ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মোস্তাফা জব্বার

রক্তাক্ত মাতৃভাষা বঙ্গবন্ধু ও বাংলা ভাষা-৪

প্রকাশিত: ১৯:৫৪, ২১ জুন ২০২১

রক্তাক্ত মাতৃভাষা বঙ্গবন্ধু ও বাংলা ভাষা-৪

এবারে আসুন আমরা একটু বিস্তারিতভাবে দেখি বাংলা ভাষার লড়াইয়ে বঙ্গবন্ধুর অবদান। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তানের একচ্ছত্র অধিপতি হলেন। জন্মের শুরুতেই নবগঠিত দুটি প্রদেশের মধ্যে পূর্ব বাংলার প্রতি তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী ভাষাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করলেন। তবে সর্বাগ্রে যেটি বাঙালীর নজরে পড়ে সেটি হচ্ছে বাংলা ভাষার প্রতি বিদ্বেষ। পাকিস্তানী জিন্নাহর মুসলিম লীগ সরকারের স্পষ্টতই পশ্চিম পাকিস্তানের ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠীর ভাষা উর্দুকেই বাংলাদেশসহ অন্য ভাষাভাষীদের ওপর চাপানোর প্রচেষ্টা গৃহীত হয়। শুরুতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পরই রাষ্ট্রভাষার সন্দেহ ঘনীভূত হতে থাকে। কেননা পাকিস্তান সৃষ্টির প্রাক্কালে রাষ্ট্রভাষার প্রসঙ্গটি বিভিন্নভাবে উচ্চারিত হয়েছিল। বিশেষত পাকিস্তান আন্দোলনের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা চৌধুরী খালেকুজ্জামান (১৮৮৯-১৯৭৩) পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দুর পক্ষে মতামত রেখেছিলেন ১৯৪৭ সালের ১৮ মে। পাকিস্তান সৃষ্টির পর সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে এ সম্পর্কে কোন ঘোষণা দেয়া না হলেও বাংলাকে অবমূল্যায়ন করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। উর্দুর পক্ষে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট হওয়ায় তখন সচেতন মহল আশঙ্কা করে, যে কোন মুহূর্তে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে সরকারী ঘোষণা আসতে পারে। ফলে শুরু হয় বাংলা ভাষা আন্দোলন। প্রথমেই গড়ে ওঠে সাংগঠনিক কাঠামো। দেশ বিভাগের পূর্বে বাংলাদেশের মুসলিম ছাত্রদের একমাত্র প্রতিষ্ঠান ছিল নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগ। ১৯৪৭ সালের আগস্টে এই ছাত্র সংগঠনের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ কলকাতা থেকে ঢাকায় আসেন এবং পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাত্র একুশ দিনের মধ্যে ১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর কমরুদ্দিন আহাম্মদ, শামসুল হক, বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন আহমদ, শামসুদ্দিন আহাম্মদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, নুরুদ্দিন আহম্মদ, আবদুল অদুদ প্রমুখের প্রচেষ্টায় পাকিস্তান গণতান্ত্রিক যুবলীগ প্রতিষ্ঠা হয়। যুবলীগ প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ে বাংলার যুব সমাজকে সংগঠিত করা। এর প্রধান কারণ ছিল বাঙালীর ভাষা, সংস্কৃতি-কৃষ্টির প্রতি সম্ভাব্য হামলার প্রতিরোধ এবং জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সংগ্রাম করা। বাঙালীর জাতিরাষ্ট্রের পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার একুশ দিনের মাঝেই ভাষারাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রথম রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলেন। তাঁর দূরদর্শিতার কথা ভাবতেই অবাক লাগে। লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে মুসলমানদের জন্য ভারতবর্ষের দুই প্রান্তে দুটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বদলে এক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে বাঙালীর ভাষা, সংস্কৃতির ওপর আঘাত আসবে এবং ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের বদলে পাকিস্তানের উপনিবেশে পরিণত হবে এমনটা বঙ্গবন্ধু তখনই টের পেয়েছিলেন। ফলে যুবলীগ গঠনের উক্ত সম্মেলনে ভাষা বিষয়ক কিছু প্রস্তাব গৃহীত হয়। অনুভূত হয় যে, পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হবার সঙ্গে সঙ্গেই এই রাষ্ট্র যে বাঙালীদের নয় সেটি বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সঙ্গীরা উপলব্ধি করেন ও অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গতভাবে একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলে তার মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গড়ে তোলার দাবি উত্থাপন করেন। আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে জাতির পিতা ও তাঁর সহকারীদের আমাদের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি রক্ষা করার জন্য দুঃসাহসী ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়ার কথা স্মরণ করতে পারি। এরপর বঙ্গবন্ধু আরও একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেন। তিনি উপলব্ধি করেন যে কেবল যুব সমাজকে সংগঠিত করলেই হবে না, এর চেয়ে সংঘবদ্ধ ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গোছানো তারুণ্যকে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সঙ্গত কারণেই তাঁর নিজের রাজনৈতিক জীবন এই ক্ষেত্রে তাঁকে সর্বাত্মক সহায়তা করেছে। সে জন্য তিনি ছাত্রদের সংগঠিত করার জন্য গড়ে তোলেন ছাত্রলীগ। কলকাতায় মুসলিম লীগকেন্দ্রিক ছাত্রদের দুটি গ্রুপ ছিল। একটির নেতৃত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। অপরটির নেতৃত্বে ছিলেন শাহ আজিজ। ঢাকায় এসে শাহ আজিজ গ্রুপ সরকার সমর্থক হয়ে যায়। শাহ আজিজের পরবর্তীকালের রাজনৈতিক জীবন ব্যাখ্যা করলে এই আশঙ্কাটিই স্বাভাবিক মনে হতে পারে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অংশ ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ফজলুল হক হল মিলনায়তনে এক সভায় নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগ নাম পরিবর্তন করে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ নামে পুনর্গঠিত হয়। ওই সভায় বঙ্গবন্ধু উপস্থিত না থাকলেও তাঁকে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য করা হয়। বঙ্গবন্ধু তা শুধু মেনেই নেননি, বরং সংগঠনকে দৃঢ় ও মজবুত করার প্রয়াসে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। পরবর্তীতে, ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সক্রিয়তায় প্রতিষ্ঠিত ছাত্রলীগের ১০ দফা দাবির মধ্যে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার ও সামরিক বাহিনীতে বাঙালীদের নিয়োগ এবং বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষার দাবি ছিল অন্যতম। ১৩ জানুয়ারি রমনার বর্ধমান হাউজে মুসলিম লীগের পার্টি বৈঠকে যোগ দেন বঙ্গবন্ধুসহ ছাত্রদের একাংশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র বঙ্গবন্ধুসহ অন্য ছাত্ররা একটি বুকলেট বিতরণ করে। যাতে লেখা ছিল-পূর্ব পাকিস্তানের দুর্ভাগা জনসাধারণ, কৈফিয়ত দিতে হবে আমাদের। ৩ মার্চ গোপালগঞ্জে শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ছাত্রদের সম্মেলনে বাংলা ভাষার অধিকার নিয়ে কথা বলেন। ধীরে ধীরে বাংলা ভাষার প্রসঙ্গটি রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ফেব্রুয়ারি ৮, ১৯৪৮ সাল। করাচীতে পাকিস্তান সংবিধান সভার (কন্সটিটিউয়েন্ট এ্যাসেম্বলি) বৈঠক হচ্ছিল। সেখানে রাষ্ট্রভাষা কি হবে সেই বিষয়েও আলোচনা চলছিল। মুসলিম লীগ নেতারা উর্দুকেই রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষপাতী। পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ লীগ সদস্যেরও সেই মত। কুমিল্লার কংগ্রেস সদস্য বাবু ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত দাবি করলেন বাংলা ভাষাকেও রাষ্ট্রভাষা করা হোক। কারণ, পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগুরুর ভাষা হলো বাংলা। মুসলিম লীগ সদস্যরা কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না। বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে বাংলাকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ও তমদ্দুন মজলিস এর প্রতিবাদ করল এবং দাবি করল, বাংলা ও উর্দু দুই ভাষাকেই রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। বঙ্গবন্ধু সভা করে প্রতিবাদ শুরু করেন। বঙ্গবন্ধু ভাষা প্রশ্নে সচেতন ছিলেন বলেই গণতান্ত্রিক যুবলীগ ১৯৪৭ সালের ৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত তাদের সম্মেলনে বাংলা ভাষাকে ‘পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার বাহন ও আইন আদালতের ভাষা’ করার দাবি জানায়। পাকিস্তান সৃষ্টির মাত্র তিন মাসের মধ্যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে এতসব প্রতিক্রিয়ার পরও করাচীতে ৫ ডিসেম্বর ১৯৪৭ সালে অনুষ্ঠিত শিক্ষা-সম্মেলনে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার সুপারিশ করা হয়। পাকিস্তানের তৎকালীন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান, মন্ত্রী হাবিবুল্লাহ বাহার ও আবদুল হামিদ ওই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে সম্ভবত এটিই সরকারের প্রথম উদ্যোগ ও উদ্দেশ্য ব্যক্ত করা হয়। এই সংবাদ ৬ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে মর্নিং নিউজ পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে ছাত্রদের প্রতিবাদ সভা করা হয়। এটিই রাষ্ট্রভাষার দাবি নিয়ে ছাত্রদের প্রথম সাধারণ সমাবেশ। উক্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন তমদ্দুন মজলিসের সম্পাদক অধ্যাপক আবুল কাশেম। বক্তৃতা করেন মুনীর চৌধুরী, আব্দুর রহমান, এ কে এম আহসান, কল্যাণ দাশগুপ্ত ও এস আহমদ প্রমুখ। সভার প্রস্তাব পাঠ করেন ফরিদ আহমদ। সমাবেশ শেষে ছাত্ররা মিছিল সহকারে সচিবালয় এবং মর্নিং নিউজ পত্রিকার সম্মুখে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ছাত্রদের অংশগ্রহণ দেখে বিভিন্ন স্তরের মানুষও এর সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে। এরই ফলে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। পরিষদের পক্ষ থেকে ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ সালে শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাত এবং মানি অর্ডার, ডাক টিকেট ও টাকায় ইংরেজী ও উর্দুর পাশাপাশি বাংলা লেখার আবেদন জানানো হয়। বাঙালী প্রতিনিধি কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমানের নির্দেশে ১৯৪৮ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা মাহমুদ হাসান ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে একটি পত্র লেখেন। তাতে বলা হয়, ‘সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, পাকিস্তানকে ইসলামী মতে গঠন করতে এবং সেই উদ্দেশ্যে তারা বাংলা ভাষায় উর্দু অক্ষর প্রবর্তন করতে চান এবং এর জন্য তার সাহায্য পেলে তারা উপকৃত হবেন।’ ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ চিঠির জবাব দেননি এবং তার মর্ম সংবাদপত্রে প্রেরণ করেন যা কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া তৎকালীন প্রাদেশিক মন্ত্রী হাবিবুল্লাহ বাহার প্রাদেশিক পরিষদে ৮ এপ্রিল ১৯৪৮ সালে পূর্ব বাংলায় সরকারী অফিস ও শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলাভাষা চালুর শুধু বিরোধিতা করেই ক্ষান্ত হননি, বরং বাংলা আরবী হরফে লেখার পক্ষে জোর প্রস্তাব রাখেন। এদিকে পুরানা লীগ কর্মীদের পক্ষ থেকে কামরুদ্দিন সাহেব, শামসুল হক সাহেব ও অনেকে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদে যোগদান করলেন। সভায় ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চকে ‘বাংলা ভাষা দাবি’ দিবস ঘোষণা করা হলো। সমগ্র পূর্ব বাংলায় ওইদিন ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এটিই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর প্রথম পূর্ব বাংলাব্যাপী ধর্মঘট। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ধীরে ধীরে সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান গণপরিষদের করাচীতে অনুষ্ঠিত প্রথম অধিবেশনে গণপরিষদ ইংরেজীর সঙ্গে উর্দু ভাষা ব্যবহারের প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে বাংলা ভাষা ব্যবহার সম্পর্কিত ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত (১৮৮৬-১৯৭১) আনীত সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর ২৫ ফেব্রুয়ারি ’৪৮ প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রভাষার ওপর আলোচনা শুরু হয়। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ঐতিহাসিক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন এবং জোরালো ভাষায় এর পক্ষে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন একটি রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ভাষা এবং মর্যাদাও অনন্য। এই রাষ্ট্রের ছয় কোটি নব্বই লাখ মানুষের মাঝে চার কোটি চল্লিশ লাখ বাংলা ভাষায় কথা বলেন। সুতরাং রাষ্ট্রের ভাষা কি হওয়া উচিত? রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষাই রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত এবং সে কারণেই আমি মনে করি বাংলাই আমাদের রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত। শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত কেবল যে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রাণের দাবি উত্থাপন করেন তা-ই নয়, তার দাবি ছিল অকাট্য। কোন একটি রাষ্ট্র তার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ভাষাকেই রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ব্যবহার করবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পাকিস্তান গণপরিষদে ঘটল উল্টো ঘটনা। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান সম্মানিত সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বক্তব্যের বিরোধিতা করে দীর্ঘ বক্তৃতায় বলেন, পাকিস্তান একটি মুসলমান রাষ্ট্র এবং সে জন্য এই রাষ্ট্রের ভাষা একটি মুসলিম ভাষাই হতে হবে। আমি বছরের পর বছর কেন্দ্রীয় এ্যাসেম্বলিতে কখনও কাউকে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তুলতে শুনিনি। আমি জানতে চাই এখন কেন এই দাবি উঠল। এই দাবি পাকিস্তানের মানুষদের বিভক্ত করার একটি প্রয়াস। এই সংশোধনী মুসলমানদের ঐক্য বিনষ্ট করার জন্য। লিয়াকত আলী খান যে কতটা মূর্খ ছিলেন তার প্রমাণ তার বক্তব্যে পাওয়া যায়। উর্দু কোন ইসলামী ভাষা নয়-এটি বস্তুত হিন্দুস্তানের ভাষা তথা হিন্দীর সমগোত্রীয় ভাষা। পার্থক্য হিন্দীর সঙ্গে এই যে- হিন্দী দেবনাগরী অক্ষরে লেখা হয় আর উর্দু আরবী হরফে লেখা। আরবী হরফে মালদ্বীপের ভাষাও লেখা হয়। এর মানে দিবেহী নামক মালদ্বীপের ভাষা ইসলামী বা মুসলমানী ভাষা হতে পারে না। ঢাকা, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সর্বশেষ সম্পাদনা ২৯ মে ২১ লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান-সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার-এর জনক [email protected], www.bijoyekushe.net.bd, www.bijoydigital.com
×