ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

দেশ ও জাতির পরিচয়

প্রকাশিত: ২১:০০, ২২ জুন ২০২১

দেশ ও জাতির পরিচয়

আজকাল ইউটিউবের কল্যাণে সবকিছু দৃশ্যমান। আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলেও বিরোধীরা বসে নেই। তারা দেশে দাঁড়াতে পারুক আর না পারুক বহির্বিশ্বে অনলাইনে সক্রিয়। এই সক্রিয়তা সমালোচনা হলেও বলার কিছু ছিল না। এখন যেটা চলছে তার নাম ষড়যন্ত্র। আর এই ষড়যন্ত্রের জবাব দেয়ার পরিবর্তে দেশ শাসনে থাকা সরকারী দল মগ্ন আত্মতুষ্টিতে। তাদের ঘর সামলানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির সুবেশী পরিমিত বক্তা মহাসচিব মির্জা ফখরুল। ফখরুল সাহেবের দল বা আদর্শ সমর্থন করি না। কিন্তু এটা সবাই মানেন তিনি চমৎকার বাংলায় কথা বলেন। মূলত বিএনপির যুবরাজ নামে পরিচিত লন্ডনে বসে ষড়যন্ত্রকারী খালেদা পুত্রের কথা আর আচরণ বরাবরের মতো এখনও ঔদ্ধত্যপূর্ণ। ইউটিউবে পাওয়া তার একটি বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধুকে শেখ মুজিব বলে সম্বোধন করার পাশাপাশি পুরো সময় ‘সে’ বলে অবমাননাকর ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, যা অগ্রহণযোগ্য আর সন্দেহ এবং বিরক্তি উদ্রেক করার জন্য যথেষ্ট। যুবরাজের কথাতেই স্পষ্ট তাদের বঙ্গবন্ধুর প্রতি না আছে, শ্রদ্ধা না আছে কোন সম্মানবোধ। উদ্ভট সব কুযুক্তি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমালোচনার নামে নিন্দা করা জায়েজ। শেষে এসে প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে আইন করে নাকি সাময়িক জাতির জনক বহাল রাখা সম্ভব হলেও সবসময় তা হবে না। প্রশ্ন হচ্ছে এই সাবধানতার বিকল্প হিসেবে সরকারী দল কি ব্যবস্থা নিচ্ছে? তাদের মনোতুষ্টি বা আত্মতৃপ্তি কি সারাজীবন বহাল থাকবে? কে তাদের এই গ্যারান্টি দিয়েছে? আর এটা তো সবাই জানি কোনভাবে পরিবেশ বদলানো সম্ভব হলে কি হতে পারে। সে দুর্ভাবনা রোধ করার নামই তো প্রাজ্ঞতা। শেখ হাসিনা ব্যতীত বাকিদের সুখনিদ্রা কি এমন শক্তিশালী অপরাধপ্রবণদের ঠেকাতে পারবে? বঙ্গবন্ধু ও চেতনা বলে বলে মুখে ফেনা তুললেও কাজে সবাই এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখের দিকে তাকিয়ে। তিনি একাই সব সামলান। এই ভরসার জায়গাটা নড়বড়ে হলে এরা চেতনা আদর্শ সব চিবিয়ে খেয়ে দেশ ও জাতিকে লাটে তুলবে। শেখ হাসিনা থাকতেই দল ও জনগণের সমন্বয়ে সঠিক পথ ঠিক করা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে বঙ্গবন্ধু যতদিন ছিলেন ততদিন বাংলাদেশ পথ হারায়নি। এই পথ হারানো বিষয়টা আসলে কি? এটা বোঝার জন্য বঙ্গবন্ধু পরবর্তী বাংলাদেশকে দেখলেই বোঝা যায়। একের পর এক সরকার আর চেতনা হননে দেশ হয়ে উঠেছিল ভয়াল। সামাজিক পরিবেশও ছিল ভয়াবহ। এই মহানায়ককেও আমরা অনেকে মানি না। অপরাজনীতির অপকৌশলে তিনিও বিতর্কিত। সাধারণ মানুষ এই বিতর্কে না থাকলেও অপরাজনীতি তাঁকে ছাড় দেয়নি। এই দুর্ভাগ্য আমাদের এখনও ছাড়েনি। অথচ আজ আমরা এই নেতার একশতম জন্মদিন পেরিয়ে এসেছি। দেশের বয়সও ৫০। আর কতকাল লাগবে ঐকমত্যে পৌঁছাতে? দুনিয়ার কোন দেশে এমন বিতর্ক নেই। আধুনিক তুরস্কের জনক নামে পরিচিত কামাল বিন আতার্তুক। আতার্তুক শব্দের অর্থই জনক। সে তুরস্ক আজ বহু জায়গায় বহু কারণে পরিবর্তিত। কিন্তু এই নিয়ম পাল্টায়নি। তাঁকে নিয়ে কারও কোন খেদ বা অশ্রদ্ধা দেখি না। গান্ধী, জিন্নাহকে নিয়েও তাঁদের দেশের জনগণ সন্তুষ্ট। বিতর্ক ও গোলমাল শুধু আমাদের বেলায়। কেন এবং কি কি কারণে সে কথা থাক। অন্তত এই একজন মানুষের বেলায় কি আমরা এক হতে পারি না? আর কতদিন এই বিবাদ? কত পানি গড়াল, কত দেশ আবার ভাঙল গড়ল আর আমরা এই বিষয়েও সহমত হতে পারলাম না। নেতা যদি কেউ থাকেন তো তিনি একজনই। তাঁকে বাদ দিয়ে এদেশের ইতিহাস মুক্তি কিংবা সংগ্রাম ইতিহাস কিছু হয় না। হবেও না। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস উহ্য থাকার পরও সূর্যের আলোর মতো তিনি ছিলেন মাথার ওপর। তাঁর এক ভাষণেই লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যাওয়া ভীতু পাকিরা নির্বিচারে গণহত্যা করার পরও বাঙালী দমেনি। তাদের বুকের ভেতর অভয় বাজাত এই ভাষণ। সে মানুষটিকে পাকিস্তান আমেরিকা চীনের আঁতাতও মারতে পারেনি। মারার সাহস করেনি। অথচ আমরা বাঙালীরা তা করেছি। এই কালোদিন, এই চরম অন্যায় নিয়েও রাজনীতি হয়েছে। রক্তমাখা কেক কেটে জন্মদিন পালনের ভয়াল সংস্কৃতি আপাতত চাপা পড়ে আছে। কিন্তু সুযোগ পেলে মাথাচাড়া দেবে না তার কোন গ্যারান্টি আছে কি? আওয়ামী লীগ মুখে যাই বলুক তাদের দেখে মনে হয় না তারা এ কাজ করতে পারবে। কারণ সরকারে থাকতে থাকতে তারা অন্যভাবে ব্যস্ত। রাজপথ ও মাঠের নেতা বঙ্গবন্ধু তাদের আদর্শ হতে পারে, কিন্তু তাঁকে যতটা চর্চা করা দরকার, তাঁকে যতটা নিতে পারলে তিনি সবার হবেন তার দেখা নেই। অথচ দেশে ও দেশের বাইরে বাঙালী, বাংলাদেশবিরোধী শক্তি তৎপর। আমরা মানি আর না মানি মুক্তিযুদ্ধের সময় বিরোধিতাকারীরাও এখন নতজানু। একাত্তরের পুরো সময় ধরে আমাদের বিরোধিতাকারী যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেন, সহিংস ও কাপুরুষোচিতভাবে বাংলাদেশের জনগণের মাঝ থেকে এমন প্রতিভাবান ও সাহসী নেতৃত্বকে সরিয়ে দেয়া কী যে মর্মান্তিক ঘটনা! দীর্ঘকাল বিদেশে বসবাস করার কারণে নানা দেশে যেতে হয়েছে। উপমহাদেশে রাজনৈতিক নেতা গান্ধী ব্যতীত কাউকেই তেমন চেনে না সাধারণ মানুষ। শুধু বাংলাদেশ বললেই প্রবীণ মানুষেরা বলেন, ও হো তোমরা না শেখ মুজিবকে মেরে ফেলেছিলে? কেউ কেউ এই সেদিনও বলতেন এই কাজের জন্য তোমরা অভিশপ্ত। অস্ট্রেলিয়ায় শায়িত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাচ অস্ট্রেলিয়ান বীরপ্রতীক ওডারল্যান্ড বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বাংলাদেশের কথা বললেই রেগে যেতেন। তাঁর কথা ছিল- এ কারণেই কি আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম জীবনবাজি রেখে? নেতা বেঁচেছিলেন মাত্র ৫৫ বছর। কিন্তু শতবর্ষ পেরিয়েও তিনি গৌরবদীপ্ত এক ইতিহাস। এখন আমাদের সবার কাজ, সবার দায়িত্ব তাঁকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একক নেতা ও জাতির জনক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। আমরা যেন সরকারের তরফ থেকে সে কাজের সূচনা দেখতে পাই। জয়তু বঙ্গবন্ধু। সিডনি থেকে [email protected]
×