ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এডিবি ৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে ॥ চুক্তি সই

প্রকাশিত: ২৩:৪৯, ২৫ জুন ২০২১

এডিবি ৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে ॥ চুক্তি সই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনা প্রতিরোধী টিকা কিনতে বাংলাদেশকে ৯৪ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এটি বাংলাদেশী মুদ্রায় ৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। এডিবির বোর্ড সভায় অনুমোদনের এক দিন পরই এ বিষয়ে সংস্থাটির সঙ্গে ঋণচুক্তি করেছে বাংলাদেশ। শেরেবাংলানগরে বৃহস্পতিবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) এ চুক্তি সই হয়েছে। সরকারের পক্ষে ইআরডি সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন ও এডিবির পক্ষে সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ চুক্তিতে সই করেন। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে সহযোগিতা করার জন্য গত ডিসেম্বরে এডিবি ৯০০ কোটি ডলারের যে ‘এশিয়া-প্যাসিফিক ভ্যাকসিন একসেস ফ্যাসিলিটি’ প্রোগ্রাম চালু করেছিল, তার আওতায় এই অর্থ পাচ্ছে বাংলাদেশ। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বলা হয়, এশিয়া প্যাসিফিক ভ্যাকসিন এ্যাকসেস ফ্যাসিলিটি প্রোগ্রামের আওতায় এই ঋণ ‘রেসপনসিভ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনস ফর রিকভারি প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রকল্পে ব্যয় হবে। অর্থ বিভাগ এই প্রোগ্রামের উদ্যোগী বিভাগ, স্বাস্থ্য অধিদফতর বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ প্রকল্পের সার্বিক তদারকি করবে। ভ্যাকসিন সাপোর্ট প্রোগ্রামটি ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত বাস্তবায়ন হবে। এর উদ্দেশ্য হলো করোনাভাইরাস মহামারী প্রতিরোধে টিকা কেনায় সহায়তা করা। মোট ঋণের অর্ধেক বা ৪৭ কোটি ডলারের জন্য বাংলাদেশকে ২ শতাংশ সুদ দিতে হবে। অবশিষ্ট ৪৭ কোটি ডলারে রেগুলার সুদহার প্রযোজ্য হবে। এ ছাড়া অব্যয়িত অর্থের ওপর শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ হারে কমিটমেন্ট চার্জ প্রযোজ্য হবে। এ ঋণ ৩ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১৫ বছরে পরিশোধ করতে হবে। ইআরডি সূত্র জানিয়েছে, এডিবি করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে বাংলাদেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব উত্তরণের লক্ষ্যে ৫০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ২৫ কোটি ডলারের ‘পলিসি সাপোর্ট, কোভিড-১৯ রেসপন্স ইমার্জেন্সি এ্যাসিস্ট্যান্স’ শীর্ষক প্রকল্পে ১০ কোটি ডলার সহায়তা এবং করোনা মোকাবেলায় ৯ দশমিক ৩৪ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে। এর আগে গত মঙ্গলবার এডিবির বোর্ডসভায় এই ঋণ অনুমোদন হয়। গত এপ্রিলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় এডিবি এই ঋণের বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছিল। করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে ঋণ হিসেবে এটাই বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় সহায়তা। করোনার টিকা কিনতে এডিবির কাছে ৫০০ মিলিয়ন ডলার চেয়ে গত নবেম্বরে চিঠি দিয়েছিল সরকার। তবে আলোচনার ভিত্তিতে তার চেয়ে বেশিই পাচ্ছে বাংলাদেশ। সেখানে বলা হয়, এই ঋণের টাকায় বাংলাদেশ আনুমানিক ৪ কোটি ৪৭ লাখ ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে পারবে। ২০২৪ সালের মধ্যে দুই কোটির বেশি মানুষকে ওই টিকা দেয়া যাবে। এই ঋণের অর্থ দিয়ে বাংলাদেশ কোভিড টিকার আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স বা জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফের মাধ্যমে অথবা সরাসরি উৎপাদনকারীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় টিকা কিনতে পারবে। এডিবির প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়া বলেন, ‘ভাইরাস সংক্রমণের চক্রকে ভেঙ্গে প্রাণ বাঁচানোর পাশাপশি অর্থনীতির ওপর মহামারীর নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে আনতে পারে টিকাদান কর্মসূচী’। কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশকে এডিবির ধারাবাহিক সহযোগিতার অংশ হিসেবেই এই ঋণ, যাতে ভাইরাস থেকে নাগরিকদের সুরক্ষা দেয়া যায়, ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জীবিকার ক্ষেত্রে নতুন করে গড়ে তোলা যায়, অর্থনীতিকে আগের মত প্রবৃদ্ধির ধারায় নিয়ে যাওয়া যায়। এর আগে গত সপ্তাহে দেশের সামাজিক কর্মসূচীর উন্নয়নে ২৫ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বাংলাদেশী মুদ্রায় এ অর্থের পরিমাণ প্রায় দুই হাজার ১২৫ কোটি টাকা। সংস্থাটির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ গত দুই দশকে দারিদ্র্য হ্রাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। ২০০০ সালে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২০১৯ সালের তথ্যানুযায়ী কমে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে। গত দুই দশকে অনেক লোককে চরম দারিদ্র্য থেকে সরিয়ে নেয়া হলেও এখনও যথেষ্ট সংখ্যক জনগোষ্ঠী চরম দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে। এর মধ্যে করোনভাইরাস মহামারী দেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। যার প্রভাবে ২০২০ সালে ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বছর শেষে অর্জন হয়েছে মাত্র ৫ দশমিক ২ শতাংশ। এডিবি বলেছে, সামাজিক কর্মসূচীর মধ্যে বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়নের আন্তঃখাতের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও নীতিগত সংস্কার অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এর মধ্যে রয়েছে, সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাপনার প্রশাসনিক দক্ষতার উন্নতির মাধ্যমে সুরক্ষা ব্যবস্থার কভারেজ ও দক্ষতা বাড়ানো।
×