ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম “সূর্যডিম” এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জে

প্রকাশিত: ১২:৫৩, ২১ জুন ২০২১

বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম “সূর্যডিম” এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জে

অনলাইন ডেস্ক ॥ ‘সূর্যডিম’একটি উন্নত জাতের আম। এই আমকে মিয়াজাকি, রেড ম্যাঙ্গো অথবা এগ অব দ্য সানও বলা হয়। তবে বাংলায় এই আমটি পরিচিতি পেয়েছে "সূর্যডিম" নামে।বিশ্বে সবচেয়ে দামি এ আমটি ফলেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারে। টকটকে লাল রঙ ও আকারে বড় হওয়ায় এই আম এগ অব দ্য সান' বা সূর্যডিম নামে পরিচিত। দামি এই আমটি বাংলাদেশের কোন জাত নয়। আমটি জাপানি প্রজাতির বলে জানিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের (আম গবেষণা কেন্দ্র) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা। ঝোপজঙ্গলে ঢেকে ছিল গাছটি। তাই চোখে পড়েনি। জঙ্গল পরিষ্কারের পর এবার যখন আকর্ষণীয় সবুজের ওপর লাল রং ছেয়ে গেল, তখন আমটি চোখে পড়ল ঠিকই। পরিপক্ব হওয়ার পর আকর্ষণীয় এই আমের জাত নিয়ে ভাবনায় পড়েন চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক মাযদার হোসেন। সহকর্মী উদ্যানতত্ত্ববিদদের নিয়ে বসলেন। অন্তর্জালে খোঁজ করলেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র (আম গবেষণা কেন্দ্র) বৈজ্ঞানিক আবু সালেহ মো. ইউসুফের সহযোগিতা নিয়ে সিদ্ধান্তে আসেন, আমটি বিখ্যাত মিয়াজাকি বা সূর্যডিম। বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. ইউসুফ বলেন, ‘হর্টিকালচার সেন্টারের একটি গাছের আমকে মিয়াজাকি আম বলেই আমাদের মনে হয়েছে।’ মিয়াজাকি বা সূর্যডিম আম সম্পর্কে সরকারের ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প’-এর পরামর্শক কে এম কামরুজ্জামান বলেন, জাপানের মিয়াজাকি নামক স্থানে উদ্ভাবিত বলে আমটির নাম মিয়াজাকি। জাপানে পাকার প্রায় তিন সপ্তাহ আগে থেকে আমটিকে হুকের সাহায্যে সূর্যের দিকে টেনে রাখা হয়। যেন আমটি ভালোভাবে রোদ পায়। এ সময় আমগাছের নিচে জাল টানিয়ে রাখা হয়। ভালোভাবে পেকে যাওয়ার পর আমটি জালের ওপর ঝরে পড়ে। ভালোভাবে রোদ লাগানোর কারণে এই আমের স্বাদ বেড়ে যায়। আম পাকানোর আগের এই প্রক্রিয়ার জন্যই আমটির আরেক নাম ‘সূর্যডিম’। এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের জামতারায় মনামিনা কৃষি খামারের ফলচাষি মতিউর রহমান জানান, তাঁর খামারে এক বছর বয়সী সাত-আটটি আমগাছ আছে। এর মধ্যে একটি গাছে সূর্যডিম আম ধরেছে। ফলবিজ্ঞানী শরফ উদ্দীনের কাছে আমের ছবি পাঠালে তিনি জানিয়েছেন, এ আম মিয়াজাকি বা সূর্যডিম জাতের। ফল বিভাগ, উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শরফ উদ্দীন বলেন, মতিউর রহমানের বাগানের আম মিয়াজাকি বা সূর্যডিম জাতের। একই ইউনিয়নের নয়নগর গ্রামের আমচাষি গোলাম মোস্তফা জানান, তাঁর বাগানের ১০-১২টি গাছের মধ্যে ২টি গাছে সূর্যডিম বা মিয়াজাকি আম ধরেছে। হর্টিকালচার সেন্টারের গাছের আমের মতোই এই আম। তিনি আম সেন্টারের কর্মকর্তাদের দেখিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, এই আম সূর্যডিম বা মিয়াজাকি জাতের। হর্টিকালচার সেন্টারের গাছে ধরা আমগুলোর গড় ওজন ২৫৫ গ্রাম। ভক্ষণযোগ্য অংশ প্রায় ৮১ ভাগ। ছিলকা খুবই পাতলা। আঁশহীন শাঁস। মিষ্টতা (টিএসএস) ১৫ শতাংশ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক মাযদার হোসেন বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে জাপানের এই মিয়াজাকি বা সূর্যডিম আম। বিভিন্ন গণমাধ্যমে জেনেছি, পার্বত্য চট্টগ্রামে এই আমের চাষ হচ্ছে। দামও পাওয়া যাচ্ছে ভালো। তাই আমের রাজ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জেও এ আম প্রসারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে এই হর্টিকালচার সেন্টার থেকে।’ দামি এই আমটি বাংলাদেশের কোন জাত নয়। আমটি জাপানি প্রজাতির বলে জানিয়েছেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা। তবে এটি বিভিন্ন দেশে চাষ হচ্ছে। জাপানি ভাষায় আমটিকে বলা হয় 'মিয়াজাকি'। বিশ্ববাজারে এটি 'রেড ম্যাঙ্গো' বা 'এগ অব দ্য সান' নামেও পরিচিত। তবে বাংলায় এই আমটি পরিচিতি পেয়েছে "সূর্যডিম" নামে। এই আমের গড়ন সাধারণ আমের চাইতে বড় ও লম্বা, স্বাদে মিষ্টি এবং আমের বাইরের আবরণ দেখতে গাঢ় লাল অথবা লাল-বেগুনির মিশ্রণে একটি রঙের। একেকটি আমের ওজন ৩৫০ থেকে ৪৫০ গ্রামের মতো বলে জানিয়েছেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের (আম গবেষণা কেন্দ্র) মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, সূর্যডিম বা মিয়াজাকি আম বিশ্বে রেড ম্যাংগো নামে পরিচিত। এ আম বিশ্ববাজারে সবচেয়ে দামি। এটি মূলত জাপানি আম। আমটি খেতে খুবই সুস্বাদু। প্রাকৃতিকভাবে আমটি লাল হওয়ায় দেখতে অনেক সুন্দর। এই আমের গড়ন সাধারণ আমের চাইতে বড় ও লম্বা, স্বাদে মিষ্টি এবং আমের বাইরের আবরণ দেখতে গাঢ় লাল অথবা লাল-বেগুনির মিশ্রণে একটি রঙের।
×