ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

লালচোখা ব্যাঙ

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ২৪ জুন ২০২১

লালচোখা ব্যাঙ

‘ব্যাঙ’ শব্দটির সঙ্গে তাচ্ছিল্য বা অবহেলাজুড়ে আছে। কাউকে তিরস্কার করতে বা বিষয়টিকে ক্ষুদ্রতর করতে এ শব্দটি কথার শেষাংশে জুড়ে দেয়া হয়। যা বহুকাল ধরে প্রচলিত হয়ে আসছে। শুধু উপমাগত বিশ্লেষণ দ্বারা একটি উপকারী প্রাণীকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ আমাদের প্রকৃতি এবং প্রতিবেশ ব্যবস্থায় অনেক উপকারী একটি ‘উভচর প্রাণী’ ব্যাঙ। এরা প্রকৃতির সুরক্ষক হিসেবে খাদ্যশৃঙ্খলের ভারসাম্যরেখায় নীরবে বিরাট ভ‚মিকা পালন করে। তবে আশা কথা হলো, বাংলাদেশ থেকে আরও একটি নতুন প্রজাতির ব্যাঙ পেল বিশ্ব। ব্যাঙটি আবিষ্কার করা হয়েছে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে। গবেষকরা এই ব্যাঙের ইংরেজী নাম দিয়েছেন ঝুষযবঃর খরঃঃবৎ ঋৎড়ম আর বাংলা নামকরণ করেছেন ‘সিলেটের লালচোখ ব্যাঙ’। এ আবিষ্কারের গল্প হিসেবে বন্যপ্রাণী গবেষক হাসান আল রাজী বলেন, ‘এই ব্যাঙগুলো মূলত বনের ভেতরে পাওয়া যায়। বনের ঝরা পাতার মধ্যে ওরা থাকে। ঝরা পাতার মধ্যে এরা এমন ভাবে মিশে থাকে যে দেখলে বোঝার উপায় নেই যে এখানে কোন ব্যাঙ আছে। তবে প্রজননের সময় এরা এই ঝরা পাতা ছেড়ে ছড়ায় নেমে আসে। ছড়ার প্রবাহমান স্বচ্ছ পানিতে এরা ডিম দেয়। ডিম ফুটে ব্যাঙ্গাচিগুলোছড়ার পানিতে বড় হয়। ঝরা পাতায় থাকে বলে এই ব্যাঙকে ইংরেজীতে খরঃঃবৎ ঋৎড়ম বলে। তাই আমরা আমাদের এই ব্যাঙের ইংরেজী নাম দিয়েছি ঝুষযবঃর খরঃঃবৎ ঋৎড়ম আর বাংলানাম ‘সিলেটের লালচোখ ব্যাঙ’। ৩ গবেষক দলের অপর সহযোগী গবেষক মার্জান মারিয়া বলেন, আসলে এই আবিষ্কারের অনুভ‚তি ভাষার ব্যক্ত করা অনেক কঠিন। বাংলাদেশ থেকে নতুন কিছু আবিষ্কার করে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে পেরে আমরা গর্বিত। এটা ভেবেই ভাল লাগছে যে, এই ব্যাঙ এর কথা যতবার স্মরণ করা হবে আমাদের দেশের নামও ততবারই নেয়া হবে। ভবিষ্যতে এমন আরও কাজ করতে চাই এবং করার সুযোগ চাই। এই ব্যাঙ আবিষ্কার করতে পেরে অনেক আনন্দিত কিন্তু একইসঙ্গে দুঃখিত। কারণ জীববৈচিত্র্যে ভরপুর লাউয়াছড়া বন তার রূপ হারাচ্ছে। এই ব্যাঙসহ এই পর্যন্ত লাউয়াছড়া বন থেকে বিশ্বের জন্য দুটি নতুন ব্যাঙ আবিষ্কার করা হয়েছে এবং আরও পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বনের যেই ছড়াগুলোতে এই ব্যাঙসহ অন্য ব্যাঙ প্রজনন করে সেই ছড়াগুলোর বেশিরভাগ শুকিয়ে গেছে। এমনটা হতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে সিলেটের লালচোখ ব্যাঙ আর লাউয়াছড়া বনে পাওয়া যাবে না। এই ব্যাঙগুলো সংরক্ষণের জন্য এই ছড়াগুলোকে আমাদের বাঁচাতে হবে বলেও জানান বন্যপ্রাণী গবেষক হাসান আল রাজী। খবর বাংলানিউজের।
×