ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

করোনা রুখতে কঠোর ব্যবস্থা লকডাউনে সাত জেলা

বিচ্ছিন্ন ঢাকা

প্রকাশিত: ২২:৪৩, ২৩ জুন ২০২১

বিচ্ছিন্ন ঢাকা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাত জেলায় লকডাউনে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। করোনার বিস্তার ঠেকাতে এই লকডাউন ঘোষণা করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারিতে রাজধানীর সঙ্গে দেশের সকল এলাকার দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই দূরপাল্লার গণপরিবহন ও লঞ্চ বন্ধ রাখায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। রাজধানীর অভ্যন্তরীণ রুটে অবশ্য গণপরিবহন চলাচল অব্যাহত রয়েছে। সাত জেলা বাদ দিয়ে চলাচল করছে ট্রেন। মঙ্গলবাার রাত ১২টা থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সকল ট্রেন চলাচল। সরজমিনে দেখা যায়, সিটি সার্ভিস স্বাভাবিক থাকায় জনজীবনে চলাচলের ওপর তেমন কোন প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীতে বাস ও অন্যান্য পরিবহন চলাচল করে স্বাভাবিক গতিতেই। বাস টার্মিনালগুলো থেকে কোন দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। বন্ধ রয়েছে লঞ্চ চলাচল। পরিবহন মালিকদের মতে, সাত জেলার লকডাউন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কার্যত গোটা দেশকেই ঢাকার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। অন্য জেলায় লকডাউন না থাকলেও সেখানকার বাসিন্দারা বিকল্প উপায়ে ঢাকায় পৌঁছার চেষ্টা করলে তাদের এই সাত জেলায় ঠেকিয়ে দেয়া হচ্ছে। প্রকাশ্যে পুলিশের সামনে দিয়ে ঢাকায় প্রবেশের কোন সুযোগ নেই। এভাবেই ঢাকা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে গোটা দেশ থেকে। এর প্রভাব পড়েছে সারাদেশের জনজীবনেই। ঢাকা নির্ভর জীবিকার পাশাপাশি জরুরী প্রয়োজনে কিভাবে ঢাকায় পৌঁছবেন- সরকারের পক্ষ থেকে তার কোন সঠিক দিক নির্দেশনা না থাকায় কঠিন ভোগান্তি ও দুর্দশার শিকার হচ্ছে মানুষজন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্যাহ দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা সরকারের সব সিদ্ধান্তের প্রতিই অনুগতশীল। সেজন্য আপাতত ৩০ জুন পর্যন্ত আমরা দূরপাল্লার বাস বন্ধ রাখব। তারপর আমরা দাবি জানাবো বিশেষ কৌশলে যেন এ সাত জেলার ভেতর দিয়ে অন্যান্য জেলার মানুষজন প্রয়োজনে ঢাকায় আসতে পারে। ট্রেন যেভাবে এ সাত জেলায় না থেমে, যাত্রী ওঠা নামা না করে চলাচল করছে বাসও সেভাবেই চালাতে চাই। আমরা সরকারকে সেই নিশ্চয়তা দিতে চাই। সকালে দেখা যায়- আশপাশের সাত জেলায় কঠোর লকডাউনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে কড়া পাহারা বসানো হয়েছে। ঢাকায় ঢুকতে কিংবা বের হতে দেয় হচ্ছে না দূরপাল্লার যানবাহন। দু-একটি গাড়ি ঢাকা থেকে বের হওয়া কিংবা ঢোকার চেষ্টা করলেও তাদের পড়তে হচ্ছে শাস্তির মুখে। সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী এলাকার রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ডে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এই মহাসডকে ঢাকার মধ্যে চলাচল করা বাসগুলোকে দেখা গেলেও দূরপাল্লার বাস সেভাবে চোখে পড়েনি। একই সময়ে উত্তরার আব্দুল্লাহপুরে দেখা গেছে পুলিশের কড়াকড়ি টহল। অনুমোদিত কয়েকটি সংস্থার যানবাহন ছাড়া বড় কোন বাস মিনিবাস ঢুকতে বারণ করতে দেখা যায়। আবার বের হবার সময়েও অনেক বাসকে আটক করে ফিরিয়ে দেয়া হয় মহাখালীতে। দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকায় আসতে কোন ধরনের বাধা না থাকলেও গাজীপুর পর্যন্ত আসার পর তা ঠেকিয়ে দেয়া হয়। অনেক যাত্রীকে গাজীপুর এসে ফিরে যেতে হয়েছে। আবার অনেকেই বিকল্প পথেই প্রবেশ করতে দেখা গেছে। সারিকা নামের এক নারীকে রাতে বগুড়া থেকে রওনা হয়ে ভোরে গাজীপুর পৌঁছেন। এখানে আসার পর বাস থামিয়ে দেয়া হলে তিনি বিপাকে পড়েন। বাধ্য হয়ে তিনি একটি হলারে জয়দেপুর হাড়িনাল হয়ে ভেতর দিয়ে টঙ্গী হয়ে আব্দুল্লাহপুর দিয়ে হেঁটে ঢাকায় প্রবেশ করেন। বেলা এগারোটার দিকে ঢাকা-কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর রুটে চলাচলকারী তিশা পরিবহনের একটি বাস এই মহাসডক পার হওয়ার সময় চেকপোস্টে পুলিশ আটকে দেয। এরপর পুলিশ বাসটিকে মামলা দেয়। চেকপোস্টে দায়িত্বরত ডেমরা ট্রাফিক জোনের উপপরিদর্শক বিষ্ণু শর্মা বলেন- নির্দেশনা রয়েছে ঢাকা থেকে দূরপাল্লার কোন বাস ছেড়ে যেতে পারবে না এবং কোন বাস ঢাকায় ঢুকতেও পারবে না। আমরা সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছি। ঢাকার প্রবেশপথে কডাকড়ি, ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না দূরপাল্লর গাড়ি। মূলত ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী যানবাহন ছাড়া দূরপাল্লার বাস চলছে না। দু-একটি বাস চলে আসলে আমরা সেগুলোর বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছি। উল্লেখ্য, সোমবার বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জরুরী ব্রিফিংয়ে সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন- মঙ্গলবার থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জে বিধিনিষেধ (লকডাউন) আরোপ করা হয়েছে। লকডাউন চলাকালে সার্বিক কার্যাবলি চলাচল (জনসাধারণের চলাচলসহ) সকাল ৬টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এ সময় শুধু আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরী পরিষেবা, যেমন- কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুত, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের (নদীবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারী-বেসরকারী), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারী নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরী ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এবং পণ্যবাহী ট্রাক ও লরি এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। দূরপাল্লার বাস বন্ধ ॥ সোমবার সন্ধ্যায় হঠাৎ সরকারী ঘোষণা আসে দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধের। এতে রাতে কিছু গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেলেও মঙ্গলবার সকাল থেকে দূরপাল্লার কোন বাস শহরে প্রবেশ করতে পারেনি। রাজধানীর মহাখালী, গাবতলী ও সায়েদাবাদ টার্মিনাল পরিদর্শন করে দেখা যায়- সব রুটের বাসগুলো সারি সাাির লাইনে পার্কিং করে রাখা হয়েছে। শ্রমিক চালকরা বাসের ভেতর অলস বসে রয়েছে। মহাখালীতে গিয়ে দেখা যায়- কিশোরগঞ্জ থেকে চিকিৎসা করাতে ঢাকার ধানমÐিতে এসেছিলেন হামিদ। ধানমÐিতে ইবনে সিনহা হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নিয়ে গ্রামে ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে আসেন তিনি। মহাখালী টার্মিনালের সব বাস বন্ধ রয়েছে। তিনি এনা পরিবহনের টিকেট কাউন্টারে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু টার্মিনালের সব বাসের টিকেট কাউন্টার বন্ধ রয়েছে। এদিকে টার্মিনালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য ছোটন রায়সহ অন্য যাত্রীদের চলে যেতে বলেন। তারা কারণ উল্লেখ করেন ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে লকডাউন চলছে। তাই গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, সোমবার সকালে বাড়ি থেকে ধানমÐিতে এসেছিলাম ডাক্তার দেখাতে। কাল বিকেলে ইবনে সিনহা হাসপাতালে চিকিৎসাও নিয়েছি। ডাক্তার কিছু ওষুধ লিখে দিয়েছেন তাই মঙ্গলবার বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে মহাখালী এসেছিলাম। কিন্তু কোন গাড়ি চলছে না। এখন কি করব ভাবছি। ঢাকায় আমাদের কোন আত্মীয় থাকে না। কোথায় থাকব তাই ভাবছি। আর কিভাবে বাড়ি যাব সেটাই এখন বিষয়। একই অবস্থা সিলেটগামী যাত্রী আলমগীরের। সিলেট যাবেন বলে মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে আসেন। তিনি বিমানবন্দরে ভিসা সংক্রান্ত বিষয়ে ঢাকা এসেছিলেন। লকডাউনের কারণে গণপরিবহন বাস চলাচল বন্ধ থাকায় তিনি পড়েছেন বিপাকে। তিনি বলেন, সোমবার দুবাই যাওয়ার ফ্লাইট ছিল আমার সেই কারণে গত রবিবার সকালে ঢাকার বিমানবন্দরে এসে নেমেছিলাম। কিন্তু করোনা টেস্টের রিপোর্টের কারণে আমার ফ্লাইট ক্যানসেল হয়েছে। তাই সিলেট চলে যেতে চাইছিলাম। কিন্তু কোন গাড়ি চলে না। বিমানবন্দরে প্রাইভেটকারগুলো ভাড়া দ্বিগুণের বেশি চায়। ১ হাজার টাকার ভাড়া চায় আড়াই হাজার তিন হাজার টাকা। তাই সেখান থেকে মহাখালী এসেছিলাম বাসে যাব বলে। কিন্তু বাস তো চলছে না। তাদের মতো আরও অনেক যাত্রী মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে এসে ফিরে যাচ্ছে। তারা বলছেন, আমরা জানি না, টার্মিনালে এসেই শুনছি বাস চলাচল বন্ধ। মঙ্গলবার সরেজমিনে মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে দেখা গেছে, বন্ধ বাসগুলো সারি সারিভাবে রাখা হয়েছে। টিকেট কাউন্টারগুলোতে ঝুরছে তালা। টার্মিনালে কয়েকটি চায়ের দোকান খোলা রয়েছে তবে, একেবারে ভিড় চোখে পড়েনি। এদিকে শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে থাকা মাইকে বারবার ঘোষণা করা হচ্ছে- টার্মিনালের যাত্রী যারা আছেন, আপনারা বাসায় চলে যান। কোন গাড়ি চলবে না সব বন্ধ। টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা, হালুয়াঘাট, কিশোরগঞ্জ, ফুলবাড়িয়া, সব গণপরিবহন বন্ধ। কোন যাত্রী টার্মিনালে থাকলে সবাই বের হয়ে যান। আর মাস্ক ছাড়া কেউ টার্মিনালে ঘোরাফেরা করবেন না। এদিকে টার্মিনালে নিয়োজিত থাকা শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যরা যাত্রীদের ভেতরে ঢুকতে মান না করছেন। তারাও টার্মিনালে ঢোকার পথগুলো দড়ি দিয়ে বেরিক্যাড তৈরি করে রেখেছেন। ঢাকা জেলা বাস-মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা মিনহাজ বলেন- মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। ঢাকার পাশের জেলাগুলোতে লকডাউন চলছে। সেখানে কোন গাড়ি চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে না। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যেতে হলে গাজীপুরের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। চট্টগ্রাম যেতে হলে নারায়ণগঞ্জ হয়ে যেতে হবে। সিলেট যেতে হলে নরসিংদী হয়ে যেতে হবে। কিন্তু এসব জায়গাতে লকডাউন থাকার কারণে আমাদের পরিবহনগুলো চলতে পারছে না। লকডাউনের কারণে জরুরী পণ্যবাহী পরিবহন ছাড়া কোন পরিবহন চলবে না। সবকিছু লহডাউনের নিয়ম অনুসারে হবে। তাহলেই দেশ থেকে করোনাভাইরাসকে বিতাড়িত করা সম্ভব হবে। কিন্তু ইন্টার সিটি সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই চলছে, এতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকছেই। এ বিষয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি হাজী চাঁন মিয়া বলেন, গত লকডাউনে টাকা ৪৯ দিন গণপরিবহন বন্ধ ছিলো। এর আগেও এমন বন্ধ রাখা হয়েছে। দফায় দফায় গণপরিবহন বন্ধ থাকায় আমরা আর্থিকভাবে খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আগের ক্ষতি এখনও উঠেনি। এখন সরকার যদি চায় তবে কোনভাবে আমাদের দূরপালার গণপরিবহন চলাচলের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। বাকিটা সরকারের ইচ্ছা। আমরা জনগণের সুবিধার স্বার্থে গণপরিবহন বন্ধ রেখেছি। গত লকডাউনে মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে আটকেপড়া পরিবহন শ্রমিকদের তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সাত জেলা বাদে চলছে ট্রেন ॥ হঠাৎ সাত জেলায় লকডাউন ঘোষণা করায় বিশেষ কৌশলে চলছে ট্রেন। তবে সাত জেলা বাদে অন্যান্য এলাকায় ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। সকাল থেকে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সব ট্রেনই ছেড়ে গেছে। রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার বলেন- মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক রয়েছে। শুধু লকডাউন থাকা জেলাগুলোর স্টেশনে ট্রেন থামছে না। সোমবার বাংলাদেশ রেলওয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়- গাজীপুর জেলায় লকডাউন দেয়ার কারণে ২২ জুন থেকে একতা, তিস্তা, সুন্দরবন, আন্তঃনগর যমুনা, লালমনি, দ্রæতযান, চিত্রা ও নীলসাগর এক্সপ্রেসসহ অন্য সব কমিউটার ও লোকাল ট্রেন জয়দেবপুর ও টাঙ্গাইল স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে না। একই সঙ্গে যেসব জেলায় লকডাউন থাকবে সেসব জেলার আওতাধীন কোন স্টেশনে ট্রেন যাত্রাবিরতি করবে না। লঞ্চ বন্ধ ॥ বাসের মতো বন্ধ রয়েছে লঞ্চ চলাচল। রাজধানীর সদরঘাটের লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা যায়- সারাদেশে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ। সদরঘাটের প্রতিটি লঞ্চঘাট বন্ধ থাকলেও বরিশাল ও লালকুঠি ঘাটে অনেক যাত্রী এসে ভিড় করছেন। যাত্রীদের অভিযোগ- লঞ্চ বন্ধের ঘোষণা তারা জানেন না। চাঁদপুরগামী এক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- রাত ১১টায় বন্ধের ঘোষণা দিলে আমরা জানমু ক্যামনে? হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে। বরিশালগামী আব্দুল বাছেত নামে আরেক যাত্রী বলেন- লকডাউন ঘোষণা করা জেলায় বরিশালের নাম উল্লেখ নেই। আমি বৃষ্টির মধ্যে অনেক দূর থেকে আসছি, এখন ফিরে যেতে হচ্ছে। আমাদের কষ্ট দেখার কেউ নাই। জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহনের উপপরিচালক এহতেশামুল হক পারভেজ বলেন- সাত জেলায় লঞ্চ বন্ধের ঘোষণা আমরা রাত আটটার সময় মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন থেকে জানতে পারি। কিন্তু এরপর হঠাৎ কেন সব লঞ্চ চলাচল বন্ধ করল সেই ব্যাপারে আমার জানা নেই। এ বিষয়ে আমাদের ট্রাফিক বিভাগ ভাল বলতে পারবে। একই বিষয়ে যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদিন বলেন-আমরা প্রথম লকডাউনের আওতায় সাত জেলায় লঞ্চ চলাচলাচল বন্ধ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন দিয়েছি। পরে রাতে মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দক্ষিণাঞ্চলসহ সারাদেশে পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছি। সাত জেলার লকডাউন ॥ নারায়ণগঞ্জ থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে লকডাউন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যেই জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ প্রশাসন কাজ শুরু করেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে যাতে কোন গণপরিবহন নারায়ণগঞ্জ অংশ দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য পুলিশের কয়েকটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। মুষলধারে বৃষ্টির কারণে দায়িত্বপালনে কিছুটা ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। শহরের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। খুলেনি দোকান পাট। তবে পণ্যবাহী ট্রাক ও কার্ভাডভ্যান চলাচল করতে দেখা গেছে। নারায়ণগঞ্জের সর্বাত্মক লকডাইনের সময় গার্মেন্টস কারাখানাসহ শিল্পকাখানা চালু রয়েছে। ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীসহ জেলা সব শিল্পখারখানা চালু রয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় প্রচÐ বৃষ্টির মধ্যে শ্রমিকের কাজে যোগ দিতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এদিকে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়সহ জেলার প্রবেশ পথের ৩০টি পয়েন্টে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এছাড়া লকডাউন বাস্তবায়নের জন্য জেলা প্রশাসনের ১৮টি মোবাইল টিম কাজ করছে। তবে জেলার পাড়া-মহল্লাসহ রাস্তা-ঘাটে সকল ধরনের দোকানপাট খোলা রাখার খবর পাওয়া গেছে। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, সকাল থেকে পুলিশ কাজ করছে। চেকপোস্ট বসিয়ে প্রতিটি যানবাহনকে থামিয়ে বের হওয়ার নির্দিষ্ট কারণ জানা হচ্ছে। যৌক্তিক কারণ ছাড়া কাউ রাস্তায় বের হলে তাকে যানবাহনসহ ঘুরিয়ে দেয়া হচ্ছে। চেকপোস্টগুলোতে গার্মেন্টস কর্মীদের পরিবহনকরা সব গাড়ি ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, লকডাউনের মধ্যেই সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী গার্মেন্টস করখানা খোলা রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব কারখানা পরিচলানা করা হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করা হচ্ছে। বিকেএমইএম নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের কর্মকর্তাদের সাথে আমাদের মিটিং হয়েছে। তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা পরিচালনা করার জন্য। দূরান্ত থেকে যেসব কারখানায় শ্রমিকরা আসা যাওয়া করে তাদের কে আপাতাত সাত দিনের জন্য কারখানার কাছাকাছি রাখার কথা বলা হয়েছে। যাতে করে নারায়ণগঞ্জ থেকে কেউ বাইরে যেতে বা বাইরে থেকে কেউ নারায়ণগঞ্জে আসতে না পারে সেটি নিশ্চিত করার জন্য। সোনারগাঁও থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, উপজেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাসহ মার্কেটগুলোও বন্ধ করে দিয়েছে। উপজেলার প্রশাসনের উদ্যোগে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা, কাঁচপুর ও মেঘনা নিউ টাউন এলাকায়সহ কয়েকটি স্থানে বাঁশ দিয়ে রাস্তাঘাট বন্ধ করা হয়। তার পাশাপাশি কাঁচপুর হাইওয়ে থানা পুলিশ মহাসড়কে কঠোর অবস্থানে নিয়ে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে যাত্রীবাহী কিংবা অন্য গণপরিবহন, প্রাইভেটকারসহ কোন যানবাহনকেও ছাড় দেয়া হচ্ছে না। এ ছাড়াও থানা পুলিশ, র‌্যাবও বিভিন্ন স্থানে লকডাউন বাস্তবায়নে কাজ করছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কের তল্লাশি চৌকিগুলোতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার সকাল থেকে কোন ধরনের যানবাহন (জরুরী সেবা ব্যতীত) নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। মহাসড়কের মেঘনা টোল প্লাজা এলাকায় ঢাকা প্রবেশ মুখে প্রায় ৫ শতাধিক বাস ও প্রাইভেটকার ফিরিয়ে দিয়েছেন প্রশাসন। যে যে স্থান থেকে পরিবহনগুলো এসেছে সে স্থানেই তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া অনেকেই ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে চলাচল করতে চাইলেই তা দেয়া হয়নি। দাউদকান্দি থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ভোর থেকে লকডাউন কার্যকর করতে হাইওয়ে পুলিশ মহাসড়কের দাউদকান্দি মেঘনা-গোমতী সেতুর টোলপ্লাজার বলদাখাল নামক এলাকায় তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে। গণপরিবহন থেকে শুরু করে যাত্রীবাহী কোন যানবাহনই ঢাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। দূরপ্লালার যানবাহন না পেয়ে অফিসগামী মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। আর যানজটটি দাউদকান্দি টোলপ্লাজা থেকে ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত ২০ কিলোমিটারে পৌঁছেছে। লকডাউনের কারনে এই যানজটের সৃষ্টি হয়েছে বলে দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশ জানান। যানজটের কবলে পড়ে যাত্রীদের পোহাতে হয় সীমাহীন দুর্ভোগ। বিশেষ করে যাত্রীরা ছোট শিশু, ভারী মালামাল, ব্যাগ ও এ্যাম্বুলেন্সে রোগীদের নিয়ে পড়েন চরম বিপাকে। নাইট কোচের দূরপ্লালাগামী যানবাহনের যাত্রীদেরও পোহাতে হয়েছে চরম দুর্ভোগ। যানজটের কারণে যাত্রীরা সঠিক সময়ে পৌঁছতে পারেনি তাদের গন্তব্য স্থানে। যাত্রীদের ১ ঘন্টার পথ যেতে সময় লেগেছে ৩/৪ ঘণ্টারও বেশি। দুপুরের দিকে যানজট কিছুটা কমতে দেখা গেছে। মাত্রাতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, ওভারটেকিং ও এলোপাতাড়ি ভাবে গাড়ি চালানোর কারণে সৃষ্টি হয়েছে এ যানজট। সড়কজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। হাইওয়ে পুলিশ কর্মকর্তা জহুরুল হক জানান, রাজধানীর পাশের সাত জেলায় লকডাউন ঘোষণা করায় আমরা মহসড়কের দাউদকান্দি বলদাখাল এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়েছি। যাতে করে গণপরিবহন মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা জেলায় ঢুকতে না পারে। টঙ্গী থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, গাজীপুর জেলাসহ দেশের ৭ জেলায় জারি করা করোনার লকডাউনের শুরুর দিনে গাজীপুর জেলার প্রবেশ মুখ টঙ্গী ব্রিজ এবং কামারপাড়া এলাকায় মানুষজন ও যানবাহন আসা যাওয়ার স্বাভাবিক যাতায়াত যৌথভাবে আটকে দিয়েছে জিএমপি টঙ্গী জোনের পুলিশ ও ডিএমপি। টঙ্গী পশ্চিম এবং পূর্ব থানা পুলিশের ওসি শাহ্ আলম ও জাবেদ মাসুদ জনকণ্ঠকে জানান, খুব ভোর থেকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের টঙ্গী জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার ইলতুৎমিশের নেতৃত্বে টঙ্গী বাজার এলাকার ঢাকা টঙ্গী গাজীপুর মহাসড়কে পুলিশের চেকপোস্ট বসিয়ে লকডাউন কার্যকর শুরু করা হয়। এ সময় অযাচিত লোকজনের টঙ্গী হয়ে গাজীপুরে প্রবেশ এবং টঙ্গী হয়ে ঢাকায় প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। গণপরিবহনের বাস ছাড়া প্রাইভেট কার, ট্রাক ও ট্যাংকলরি রাস্তায় চলেছে। যানবাহনের অভাবে দুর্ভোগ নিয়ে হাজারো কর্মজীবী মানুষজন কাজে যোগ দিয়েছেন। সময় না দিয়ে একদিনের ব্যবধানে হঠাৎ করে লকডাউন ঘোষণায় বিপাকে পড়েছেন কর্মজীবী মানুষরা। সকালে টঙ্গীর পুরো এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন মাইকিং করে দোকানপাট বন্ধ করে দেয়। মুন্সীগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানান, লকডাউন ঘোষণা করায় জেলার লৌহজং উপজেলার মাওয়া সংলগ্ন শিমুলিয়া ঘাট থেকে সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে স্পিডবোর্ট, লঞ্চ ও ট্রলার যাতায়াত। তবে জরুরী বিষয়ে পারাপাড়ের জন্য ফেরি চলাচল করছে। লকডাউনকে কেন্দ্র করে জনগণের চলাচল নিয়ন্ত্রণে শিমুলিয়া ঘাটসহ জেলার ১০টি পয়েন্টে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। মঙ্গলবার সকাল থেকেই জেলার প্রবেশ পথগুলোতে এসব চেকপোস্ট বসানো হয়। চেকপোস্ট দিয়ে জেলার ভেতরে বহিরাগতদের প্রবেশ রোধ ও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাইরে যেতে দেয়া হচ্ছে না। বন্ধ রয়েছে শপিংমলসহ লকডাউনের আওতাধীন দোকানপাট ও সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। লকডাউনের আওতামুক্ত গাড়ি পারাপারে শিমুলিয়া ঘাট থেকে ফেরি চলাচল করছে। বিআইডবিøউটিসি শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) প্রফুল্ল চৌহান জানান, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে ১৪টি ফেরি সচল রয়েছে। এসব ফেরি দিয়ে দিয়ে কাঁচামাল, পণ্যবাহী গাড়ি ও জরুরী রোগীবাহী গাড়ি পার করা হচ্ছে। সাধারণ যাত্রী পারাপার বন্ধ রয়েছে। বিআইডবিøউটিএ শিমুলিয়াঘাটের বন্দর কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন জানান, ভোর থেকে লঞ্চ চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। কোন ধরনের যাত্রীবাহী লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল করছে না।জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার জানান, লকডাউনের সময় নিত্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও খাদ্যদ্রব্য ছাড়া অন্যান্য দোকানপাট, শপিংমল বন্ধ থাকবে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কোন ধরনের ইঞ্জিনচালিত যান চলবে না। জেলার ১০ প্রবেশ পথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট থাকবে। কেউ নিয়ম অমান্য করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেরানীগঞ্জ থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানান, কেরানীগঞ্জ এই লকডাউনের আওতার বাইরে থাকলেও থেকে মুন্সীগঞ্জ তথা দক্ষিণ বঙ্গের কোন দূরপাল্লার পরিবহন ছেড়ে যায়নি। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধলেশ্বরী টোল-ঘর প্লাজা প্রাঙ্গনে বসানো হয়েছে হাঁসাড়া হাইওয়ে পুলিশের চেকপোস্ট। ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জ তথা দক্ষিণ বঙ্গের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের এই এক্সপ্রেসওয়েতে তৎপর রয়েছে হাঁসাড়া থানা হাইওয়ে পুলিশ। এক্ষেত্রে ঢাকা থেকে বাহির বা ঢাকা প্রবেশের ব্যাপারে উপযুক্ত কারণ দর্শাতে না পারলে, এখান থেকে গন্তব্যে যেতে না দিয়ে ঘুরিয়ে দিচ্ছে পুলিশ। তবে অনেক সাধারণ যাত্রী পায়ে হেঁটে বা স্থানীয় ছোট ছোট পরিবহনে তাদের গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছে। যাত্রীরা অভিযোগ করেন, হঠাৎ বাসগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খুবই বিপাকে পড়েছি। মানিকগঞ্জ থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, কঠোর লকডাউনের কথা থাকলেও মানিকগঞ্জে প্রথম দিনটা ঢিলে ঢালা ভাবে পার হয়েছে। হঠাৎ করে লকডাউনের ঘোষণা আসায় ঢাকা-আরিচা মজাসড়কে যাত্রীদের পরতে হয় চরম দুর্ভোগে। শহরে দোকানপাট বন্ধ থাকলেও রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল ছিল চোখে পরার মতো। শহরে রিক্সা, হ্যালোবাইক, মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেখা গেছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও সিএনজি, হ্যালোবাইক, মোটরসাইকেল চলতে দেখা গেছে। সকাল নয়টা পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক দিয়ে ঢাকাগামী দূরপাল্লার বাস চলেছে । রাতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট পার হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম জেলা থেকে আগের রাতের ছেড়ে আসা বাসগুলি এসময় পার হয়। সকাল নয়টার পর থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও অরিচা-কাজির হাট নৌরুটে লঞ্চ ও স্পিডবোড চলাচল বন্ধ রয়েছে। হঠাৎ লকডাউনের ঘোষণায় চরম ভোগান্তিতে পরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গণপরিবহনের যাত্রীরা। চাকরি, ব্যবসাসহ বিভিন্ন কাজে প্রতিদিন মানিকগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা ও থেকে জেলা থেকে কমপক্ষে ৪০/৫০ হাজার মানুষ ঢাকায় যাতায়াত করেন। অনেকেই সিএনজি, হ্যালোবাইক, রিক্সা, মোটরসাইকেলে ভেঙ্গে ভেঙ্গে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে চেষ্টা করেছেন। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পুলিশের কয়েকটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন। লকডাউন অমান্য করায় জরিমানা করা হয়েছে। মাদারীপুর থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ভোর থেকে শুরু হয়েছে লকডাউন। আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার সকল বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। পদ্মায় লঞ্চ, স্পিডবোট ও ইঞ্জিনচালিত ট্রলার বন্ধ রয়েছে। রাস্তায় ইজিবাইক, রিক্সার চলাচল ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় কিছুটা কম। সকাল থেকেই জেলার নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান ছাড়া প্রায় সকল ধরনের দোকান বন্ধ রয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় দোকান খোলা থাকতে দেখা গেছে। সাধারণ মানুষের চলাচলও ছিল কম। জেলায় প্রথম দিনের লকডাউন কিছুটা ঢিলে-ঢালাভাবে পালিত হয়েছে। জেলায় করোনা ভাইরাস বৃদ্ধি পাওয়া ও পাশর্^বর্তী গোপালগঞ্জ জেলায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়ার কারণে এই লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ব্যাপারে সোমবার রাতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে জেলা প্রশাসন। মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডাঃ সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জেলার ৪ উপজেলার মধ্যে ৩ উপজেলার সাথে গোপালগঞ্জের কোটালাপাড়া ও মকসুদপুর উপজেলা সীমান্ত এলাকা। কোটালীপাড়া ও মকসুদপুর উপজেলার সাথে মাদারীপুরের এই তিন উপজেলার মানুষের অবাধ যাতায়াত। কোটালীপাড়ায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট (ডেলটা করোনা) পাওয়া গেছে। এটি সীমান্তবর্তী এলাকা জেলার রাজৈর উপজেলার সবচেয়ে বেশি কাছে। এতে মাদারীপুর রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৮টি নমুনা পরীক্ষায় ১৮জন শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ৩৭.৫ শতাংশ। ফলে জেলায় করোনা ভাইরাসের আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় এজন্য লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে। জেলার সাধারণ মানুষদের বলবো, ‘আপনারা খুব জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হবেন না। যদি ঘর থেকে বের হতে হয় তাহলে অবশ্যই মাস্ক পড়ে বাইরে বের হবেন এবং সরকারী নির্দেশনা মেনে চলাচল করবেন।’ সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় করোনা ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ২০ হাজার ২৪৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এরমধ্যে ২ হাজার ৫৩৪ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত ২ হাজার ২৫৯ জন সুস্থ হয়েছেন। চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৪৫ জন। এরমধ্যে আইসোলেশনে একজন ও হোম আইসোলেশনে ২৪৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। এতে জেলায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১ জনে।
×