ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নারীর আইনী সুরক্ষা

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ২২ জুন ২০২১

নারীর আইনী সুরক্ষা

সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে বাংলাদেশের অবস্থান বৈশ্বিক সূচকে নজরকাড়া এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে। তবে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে নারীদের ব্যবসা ও ক্ষমতায়নে আইনী সুরক্ষায় পুরুষের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। ‘নারী, ব্যবসা ও আইন’ সংক্রান্ত এই তথ্যটি সপ্তমবারের মতো প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। নারীর প্রতিদিনের জীবনযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ সূচককে নির্ণায়ক ধরে ১০০ স্কোরের ভিত্তিতে প্রকাশ করা এই প্রতিবেদনটি সারাবিশ্বের নারী সমাজের সার্বিক অধিকার, ক্ষমতা আর উন্নয়নের চিত্রকে তুলে ধরে আইনী সুরক্ষার প্রেক্ষিতে। চিত্রটিতে আগের বছরের তুলনায় বাংলাদেশ ২ ধাপ পিছিয়ে গেছে। এতে তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে দেখা যায় দেশে নারীরা পুরুষের তুলনায় আইনী বিধান ভোগ করে প্রায় অর্ধেক। আটটি অতি আবশ্যক নির্দেশক নিয়ে বিশ্বব্যাংক যে প্রতিবেদন সামনে নিয়ে আসে সেখানে ভারতের অবস্থানই নজরকাড়া, ৭৪.৪ স্কোর নিয়ে ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় একেবারে শীর্ষে। সেখানে ৪৯.৪ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান একই জায়গায়। মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের ওপরেই। ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য রাষ্ট্রে নারীদের শ্রম অধিকার আইন, নিরাপত্তার বলয় এবং কর্মক্ষেত্রে মান্ধাতা আমলের বিধিনিষেধ বিলোপ করার কারণে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে সামনের দিকে অনেক এগিয়ে গেছে। বিশেষ করে সময়ের চাহিদায় নারীর কর্মক্ষেত্র প্রসারিত হয়েছে ব্যবসা বাণিজ্যেও। সেখানে হরেক রকম বৈষম্য আর প্রতিবন্ধকতায় নারী পিছিয়ে থাকে কর্মক্ষেত্রে পুরুষ সহযোদ্ধার থেকে। ঋণ প্রদান থেকে আরম্ভ করে ব্যবসায়িক ছাড়পত্র কিংবা অনুমোদন নিতে আইনী পর্যায়ে নারী উদ্যোক্তাদের হয়রানিরও শিকার হতে হয়। পর্যাপ্ত পুঁজির অভাব ও প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত নারীরা ক্ষুদ্র ব্যবসায় আরও বড় বিনিয়োগ। বিভিন্ন তথ্যেও উঠে আসে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে নারীদের ব্যবসায়িক সাফল্যের কথা। যেখানে তারা পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে কিছুটা হলেও এগিয়ে। কিন্তু বড় বড় শিল্প-কারখানায় নারীদের প্রাতিষ্ঠানিক বিজয় এখনও হাতেগোনার মতো। যদিও নারীদের বর্তমানে ব্যবসার দিকে অতি মাত্রায় সম্পৃক্ত হওয়ার ব্যাপারটি সামনে চলে আসছে। তবে ব্যাংক থেকে শুরু করে বেসরকারী ঋণ দাতা সংস্থাগুলো নারী উদ্যোক্তাদের ব্যাপারে তেমন দেখায় না। অথচ নারীরা ব্যবসার কারণে ঋণ নিলেও একজন পুরুষের তুলনায় তাড়াতাড়ি পরিশোধও করে। তার পরেও তাদের ঋণ পেতে গলদঘর্ম হতে হয়। কর্মসংস্থান অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের আইনী সক্ষমতা থাকলেও বেশ কয়েকটি সূচকে তারতম্যও লক্ষ্যণীয়। এমনকি অবসরকালীন ভাতা প্রদানেও নারীর আইনী সুরক্ষা পুরুষের তুলনায় ৪/১ অংশ। সিংহভাগ নারীর কৃষি, শিল্প ও নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে শ্রম মজুরি পুরুষের তুলনায় কম এবং সেখানে আইনী কোন সহায়তাও তারা পান না। আন্তর্জাতিক শ্রম আইনে এমন কোন বিভাজন বা বিধি নেই। তবে সময়ের মিছিলে নারীরা আইনী সুরক্ষা পেতে ক্রমান্বয়ে আগের তুলনায় এগিয়ে যাচ্ছে। সামনে সেটা আরও বাড়বে বলেই বিশ্বব্যাংকের প্রত্যাশা।
×