ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্যক্তিগত ও পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণেই এমন পৈশাচিকতা

প্রকাশিত: ২২:৩৭, ২১ জুন ২০২১

ব্যক্তিগত ও পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণেই এমন পৈশাচিকতা

শংকর কুমার দে ॥ হঠাৎ করেই বেড়েছে পারিবারিক সহিংসতা। একের পর এক ঘটছে নৃশংস খুনসহ নানা পৈশাচিক ঘটনা। আপনজন, স্বজনরা ঘটাচ্ছে অবিশ্বাস্য এইসব ঘটনা। মা খুন করছে সন্তানকে, স্ত্রী খুন করছে স্বামীকে, স্বামী পুড়িয়ে মারছে স্ত্রীকে, ভাই খুন করছে ভাইকে। খুনের পর লাশ রাখা হচ্ছে শয়নকক্ষে, রাস্তায়, বালুর ভেতর, বস্তার ভেতর, কাদার ভেতর, সেপটিক ট্যাঙ্কে, ড্রেনে কিংবা ডাস্টবিনে। প্রায় প্রতি দিনই এমন সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে গণমাধ্যমে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব-বিরোধ অধিকাংশ খুনের কারণ। অপরাধ বিশেষজ্ঞ, সমাজ বিজ্ঞানী ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পরিবর্তিত আর্থ সামাজিক পরিস্থিতিই এর মূল কারণ। করোনায় ঘরবন্দী হওয়া, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, তথ্য প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাব এবং নৈতিক অবক্ষয়ে মানুষ নৃশংস হয়ে উঠছে। পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক অবক্ষয় রোধ এবং পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করার পক্ষে মত দিচ্ছেন। ‘আমি মা-বাবা ও বোনকে হত্যা করেছি, আপনারা দ্রুত না এলে আমার স্বামী ও মেয়েকেও হত্যা করব’-পুলিশের জরুরী সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে একথা বলেছে মেহজাবিন ইসলাম মুন। মা-বাবা ও বোনকে হত্যা করে পুলিশে ফোন করে স্বীকারোক্তি। ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হাত-পা বেঁধে শ^াসরোধ করে হত্যাকা-ের পর লাশের পাশে থেকে এই ধরনের ফোন করার ঘটনার কথা কল্পনা করাও কঠিন। এই খুনের ঘটনার পেছনে গল্প রয়েছে। তাই বলে নিজ হাতে মা-বাবা বোনকে হত্যা এবং নিজের স্বামী-সন্তানকে হত্যার চেষ্টা করা কি কোন গল্পের অংশ হতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সামাজিক অবক্ষয়ের এক মর্মান্তিক ঘটনা এটি। রাজধানী ঢাকার কদমতলী এলাকায় গত শনিবার ঘটেছে এই ঘটনা। রাজধানী ছাড়াও প্রায় একই সময় সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুরে বাড়ি থেকে মা- ছেলেসহ তিনজনের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় নিহতের স্বামী হিফজুর রহমানকেও। এর এক দিন আগে কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কের কাস্টমস মোড়ে প্রকাশ্য দিবালোকে স্ত্রী সন্তানসহ তিনজনকে খুন করেছে পুলিশের এক সহকারী উপপরিদর্শক। পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৫ বছরে সারাদেশে খুনের ঘটনা ঘটেছে প্রায় ১৭ হাজার। প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৩ হাজার ৪শ’ জন খুনের শিকার হচ্ছে। এর মধ্যে পারিবারিক সহিংসতায় খুনের ঘটনা প্রায় ৪০ ভাগ। সম্প্রতি বেড়েছে এই খুনের ঘটনা। বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। ইতোমধ্যে বেশ কিছু ঘটনার তদন্তে দেখা গেছে খুনের নেপথ্যের কারণগুলোর অন্যতম কারণ পরকীয়া, জমিসংক্রান্ত বিরোধ ও মাদকের অর্থ জোগাড়। এছাড়া ইন্টারনেটের অপব্যবহারে সৃষ্ট মানসিক অসুস্থতা, অসহিষ্ণুতা, অতিমাত্রার ক্ষোভ সৃষ্টিতেও ঘটেছে বেশ কিছু ঘটনা। মানুষের মধ্যে ছাড়িয়ে যাচ্ছে নিষ্ঠুরতার মাত্রা। তুচ্ছ কারণে অসহিষ্ণু হয়ে খুনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। সমাজে সৃষ্টি হচ্ছে আতঙ্ক, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, নৃশংস খুনের ঘটনা বাড়ার পেছনে প্রতিশোধ, জিঘাংসাসহ বেশ কিছু কারণ দেখা যায়। এর পেছনে রয়েছে সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়া এবং আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট। পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হলে একটা মানুষ খারাপ কাজ করতে একটু ভাবে। তারা খারাপ কাজ পরিহার করে মানবিক আচরণ করে। পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে মানুষের মনে নিষ্ঠুরতার মাত্রা বাড়তে পারে। যেসব খুনের ঘটনা ঘটছে তা তদন্ত করে অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। অপরাধ বিশ্লেষণ ॥ অপরাধ ও সমাজ বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যার মনে ক্ষোভ যত বেশি, তার দ্বারা হত্যাকা-ে নৃশংসতা তত বেশি হয়। বীভৎস হত্যার ঘটনা বেড়ে যাওয়া সামাজিক অবক্ষয়ের প্রতিচ্ছবি। সামাজিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে বীভৎসতা বাড়ছে। এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইনী কঠোর পদক্ষেপের পাশাপাশি সামাজিক-পারিবারিক মূল্যবোধ জোরালো করতে হবে। প্রত্যেকটি ঘটনার পেছনে মানসিক ও আর্থিক স্বার্থ রয়েছে। মানুষের চাহিদা, আকাক্সক্ষা বেড়ে গেছে। তাছাড়া আইন থাকলেও এর সঠিক প্রয়োগ করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা গেলে এই ধরনের খুনের ঘটনা কমানো যেতে পারে বলে মনে করেন অপরাধ ও সমাজ বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞগণ। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য মতে, ধর্ষণের সঙ্গে পারিবারিক সহিংসতা, হত্যার মতো নিষ্ঠুর ঘটনা বাড়ছে। অপরাধ, সমাজ ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনায় ঘরবন্দী থাকার পর আর্থিকসহ জীবনের বিভিন্ন ধরনের হতাশা-সঙ্কটে মানুষের হিং¯্রতা বাড়ছে। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অনেকে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। সংঘবদ্ধ অপরাধীরাও সুযোগ খুঁজছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জনসম্পৃক্ততা এবং সামাজিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে মানুষের চাকরি তথা রিজিকে হাত পড়েছে। এটা আরও দীর্ঘ হলে সমাজে বেকারের সংখ্যা বাড়তে পারে। বিশেষ করে অভাবী মানুষের জমানো টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা অস্থির হয়ে ওঠে। তারা আয় রোজগারের জন্য আরও মরিয়া হয়ে উঠলে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। এর জন্য প্রশাসনকে বিশেষভাবে পরিকল্পনা নিতে হবে। মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি এ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান আবদুল কাদের মিয়া বলেন, করোনায় একটি উদ্বেগজনক পরিস্থিতির কারণে অপরাধ সাময়িক কিছুটা কমেছিল, এতে স্বস্তিতে থাকার সুযোগ নেই। মানসিক অস্থিরতা থেকে এবং আর্থিক কারণে অনেকে অপরাধ করতে শুরু করবে। ধৈর্যচ্যুতির কারণে অল্পতেই সহিংস হয়ে উঠছে মানুষ। এখন আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে পুলিশকে নতুন কৌশল অবলম্বন করতে হবে। কমিউনিটিকে সঙ্গে নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডাঃ মোহিত কামাল বলেন, হতাশা থেকে রাগ এবং ধৈর্য হারানোর ঘটনা ঘটছে এখন। এটা ব্যক্তিত্বের ওপরও নির্ভর করে। হতাশার কারণে পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা দেখা যাচ্ছে। কারও কারও অপরাধ মনোভাব তৈরি হতে পারে। হতাশা দূর করতে মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যায়ামগুলো করা দরকার। সামাজিক কর্মকা- এবং জীবিকা নিরাপত্তার নিশ্চয়তাও প্রয়োজন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নুর মোহাম্মদ বলেছেন, ‘সামাজিক অবস্থা, অর্থনীতি, রাজনীতি, রাষ্ট্র ও মহামারী মানুষের আচরণের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। মানুষের মনের ওপর যখন বিরূপ প্রভাব পড়ে তখনই মানুষ উগ্র আচরণ করে। এজন্য আইনের মাধ্যমে মানুষকে সাইকোলজিক্যাল সাপোর্ট যেন দেয়া যায় এমন পদক্ষেপ সরকারের নেয়া উচিত। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মোঃ সোহেল রানা বলেন, ‘করোনাপ্রসূত আর্থিক ও মনস্তাত্ত্বিক চাপসহ পারিবারিক ও সামাজিক নানাবিধ প্রভাবকের কারণে মানুষের স্বাভাবিক এবং অপরাধ আচরণে পরিবর্তন আসতে পারে। এসব ক্ষেত্রে অপরাধের সংখ্যায় নয়, প্রকৃতি ও ধরনে পরিবর্তন বেশি লক্ষ্য করা যায়। তবে কারণ যা-ই হোক, প্রতিটি অপরাধের ক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করছে পুলিশ। পারিবারিক সহিংসতার বিষয়টি পুলিশ সদর দফতরের নজরে আসার পরই সচেতনতা, নিরাপত্তামূলক বিভিন্ন ব্যবস্থা ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। সাম্প্রতিক ঘটনা ॥ মা-বাবা ও সহোদর বোনকে খুন করে ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশকে খবর দেয়া নারী মুন মানসিক বিকারগ্রস্ত মনে করছেন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা। না হলে এমন ঠান্ডা মাথায় আপনজনদের খুন করা সম্ভব ছিল না। মানসিক বিকারের পেছনে পারিবারের সদস্যদের অনৈতিক সম্পর্ক ও নানারকম জটিলতার কথা প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। মুনের বাবা বিদেশ থাকতেন। মা নিজে দেহ ব্যসায় জড়িয়ে পড়ে। বাসায় পতিতা রেখে এই ব্যবসা চালাত। তার দুই মেয়েকেও এই কাজে যেতে বাধ্য করে। এমন পরিস্থিতিতে কোন মেয়ের মানসিক বিকার হতেই পারে। এ ছাড়া পাঁচ বছর আগে মুন তার সাবেক প্রেমিক আমিনকেও খুন করে জেল খেটেছে। জেল থেকে বের হয়ে আবারও বিয়ে করে এবং সন্তানও জন্ম হয়। রাজধানী ঢাকার কদমতলী এলাকার ঘটনার প্রায় একই সময়ে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি দক্ষিণ পাড়া গ্রামের হিফজুর রহমানের স্ত্রী আলিমা বেগম তার ৮ বছরের ছেলে মিজানুর রহমান ও ৩ বছরের শিশুকন্যা তানিশা বেগমকে শয়নকক্ষে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে। ফতেহপুরে বাড়ি থেকে তিনজনের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় আহত অবস্থায় নিহতের স্বামী হিফজুর রহমানকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনজনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য উন্মোচনে কাজ করছে পুলিশ। এর দুই দিন আগে কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কের কাস্টমস মোড়ে প্রকাশ্যে দিবালোকে আসমা খাতুন ও তার ছয় বছরের ছেলে রবিন এবং শাকিল নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যা করেছে সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সৌমেন রায়। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় এএসআই সৌমেন রায়কে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। গত ১০ জুন রাতে রাজধানীর ভাটারায় ছোলমাইদের নামাপাড়ায় ভাড়া বাসায় বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক থাকায় স্ত্রী জোবেদা খাতুনকে ঘুমন্ত অবস্থায় কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে আবুল কাশেম। সাম্প্রতিক খুনের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হচ্ছে স্বামীকে কুপিয়ে হত্যার পর ৬ টুকরো করেছে তার প্রথম স্ত্রী। রাজধানীর মহাখালীতে সংঘটিত এই ঘনায় স্বামীর নাম ময়না। স্বামী খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে স্ত্রী ফাতেমাকে। মহাখালীর আমতলী থেকে হাত-পা ও মস্তকবিহীন মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর কয়েক ঘণ্টা পরে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে কাটা হাত-পা এবং সোমবার দুপুরে বনানীর লেক থেকে বিচ্ছিন্ন মাথা উদ্ধার করা হয়। এরপর নিহতের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে জানা যায় তার নাম ময়না মিয়া। তিনি অটোরিক্সা চালক। বাড়ি কিশোরগঞ্জে। ফাতেমা ছাড়াও তার আরেকটি স্ত্রী রয়েছে। তিনি কিশোরগঞ্জে থাকেন। ফোতেমাকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে ডিবি পুলিশ হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করে। আরও একটি সাম্প্রতিক আলোচিত ঘটনা রাজধানীর কলাবাগানে ঘটেছে। এক নারী চিকিৎসককে হত্যা করে তোষকে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনা। চিকিৎসক সাবিরাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের পর বিছানার তোষকে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট। শামসুদ্দীন আজাদ সাবিরার দ্বিতীয় স্বামী। তার আগের স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। তিনি চিকিৎসক ছিলেন। দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে ছেলে আগের স্বামীর ঘরের। ডিবি পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আজিমুল হক বলেছেন, চিকিৎসক সাবিরা নিহতের ঘটনায় এখন পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত হত্যার কারণ উদ্ঘাটিত হয়নি। পুলিশ মনে করছে, এর পেছনেও পারিবারিক সহিংসতার কোন ঘটনা লুকিয়ে আছে। রাজধানীর দক্ষিণখানে সরদার বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম তার নিজ কক্ষেই পোশাক শ্রমিক আজাহারকে হত্যার পর মরদেহ ছয় খ- করেছে। নিহত আজহারের স্ত্রী আসমা বেগমের সঙ্গে পরকীয়া ছিল ইমাম আবদুর রহমানের। মসজিদের ইমাম ঘাতক আব্দুর রহমানকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে সরদার বাড়ি জামে মসজিদের নির্মাণাধীন সেপটিক ট্যাঙ্ক ভেঙ্গে উদ্ধার করা হয় দক্ষিণখানের বাসিন্দা আজাহারের মরদেহের খ-িত ছয়টি টুকরো। পরকীয়ার কারণে এই নৃশংস খুনের ঘটনায় ঘাতক ইমাম আবদুর রহমান ও আসমা দুই জনেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে আদালতে। রাজধানীর অদূরে গাজীপুরে ঘটেছে আরেক নৃশংস খুনের ঘটনা। স্ত্রী ও তার প্রেমিকের হাতে খুন হয়েছেন স্বামী। খুন করার পর তার লাশও ৬ টুকরা করা হয়। সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে দেহের অংশবিশেষ উদ্ধারের ৩৮ দিন পর হাত-পা, মাথাসহ আরও পাঁচ টুকরা উদ্ধার করে নিহতের পরিচয় শনাক্ত করেছে পুলিশ। নিহত যুবকের নাম সুমন মোল্লা। তিনি বাগেরহাটের চিতলমারী থানার গোলা বরননী বাজার এলাকার জাফর মোল্লার ছেলে। তাকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকায় নিহত সুমনের স্ত্রী আরিফা বেগম ও আরিফার প্রেমিক তনয় সরকারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরকীয়া প্রেমের জেরে এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয় বলে জানা গেছে। রাজধানীর ওয়ারীতে প্রথমে মায়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে এক যুবক। এরপর মেয়েকেও প্রেমের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে। এ নিয়ে সন্দেহ, মনোমালিন্যে সৃষ্টি হয় পারিবারিক দ্বন্দ্ব। এই বিরোধের জের ধরেই খুন হয়েছেন সজীব হাসান নামের এক যুবক। হত্যার পর লাশ কেটে করা হয় পাঁচ টুকরা। সজীবের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডে। পুলিশ এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শাহানাজ পারভীন নামের এক নারীকে গ্রেফতার করেছে। এ সময় উদ্ধার হয়েছে হত্যায় ব্যবহার করা রক্তমাখা ছুরি ও বঁটি। গ্রেফতার হওয়ার পর শাহানাজ পারভীন পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, ড্রেসে পুঁতি বসানো এবং বাসায় এসে কিছু ড্রেস দিয়ে যাওয়ার সুবাদে সজীব তার বাসায় আসা-যাওয়া করতেন। এই সুযোগে সজীবের সঙ্গে তার মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। বিষয়টি নিয়ে এর আগে সজীবকে বেশ কয়েকবার সতর্কও করেছেন তিনি। এর পরও সজীব থেমে থাকেননি। বরং তার মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের আশায় বারবার বাসায় যাওয়া-আসা করতেন। এর জের ধরেই ঘটেছে নৃশংস হত্যাকান্ড। রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জের বেউতা এলাকায় মালয়েশিয়া প্রবাসী আল-আমিনের বাড়িতে সাভারের ভাকুর্তা এলাকার কবিরাজ মফিজুর রহমানকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। পরে ৮ থেকে ১০ টুকরা করে প্রতিবেশীর মাগুর মাছের খামারসহ বিভিন্নস্থানে ফেলে রাখা হয়। প্রথমে হাত-পা, মাথাবিহীন শরীর ও পরে মাথা উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশ মাকসুদা আক্তার লাকি, নজরুল ইসলাম নজু ও সালাউদ্দিন নামে ৩ জনকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশকে জানিয়েছে, কবিরাজির নামে শারীরিক সম্পর্ক ও প্রতারণার প্রতিশোধ নিতেই মফিজুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এই নৃশংস রোমহর্ষক খুনের ঘটনার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ।
×