ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেটে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন কতটা সুরক্ষিত

প্রকাশিত: ১৯:৫৭, ২১ জুন ২০২১

বাজেটে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন কতটা সুরক্ষিত

এবারে প্রস্তাবিত করোনা সঙ্কটকালীন বাজেটের মূল লক্ষ্য হলো জনগণকে করোনার অভিঘাত থেকে স্বম্বিতে রাখা বিশেষ: স্বাস্থ্য সুরক্ষায়, কৃষি তথা খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তায়, বিনিয়োগ-কর্মসংস্থানে বৃদ্ধিতে। কভিড-১৯ সংক্রমণের ফলে সৃষ্ঠ অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলা, উত্তরণ, ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, রূপকল্প ২০২১, এসডিজি ২০৩০ বাস্তবায়ন ও প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ এর লক্ষ্য সামনে রেখে যথাক্রমে উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশে উত্তরণের অনুষঙ্গ হিসাবে, যেখানে উচ্চ প্রবৃদ্ধি (৮.২%) লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। কিন্তু কোভিড-১৯ সঙ্কট উত্তরণ আগামী দিনে কবে সম্ভব হবে এ ব্যাপারে আগাম তথ্য দেয়া দুষ্কর। বর্তমান সরকার ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন খাতে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নের জন্য মোট ৪২,১৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে, যার মধ্যে উন্নয়ন খাতে রয়েছে ২৫.৪ শতাংশ, যা পল্লী উন্নয়ন খাতের মোট বরাদ্দের ৬১.০১ শতাংশ। সার্বিক বাজেটের আলোকে পল্লী উন্নয়ন খাতকে বরাদ্দের ভিত্তিতে যদি বিশ্লেষণ করা হয়, তাহলে সার্বিক অনুন্নয়ন বাজেটে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ১.৫ শতাংশ এবং এর সঙ্গে যাদি কৃষি খাতকে যোগ দেয়া যায় তাহলে ৩.৯ শতাংশ দাঁড়ায়। অপরদিকে সার্বিক উন্নয়ন বাজেটে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ১৮.৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর সঙ্গে যদি কৃষি খাতকে যোগ দেয়া যায় তাহলে মোট বরাদ্দ দাঁড়ায় ২৫.৪ শতাংশ। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি গ্রামীণ জীবন ও জীবিকার প্রধান বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এবং পল্লী উন্নয়নের কথা এলেই কৃষি সবার আগে চলে আসে। বর্তমানে কৃষি খাতের হার জিডিপিতে প্রায় ১২ শতাংশ এবং কৃষি জিডিপিতে শষ্য খাতের অবদান রয়েছে সর্বাগ্রে। যেহেতু কৃষি পল্লী উন্নয়নের একটি বড় খাত। তাই সরকার বাজেটে কেবল কৃষি খাতে ১৬,১৯৭ কোটি টাকা আগামী বছরের বাজেটে প্রস্তাব করেছে, আবার তার সঙ্গে যদি মৎস্য, পশু সম্পদ, বন ইত্যাদিকে যোগ দিলে সার্বিক কৃষি খাতে বাজেট দাঁড়ায় ৩১ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা, যা মূল বাজেটের ৫.৩ শতাংশ। কাজেই ব্যাপক অর্থে পল্লী উন্নয়ন খাতে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা উন্নয়ন বাজেটের ২৯.৬ শতাংশ এবং অনুন্নয়ন বাজেটের ২০.২ শতাংশ বলে প্রতীয়মান হয়। এখানে উল্লেখ্য, কৃষি যেহেতু একটি অগ্রধিকারভুক্ত খাত এবং খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি এর সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাই গত বছরগুলোতে এই খাতে ভর্তুকি দেয়া হয়েছিল ৩২ হাজার ৫০২২ কোটি টাকা, যা গড়ে প্রতি বছর দাঁড়ায় ৬৫০১.৪ কোটি টাকা। আগামী বছরের বাজেট ভর্তুকির প্রস্তাব করা হয়েছে ১০হাজার ০৯৯ কোটি টাকা। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার মনে করছে কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিকরণ, কৃষি গবেষণায় দক্ষতা বৃদ্ধি, কৃষির বহুমুখীকরণ, রফতানিমুখী কৃষি পণ্যের বাণিজ্যিকীকরণ, পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী বিপুল জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ইত্যাদিতে জোর দিতে হবে। সেক্ষেত্রে বর্তমান বছরের বাজেটে অথনীতির প্রবৃদ্ধির (জিডিপি) যে টার্গেট ধরা হয়েছে তা অর্জনে কৃষি খাতের গুরুত্ব অপরিসীম বিধায় সেই খাতে প্রবৃদ্ধি কমপক্ষে ৪.৫ শতাংশ হারে বাড়াতে হবে বলে কৃষি অথনীতিবিদগণ মনে করেন। কোভিড-১৯ দেখিয়ে দিয়েছে যে, রফতানিমুখী চিন্তা পরিহার করে গ্রামীণ অর্থনীতি ও খাদ্য উৎপাদন খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন আবশ্যক। কারণ, ২০২০-২১ অর্থবছরে কোভিডের কারণে ভারতসহ অনেক দেশের জিডিপিতে যেখানে নেতিবাচক সূচক পরিলক্ষিত, সেখানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে খাতগুলো প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে, কৃষি তার মধ্যে প্রধানতম। এই অকালেও বাংলাদেশের জিডিপিতে গড় প্রবৃদ্ধি বিশ্বব্যাংকের মতে ৩. ৬ শতাংশ, এডিবির মতে ৫. ৫-৬ শতাংশ এবং সরকারী তথ্য মতে ৫.২ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি যা-ই হোক না কেন তা অর্জিত হয়েছে মূলত কৃষি, প্রবাসী আয় এবং পোশাক রফতানি খাত থেকে। সম্প্রতি কৃষিমন্ত্রী রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন (কেআইবি) মিলনায়তনে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের জাতীয় কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়ে কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে নিরলস কাজ করছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নেয়া হয়েছে ৩ হাজার ২০ কোটি টাকার প্রকল্প। পাশাপাশি কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ত্বরান্বিত করতে দক্ষ জনবল তৈরিতে ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে কৃষি প্রকৌশলীর ২৮৪টি পদ সৃজন করা হয়েছে। ফলে, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের দিকে যাচ্ছে ও যান্ত্রিকীকরণের সুফল পাওয়া যাচ্ছে। এ বছরে বোরোতে ধান কাটার যন্ত্র কম্বাইন্ড হারভেস্টার, রিপার বেশি ব্যবহৃত হওয়ায় দ্রুততার সঙ্গে সফলভাবে ধান ঘরে তোলা সম্ভব হয়েছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে অঞ্চলভেদে ৫০%- ৭০% ভর্তুকিতে কৃষকদের কৃষিযন্ত্র দেয়া হচ্ছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষিতে নতুন অধ্যায় সূচিত হলো। এর মাধ্যমে ফসল উৎপাদনে সময় ও শ্রম খরচ কমবে, কৃষক লাভবান হবে ও বাংলাদেশের কৃষিও শিল্পোন্নত দেশের কৃষির মতো উন্নত ও আধুনিক হবে। কৃষিযন্ত্রের প্রাপ্তি, ক্রয়, ব্যবহার ও মেরামত সহজতর করতে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পর্যায়ক্রমে স্থানীয়ভাবে কৃষিযন্ত্র তৈরি করতে চাই। বর্তমানে বেশির ভাগ যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তা আমরা কমিয়ে আনতে চাই। ইতোমধ্যে আমরা ইয়ানমার, টাটাসহ অনেক কোম্পানির সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের অনুরোধ করেছি যাতে তারা বাংলাদেশে কৃষিযন্ত্র তৈরির কারখানা স্থাপন করে।’ কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষক লাভবান হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান তৈরি হবে। একই সঙ্গে ফসলের নিবিড়তা বাড়বে ও চাষ ত্বরান্বিত হবে। কৃষি খাতের আগামী বছরের বাজেট পর্যালেচনায় দেখা যায় মুরগি, মাছ ও গবাদিপশুর খাবার তৈরির উপকরণ আমদানিতে কাঁচামালে কর ছাড় দেয়া হয়েছে, নিড়ানি, ঝাড়াই কল, কম্বাইন্ড হারভেস্ট, থ্রেসার, রিপার, পাওয়ার টিলার, সিডার ইত্যাদি কৃষিযন্ত্রে কর ছাড় দেয়া হয়েছে, যা সামগ্রিক কৃষির জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ। কৃষি খাতের এই বজেটকে সাধুবাদ জানাতে হয়। কিন্তু কোভিডে লকডাউনে আমরা লক্ষ্য করেছি, পণ্য যে অঞ্চলে উৎপন্ন হয় না সেখানে তার আকাশছোঁয়া দাম। আর যেটি উৎপন্ন হয় তা কৃষক বিক্রি করতে পারছেন না। রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কোন ব্যবস্থা নেই। বাজেটে সেসব ব্যাপারে দিক নির্দেশনা নেই। এ রকম বাস্তবতায় কৃষি খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ৩. ৬ শতাংশ, মোট বাজেট বৃদ্ধি পেয়েছে ৬ শতাংশ, কৃষি খাতের বাজেটও বৃদ্ধি পেয়েছে ৬ শতাংশ। এখন প্রশ্ন হলো, কোভিডের কারণে বিদেশ থেকে যেসব শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন এবং এখনও বিদেশে যেতে পারেননি, শহর থেকে কাজ হারিয়ে যারা গ্রামে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন, তাদের কর্মসংস্থান কিংবা তাদের শ্রম বিনিয়োগ কিভাবে ঘটবে, তার তেমন কোন উল্লেখ বাজেটে নেই। নোভেল করোনার কারণে দেশে দারিদ্র্যের হার ক্রমাগত বেড়েই চলেছে এবং দারিদ্র্যের প্রেক্ষাপটকে পাল্টিয়ে দিয়েছে, যা বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। সিপিডি বাজেট সংক্রান্ত এক রিপোর্টে বলেছে, দারিদ্র্য ২০১৬ সালে যেখানে ছিল ২৪.৩ শতাংশ, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ শতাংশ, যা সংখ্যায় দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৭৭ লাখের ওপরে। আবার কেউ কেউ বলেন নতুন পুরনো মিলে এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে দেশের ৪০ শতাংশ মানুষ, যার সংখ্যা ৭ কোটির ওপরে রয়েছে। দরিদ্রদের নিয়ে বাজেটে কিছু বলা হয়নি তা ঠিক নয়। বরং জীবন-জীবিকার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, এসডিজি ও রূপকল্প ২০২১-৪১-এর মূল লক্ষ্যই হচ্ছে দারিদ্র্য কমিয়ে আনা এবং ক্রমান্বয়ে শূন্য দারিদ্র্য লক্ষ্য অর্জন। সামাজিক সুরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি (বাজেটের ১৮ শতাংশ) হচ্ছে মূলত দরিদ্রদের ঘিরে ও সুরক্ষা ব্যয়ের ৭৫ শতাংশই সরাসরি দারিদ্র্যকেন্দ্রিক। কৃষি খাতের সব ব্যয় নিম্নমধ্যবিত্ত, খুদে ব্যবসায়ী, ভূমি শ্রমিক ও নিঃস্বদের জন্য ব্যয়িত। অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচীতে ২০২১-২২ অর্থবছরে বরাদ্দ আছে ১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। সরকার পরিচালিত আটটি ফাউন্ডেশন/প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কর্মসৃজনে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দের কথা উল্লেখ আছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে দারিদ্র্য হ্রাসে ভূমিকা রাখবে এরূপ বরাদ্দের পরিমাণ মোট ৩ লাখ ৪২ হাজার ১০৬ কোটি টাকা (বাজেটের প্রায় ৫৭ শতাংশ)। বাজেটে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ‘পল্লীর দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর আয়বর্ধক কর্মকান্ড’ বৃদ্ধিতে পল্লী এলাকায় বিনিয়োগ বাড়ানো হবে। তাছাড়াও দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকার আগামী বছরের বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রেখেছে, যা ১ লাখ ৭০ হাজার ৬১৪ কাটি টাকা যা মোট বাজেটের ১৭.৮ শতাংশ এবং জিডিপির ৩.১১ শতাংশ। এই খাত থেকে পল্লী অঞ্চলে বসবাসকারী অনেকেই সরাসরি উপকৃত হবে। এর মধ্যে আছে সমাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচী যথা বৃদ্ধভাতা, প্রতিবন্ধী, এসিড দগ্ধ, তালাকপ্রাপ্তা, মাতৃত্বজনিত ছুটি ভাতা, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, কাবিখা, বিজিএফ, বিজিডি, অতি দারিদ্র্যদের জন্য কর্মসূচী, আশ্রয়ণ প্রকল্প, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধদের প্রশিক্ষণ এবং আত্মকর্মসংস্থান প্রকল্প গ্রহণ, গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণ প্রকল্প, ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন প্রকল্প ইত্যাদি। বর্তমানে সীমান্তবর্তী উত্তর-পশ্চিমের জেলাগুলোতে করোনার প্রভাব সবচাইতে বেশি, যার প্রভাব পড়ছে কৃষি পণ্যের ওপরেও। যেমন- আম নিয়ে বিপাকে পড়েছে রাজশাহী অঞ্চলের আম চাষীরা। এই পরিস্থিতিতে লগডাউন দেয়ার ফলে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব উভয়ই বাড়বে বলে মনে করেন গবেষকগণ। এ ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, দেশব্যাপী কঠোরভাবে লগডাউন সম্ভব নয়। কারণ, দেশের ৬ কোটি কৃষক পরিবার, পৌনে ২ কোটি ইনফরমাল খাতে নিয়োজিত। কর্মহীন এবং কৃষি পণ্যের ওপর ১৭ কোটি ভোক্তা যারা নির্ভরশীল, তাদের দুর্ভোগ বাড়বে। তার মতে, মানবিক লকডাউন, যা সরকার অনুসরণ করছে সেভাবেই এগোবে সরকার। বাজেট বক্তৃতায় এই জটিল বিষয়গুলো সেভাবে উপস্থাপিত হলে ভাল হতো। করোনা মোকাবেলায় সরকার চারটি কৌশলের পথ অবলম্বন করছে : (১) সরকারী ব্যয়ের ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দেয়া; (২) ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে কতিপয় ঋণ সুবিধা প্রদান; (৩) কর্মহীন হতদরিদ্রকে সুরক্ষা দিতে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আকার বৃদ্ধি; (৪) বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি। দেশে সরকারী খাতে কর্মসংস্থান মাত্র ৩.২ শতাংশ। অথচ এই সংখ্যা মালয়েশিয়াতে ২২.৪ শতাংশ, মিয়ানমার ৬.২ শতাংশ, পাকিস্থান ১২.২ শতাংশ ও ফিলিপিন্সে ৮.৪ শতাংশ, ভিয়েতনামে ৯.৮ শতাংশ (উৎস: এশিয়া প্যাসিফিক এমপ্লয়মেন্ট এ্যান্ড সোশ্যাল আউটলোক, ২০১৮)। আগামী অর্থবছরে সরকারী খাতে কর্মসংস্থান এক শতাংশ বাড়ানো যাবে কিনা করোনাকালে তা বলা দুষ্কর। কারণ, বৈদেশিক বিনিয়োগ নিম্নমুখী, ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ উর্ধমুখী, ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ নিম্নমুখী বিধায় কর্মসংস্থান হয় না। অথচ দেশে প্রায় ৮০ শতাংশ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেসরকারী বিনিয়োগ। প্রতি বছর ২০ লাখ মানুষ কর্মবাজারে প্রবেশ করে এবং শহরে শিক্ষিত বেকার যুবকের সংখ্যা বেশি, যাদের কর্মসংস্থানের ব্যাপারে বাজেটে বরাদ্দ রাখা দরকার। আশা করা যায়, বাজেট সংক্রান্ত এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হলে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান ত্বরান্বিত হতে পারে। লেখক : অধ্যাপক, গবেষক, ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি
×