ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

একনেকে ৪ হাজার ১৬৬ কোটি টাকার দশ প্রকল্প অনুমোদন

প্রকাশিত: ২২:৪৭, ২৩ জুন ২০২১

একনেকে ৪ হাজার ১৬৬ কোটি টাকার দশ প্রকল্প অনুমোদন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা বাইপাসের ব্যয় বৃদ্ধিসহ ১০ প্রকল্প অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১৬৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে ৪ হাজার ১২৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৪০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এই বৈঠক হয়। এতে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- পরিকল্পনা সচিব জয়নুল বারী, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম এবং ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন আল রশীদ। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘ঢাকা বাইপাস সড়কটি রাজধানীর যানজট নিরসনে ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে।’ এছাড়া অন্য একটি প্রকল্পের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘গ্রাম হবে শহর। এটি বাস্তবায়নে পল্লী এলাকার বিদ্যুত নিশ্চিত করার পর এখন পানি সরবরাহ, স্বাস্থ্যসেবা, স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নত করা হবে। এ সংক্রান্ত যে কোন প্রকল্প এলে আমরা সেসব প্রকল্পকে বিশেষ গুরুত্ব দেব। এ ধরনের প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে ফ্রাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।’ পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে সাতটি নতুন এবং তিনটি সংশোধিত। নতুন প্রকল্পগুলোর মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ‘নোয়াখালী সড়ক বিভাগাধীন ক্ষতিগ্রস্ত কবিরহাট-ছমির মুন্সীরহাট-সোনাইমুড়ী সড়ক (জেড-১৪১০) এবং সেনবাগ-বেগমগঞ্জ গ্যাসফিল্ড-সোনাইমুড়ী সড়ক (জেড-১৪৪৬) উন্নয়ন’ প্রকল্পটি ৩৭১ কোটি ১৬ লাখ টাকা খরচে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের ॥ গোপালগঞ্জ জেলার পল্লী এলাকার নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন’ প্রকল্পটি ২৬১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের জন্য এবং বিভিন্ন অঞ্চলে বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের নিমিত্তে জমি অধিগ্রহণ’ প্রকল্পটি ৭৮২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ‘সম্পূর্ণ বৃক্ষে উন্নতমানের আগর রেজিন সঞ্চয়ন প্রযুক্তি উদ্ভাবন’ প্রকল্পটি ৬৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘গাজীপুর জেলা পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পটি ৬৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প : জেলা টাঙ্গাইল’ প্রকল্পটি ৮৬৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা খরচে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের ‘রংপুর, নীলফামারী, পীরগঞ্জ শহর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গ্যাস বিতরণ পাইপলাইন নেটওয়ার্ক নির্মাণ’ প্রকল্পটি ২৫৮ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। সংশোধিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ‘সাপোর্ট টু জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর সড়ক (ঢাকা বাইপাস) পিপিপি’ প্রকল্পটির প্রথম সংশোধন অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির মূল খরচ ছিল ২৩৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রকল্পটির ৪৩৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা খরচ বাড়িয়ে ৬৭৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি শুরু হয়েছে ২০১৬ সালের মার্চে। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের জুনে। এখন সময় বাড়িয়ে করা হলো ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এর উন্নয়ন (প্রথম পর্যায়)’ প্রকল্পটির প্রথম সংশোধন অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির মূল খরচ ৮০৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। ৯০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বাড়িয়ে এর খরচ ৮৯৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। প্রকল্পটি শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের জুনে। এখন এর মেয়াদ বাড়িয়ে করা হলো ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এর উন্নয়ন’ প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধন অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির মূল খরচ ছিল ২৫৬ কোটি ৮৮ লাখ, প্রথম সংশোধনীতে করা হয় ২৩৬ কোটি ১২ লাখ এবং দ্বিতীয় সংশোধনীতে ৩৪৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬৪৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ২০১৫ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়েছে। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। এখন তা বাড়িয়ে করা হলো ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। আমরা দুজনেই ভাল বন্ধু ॥ একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাজ বিশ্বব্যাপী। আর আমার কাজ গ্রামমুখী। পানি পয়োনিষ্কাশন নিয়ে আমার কাজ। দুজনের মধ্যে কাজের মিল নেই। তবে আমরা দুজনেই ভাল বন্ধু।’ সম্প্রতি সুনামগঞ্জের পাঁচ সংসদ সদস্যদের পক্ষ নিয়ে আব্দুল মোমেন রেলমন্ত্রীকে যে ডিও লেটার দিয়েছেন, সেটা উচিত হয়নি বলেও মন্তব্য করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। সুনামগঞ্জ থেকে ছাতক পর্যন্ত একটি রেললাইন নির্মাণের রুট নির্ধারণ নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর সঙ্গে টানাপোড়েন চলছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। এ নিয়ে দুজনেই ফেসবুকে আলাদা করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। চলমান টানাপোড়েনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘আমরা দুজনেই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কাজ করছি। তবে দুজনের মধ্যে বড় কিছু হয়নি। এলাকাভিত্তিক মাঝেমধ্যে টানাপোড়েন হয়।’ পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘সুনামগঞ্জে ছয়জন এমপি আছেন। কিন্তু তিনি পাঁচজন এমপির পক্ষ নিয়ে রেলমন্ত্রীকে আধা সরকারী পত্র (ডিও) দিয়েছেন। অথচ উনি আমার সঙ্গে এতটুকু কথা বললেন না। ওনার জায়গায় অন্য কেউ হলে আমাকে ফোন দিতেন। আমাকে জিজ্ঞেস করতেন, কী ব্যাপার, তোমার এলাকার পাঁচজন এমপি আমার কাছে এল কেন? যাই হোক, মিস ইনফরমেশন হয়ে গেছে। আমরা দুজনেই ভাল বন্ধু।’ প্রায় এক মাস আগে পরিকল্পনামন্ত্রীর মোবাইল ফোন ছিনতাই হয়। ফোন পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লন্ডনে রানীর বাড়ির সামনে থেকেও টান দিয়ে মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। আমাদের দেশে ১২ থেকে ১৩ কোটি মোবাইল সেট। এর মধ্যে কিছু হারাবে, এটাই স্বাভাবিক। আমার হারিয়ে যাওয়া ফোন নাকি চার্জ দিচ্ছে না। এটা এখন মৃত। ফোন হাতে না পাওয়ায় আমি দুঃখিত। তবে শঙ্কিত নই।’
×