ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আরও ৫৩ হাজার ৩৪০ পরিবারকে জমিসহ ঘর প্রদান অনুষ্ঠানের উদ্বোধনীতে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা এ দেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন

ওরা লুটপাটের রাজনীতিই করেছে

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ২১ জুন ২০২১

ওরা লুটপাটের রাজনীতিই করেছে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অসহায় ও ঠিকানাবিহীন ৫৩ হাজার ৩৪০টি পরিবারকে দুই শতক জমিসহ সেমিপাকা ঘর বিনামূল্যে বিতরণকালে আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেছেন, জাতির পিতা এদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। মানুষ একটা যখন ঘর পায় তার মধ্যে যে আনন্দ, তাঁর মুখে যে হাসি, এর থেকে বড় পাওয়া আর কিছু নয়। আমি মনে করি, আমার জন্য এর থেকে বড় পাওয়া আর কিছু হতে পারে না। যখন এই মানুষগুলো এই ঘরে থাকবে, তখন আমার বাবা-মার আত্মা শান্তি পাবে। লাখো শহীদের আত্মা শান্তি পাবে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা কেবল ‘লুটপাটের রাজনীতি’ করে গেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা ক্ষমতায় থেকে শুধু লুটপাটের রাজনীতি করে গেছেন, দেশ ও জনগণের উন্নয়নের জন্য তাদের কোন চিন্তাই ছিল না। জনগণের কল্যাণে কিছু করেনি। ক্ষমতায় বসে শুধু নিজে খাব, নিজে ভাল থাকব সেটা তো না। ক্ষমতা মানে ভোগ বিলাস নয়, ক্ষমতায় থাকা মানে হচ্ছে মানুষের সেবা করার একটা সুযোগ, মানুষের জন্য কিছু কাজ ও কল্যাণ করার সুযোগ। মানুষের সেবক হিসেবে যখনই প্রথম সরকার গঠন করি, আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম যে, জনগণের সেবক হিসেবেই আমরা নিজেকে তৈরি করেছি এবং সেভাবেই সাহায্য করে যাচ্ছি, সেবক হয়েই জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য দেশের সকল ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষ ঘর পাবে, দেশে একটি মানুষও ঠিকানাবিহীন থাকবে না। রবিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারাদেশের ৪৫৯টি উপজেলায় ভূমিহীন-গৃহহীন জমিসহ গৃহদান কার্যক্রমের (দ্বিতীয় পর্যায়ে) ৫৩ হাজার ৩৪০টি পরিবারের মাঝে জমিসহ ঘর প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে নামজারিসহ জমির দলিল, ঘরের চাবি উপকারভোগীদের হাতে তুলে দেন। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় দুদফায় দেশের প্রায় সোয়া লাখ মানুষকে বিনামূল্যে জমিসহ ঘর প্রদানের ঘটনা শুধু দেশেই নয়, সারাবিশ্বের মধ্যে মানবকল্যাণে এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। বিশ্বে নজির স্থাপন করা এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যেও উঠে আসে মুজিববর্ষেই ধারাবাহিকভাবে দেশের সব ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে স্থানীয় স্বপ্নের নীড় গড়ে দেয়ার দৃঢ় প্রত্যয়। গত জানুয়ারিতে প্রথম পর্যায়ে ৬৯ হাজার ৯০৪টি পরিবারকে ঘর প্রদানের পর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে রবিবার আরও ৫৩ হাজার ৩৪০ পরিবারকে দুই শতক জমির মালিকানাসহ সেমিপাকা ঘর উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে আমি যেহেত যেতে পারিনি, আমার পক্ষ থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, ইউএনওসহ প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা উপকারভোগীদের হাতে জমির দলিল ও ঘরের চাবি তুলে দেবেন। তিনি বলেন, মানুষের জন্যই মানুষ। মানুষের জন্য, তাঁদের কল্যাণে কাজ করতে পারাটাই সব থেকে বড় কথা। আজকে যারা ঘর পেয়েছেন, তাদের কষ্ট দূর করা এবং তাদের মুখের হাসি আমরা জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস গণভবন থেকে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। তিনি অনুষ্ঠানে ‘অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল’ একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী ৪টি উপজেলার উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন। একসঙ্গে এত মানুষকে বিনামূল্যে বাড়ি-ঘর দেয়ার ঘটনা পৃথিবীতে নজিরবিহীন উল্লেখ করে করে ড. আহমদ কায়কাউস তাঁর উপস্থাপনায় বলেন, আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে আরও ১ লাখ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বিনামূল্যে জমিসহ ঘর প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। বিশ্বে নজির সৃষ্টিকারী এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৫৩ হাজার ৩৪০টি অসহায় ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমির দলিল স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে করে দেয়া হয়েছে। তাঁদের নামে স্থায়ী দলিলের পাশাপাশি নামজারি করে খাজনা দাখিলাও দেয়া হয়েছে। সেমিপাকা ঘরে আছে দুটি রুম, একটি বড় বারান্দা, রান্নাঘর ও টয়লেট। পাশাপাশি সুপেয় পানি ও বিদ্যুত ব্যবস্থাও আছে। প্রকল্প এলাকায় বিদ্যালয়, খেলার মাঠ এবং মসজিদসহ ধর্মীয় উপাসনালয়ও রয়েছে। এই মহতি কর্মকা-ে প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিসহ অনেকেই এগিয়ে আসায় সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের কর্মকা-ে উৎসাহিত হয়েই সচিব এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ বেসরকারী খাতেও অনেকে এগিয়ে এসে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। সবার ভেতরে এই চেতনা জেগেছে যে- ছিন্নমূল মানুষ যারা বস্তিতে, ফুটপাথে, রেললাইনের ধারে ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজে মানবেতরভাবে জীবনযপন করছে সে যখন একটা আশ্রয় পায় তখন তার জীবনটাই বদলে যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা গুচ্ছগ্রাম নির্মাণের মাধ্যমে ভূমিহীনদের খাসজমি দেয়া এবং তাদের জন্য গৃহনির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন। সেই থেকে যাত্রা শুরু। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে এই সীমিত আর্থিক সম্পদ নিয়েই আমার কিন্তু এই ছিন্নমূল মানুষ, গৃহহারা মানুষ, ভূমিহীন মানুষ- তাদের পুনর্বাসন কাজ শুরু করি। ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে স্থায়ী ঠিকানা দিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে ৫ কোটি টাকা অনুদান দিয়ে তহবিল চালু করা হয়। পরে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার এগিয়ে আসেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত আমরা সরকারের প্রথম পাঁচ বছর, আর তারপর দ্বিতীয়বার এবং আজকে আমরা সরকারে আছি একটানা তৃতীয়বার। এর মধ্যে আমরা প্রায় ১০ লাখের ওপর মানুষকে গৃহ নির্মাণ করে দিতে সক্ষম হয়েছি। জাতির পিতা এই দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। আমাদের লক্ষ্য তাঁর সৃৃষ্ট এই বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। ‘আমাদের দেশটা দুর্যোগপ্রবণ একটি দেশ’- সেকথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই এই ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে ঘরবাড়ি করে দেয়া এবং জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেয়ার মাধ্যমে পুনর্বাসনের লক্ষ্য নিয়েই তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এই ঘরবাড়ি নির্মাণে আমরা প্রশাসনের ওপর সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী যাঁদেরকেই দায়িত্ব দিয়েছি, তাঁরা অনেক আন্তরিকতার সঙ্গে সেই কাজগুলো করেছেন। এজন্য সংশ্লিষ্ট সকলকেও আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। সরকারপ্রধান বলেন, দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করায় তাঁর সরকারের লক্ষ্য পূরণে সব থেকে বেশি যে জিনিসটার দরকার সেটি হচ্ছে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া। সেটিও জাতির পিতা ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ১০ শয্যার হাসপাতাল তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করে শুরু করেছিলেন উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, তাঁর সরকার পরবর্তীতে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা সাধারণের নাগালের মধ্যে নিয়ে এসেছে। বর্তমানে ৩০ প্রকারের ওষুধও বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে সেখান থেকে। পাশাপাশি মাতৃত্বকালীন সেবা, মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান, ল্যাকটেটিং মাদারকে ভাতার আওতায় নিয়ে আসা এবং শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হারও তাঁর সরকার কমাতে পেরেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছিন্নমূল মানুষকে একটা ঠিকানা করে দেয়ার মাধ্যমে মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই করে দেয়ার এই প্রকল্পকে কেবল আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমেই নয়, ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নানাবিধ প্রকল্পের মাধ্যমে ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জাতির পিতা ভূমিহীনদের খাসজমি বণ্টনে শুরু করে যাওয়া ‘গুচ্ছগ্রাম’ প্রকল্পের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই ’৯৬ সালে সরকারে আসার পর তাঁর সরকার ভূমিহীনদের মাঝে খাস জমি বিতরণ এবং গৃহহীন-ভূমিহীনকে ঘর করে দেয়ার ‘আশ্রয়ণ’ প্রকল্পের শুরু করেন। তিনি বলেন, সে সময়ই বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে গৃহহীণ তহবিল নামে একটি তহবিলও গঠন করেন। যেখানে এনজিওদের ১ শতাংশ সার্ভিস চার্জে ঋণ দেয়া হতো যাদের ভিটে আছে সেখানে একটি ঘর করে দেবেন। কিন্তু তারা ৫ শতাংশের বেশি উপকারভোগীদের থেকে নিতে পারবেন না এবং সেভাবেও প্রায় ২৮ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের এক নেতার সহযোগিতায় তাঁর প্রদত্ত জমি দিয়েই নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সেন্টমার্টিন দ্বীপে ৭০টি পরিবারকে প্রথম পুনর্বাসন করে তাঁর সরকার। যদিও তখন দেশে অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল ছিল না। কেননা ’৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নে এদেশে কেবল লুটপাটের রাজনীতিই করে গেছে, কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য কিছুই করেনি। ঐ সীমিত সম্পদ দিয়েই আমরা ভূমিহীন-গৃহহীন, ছিন্নমূল মানুষকে পুনর্বাসিত করার কাজটা শুরু করি এবং এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ লাখের কাছাকাছি ভূমিহীন- গৃহহীন মানুষকে আমরা ঘর প্রদান করতে সক্ষম হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাভাবিকভাবেই দ্বিতীয় মেয়াদে সরকারে এসেই তাঁদের প্রচেষ্টা ছিল অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে আরও স্বাবলম্বী করা। যে কারণে তাঁর সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর বাস্তবায়ন শুরু করে এবং ’৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে কক্সবাজারে ক্ষতিগ্রস্তদের কক্সবাজারেরই একটি জায়গা ‘খুরুশকুল’ এ বহুতল ভবন নির্মাণ করে পুনর্বাসন শুরু করে। পাশাপাশি নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং নদীর ভাঙ্গনে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া লোকজনকে খুঁজে বের করে তাঁদের ঘর-বাড়ি করে দেয়া হচ্ছে। গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে ঘরবাড়ি করে দেয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আজকে আশ্রয়ণের মাধ্যমে এবং অন্যান্য কর্মসূচীর মাধ্যমে গৃহহীন মানুষকে ঘরবাড়ি তৈরি করে দিচ্ছি। যাতে মানুষ ঘর পাবে সেই সঙ্গে তাদের কিছু প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, ঋণ দেয়া হয় এবং নগদ টাকা দেয়া হয়, তাকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়। যেন ভালভাবে মানুষ বাঁচতে পারে, কিছু করে খেতে পারে। কাউকে পরমুখাপেক্ষী না হতে হয়। সে যেন নিজের জীবনটাকে নিজেই গড়ে তুলতে পারে। আর বস্তিবাসীরাও তার নিজ গ্রামে ফিরে গেলে সেখানেও একটা ফান্ড এবং প্রকল্প আমরা নিয়েছিলাম, ঘরে ফেরা কর্মসূচী। নিজের গ্রামে গেলে সেখানে ঘরবাড়ি, ছয় মাসের জন্য ভিজিএফের মাধ্যমে বিনা পয়সায় খাদ্যের ব্যবস্থা করা, তার ঋণের ব্যবস্থা করা অর্থাৎ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা আমরা করে দেব। এ প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান আরও বলেন, ঢাকা শহরে আমাদের যে বস্তিবাসী আছে, তারা বস্তিতে যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকে এবং যে ভাড়া দিয়েই যখন থাকবে তখন ভালভাবে থাকুক। আমরা তাই বস্তিবাসীর জন্য ভাড়ায় থাকায় জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দিচ্ছি। তাদের ভাড়া দিয়েই থাকতে হবে। যে টাকাটা তারা ভাড়া দেয় একটা বস্তির ঘরের জন্য, ঠিক সেই টাকাটাই তারা ভাড়া দেবে কিন্তু তারা থাকবে একটু ভাল পরিবেশে। সে প্রকল্পটাও আমরা নিয়েছি, খুব শীঘ্রই পুনর্বাসন শুরু করে দেব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এভাবেই সমাজের একেবারে নিম্নস্তরে পড়ে থাকা মানুষগুলো তাদের টেনে তোলা, তাদের মূল জনগণের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তি করা- সেটাই আমরা করে যাচ্ছি, এটিই আমাদের লক্ষ্য। অর্থাৎ অর্থনৈতিক নীতিমালায় আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত তৃণমূল মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া। অর্থ সংগ্রহ করে তাদের জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করা, তাদের বাসস্থান শিক্ষা চিকিৎসা স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা করা- এই নীতিমালাটিই হচ্ছে আমাদের আওয়ামী লীগের নীতি। এটিই আমাদের জাতির পিতা শিক্ষা দিয়েছেন এবং সেই নীতিমালা নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যার শুভফলটা পাচ্ছে এদেশের মানুষ। আমাদের সমাজ। সমাজে একেবারে হতদরিদ্র মানুষ তারা কিন্তু আস্তে আস্তে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখছে, উঠে আসছে এবং সেটিই আমাদের লক্ষ্য। সরকারপ্রধান বলেন, অর্থনৈতিক নীতিমালায় আমরা তৃণমূলকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। গ্রামপর্যায়ে মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া, তাদের খাদ্য, শিক্ষা ও বাসস্থান নিশ্চিত করা এবং তৃণমূল মানুষের জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করছি। এ সময় দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কোথাও কেউ গৃহহীন থাকলে আমাদের জানাবেন। আমরা তাদের বাড়ি করে দেব। আমি মনে করি- এতটুকু করতে পারলে আবার বাবার (জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) আত্মাটা শান্তি পাবে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যাকান্ডের ঘটনা উল্লেখ করে তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর ছয়টি বছর তৎকালীন ক্ষমতা দখলকারীরা তাঁদের দুই বোনকে দেশে আসতে দেয়নি। বিদেশে থাকা অবস্থায় তাঁকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করার পর তিনি জোর করেই দেশে ফিরে আসেন। তিনি বলেন, দেশে এসে দেশের জনগণের ভালবাসা পেয়েছি। আমি পুরো বাংলাদেশ ঘুরেছি, গ্রাম-গঞ্জে, মাঠে-ঘাটে। কোথায় কী সমস্যা জানি। আওয়ামী লীগ সবসময় মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করে। জাতির পিতা মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ব দিয়েছিলেন এবং তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী এ সময় চলমান করোনা মহামারীতে দেশবাসীকে যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে চলার জন্য পুনরায় আহ্বান জানিয়ে বলেন, কোভিড-১৯ শীঘ্রই যাচ্ছে না। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন। যাতে করে এই ভাইরাস একজনের কাছ থেকে অপরজনকে সংক্রমিত করতে না পারে। পাশাপাশি তিনি সরকারের টিকা দান কর্মসূচী অব্যাহত রাখা এবং আরও জোরেশোরে শুরু করার কথা উল্লেখ করে বলেন, সবাই আল্লাহর কাছে দোয়া-প্রার্থনা করুন, বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসী যেন এই করোনা থেকে মুক্তি পায়। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনের পর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের কালাপুর ইউনিয়নের মাইজদিহি গ্রাম, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বেতাগী ইউনিয়ন এবং শেরপুর জেলার ঝিনাইদাথী উপজেলার উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। মতবিনিময়কালে উপকারভোগীরা বিশাল প্রাপ্তির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করে বক্তব্য রাখেন। এছাড়া দেশের আরও ৪৫৫টি উপজেলা ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিল। দ্বিতীয় পর্যায়ে জমিসহ গৃহ প্রদান অনুষ্ঠানে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৪৩৬টি পরিবারকে জমিসহ ঘর রংপুর বিভাগে প্রদান করা হয়। এছাড়া চট্টগ্রামে ১০ হাজার ৫৪৭টি ঘর, রাজধানী ঢাকায় ৭ হাজার ৬৩০টি ঘর, রাজশাহীতে ৭ হাজার ১৭২টি, ৩৭ হাজার ১৫৩টি বরিশালে, ৯১১টি খুলনায়, ২ হাজার ৫১২টি ময়মনসিংহে এবং ১ হাজার ৯৭৯টি ঘর সিলেট বিভাগে প্রদান করা হয়।
×