ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নারায়ণগঞ্জ ও খুলনায় সাত দিনের লকডাউন শুরু আজ

প্রকাশিত: ২৩:০০, ২২ জুন ২০২১

নারায়ণগঞ্জ ও খুলনায় সাত দিনের লকডাউন শুরু আজ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ মহামারী করোনা প্রতিরোধে নারায়ণগঞ্জ ও খুলনায় আজ মঙ্গলবার থেকে সাত দিনের লকডাউন শুরু হচ্ছে। এদিকে দিনাজপুরে লকডাউনের মেয়াদ আরও সাত দিন বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া ঝিনাইদহ সদর পৌরসভাসহ ছয়টি পৌরসভায় বিধিনিষেধ জারি করেছে প্রশাসন। তবে যশোরে লকডাউন মানছে না সাধারণ মানুষ। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। গত কয়েকদিন ধরে নারায়ণগঞ্জে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে। এই সংক্রমণ যাতে ছড়াতে না পারেÑ এ কারণে নারায়ণগঞ্জ জেলায় আজ থেকে সাতদিন কঠোরভাবে লকডাউন পালন করা হবে। জেলার সঙ্গে সকল গণপরিবহন ও আন্তঃজেলা গণপরিবহন, দোকানপাট বন্ধ থাকবে। তবে পোশাক কারখানা ও জরুরী সেবা চালু থাকবে। লকডাউন কঠোরভাবে পালন করতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট এই দুটি মহাসড়কসহ ৩০টি চেকপোস্টে জেলা পুলিশ ১৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে কাজ করবে। সোমবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহর সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির জরুরী সভায় এই সিদ্ধন্ত নেয়া হয়। ভার্চুয়ালি যুক্ত হন জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুত গবেষণা কাউন্সিললের চেয়ারম্যান (সচিব) সত্যজিত কর্মকার। সভায় জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল আমিন, জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সেলিম রেজা, শামীম বেপারি, তোফাজ্জল হোসেন, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফা জহুরা প্রমুখ। জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন, যেকোন মূল্যে কঠোরভাবে লকডাউন নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসহ জেলার ৩০টি পয়েন্টে পুলিশ চেকপোস্ট থাকবে। এই চেকপোস্ট দিয়ে কেউ জেলা থেকে বের হতে পারবে না, বাইরের জেলা থেকে ভেতরে আসতে পারবে না। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ি থেকে বের হবেন না। জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, করোনা সংক্রমণ নারায়ণগঞ্জ থেকে শুরু হয়েছিল। এক সময় হটস্পট ছিল। এখন সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সীমান্ত এলাকায় সংক্রমণ বাড়ছে। এই কম সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলায় কঠোর লকডাউন নিশ্চিত করা হবে। জেলার ৭০ লাখ মানুষকে করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে আজ থেকে সাতদিন জেলা ও পুলিশ প্রশাসন কঠোরভাবে পালন করবে। তিনি বলেন, পোশাক কারখানা খোলা থাকবে। সড়ক ও নৌ-পথে চলাচল বন্ধ থাকবে। লকডাউন শতভাগ নিশ্চিত করতে নারায়ণগঞ্জবাসীসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। এদিকে খুলনায় করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় আজ মঙ্গলবার থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত খুলনা মহানগরী ও সকল উপজেলায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সপ্তাহব্যাপী এই লকডাউন ঘোষণা করা হয়। লকডাউন সফল করতে সোমবার জেলা প্রশাসক ও করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল হোসেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করেন। শহর এবং উপজেলায় লকডাউনের বিষয়ে মাইকিং করা হচ্ছে। লকডাউন চলাকালে সকল ধরনের দোকানপাট, মার্কেট, শপিংমল ও কোচিং সেন্টারসমূহ বন্ধ থাকবে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও কাঁচাবাজারের দোকান প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। উক্ত সময়ের মধ্যে হোটেল-রেস্তরাঁগুলো পার্সেল আকারে খাবার সরবরাহ করতে পারবে। ওষুধের দোকান সর্বক্ষণিক খোলা রাখা যাবে। সব ধরনের পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। জেলার অভ্যন্তরে সকল ধরনের সাপ্তাহিক হাট/গরুর হাট বন্ধ থাকবে। জেলার অভ্যন্তরে অথবা আন্তঃজেলা গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকবে। খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের আগমন ও বহিরাগমন বন্ধ থাকবে। ইজিবাইক, থ্রি-হুইলারসহ যান্ত্রিক যানবাহন বন্ধ থাকবে। অতি জরুরী প্রয়োজন ব্যতীত কোনভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। বাইরে অবস্থানকালে সকলকে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে। তবে সরকারী- বেসরকারী অফিসের জরুরী কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ অফিস চলাকালীন তাদের নিজ নিজ অফিসের পরিচয়পত্র নিয়ে বাইরে চলাচল করতে পারবে। আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরী পরিষেবা যেমন-কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুত, পানি, গ্যাস, জ¦ালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারী-বেসরকারী), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারী নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাকসেবাসহ অন্য জরুরী ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য, সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এবং উৎপাদনশীল শিল্প ও কলকারখানার উৎপাদন কার্যক্রম এ বিধি-নিষেধের আওতামুক্ত থাকবে। বিধি-নিষেধ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। খুলনার জেলা প্রশাসক এবং করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল হোসেন এ সব তথ্য জানান। দিনাজপুর সদরে বাড়ল ॥ করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দিনাজপুর সদর উপজেলায় কঠোর লকডাউনের মেয়াদ আরও সাত দিন বাড়ানো হয়েছে। রবিবার রাতে জেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির জরুরী সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভায় দিনাজপুর সদর উপজেলায় চলমান কঠোর ‘লকডাউন’ আরও সাত দিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত ১৫ জুন থেকে শুরু হওয়া প্রথম ধাপের ‘কঠোর লকডাউন’ চলার কথা ছিল সোমবার রাত পর্যন্ত। তবে মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কারণে লকডাউন চলবে আগামী ২৮ জুন রাত পর্যন্ত। জরুরী সভায় দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ নাদির হোসেন জানান, কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে, একটি আরটি পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। গড়ে প্রতিদিন ল্যাবে ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। অথচ দিনাজপুর জেলায় গড়ে প্রতিদিন ২শ’ থেকে ৩শ’ করোনার নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে প্রায় এক হাজার নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। তাই কলেজে আরও একটি আরটি পিসিআর মেশিন স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে নতুন মেশিনে নমুনা পরীক্ষা করা হবে। দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক ও কমিটির সভাপতি খালেদ মোহাম্মদ জাকির সভাপতিত্বে এতে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব নুরুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইমাম চৌধুরী, পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ আব্দুল কুদ্দুস, এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ নাদির আলী, জেলা বিএমএ সাধারণ সম্পাদক ডাঃ বি কে বোস প্রমুখ। যশোরে মানছে না মানুষজন ॥ করোনার উচ্চঝুঁকির কারণে যশোরের পাঁচ পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নে লকডাউন সম্প্রসারণ করা হয়েছে। তবে লকডাউন কার্যকরভাবে মানছে না সাধারণ মানুষ। তবে প্রশাসন বলছে লকডাউন কার্যকর করতে আরও কঠোর হবে প্রশাসন। সেইসঙ্গে জনগণকেও সচেতন হওয়ার পরামর্শ তাদের। ঝিনাইদহে চলাচলে বিধিনিষেধ ॥ করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে সদর পৌরসভাসহ ৬টি পৌরসভা এলাকায় চলাচলে বিধি-নিষেধ জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। সকাল থেকে পৌরসভা এলাকার গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে অভিযান চালাচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ হারুন অর রশিদ জানান, ৫০ বেডের করোনা ওয়ার্ডে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি আছে। স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় ৫০ বেডের একটি নতুন করোনা ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। সদর হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার জন্য ভিড় লেগে গেছে। গোপালগঞ্জে ৯ দিন সর্বাত্মক লকডাউন ॥ করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় গোপালগঞ্জসহ ৭ জেলায় ৯ দিনের সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৬টা এ লকডাউন কার্যকর করা হবে। আগামী ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত জেলার জনসাধারণের চলাচলসহ সার্বিক কার্যাবলি ও চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তবে জরুরী ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এবং পণ্যবাহী ট্রাক/লরি এ নিষেধাজ্ঞার আওতা-বহির্ভূত থাকবে। সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সমন্বয় অধিশাখার উপ-সচিব মোঃ রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ নির্দেশনা পেয়ে বিকেলেই গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন আগামী ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত জেলার সর্বত্র জনসাধারণের চলাচলসহ শুধুমাত্র ওষুধের দোকান ব্যতীত সকল ধরনের দোকানপাট ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান এবং সকল ধরনের গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণা করে। মুন্সীগঞ্জ ॥ মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে মুন্সীগঞ্জে সব রকমের যানবাহন ও দোকানপাট বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে, যা আগামী ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত বহাল থাকবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার সোমবার বিকেলে উপসচিব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ করোনার বিস্তার রোধে সার্বিক কার্যাবলী/চলাচলে বিধি নিষেধ আরোপ বিষয়ে স্থানীয়দের অবগত করে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তবে আইন শৃঙ্খলা, জরুরী পরিসেবাসহ অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবা নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে বলে জানান। তিনি আরও জানান, লকডাউন ঘোষণার যাবতীয় পরিপত্র জারি করে মাইকিংসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ৬টি উপজেলার সর্বত্র জানিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন।
×