ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৩০ জুন পাস হচ্ছে বাজেট

বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে কর ও ভ্যাটে আরও ছাড় দেয়া হবে

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ২২ জুন ২০২১

বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে কর ও ভ্যাটে আরও ছাড় দেয়া হবে

এম শাহজাহান ॥ বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে কর ও ভ্যাটে আরও কিছু ছাড় দিয়ে আগামী ৩০ জুন মহান সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট পাস করানো হবে। অপ্রদর্শিত অর্থ বিশেষ পর্যবেক্ষণ ও শর্তসাপেক্ষে সাদা করার সুযোগ দেয়া হতে পারে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে বিদ্যমান ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। মহামারী করোনা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ১ লাখ ২৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকার ২৩ প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে জোর দেয়া হবে নতুন বাজেটে। এর পাশাপাশি করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্তদের জন্য আরও দুটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা দেয়া হবে বলে জানা গেছে। সূত্রমতে, প্রস্তাবিত বাজেটকে আরও বাস্তবমুখী করার নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। একই সঙ্গে টাকার অঙ্কে সর্ববৃহৎ এই বাজেট বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হয়েছে। করোনার অর্থনৈতিক ক্ষতির প্রভাব মোকাবেলায় এবারের বাজেট ব্যবসাবান্ধব করা হয়েছে। এ কারণে সর্বক্ষেত্রে বিশেষ করে আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যে কর ও ভ্যাট ছাড় দেয়া হয়েছে। কর ও ভ্যাট ছাড়ের কারণে বাজেট ঘাটতিও অন্য যেকোন অর্থবছরের চেয়ে এবার বেশি। প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সংসদে আলোচনা চলছে। এর পাশাপাশি অর্থবিভাগ এবং এনবিআর কর ও ভ্যাটের বিষয়গুলো আবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। বাণিজ্য সংগঠনগুলোর দাবিদাওয়াগুলো বিবেচনায় রাখছেন সংশ্লিষ্টরা। মূলত ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফিরিয়ে আনতে ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। এ কারণে অপ্রদর্শিত অর্থ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিনিয়োগে আনা যায় কিনা সে বিষয়ে ভাবছে সরকার। যদিও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া এবং না দেয়ার উভয়পক্ষে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যারা নিয়মিত কর দেন তারা এই সুবিধা আর বহাল চাচ্ছে না। অন্যদিকে পদ্ধতিগত ত্রæটির কারণে যাদের টাকা অপ্রদর্শিত হয়ে যাচ্ছে তারা আবার এই সুবিধার সুযোগ চায়। এ প্রসঙ্গে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছিলেন, এই বিষয়ে আরও পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। এরপরই অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার সুযোগ দেয়ার পক্ষে ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ কাজ করছে। জানা গেছে, কালোটাকা সাদা করার মাধ্যমে সেই সব নাগরিককে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়, যারা সম্পদের হিসাব ঠিকমতো দেন না এবং আয়কর ফাঁকি দেন। অন্যদিকে যেসব নাগরিক সরকারের আইন মেনে ঠিকঠাক মতো কর দেন, তাদের প্রতি অবিচার করা হয়। বাংলাদেশের আয়কর আইনানুযায়ী আয়ের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কর দিতে হয়। কিন্তু যারা কর ফাঁকি দিলেন, তারা ১০ শতাংশ হারে জরিমানা দিয়ে কালোটাকা সাদা করে নিতে পারবেন। গত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, অন্য আইনে যা-ই থাকুক না কেন, ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট ও এ্যাপার্টমেন্টের প্রতি বর্গমিটারের ওপর নির্দিষ্ট হারে এবং নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা অন্য কোন সিকিউরিটিজের ওপর ১০ শতাংশ কর প্রদান করে আয়কর রিটার্নে দেখালে অন্য কোন কর্তৃপক্ষ তা নিয়ে প্রশ্ন করতে পারবে না। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১০ হাজার ২২০ কোটি টাকা অপ্রদর্শিত আয় কর দিয়ে বৈধ করা হয়েছে। এতে ৭ হাজার ৪৪৫ কর দাতার কাছ থেকে প্রায় ৯৫০ কোটি টাকার রাজস্ব পেয়েছে সরকার। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৬ বার অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়েছে। অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার করা হতে পারে \ ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইসহ দেশের বিভিন্ন চেম্বার ও এ্যাসোসিয়েশন থেকে অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি ছিল বিদ্যমান ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার করা। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে সেই অগ্রিম কর প্রত্যাহার না করে উল্টো সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত আরোপ করা হয়েছে। এটি কার্যকর হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, ব্যবসায়ীরা ভ্যাট, ট্যাক্স দিতে চায় কিন্তু পদ্ধতিটা সহজ করতে হবে। সরকার এত বড় বাজেট দিচ্ছে, এত কিছু করছে। কিন্তু আসল জায়গায় বিনিয়োগ নেই। তাই ভ্যাট আদায় প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগ আরও বাড়ানো উচিত। তিনি বলেন, এটা নিশ্চিত করা যায় না বছর শেষে একজন ব্যবসায়ী লাভবান হবেন কিনা। এবার ২০ শতাংশ পর্যন্ত সর্বোচ্চ অগ্রিম আয়কর আরোপ করা হয়েছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে। ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, সকল প্রকার উৎস কর ও অগ্রিম কর চ‚ড়ান্ত কর হিসেবে সমন্বয় করা উচিত।
×