোকান মালিক মোহাম্মদ পলাশ বলেন, দোকানের দরজা খোলা রাখা দরকার যাতে প্রাণীগুলোর দমবন্ধ না হয়। কাঁটাবন বাজারের স্টোর মালিক সমিতির মুখপাত্র রহমান শিকদার জানান, ১ জুলাই বাজার বন্ধ হওয়ার পর থেকে প্রায় ৪০০ পাখি এবং কয়েক ডজন কুকুর, বিড়াল, খরগোশ, ইঁদুর এবং গিনিপিগ মারা গেছে। আমাদের কমপক্ষে ২০% প্রাণী মারা গেছে। এদিকে প্রাণী মৃত্যুর ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে সরকার বুধবার (১৪ জুলাই) থেকে পুলিশকে দোকানগুলোর দরজা সকালে দু’ঘণ্টা এবং দুপুরে দু’ঘণ্টার জন্য খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। অন্যদিকে প্রাণী অধিকার কর্মীরা দোকানগুলোয় বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পোষা প্রাণী রাখার জন্য অভিযোগ করেন। প্রাণী অধিকার সংগঠন ‘অভয়ারণ্য’ প্রধান রুবাইয়া আহমদ এএফপিকে জানান, প্রথমত কাঁটাবনের মতো এমন জায়গাই থাকা উচিত নয়। সেখানে প্রাণীগুলোকে ইতোমধ্যেই অত্যন্ত অমানবিক পরিস্থিতিতে রাখা হয়। আর লকডাউনের মধ্যে এমন করুণ মৃত্যুর মুখোমুখি হবে তাতে অবাক হয়ার কিছু নেই। ‘প্রাণীদের এভাবে বন্দি করে রাখা হলে যে কোনো খারাপ পরিস্থিতিতে তারা আগে দুর্ঘটনার শিকার হয়,’ তিনি আরও যোগ করেন। বুধবার এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার (১৫ জুলাই) পুলিশ কাঁটাবন এলাকায় টহল দিচ্ছিল। কয়েক কর্মকর্তা অল্প সময়ের জন্য বাইরের দরজা খোলার জন্য দোকানদারদের অনুমতি দেয়। সাব্বির নাসিরের ঈদ উপহার ঈদে বিনোদনের পসরা সাজায় টিভি ও ইউটিউব চ্যানেল। এটি এখন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী ও গিটারবাদক সাব্বির নাসির বিগত তিন বছর যাবত প্রতিটি ঈদে, পহেলা বৈশাখে এবং সেই সঙ্গে বছরের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে নতুন গান রিলিজ করছেন। এই ঈদে ব্যতিক্রমধর্মী গান ‘আধা’ রিলিজ হচ্ছে, সেটির মিউজিক ভিডিও দেখালেন তিনি পরিচালকের স্টুডিওতে। অফিস থেকে ফেরার পথে গায়কবন্ধুর আমন্ত্রণ রক্ষা করে এবং ভিডিওটি দেখে ভাল লেগেছে। পরিচালক মাসুদ হাসান উজ্জ্বল অবশ্য এটিকে মিউিজিক ভিডিও না বলে বলছেন মিউজিক্যাল ফিল্ম। ইতোমধ্যে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য তিনি লন্ডনের পুরস্কার পেয়েছেন। যাহোক, সাব্বিরের প্রতিটি গানের চিত্রায়নে বিশেষত্ব লক্ষ্য করেছি। আধা গানটির কথা ও সুর করেছেন ওমর ফারুক বিশাল, সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন সাজিদ সরকার। সাব্বির নাসিরের ইচ্ছা ছিল এই গানে সাজিদ সরকার যুক্ত হোক। গীতিকার সাজিদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন কথা ও সুর। একদিন সাব্বির ও বিশাল পৌঁছলেন সাজিদের স্টুডিওতে। দেন গানটির ধরন ও বিষয়বস্তুর ধারণা। সাব্বির নাসির সেদিন পেরুর অরণ্যের সাধকদের মুক্ত পরমার্থিক জগত নিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। ভাবতেই পারেননি সাজিদ সেই আলোচনা থেকে নির্যাস নিয়ে কেলটিক সঙ্গীতের এক অসাধারণ কম্পোজিশন তৈরি করে ফেলবেন। মাসুদ হাসান উজ্জ্বলকে গানের ভিডিও নির্মাণে যুক্ত করা প্রসঙ্গে সাব্বির নাসির বলেন, ‘আমার আর উজ্জ্বলের বন্ধুত্ব ‘আধা’ গানটি সৃষ্টির অনেক আগে থেকে। আমরা একত্রে জ্যামিং করি, আড্ডা দিই। আমাদের ভাবনার জগতেরও অনেক মিল।’ একদিন সাজিদের স্টুডিওতে একসঙ্গে গিয়ে গানটি শুনেই ভাল লেগে যায় উজ্জ্বলের। ‘আধা’র সংগীতচিত্রে গায়ক সাব্বির নাসিরের সঙ্গে মডেল হিসেবে দেখা যাবে নীল হুরেজাহানকে। ঈদের আগে শিথিলতা ঈদের বেশ আগেই লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ছিল এই শিথিলতার প্রথম দিন। তার আগে পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই দুই সপ্তাহের লকডাউনের প্রথম দিনের চিত্র। লকডাউনের প্রথমদিন বাসায় বেলা বারোটায় পুবপাশের একচিলতে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম সামনের দ্বিমুখী সড়কে যান চলাচল পর্যবেক্ষণ করতে। এটি প্রধান সড়ক নয় উত্তরার, যদিও বর্তমানে বেশ ব্যস্ত একটি সড়ক। ১১নং সেক্টরের পাঁচ-সাত মিনিট এই হাঁটা পথের ভেতরেই রয়েছে সাতটি ব্যাংকের শাখা, তিনটি হাসপাতাল। টঙ্গী-মহাখালী প্রধান সড়কটির অনেক যান এই রাস্তাতেও চলে আসতে দেখেছি বাইপাস হিসেবে আবদুল্লহপুর-উত্তরা প্রধান সড়কের যানজট ও যানআধিক্য এড়াতে। লকডাউনের মধ্যে এটি সম্ভব নয় বলেই আমার ধারণা। কিন্তু দেখলাম প্রতি মিনিটে কমপক্ষে ১০টি করে যন্ত্রচালিত যান ওই দ্বিমুখী সড়কে চলমান। মোটর সাইকেল আর রিক্সা তো অবাধ। তাহলে লকডাউন এখানে শিথিল এমন সিদ্ধান্তেই আসতে হবে। যাহোক, গত বৃহস্পতিবার রাত একটায় ঠিক ওই সড়কেই চোখ রাখলাম। দেখলাম সারবাঁধা গাড়ি স্থবির। এত রাতে এমন একটি অপ্রধান রাস্তায় যানজট! গাড়িগুলো সব ঢাকা ত্যাগ করছে। এ থেকেই অনুমান করা যায় সামনের দিনগুলোতে আমাদের ঢাকাবাসীর জন্য কী অপেক্ষা করছে। রাজধানীর গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে শুক্রবারের জনকণ্ঠে। তাতে দেখা যাচ্ছে যে, বিধিনিষেধ সাময়িকভাবে শিথিলের প্রথম দিনই বাস-মিনিবাসে করোনাকালীন অবশ্য পালনীয় স্বাস্থ্যবিধির লঙ্ঘন ঘটছে। আমরা বার বার সতর্ক করেছি গত বছর গণপরিবহন বন্ধ থাকার পর ভাড়া বাড়িয়ে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চালুর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হওয়ার পর থেকেই। কিন্তু চোর না শেনে ধর্মের কাহিনী। করোনা সংক্রমণের সর্বোচ্চ ঝুঁকির তালিকা করতে গেলে প্রথমেই আসবে গণপরিবহনের বিষয়টি। বৃহস্পতিবার থেকে শর্তসাপেক্ষে সব সরকারী, আধা সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারী অফিস খুলে দেয়া হয়েছে। চালু হয়েছে বাস-মিনিবাসসহ সব ধরনের গণপরিবহন। এমন একটি সময়ে এ সিদ্ধান্ত এলো যখন দেশে প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। মারা যাচ্ছে দু’শ’র বেশি রোগী। ফলে এমনটাই অনুমিত হওয়া স্বাভাবিক যে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের চূড়ান্ত পর্বে প্রবেশ করছে দেশ। এই সময়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং নিজের সুরক্ষা বজায়ে করণীয় কড়াকড়িভাবে পালনের আবশ্যকতা রয়েছে। এখানে বিন্দুমাত্র শিথিলতা বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। বাস-মিনিবাসে ৫০ শতাংশ অর্থাৎ অর্ধেক যাত্রী বহন করা হবে স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার সার্থে। তার মানে হলো একজন যাত্রীকে অপর যাত্রীর গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বসতে হবে না। দুই আসনের স্থলে একজন এবং তিন আসনের জায়গায় দুজনকে বসানো হলে পাশাপাশি হয়ত তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে। কিন্তু ঠিক পেছনের সিটে যে যাত্রী বসবেন তার কি এই অত্যাবশ্যকীয় দূরত্ব বজায় থাকবে? এতে ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। মাস্ক পরিধানও বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে। কোন যাত্রী যদি তা পরিধান না করেন তাহলে তাকে কি গণপরিবহনে উঠতে বাধা দেয়া হবে? আমাদের প্রতিবেদক সরেজমিনে দেখতে পেয়েছেন যে ঢাকার বাস-মিনিবাসে সব আসন পূর্ণ করার পরও দাঁড়িয়ে যাত্রী বহন করা হচ্ছে। আর মাস্ক পরিধানের নিয়মও অনেক ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না। গণপরিবহন চালুর পর যাত্রী-চালক-কন্ডাক্টরদের করোনা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার বিষয়টিই প্রধান বিবেচ্য। তারপর সামগ্রিক বিষয় তদারকির। সার্বিক দিক রক্ষা করেই সুশৃঙ্খলভাবে গণপরিবহন চলুক-এটাই প্রত্যাশা। কেননা মনে রাখা চাই, বাস-মিনিবাস থেকে একজন যাত্রী বা পরিবহনকর্মীও যদি করোনাক্রান্ত হন তবে তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই তার নিজের পরিবারকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবেন। তাই সর্বোচ্চ সাবধানতা কাম্য। করোনায় মৃত্যু কিন্তু থেমে নেই। দুই শর ওপরেই থাকছে বেশির ভাগ দিন। রাজধানীর রায়েরবাজার কবরস্থানের ৮ নম্বর ব্লকটি নির্ধারিত করা হয়েছে করোনায় মৃতদের জন্য। গত সপ্তাহে এখানেই আমার বড় বোনকে দাফন করা হয়েছে। কবর নং ১২৬৭। গত বছর মার্চ মাসে সারা দেশে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম দফায় খিলগাঁও তালতলা সরকারী কবরস্থানে মৃতদের দাফন শুরু হয়। কিন্তু স্থানসঙ্কুলান না হওয়ায় ২৭ এপ্রিল থেকে রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন শুরু হয়। ইতোমধ্যে প্রায় ১৪০০টি কবর দেয়া হয়েছে সে তথ্য পেলাম একটি টিভি চ্যানেলের প্রতিবেদনে। দেখা গেল মেশিনের মাধ্যমে এখন কবর খোঁড়া হচ্ছে। প্রতিদিনই ৩০ থেকে ৪০টির মতো কবর প্রাথমিকভাবে খুঁড়ে রাখার কাজ চলছে সম্প্রতি মৃতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে। ঢাকাবাসীর কোরবানির প্রস্তুতি মৃত্যুর কথা থাক, আমাদের ঈদের কথায় আসি। অবশ্য এবারও জাতীয় ঈদগাহে পবিত্র ঈদ-উল-আজহার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে না। তবে অনলাইনের পাশাপাশি মাঠেও গরুরহাট বসছে। ১৭ জুলাই থেকে রাজধানীতে পশুরহাটের নির্দেশনা থাকলেও তার আগেই কিছু হাট বসে গেছে। ট্রাকে ট্রাকে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। এবার ঢাকার ২টি সিটি কর্পোরশনে মোট ১৮টি গরুরহাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ১৭ জুলাই থেকে শুরু হয়ে পশুরহাট চলবে ঈদের দিন ২১ জুলাই সকাল পর্যন্ত। গবাদিপশু ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, মূলত ঈদের তিন দিন আগে হাটগুলো পুরোপুরি জমে উঠবে। করোনা সংক্রমণরোধে অনলাইনে ও ডিজিটাল পশুরহাট এরই মধ্যে জমে উঠেছে। বিচিত্র বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে ফেসবুকেও। রোজার ঈদ ও কোরবানির ঈদ-দুই ঈদে ঢাকার দিনরাত প্রায় একই রকম, অবশ্য কিছুটা পার্থক্যও রয়েছে। ঈদের আগে ঢাকা ফাঁকা করে বিপুলসংখ্যক মানুষের ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায়-শহর ও গ্রামের উদ্দেশে ছুটে যাওয়া সাধারণ নিয়মে পরিণত। যারা ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও যেতে ব্যর্থ হন তাদের হৃদয়ের ভেতর চেপে রাখা দীর্ঘশ্বাস, যারা যান না বলে আগে সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখেন তারা এবং তাদের সঙ্গে ঢাকার অন্য নাগরিকরা ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নেন। রাস্তাঘাটে যানবাহন ও মানুষের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে আসায় ঢাকার চিরচেনা বা বলা ভাল স্থায়ী হয়ে যাওয়া রূপ বদলে যায় সাময়িকভাবে। বহুজনের প্রত্যাশা থাকে কোরবানি ঈদের দিন সকালে না হোক, বিকেল বা রাতে বৃষ্টি হোক। বৃষ্টি হলে পশু জবাইয়ের রক্তধারা সব ধুয়ে যাবে। যতদূর মনে পড়ে, গত দুই বছর এদিন ভালই বৃষ্টি হয়েছিল। কোরবানি ঈদের আগে লাখো গরু-ছাগলের আগমনের কারণে রাজধানীর অবয়ব অনেকটাই বদলে যায়। বিশেষ করে আবাসিক এলাকাগুলোয় এক অন্যতর গন্ধ পাওয়া যায়। যে গলিতে কুকুর-বিড়াল ছাড়া অন্য মানবেতর প্রাণীর প্রবেশাধিকার মেলে না, সেখানে বীরদর্পে ঢুকে পড়ে দশাসই ষাঁঁড়। সেই সঙ্গে নিরীহদর্শন কিছু ছাগলও। এ দুটি প্রাণীর উদরপূর্তির জন্য খড়-বিচালি ও কাঁঠাল পাতার প্রয়োজন পড়ে। গরু-ছাগলের হাঁকডাক গলির ধ্বনিতরঙ্গে আচমকা ভিন্ন আবহ নিয়ে আসে। গোবর-গোমূত্রের গন্ধ গণপরিবেশে মিশে থাকে, নগরীতে তা সাময়িক। ফলে সাময়িকভাবেই বদলে যায় রাজধানীর পরিবেশ। গরু বঁাঁধার জন্য গাছ কি মেলে সব স্থানে? বরং রয়েছে ইলেক্ট্রিকের পোল, ফটকের লোহা বা ইস্পাত নির্মিত বার ও গ্রিল। সেসবের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বাঁধা হয় কোরবানির পশু। স্বল্পকালীন এই অতিথিরা কোরবানির শেষে এক রকম অদৃশ্যই তো হয়ে যাবে। তবু ক’টা দিন রাজধানীর সামগ্রিক পরিবেশ ও অর্থনীতিতে একটা বড় প্রভাব পড়তে দেখি আমরা। সড়কে সড়কে দেখি মাংস কাটার ধারাল সরঞ্জাম, হোগলা পাতার পাটি এবং গাছের গুঁড়ির কর্তিত অংশ নিয়ে বসে পড়েন দোকানিরা। সব মিলিয়ে এক ভিন্নধর্মী বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করে রাজধানী বছরে এই একটিবার। মমতাভরে কাঁঠালপাতা যে ছাগলটির মুখে তুলে দিতে দেখলাম এক ঘরনীকে, ঈদের দিন সেই তিনি ওই প্রাণীটির মাংস দারুণ মসলা সহযোগে রেঁধে তার টুকরো তুলে দেবেন প্রিয়জনের পাতে। করোনাভাইরাস এসে এসব প্রাণচাঞ্চল্যে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তবু পশু কোরবানির প্রস্তুতি নিচ্ছেন ঢাকার লাখ লাখ পরিবার। ১৭ জুলাই ২০২১ [email protected]
×