ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মুজিববর্ষের উদ্যোগ

দক্ষিণ বিশিউড়া এখন মৎস্য গ্রাম

প্রকাশিত: ০০:০৪, ২৫ জুন ২০২১

দক্ষিণ বিশিউড়া এখন মৎস্য গ্রাম

নিজস্ব সংবাদদাতা, নেত্রকোনা ॥ দক্ষিণ বিশিউড়া। নেত্রকোনা সদর উপজেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। এক বছর আগেও এ গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ ছিলেন একমাত্র কৃষির আয়ের ওপর নির্ভরশীল। অনেকের বাড়িতে পুকুর থাকলেও তারা মাছ চাষ করতেন সনাতন পদ্ধতিতে। কিন্তু মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে মৎস্য অধিদফতরের কল্যাণে নিভৃত এ গ্রামটি হয়ে ওঠেছে ‘মৎস্য গ্রাম’। ছোট্ট গ্রামটির ২শ’ ২টি পুকুরে একযোগে হচ্ছে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে মাছ চাষ। এতে লাভের মুখ দেখায় কৃষির পাশাপাশি মাছ চাষকেও এখন সমান গুরুত্ব দিচ্ছেন গ্রামটির বাসিন্দারা। গত এক বছরে সেখানে উৎপাদিত হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকার মাছ। স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দক্ষিণ বিশিউড়া গ্রাম থেকে এখন মাছ সরবরাহ হচ্ছে আশপাশের অন্যান্য জেলায়ও। জানা গেছে, মৎস্য অধিদফতর ২০২০ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে দেশের দু’টি গ্রামকে ‘মৎস্য গ্রাম’ বা ‘ফিশার ভিলেজ’ হিসেবে গড়ে তোলার কার্যক্রম গ্রহণ করে। এরমধ্যে একটি গ্রাম হচ্ছেÑ নেত্রকোনা সদর উপজেলার দক্ষিণ বিশিউড়া। গ্রামটিতে ১শ’ ৩৬ ব্যক্তির ২৫ দশমিক ৬ হেক্টর আয়তন বিশিষ্ট ২শ’ ২টি পুকুর আছে। এছাড়া আছে ৭ দশমিক ৭৩ হেক্টর আয়তনবিশিষ্ট আইলী বিল ও ওয়াইল বিল নামে দু’টি বড় বিল। এর পাশাপাশি রয়েছে ১ দশমিক ৯৩ হেক্টর আয়তন বিশিষ্ট বেজখালি খাল। ‘মৎস্য গ্রাাম’ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে উল্লেখিত প্রত্যেকটি জলাশয়কে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের আওতায় আনা হয়। গঠন করা হয় মৎস্যচাষীদের ২০টি দল। দলগুলো পরিচালনার জন্য প্রত্যেক দল থেকে নির্বাচিত করা হয় একজন করে দলনেতা (ফলাফল প্রদর্শক)। নেত্রকোনা সদর উপজেলায় কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে ওই গ্রামের ১শ’ ২০ জন পুরুষ ও ৬০ জন নারীকে দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ চাষ, শিং মাছ চাষ, মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছ চাষ, পাঙ্গাস ও কার্প মাছ চাষ, কার্প মিশ্র (রুই, কাতলা, মৃগেল ইত্যাদি) চাষ এবং গুড একুয়া কালচার এ্যান্ড সেফটিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৩০ হাজার মাছের পোনা (শিং, তেলাপিয়া, পাঙ্গাস, কার্প ও কার্প মিশ্র) দিয়ে ২১টি পুকুরে স্থাপন করা হয়েছে প্রদর্শনী খামার- যেখানে হাতে কলমে মাছচাষ পদ্ধতি শিখছেন চাষীরা। এর বাইরে ওই গ্রামের আইলী বিলটিকে গড়ে তোলা হয়েছে ‘মৎস্য অভয়াশ্রম’ হিসেবে। তিনি আরও জানান, এ গ্রামে প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী, উপকরণ, খাল খনন ও পোনা অবমুক্তকরণসহ বিভিন্ন খাতে এ পর্যন্ত সরকারীভাবে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। পাশাপাশি চাষীরা নিজেরাও বিনিয়োগ করেছেন অনেক টাকা। জানা গেছে, ২০ জন ফলাফল প্রদর্শকের (টিম লিডার) মাছ চাষ বাবদ গত এক বছরে ব্যয় হয়েছে ২৬ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। তারা ইতোমধ্যে বিক্রি করেছেন ৪২ লাখ ৮২ হাজার ৩শ’ ৭০ টাকা। অর্থাৎ এ ২০ জন এক বছরে লাভ পেয়েছেন ১৬ লাখ ৩ হাজার ৩শ’ ৭০ টাকা। এর বাইরে বাকি ১শ’ ১৬ জন চাষী আরও প্রায় আড়াই কোটি টাকার ওপরে মাছ বিক্রি করেছেন। এরমধ্যে তারা লাভ পেয়েছেন কোটি টাকার বেশি। ওই গ্রামের মাছ চাষী হায়দার আলী টিপু জানান, তিনি তিনটি পুকুরে মাছ চাষ বাবদ গত এক বছরে ৯ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ টাকা বিক্রি করতে পেরেছেন। সাব্বির আহমেদ বাবু নামে অপর এক চাষী জানান, তিনি ১৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে প্রায় ২৫ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছেন।
×