ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গণটিকাদান শুরু

প্রকাশিত: ১৯:৫১, ২১ জুন ২০২১

গণটিকাদান শুরু

কোভিডকালে জনকল্যাণমূলক সরকারের বড় সাফল্য ছিল করোনার টিকা উদ্ভাবনের পরপরই দেশে টিকাদান কর্মসূচীর সূচনা। বিশ্বর প্রধান প্রধান উন্নত দেশ যখন টিকা সংগ্রহে হিমশিম খাচ্ছিল, তখন দেশে সাধারণ মানুষ টিকার প্রথম ডোজ পেয়ে যায়। একথা অস্বীকার করার নয় যে, মহামারীকালে টিকার প্রাপ্তি, সরবরাহ এবং প্রদানে সময় লাগে। এর উৎসস্থল যোগান দিতে ব্যর্থ হলে অন্য উৎসের সন্ধান করতে হয়। সরকার সব বিষয়েই সচেতন ছিল বলেই শুধু টিকা সংগ্রহই নয়, দেশে যাতে টিকা উৎপাদন শুরু হতে পারে, সে উদ্যোগ নিয়ে রেখেছিল। শনিবার থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে চীনের সিনোফার্মের টিকাদান কর্মসূচী। চীন সরকারের উপহার হিসেবে পাওয়া ১১ লাখ টিকা নিয়ে এই কর্মসূচী শুরু হলো। একই সঙ্গে কোভ্যাক্স থেকে প্রাপ্ত ডোজ ফাইজার-বায়োএনটেকের ১ লাখ ৬০২ ডোজের টিকাও প্রদান করা হবে। এবার ১০ ক্যাটাগরির মানুষকে সিনোফার্মের টিকা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঢাকার চারটি হাসপাতালে এই টিকা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া ঢাকার বাইরে প্রতিটি জেলায় একটি করে ভ্যাকসিনেশন কেন্দ্র থাকবে এবং প্রতিটি কেন্দ্রে একটি করে বুথ থাকছে। তবে বুথ চালু হবে যারা টিকা গ্রহণ করবে তাদের সংখ্যার ওপর। ১৫০-২০০ মানুষের জন্য একটি বুথ করা হবে। সিনোফার্মের প্রতিটি টিকার দুই ডোজের ব্যবধান হবে চার সপ্তাহ। রাজধানীসহ সারাদেশে দ্রুত ছড়াচ্ছে করোনা। ডেল্টা ধরনের অতি সংক্রমণের ক্ষমতা ও মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার উদাসীনতায় মারাত্মক আকার ধারণ করছে করোনার ঢেউটি। সতর্ক না হলে দ্রুত পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে, যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুক্রবার সারাদেশে দুই মাসে শনাক্তের হারের দিক দিয়ে সর্বোচ্চ সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এ বছরের মার্চ থেকে করোনা সংক্রমণ আবার বেড়ে যায়। মার্চের প্রথমার্ধেই দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হাজারের ওপরে চলে যায়। বাড়তে থাকে মৃত্যুর সংখ্যাও। করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকায় ৫ এপ্রিল থেকে মানুষের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, যা এখনও বহাল। এ বিধিনিষেধের মাঝে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। গত ১৬ জুন সরকার বিধিনিষেধের সময় আরও এক মাস বাড়িয়েচ্ছে। জীবনরক্ষার প্রয়োজনে চাই কঠোরভাবে বিধিনিষেধ পালন এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা শতভাগ নিশ্চিত করার জন্য সার্বিকভাবে উদ্যোগী হওয়া। এক্ষেত্রে জনসাধারণের দায়িত্ব বেশি। সরকারেরও ভূমিকা রয়েছে। প্রয়োজনে প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। লকডাউনের ঘোষণা দিয়ে শিথিলতা প্রদর্শন কাম্য নয়। পক্ষান্তরে নাগরিকদের স্মরণ রাখা চাই করোনার তৃতীয় ঢেউকে অবজ্ঞা অবহেলা করলে হিতে নিজের ও পরিবারের বিপদই ডেকে আনা হবে। গত জুনের তুলনায় এবারের জুনে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। শনাক্তের হিসাব নিলেই পরিস্থিতি যে খারাপের দিকে তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। আর মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। অথচ ঘরে নিরাপদে থাকা মানুষের সংখ্যা ভীষণভাবে কমে এসেছে। রাস্তাঘাট, দোকানপাট জনসমাগম স্থল দেখলে মনেই হয় না আমরা বিশ্ব মহামারীর ভেতরে আছি। সব কিছুই যেন স্বাভাবিক। সরকার যে দফায় দফায় বিধিনিষেধের সময়সীমা বাড়াচ্ছে তা যেন আমলেই নিচ্ছে না জনসাধারণ। এই আত্মঘাতী উপেক্ষা প্রবণতা থেকে আমাদের অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে।
×