ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ২৩:৪২, ২৫ জুন ২০২১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ রাজধানী ঢাকার শব্দদূষণ নিয়ে এখন আর কারও মাথা ব্যথা আছে বলে মনে হয় না। দায়িত্বশীলরা এ দায়িত্ব থেকে অনেক আগেই অব্যাহতি নিয়েছেন। বিশেষ করে সড়কে নামলে যে কারও এমন উপলব্ধি হবে। তবে এখন শুধু সড়কে নয়, ঢাকার অলিতে গলিতে পর্যন্ত শব্দদূষণ হচ্ছে। এক্ষেত্রে নতুন এক যন্ত্রণার নাম হ্যান্ডমাইক। সস্তা সহজলভ্য চায়না হ্যান্ডমাইক পাড়া মহল্লার শান্তি কেড়ে নিচ্ছে। বিকট বেসুরো আওয়াজ কী করে যেন প্রতিটি ঘরে পৌঁছে যায়। বিভিন্ন পণ্য বিক্রেতা ও হকাররা এ যন্ত্রণা অনবরত দিয়ে যাচ্ছেন। যে প্রচারণা তারা এতকাল ধরে খালি মুখে চালিয়েছেন এখন একই কাজে ব্যবহার করছেন মাইক। ভাবা যায়, ইঁদুর নিধনের বিষ বিক্রির জন্য মাইকে ক্রেতা খোঁজা হচ্ছে! দা বটি ধার করতেও আসছেন অনেকে। মাইকেই তারা আওয়াজ তুলছেন, ‘দা বটি ধার... লাগবো? দা বটি ধার...।’ গত বুধবার দা বটি ধার করেন এমন এক ব্যক্তিকে পাওয়া গেল কলাবাগানের ডলফিন গলিতে। হ্যান্ডমাইকের শব্দ অনুসরণ করেই পাওয়া হয় তাকে। তখন লক্ষ্য করে দেখা যায় হাতের মাইকটি এইটুকুন। কিন্তু আওয়াজে টেকা মুশকিল হয়ে যাচ্ছিল। তা, এত আওয়াজ কেন করতে হয়? পাড়ার ভেতরে মুখের আওয়াজই যথেষ্ট নয় কী? জানতে চাইলে মোজাহিদ নামের ওই ব্যক্তি স্বীকার করে বলেন, ‘মুখেই তো আগে ডাকতাম। এখন সবাই মাইকে ডাকে। তাই আমিও নিছি একটা।’ এতে করে বাসার ভেতরের লোকজনের যন্ত্রণা বাড়লেও সে অনুযায়ী তিনি কাজ পাচ্ছেন না বলে জানান। এরপরও হকার থেকে শুরু করে ভিক্ষুকরা এ মাইক হাতে ঢাকার পাড়া মহল্লায় প্রবেশ করছেন। কেউ কেউ হয়তো বলবেন, তাই বলে ভিক্ষুক? না, এ হতেই পারে না। হ্যাঁ, নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। বাস্তবতা হচ্ছে, কোন কোন ভিক্ষুকও হ্যান্ডমাইকে ভিক্ষা চাইছেন। তাতে কী? অলিগলির শব্দদূষণ নিয়ে ভাবার কেউ যে নেই সে তো বলাইবাহুল্য। ফলে কারণে অকারণে বাড়ছে হ্যান্ডমাইকের ব্যবহার। বাড়তে বাড়তে কোন পর্যায়ে গেলে পরে কর্তৃপক্ষের নজরে আসবে কে বলবে? ডেল্টা নিয়ে দুশ্চিন্তা ॥ সরকার ও প্রশাসন পরিচালনার মূল কেন্দ্র ঢাকা। এখান থেকেই সবকিছু পরিচালিত হয়। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যেভাবে ধেয়ে আসছে, রাজধানী পর্যন্ত পৌঁছে গেলে বড় বিপদের আশঙ্কা। এ অবস্থায় করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থেকে ঢাকাকে যতটা সম্ভব মুক্ত রাখার জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। গত মঙ্গলবার পার্শ্ববর্তী সাত জেলাকে কঠোর লকডাউনের আওতায় আনা হয়। সাধারণত মুন্সীগঞ্জ মানিকগঞ্জ নারায়ণগঞ্জ গাজীপুর রাজবাড়ী মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ দিয়ে মানুষজন ঢাকায় প্রবেশ করে। বর্তমানে সে সুযোগ নেই। গণপরিবহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ঢাকা থেকেও কোন বাস ট্রেন বা লঞ্চ বাইরে যেতে পারছে না। ফলে শহর ঢাকা এখন মোটামুটি অবরুদ্ধ। অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। ঢাকার সবকটি বাস টার্মিনাল বন্ধ। ট্রেন চলছে না। বুড়িগঙ্গার জলে স্থির হয়ে আছে লঞ্চ। পাশাপাশি ঢাকার প্রবেশপথে কড়া পাহারা বসানো হয়েছে। এভাবে চললে ভাল ফল পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তবে প্রতিবারই কিছু মানুষ এ ধরনের চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিতে উঠে পড়ে লাগে। এবারও তা কম বেশি দেখা যাচ্ছে। নানা ছুঁতোয় ঢাকায় ঢোকা ও বের হওয়ার চেষ্টা করছে তারা। অনেকে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস ভাড়া করছেন। কেউ কেউ জরুরী প্রয়োজনে অনেকটা অপারগ হয়ে এ পথ বেছে নিচ্ছেন বটে। বেশিরভাগই আসলে উদাসীন। কিছুতেই যেন তাদের কিছু আসে যায় না। এ অংশটির জন্য ঢাকা নিয়ে যে দুশ্চিন্তা, সেটি থেকেই যাচ্ছে। পাশাপাশি সরকারী নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ভ‚মিকা নিয়েও প্রশ্ন আছে। স্বরাষ্ট্র, সংস্থাপন ও স্থানীয় সরকার- তিনটি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। কিন্তু দায়িত্ব পালনে কতটা আন্তরিক তারা? পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পারছেন তো? বিগত দিনে তাদের কিছু গাফিলতিও আমরা দেখেছি। এবার কী হবে? সময় ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই ভাবা উচিত। দ্রæত ফুরিয়ে যাচ্ছে সময়। দুবাই থেকেও বেশি ব্যয় ॥ ঢাকায় জীবনযাপনে এত ব্যয়! সাম্প্রতিক এক জরিপে সামনে আসা তথ্য বলছে, বিদেশী কর্মজীবীদের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির চেয়েও ঢাকায় জীবনযাপনে বেশি ব্যয় হয়। এমনকি পাশের দেশ ভারতের বিখ্যাত মুম্বাই শহরে অবস্থান করতে গেলেও বিদেশী কর্মজীবীদের ঢাকার চেয়ে খরচ কম হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জরিপকারী প্রতিষ্ঠান মার্সা এ হিসাব সামনে এনেছে। তারা বলছে, এ তালিকায় বিদেশী কর্মজীবীদের জন্য ব্যয়বহুল শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ৪০তম। গত মঙ্গলবার ২০৯টি শহরের ওপর ‘কস্ট অব লিভিং সিটি র‌্যাঙ্কিং’ শীর্ষক জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। জরিপ শেষে বলা হয়েছে, বিদেশী কর্মজীবীদের জন্য সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশখাবাদ। আর সবচেয়ে কম ব্যয়বহুল শহর কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেক। বিদেশী কর্মীদের থাকা, খাওয়া ও যাতায়াতের খরচ বিবেচনায় নিয়ে ব্যয়বহুল শহরের বার্ষিক তালিকা করে মার্সা। অবশ্য গত বছরের একই জরিপে ঢাকার অবস্থান ছিল ২৬ নম্বরে। সে হিসাবে ঢাকার অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে ১৪ ধাপ। এক বছরে ঢাকায় জীবনযাত্রার খরচ কিছুটা কমেছে। কমেছে বটে। অন্যান্য দেশের শহরগুলোর তুলনায় বেশি। কেন বেশি? পর্যটন শিল্পের স্বার্থে এ বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন বৈকি।
×