ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ২০:৫১, ২২ জুন ২০২১

ঢাকার দিনরাত

মন খারাপ নিয়ে আজ লিখতে বসেছি। শরীরে কিছুটা জ্বরও আছে। জ্বর অবশ্য পাত্তা পাচ্ছে না। এটা যে ঠাণ্ডা জ্বর তাতে আমি নিশ্চিত। কিন্তু করোনাকালে জ্বরকে অবশ্যই সন্দেহের চোখে দেখা চাই। তিন দিনে জ্বর না সারলে বুঝতে হবে বাইরের কিছু দেহে আঘাত হেনেছে। সেটি ব্যাকটেরিয়া হোক, আর ভাইরাসই হোক। মন খারাপ কেন সে প্রসঙ্গে আসি। আমাদের ফ্যামিলি ফ্রেন্ড পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী বাবু ভাইয়ের জ্বর হয়েছিল। সর্দিজ্বর ভেবে পাত্তা দেননি। সাত দিনে তাদের টনক নড়ে। ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে, করোনাভাইরাস জেঁকে বসেছে। হাসপাতালে ভর্তি হন। আমি প্রতিদিনই আপডেট জানছিলাম। ফুসফুসের অনেকটাই আক্রান্ত। তবু আমার আশা ছিল তিনি ভাইরাসকে ঠিকই পরাস্ত করতে পারবেন। ৫০ হাজার টাকা দামের এক একটা ইনজেকশন নেয়ার পর দৃশ্যত উন্নতি হয়েছিল গত দুদিন। যদিও সামান্য উন্নতি। তবু আশাবাদ জিইয়ে রেখেছিলাম। আজ সকালে খবর এলো বাবু ভাইকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়েছে। আজ ১৩তম দিন। আজ আর কাল চ‚ড়ান্ত যুদ্ধ চলবে করোনাভাইরাসের সঙ্গে। আমি এখনও আশা রাখছি করোনা পরাজিত হবে। সুযোগ পেয়েও কেন যে তারা করোনার টিকা নিলেন না! জানতাম তার কোন অসুখ নেই। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর জানা গেল তার ডায়াবেটিসও আছে। এটাই নেতিবাচক দিক এখন। একটা খারাপ খবর দিচ্ছি বাধ্য হয়েই। আমার চেনা একজন বয়স্ক ব্যক্তির কথা জানলাম আজকেই, যিনি দুটো টিকাই নিয়েছিলেন। তারপরও তার দুদিন হলো কোভিড (করোনা) হয়েছে। করোনাকে যে হেলাফেলা করা ঠিক নয়, সেটি আমরা অনেকেই বুঝতে চাইছি না। গত বছর এই সময়টায় আমরা কত সতর্কই না ছিলাম। আমাদের ভবনটিতে কেউই আক্রান্ত হননি। আমি করোনায় পড়লাম ডিসেম্বরে। দুই মাস আগে আমাদের ঠিক ওপরের তলার ডাক্তার সাহেব মারা গেলেন করোনায়। তিনি নিয়মিত ডিউটিতে যেতেন। শিল্পী মাহমুদুর রহমান দীপনের করোনাকালীন একটি ছবি বিষণœ ফুলদানি। যিনি ছবির ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখেন না তাকেও ছুঁয়ে যাবে এই রূপকধর্মী ছবি। দেশে করোনার বিস্তার বহুগুণ বেড়েছে। এখন আশপাশের বাড়িঘরে খোঁজ নিয়ে দেখুন কেউ না কেউ আক্রান্ত হয়েছেন। খোদা না করুক, আমরা চাই না এমন দিন আসুক যখন আশপাশের কোন না কোন বাড়িতে কেউ না কেউ শিকার হবেন করোনার। আমার ব্যক্তিগত ধারণা ঢাকায় করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে। এটি হবে চ‚ড়ান্ত ভয়ঙ্কর। তাই এই কলাম যারা পড়ছেন, তাদের কাছে হাতজোড় করে অনুরোধ জানাই সাবধান হোন। অযথা ঘরের বাইরে যাওয়া বন্ধ করুন। কাজে বাইরে গেলে শতভাগ সুরক্ষা নিন। বাসায় এসে নিজেকে জীবাণুমুক্ত করুন। আর যথাসম্ভব ভিড় এড়িয়ে চলুন। কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্বে থেকে অপর মানুষের সঙ্গে কথা বলুন, কাজ করুন। মাস্ক পরতে ভুলবেন না। বার বার হাত ধোবেন। সাবধান। আইসিইউ, অক্সিজেন স্যাচুরেশন... অক্সিজেন কমে যাওয়া মানেই আইসিইউ লাগবে, এমনটি নয় কিন্তু। করোনাকালে অনেক মেডিক্যাল টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে মানুষ আগ্রহ প্রকাশের পাশাপাশি দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হচ্ছেন। বিশেষ করে আইসিইউ বেডের স্বল্পতার কারণে অনেকেই শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন এই ভেবে যে করোনা জটিল আকার ধারণ করলে এই বিশেষ বেডের অভাবেই তার জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। বারডেম হাসপাতালের একজন এ্যাসোসিয়েট প্রফেসরের বক্তব্য থেকে এ সম্পর্কিত তথ্য পেয়ে আশ্বস্ত বোধ করলাম। সেটিই পাঠকদের সঙ্গে শেয়ার করছি। তিনি লিখেছেন- ‘অনেকে হাসপাতালে আইসিইউ-এর বেড সংখ্যা বাড়াতে বলছেন। আইসিইউ-এর বেড বাড়ানোর আগে প্রয়োজন দেশের সব হাসপাতালে (সম্ভব হলে থানা হেলথ কমপ্লেক্সের) অক্সিজেন সরবরাহ সুনিশ্চিত করা। একজন রোগী যার অক্সিজেন স্যাচুরেশন রুম এয়ারে ৮৫%, তাকে অন্যান্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে অক্সিজেন দিলে তার স্যাচুরেশন বেড়ে যাবার সম্ভাবনাই বেশি। সেক্ষেত্রে তাকে আইসিইউতে পাঠানো নাও লাগতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমাদের দেশে কিন্তু সার্টিফায়েড ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন স্পেশালিস্টের সংখ্যা অত্যন্ত কম (এখন পর্যন্ত মাত্র ৩০ জন). ট্রেইন্ড আইসিইউ ডাক্তার এবং নার্সের সংখ্যাও বেশি নয়। প্রপার ট্রেনিং ছাড়া আইসিইউতে বেড, ভেন্টিলেটর এবং অন্যান্য জিনিসের ব্যবস্থা করে লাভ নেই। এত অল্প সময়ে আইসিইউতে ট্রেনিং দেয়া/নেয়া সম্ভব নয়। সুতরাং আমাদের চিন্তা করতে হবে এই লিমিটেড রিসোর্স নিয়েই আমরা কিভাবে কোভিডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারি। এই ব্যাপারে যেসব পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে- ১. মৃদু অবস্থার রোগীদের বাসাতেই চিকিৎসা নেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা। ২. মাঝামাঝি থেকে গুরুতর রোগীদের হাসপাতালের ওয়ার্ডে মেডিসিন স্পেশালিস্টরা চিকিৎসা দেবেন। এর জন্য ওয়ার্ডগুলোকে লাল, হলুদ ও সবুজ জোনে ভাগ করে ফেলা প্রয়োজন। ৩. জুনিয়র ডাক্তারদের (মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি সব ফ্যাকাল্টির সব ডাক্তারদের) অক্সিজেনের ব্যবহার সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে। স্যাচুরেশন কত হলে কতটুকু অক্সিজেন দেয়া উচিত এবং নাসাল ক্যানুলা, ফেস মাস্ক আর রিব্রিদার মাস্ক- কোনটা দিয়ে কতটুকু অক্সিজেন দেয়া যায়; এই ব্যাপারে সিনিয়র ডাক্তার জুনিয়র ডাক্তার সবারই জানা জরুরী। এই ব্যাপারে সরকারের পাশাপাশি বিত্তবান ব্যক্তিরা এগিয়ে আসতে পারেন। বাবা দিবসের একটি শিক্ষণীয় পোস্ট আজ, এ কলাম লেখার দিন, রবিবার বাবা দিবস। যে কয়টি মন ছুঁয়ে যাওয়া পোস্ট পড়লাম ফেসবুকে তার একটি ভ্রমণপ্রিয় লেখক ফাতিমা জাহানের। তিনি লিখেছেন- তার ভয়ে বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খায় এমন অবস্থা। দোর্দণ্ড প্রতাপশালী সরকারী আমলা, মা-বাবার একমাত্র পুত্র সন্তান। জীবনটা কাটিয়েছিলেন দাপটের সঙ্গে। হুট করে একদিন তিনি চলে গেলেন কোমায়। সব আশা শেষ, ডাক্তাররা জবাব দিয়ে দিলেন। তবে পৃথিবীতে অনেকগুলো অলৌকিক ব্যাপারের একটা হলো তার ফিরে আসা। ফিরে আসলেন এ্যাডভান্সড স্টেজ ডিমেনশিয়া নিয়ে, কিছুই আর মনে নেই। কাউকে চেনেন না, আচরণ অসংলগ্ন। স্ত্রীর মৃত্যুর পর যাকে বিয়ে করেছিলেন, তিনি এই অচল বৃদ্ধের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে ফেলে রেখে চলে গেলেন। প্রিয় প্রথম সন্তান অসুস্থ বাবাকে নিয়ে বিরক্ত ও বিব্রত, দেখতেও আসে না। অসহায়, অসুস্থ, স্মৃতিশক্তিহীন তখন তিনি। বাবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক সবসময়ই ছিল রাগ, অভিমান আর ইগোর ছড়াছড়ি। দুইপক্ষের কেউ হার মানার নয়। মা চলে যাবার পর অবস্থা পুরোটাই ওলটপালট। মা যাবার পর তাই বাবার সঙ্গে আমার কোন ছবি নেই। একবার বুয়েট এলামনি রিইউনিয়নে তোলা একটা ছবি আছে একসঙ্গে কিন্তু এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। একসঙ্গে ছবি বলতে বাবা অসুস্থ থাকা অবস্থার ছবি। তখন অবশ্য তিনি আর বাবা ছিলেন না, আমার সন্তান হয়ে গিয়েছিলেন। রাগারাগি, আদেশ, উপদেশ, জ্ঞান বিতরণ, বক্তৃতা কিছুই নেই। হয়ে গেলেন একজন শিশু, সব কাজ করে দিতে হয়। ঘড়ি ধরে খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো, রেগে গেলে বুঝিয়ে সামলানো, ছবি দেখিয়ে বই পড়ে পুরনো কথা মনে করানোর চেষ্টা, ডায়াপার বদলানো কত কাজ! নিঃশ্বাস ফেলার সময় থাকত না। সন্তান ঘর খালি করে চলে গেলে কেমন লাগে, তা কি সন্তান বুঝতে পারে? বজ্রপাত থেকে বাঁচতে শুরু হয়েছে ঝমঝম বৃষ্টির দিন। বৃষ্টি কারও কাছে রোমান্টিকতার, কারও কাছে বিড়ম্বনার, বিপন্নতার। বর্ষাকালে বজ্রপাত আমাদের দেশে স্বাভাবিক ঘটনা। জীবন বাঁচাতে বজ্রপাতের সময় সতর্কতা জরুরী। বজ্রপাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর ২০টি জরুরী নির্দেশনা দিয়েছে। নির্দেশনাগুলো হলো- ১. বজ্রপাতের ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির ধাতব রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না। ২. প্রতিটি বিল্ডিংয়ে বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন নিশ্চিত করুন। ৩. খোলাস্থানে অনেকে একত্রে থাকাকালীন বজ্রপাত শুরু হলে প্রত্যেকে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে দূরে সরে যান। ৪. কোন বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকে তাহলে সবাই এক কক্ষে না থেকে আলাদা আলাদা কক্ষে যান। ৫. খোলা জায়গায় কোন বড় গাছের নিচে আশ্রয় নেয়া যাবে না। গাছ থেকে চার মিটার দূরে থাকতে হবে। ৬. ছেঁড়া বৈদ্যুতিক তার থেকে দূরে থাকতে হবে। বৈদ্যুতিক তারের নিচ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে। ৭. ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির প্লাগগুলো লাইন থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে। ৮. বজ্রপাতে আহতদের বৈদ্যুতিক শকে মতো করেই চিকিৎসা দিতে হবে। ৯. এপ্রিল-জুন মাসে বজ্রপাত বেশি হয়। এই সময়ে আকাশে মেঘ দেখা গেলে ঘরে অবস্থান করুন। ১০. যত দ্রæত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন। ১১. বজ্রপাতের সময় বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি বা বারান্দায় থাকবেন না এবং ঘরের ভেতরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকুন। ১২. ঘন-কালো মেঘ দেখা গেলে অতি জরুরী প্রয়োজনে রাবারের জুতা পরে বাইরে বের হতে পারেন। ১৩. উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, তার, ধাতব খুঁটি ও মোবাইল টাওয়ার ইত্যাদি থেকে দূরে থাকুন। ১৪. বজ্রপাতের সময় জরুরী প্রয়োজনে প্লাস্টিক বা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করুন। ১৫. বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা, মাঠ বা উঁচু স্থানে থাকবেন না। ১৬. কালো মেঘ দেখা দিলে নদী, পুকুর, ডোবা, জলাশয় থেকে দূরে থাকুন। ১৭. বজ্রপাতের সময় শিশুদের খোলা মাঠে খেলাধুলা থেকে বিরত রাখুন এবং নিজেরাও বিরত থাকুন। ১৮. বজ্রপাতের সময় খোলা মাঠে থাকলে পায়ের আঙ্গুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙ্গুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে পড়ুন। ১৯. বজ্রপাতের সময় গাড়ির মধ্যে অবস্থান করলে, গাড়ির থাতব অংশের সঙ্গে শরীরের সংযোগ ঘটাবেন না। সম্ভব হলে গাড়িটিকে নিয়ে কোন কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন। ২০. বজ্রপাতের সময় মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে অবস্থান করুন। রেস্তরাঁর আড়ালে ডিজে পার্টি পরীমনিকাণ্ডর পর এখন খুব শোনা যাচ্ছে ডিজে পার্টির কথা। যেমন এক সময় ফলাও করে খবর বেরুত ক্যাসিনো নিয়ে। ঢাকায় ক্যাসিনো অভিযান শুরু হওয়ার বহু বছর আগে থেকেই জমজমাট চালু ছিল এই ক্যাসিনো। যেমন ডিজে পার্টির ভেন্যু বিষয়ক খবরাখবর জানা ছিল খরিদ্দর, গ্রাহক, বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের। পুলিশি অভিযানের বহু আগে থেকেই এই আসর চালু ছিল। হত্যা, ধর্ষণপ্রচেষ্টা, এ জাতীয় ঘটনা না ঘটলে কি আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা এসব বেআইনী আখড়ার বিরুদ্ধে অভিযানে নামতে পারেন না! সে যাক। এখনকার কথায় আসি। রূপগঞ্জ উপজেলায় পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের অস্থায়ী রেস্তরাঁর আড়ালে চলছিল মাদক ব্যবসা ও ডিজে পার্টি। এ ঘটনায় ২৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে পূর্বাচলের ১ নম্বর সেক্টর এলাকার হোয়াইট হাউস থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। রূপগঞ্জ থানার ওসি বলেন, পূর্বাচলে একটি রেস্তরাঁর আড়ালে নিয়মিত মাদকের কারবার, ডিজে পার্টিসহ জুয়ার আড্ডা বসানোর গোপন খবর পেয়ে রাত আড়াইটার দিকে অভিযান চালানো হয়। এ সময় গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলো বরগুনার আফাজদ্দিন, সিয়াম, ঢাকার নবাবগঞ্জ থানার লাভলু, সোহেল, ফরিদ, শেরপুরের নকলা উপজেলার জসিম উদ্দীন, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান উপজেলার আবদুল্লাহ নোসাইব, কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার সাইফুল, বরিশালের বাবুগঞ্জ থানার মজিবুর রহমান, ঝালকাঠির কানুদাস গ্রামের নুর আলম, রেস্তরাঁর মালিক পূর্বাচলের পশ্চিম এলাকার বাসিন্দা নজরুলের ছেলে আবির রায়হান, লাবণী, নাইমা, সনিয়া, জেরিন আক্তার, মায়া বেগম, রিয়া আক্তার ফারিয়া এবং রুবিনা আক্তার। তাদের কাছ থেকে ৯ ক্যান বিদেশী বিয়ার, তিন বোতল বিদেশী মদ, দুই লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকাসহ বিপুল জুয়া খেলার সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। তাদের প্রচলিত মাদক নিয়ন্ত্রণ দমন আইন, করোনাকালে সংক্রমণ ব্যাধি ছড়ানোসহ অসামাজিক কাজে যুক্ত থাকার পৃথক আইনে মামলা করা হয়েছে। পরে নারায়ণগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয় আসামিদের। রেস্তরাঁর মালিক নজরুলসহ একাধিক ব্যক্তি এখনও পলাতক। রাতের ফ্লাইওভার রাাতে ফ্লাইওভারগুলো অনেকটাই থাকে সুনসান। ভ‚মি থেকে বেশ কিছুটা ওপরে কী হয় না হয় সেটি নিচ থেকে অনেক সময় বোঝা যায় না। ফলে অপরাধীরা সেই সুযোগটা নিয়ে থাকে। ঢাকার ফ্লাইওভারে ধর্ষণ, ছিনতাই এমনকি হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত ঘটে থাকে। এখন আবার শুরু হয়েছে নতুন উপসর্গ। কাগজে তারই বিবরণ পড়লাম। দেশের বিভিন্ন এলাকায় উঠতি বয়সী কিশোর ও তরুণদের নিয়ে গড়ে ওঠা গ্যাং বা অপরাধী চক্র কিছুদিন পরপর বিভিন্ন ঘটনায় আলোচনায় আসছে। টিকটক ও লাইকির জন্য ভিডিও করাকে কেন্দ্র করেও গ্যাং তৈরি হচ্ছে, যাতে আকৃষ্ট হয়ে অনেকে ফাঁদেও পড়ছে। সম্প্রতি ভারতে পাচার হওয়া এক তরুণীকে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর র‌্যাব-পুলিশ নারী পাচারকারী একটি চক্রের সন্ধান পায়, যারা টিকটক ভিডিও বানানোর ফাঁদে ফেলে অনেক তরুণীকে ভারতে পাচার করেছে / রাত হলে উচ্চ শব্দে হর্ন বাজিয়ে মোটরসাইকেলে বের হয় উঠতি বয়সের বখাটেদের দলটি। দাপিয়ে বেড়ায় মেয়র হানিফ মোহাম্মদ ফ্লাইওভারে, মানুষকে উত্ত্যক্ত করার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে ছিনতাই করে। নিজেদের নাম দিয়েছে ‘রক কিং গ্যাং’। রাজধানীর শনির আখড়ার গোবিন্দপুরের কিছু তরুণ মিলে এই গ্যাং বা অপরাধী চক্র গড়ে তুলেছেন। চুলে অদ্ভুত রং করে এবং ভিডিও শেয়ারিং এ্যাপ লাইকিতে ভিডিও তৈরি ও আপলোড করে অন্য তরুণদের আকৃষ্ট করেন। দলনেতা মোঃ রকি (২২) অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। তার বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও বিক্রির অভিযোগও রয়েছে। গত ১৬ মে সন্ধ্যার পর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে একটি কারের গতি রোধ করে চালককে গালাগালি এবং মারধরের চেষ্টা করে এই গ্যাংয়ের সদস্যরা। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে র‌্যাব। গত সোমবার রাতে শনির আখড়া থেকে এই গ্যাংয়ের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে। তবে দলনেতা রকি এখনও পলাতক। টেস্ট ট্র্যাকে মেট্রোরেল টেস্ট ট্র্যাক বা পরীক্ষামূলক চলাচলের লাইনে চলা শুরু করেছে মেট্রোরেলের ট্রেন। গত বুধবার শুরু হওয়া পরীক্ষামূলক এই চলাচল বেশ কিছুদিন চলবে। উত্তরায় মেট্রোরেলের ডিপোর ভেতরে একেবারে উত্তর পাশে এই টেস্ট ট্র্যাক স্থাপন করা হয়েছে; যা দৈর্ঘ্যে ১ দশমিক ১ কিলোমিটার। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি (ডিএমটিসিএল) সূত্র জানায়, এই লাইনে মূল লাইনের মতোই সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এই লাইনে চলাচলের মাধ্যমে ট্রেনের সঙ্গে লাইনের এবং বিদ্যুত ও সঙ্গেত ব্যবস্থার সমন্বয় ঠিক করা হবে। এরপর ট্রেনগুলো ডিপোর বাইরে উড়ালপথে পরীক্ষামূলক চলাচল করবে। ট্রেনের প্রতিটি সেটে ছয়টি কোচ রয়েছে। ডিএমটিসিএল ঢাকায় মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ ও ট্রেন চালানোর দায়িত্বে নিয়োজিত। এর মধ্যে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের লাইনে (লাইন-৬) এসব ট্রেন চলাচল করবে। ডিএমটিসিএলের তথ্য অনুসারে, ১ জুন সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে দ্বিতীয় মেট্রোরেল সেট ঢাকায় পৌঁছায়। এর আগে গত ২১ এপ্রিল মেট্রোরেলের প্রথম এক সেট ট্রেন ঢাকায় আসে। ১২ মে বাংলাদেশের প্রথম বিদ্যুতচালিত এই ট্রেন উত্তরা ডিপোর ভেতরেই ৫০০ মিটার এলাকায় চালিয়ে দেখা হয়। এর মাধ্যমে বৈদ্যুতিক ট্রেনের যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। ডিএমটিসিএলের অধীনে ঢাকা ও এর আশপাশে মেট্রোরেলের ছয়টি লাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রথমটি লাইন-৬। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানের কাওয়াসাকি-মিতসুবিশি কনসোর্টিয়ামকে ২৪ সেট ট্রেন নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয় ২০১৭ সালে। দুই পাশে দুটি ইঞ্জিন আর চারটি কোচের সমন্বয়ে ট্রেনের সেটগুলো তৈরি হচ্ছে জাপানে। এরই মধ্যে প্রস্তুত হয়েছে পাঁচ সেট ট্রেন, যার দুটি দেশে এসে পৌঁছেছে। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) এই ট্রেনে প্রতিটি কোচের ভেতরে দুই সারিতে সবুজ রঙের লম্বা আসন পাতা রয়েছে। মাঝখানের প্রশস্ত খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা আছে। দাঁড়ানো যাত্রীদের জন্য ওপরের দিকে হাতল রয়েছে। ট্রেনের উচ্চতা এমন যে স্টেশনে থামার পর এটি একেবারে প্ল্যাটফর্মের সমতলে থাকবে। এতে সহজেই যাত্রীরা হেঁটে ট্রেনে উঠতে পারবে। মেট্রোরেলের লাইনের দুই পাশে একটু পরপরই বিদ্যুতের খুঁটি থাকবে। দুই খুঁটি থেকে বিদ্যুতের সংযোগ যাবে তারে। আর তারটি ট্রেনের ওপরের অংশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিদ্যুত সঞ্চালনের কাজ করবে। এর মাধ্যমেই চলবে ট্রেনটি। এই ব্যবস্থাটিকে বলা হচ্ছে ‘ওভারহেড ক্যাটিনারি সিস্টেম’। ট্রেনগুলোয় ডিসি ১৫০০ ভোল্টেজ বিদ্যুত সরবরাহব্যবস্থা থাকবে। কোচের দুই পাশে চারটি করে দরজা। প্রতিটি ট্রেনের যাত্রী ধারণক্ষমতা হবে ১ হাজার ৭৩৮ জন। ভাড়া পরিশোধের জন্য থাকবে স্মার্টকার্ড টিকেটিং ব্যবস্থা। বিশ্ব হাইড্রোগ্রাফি দিবস আন্তর্জাতিক হাইড্রোগ্রাফিক সংস্থা (আইএইচও) প্রতিষ্ঠার স্মরণে প্রতিবছর ২১ জুন ‘বিশ্ব হাইড্রোগ্রাফি দিবস’ পালন করা হয়। এ বছরের বিশ্ব হাইড্রোগ্রাফি দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘হাইড্রোগ্রাফিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার এক শ বছর।’ সকল হাইড্রোগ্রাফিক সংস্থাসমূহের সঙেঙ্গ জড়িত শিল্পকারখানাসমূহ এবং বিশেষজ্ঞগণের সহযোগিতা এবং অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে সমুদ্রকে আরো গভীরভাবে জানার জন্য সুযোগ করে দিয়েছে। এ বছরের প্রতিপাদ্যটি এরই প্রতিফলন। ২১ জুন ১৯২১ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি সৃষ্টি হয়েছিল এবং সেসময় সংস্থাটির নাম ছিল আন্তর্জাতিক হাইড্রোগ্রাফিক ব্যুরো (আইএইচবি)। বর্তমান নামটি ১৯৭০ সালে সদস্য দেশগুলো কর্তৃক এক অধিবেশনের মাধ্যমে গৃহীত হয়। এ বছর বিশ্ব হাইড্রোগ্রাফি দিবসটির ভিন্ন তাৎপর্য রয়েছে। কারণ এ বছর ২১ জুন সংস্থাটি শতবর্ষে পদার্পণ করছে। বিশ্বজুড়ে সকল সদস্য দেশগুলো এই সংস্থাটির প্রতিষ্ঠার শততম বার্ষিকী উদযাপন করছে। আইএইচও একটি আন্তর্জাতিক পরামর্শমূলক সংস্থা। সকল হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ এবং নটিক্যাল চার্টসমূহের তদারকি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সংস্থাটি জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত। উনিশ শতকের শেষের দিকে বিশ্বজুড়ে হাইড্রোগ্রাফার এবং সমুদ্রবিজ্ঞানীগণ হাইড্রোগ্রাফিক যাবতীয় কার্যাবলী একই মান ও পদ্ধতিতে সম্পন্নের জন্য একটি স্থায়ী কমিশন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। গত ২ জুলাই ২০০১ সালে বাংলাদেশ আইএইচওর ৭০তম সদস্য নির্বাচিত হয়। বাংলাদেশের সমুদ্র জলসীমার হাইড্রোগ্রাফি কার্যসমূহ বাংলাদেশ নৌবাহিনী সম্পন্ন করে থাকে। হাইড্রোগ্রাফি হলো সেই বিজ্ঞান যা সমুদ্র, সমুদ্র তলদেশ এবং তৎসংলগ্ন উপক‚লীয় অঞ্চলের ভৌত বৈশিষ্ট্যাবলী পরিমাপ করে। তবে এটি শুধুমাত্র নটিক্যাল চার্ট এবং প্রকাশনার মধ্যে আবদ্ধ নয়। এটি সমুদ্র ও সমুদ্র বিজ্ঞানের সকল শাখা-প্রশাখার সঙ্গে জড়িত। সামুদ্রিক সম্পদের ব্যবহার, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনা, সমুদ্রসীমা নির্ধারণ, সামুদ্রিক পরিকল্পনা, সুনামি ও জলোচ্ছ¡াস মডেলিং, উপক‚লীয় এলাকার ব্যবস্থাপনা, সামুদ্রিক পর্যটন এবং সমুদ্র প্রতিরক্ষা ইত্যাদি সকল বিষয়ে হাইড্র্রোগ্রাফি বিশেষভাবে জড়িত। ফলে এর যথাযথ গুরুত্ব সকলের অনুধাবন করা প্রয়োজন। ২০ জুন ২০২১ [email protected]
×