ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শেরপুরে বিনামূল্যে জমিসহ পাকা ঘর পেয়ে গৃহহীনদের মাঝে উচ্ছ্বাস

‘শেখ হাসিনার দয়ায় ছন্নছাড়া জীবনে পেলাম মাথা গুঁজার ঠাই’

প্রকাশিত: ১৭:৫৭, ২০ জুন ২০২১

‘শেখ হাসিনার দয়ায় ছন্নছাড়া জীবনে পেলাম মাথা গুঁজার ঠাই’

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর ॥ মুজিববর্ষ উপলক্ষে শেরপুরে বিনামূল্যে জমিসহ পাকা ঘর পেয়ে বেজায় খুশি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারগুলো। তাদের মাঝে বিরাজ করছে আনন্দ-উচ্ছ্বাস। রবিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি যুক্ত হয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের হলদীগ্রাম আশ্রয়কেন্দ্রে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে ঘর হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদের সরকার দলীয় হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান আতিক এমপি এবং জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক, রিকশাচালক, দিনমজুর, বিধবা, কাজের মহিলাসহ বিভিন্ন পেশার উপকারভোগীদের মাঝে জমির দলিলপত্র ও ঘরের চাবি তুলে দেন। একইসাথে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপকারভোগীদের দেওয়া হয়েছে নতুন জামা-কাপড়। সবমিলিয়ে নিজের নামে জমির দলিল ও জমির ওপর সেমি পাকা ঘর পেয়ে ঘরে ঘরে বইছে আনন্দ। পরে হলদীগ্রাম আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে প্রকল্প সম্পর্কে অবহিত করেন ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী এক উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলেন। তাসলিমা খাতুন (৩০) নামের ওই উপকারভোগী প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আমি স্বামী পরিত্যক্তা। আমার কোন ঘর-বাড়ি ছিল না। বাপের বাড়িতেই ছিলাম। এখন আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি ঘর উপহার দিয়েছেন। সেই ঘর পেয়ে অনেক ধন্য হয়েছি, তার জন্য অনেক খুশি। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এরকম ঘরে থাকতে পারব কখনই ভাবতে পারিনি। ওইসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মো. শফিকুর রেজা বিশ্বাস, ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি ব্যারিস্টার মো. হারুন-অর-রশিদ, পুলিশ সুপার মো. হাসান নাহিদ চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) এটিএম জিয়াউল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট চন্দন কুমার পাল পিপি, ঝিনাইগাতী উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম প্রমুখ। এদিকে জমির দলিল ও ঘরের চাবি পাওয়ার পর উপকারভোগীরা অনেকটাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে ঝিনাইগাতী উপজেলার শালচূড়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব দিনমজুর লাল মিয়া বলেন, জন্মের কয়েক বছর পর বাবা-মা হারিয়ে অন্যের বাড়িতে থেকে বড় হয়েছি। এরপর বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতে দীর্ঘদিন থাকলেও শ্যালকের (বউয়ের ছোট ভাই) অত্যাচারে সেই বাড়ি ছেড়ে স্ত্রীÑসন্তান নিয়ে পাখির মতো ঘুরে বেড়িয়েছি। বুড়ো বয়সে এসে নিজের নামে আমিই কিনা পেলাম জমির দলিল ও ঘরের কাগজ! তার স্ত্রী রেজিয়া খাতুন বলেন, নতুন ঘরটি আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। থাকার কক্ষের সঙ্গে পাকা রান্নাঘর, পায়খানা আছে। আলাদা বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থাও আছে। শেখ হাসিনার দয়ায় আমরা ছন্নছাড়া জীবনে খুঁজে পেয়েছি মাথা গুজার ঠাঁই। পরিবার নিয়ে এখন আমরা খুব ভালোভাবেই থাকতে পারব। ষাটোর্ধ্ব দিন মজুর লাল মিয়ার মতোই মুজিব বর্ষের উপহার হিসেবে দ্বিতীয় পর্যায়ে ঘর পাওয়া সালেহা বেগম জানান, আমাগো জাগা-জমি কিছুই নাই। ঢলে ঢলে ঘুরতাম। কেউ থাকবার এল্লাহানি জাগা দেয় নাই। প্রধানমন্ত্রী আমাগো জাগা দিছে, ঘর দিছে। আমরা খুব খুশি অইছি। আরেক উপকারভোগী জমিলা বেগম জানান, আমাগো তো কছিুই আছিল না। প্রধানমন্ত্রী আমাগো নিজ হাতে ঘর ও জমি তুলে দিতাছে, আমরা খুশি অইছি। আমরা দোয়া করি প্রধানমন্ত্রী মেলা দিন বাইছা থাহুক। নিশা রানী হাজং জানান, পাহাড়ের ঢালুতে এডা ঝুপড়া ঘর তুইলা থাকতাম। হাতি আইসা ঘর ভাইঙ্গা দিছে। মেলা জায়গায় ঘুরছি। কেউ থাহার জাগা দেয়নাই। প্রধানমন্ত্রী ঘরও দিছে, জাগাও দিছে। তাও তিনি আমাগো এ হলদিগেরামের মানুষের ভিডিওর মাধ্যমে নিজের হাতেই সব দিলো। আমরা খুব খুশিতে আছি। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ‘মুজিববর্ষে বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় ঝিনাইগাতীতে সীমান্তের পাহাড়ি এলাকায় ৩ একর ১৩ শতক আয়তনের এ জায়গায় নতুন করে ২৫টি ঘরসহ জমির দলিল সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হয়। একইসাথে শেরপুর সদর উপজেলায় ৩০টি, নকলায় ৪২টি, নালিতাবাড়ীতে ৫০টি ও শ্রীবরদীতে ২০টি জমিসহ ঘর স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হয়। ঘরগুলো নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ১৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা। নতুন নির্মিত ঘরগুলোর উদ্বোধন উপলক্ষে ঘরের দরজার সামনে লাগানো হয়েছে নামফলক, ঝোলানো হয়েছে ‘নৌকা তোরণ’। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব বলেন, ‘মুজিববর্ষে বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে তার কার্যালয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় শেরপুর জেলায় এবার ১৬৭ ভূমিহীন ও গৃহহীন বিনামূল্যে ঘরসহ জমির দলিল পেয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীনদের পাশে থাকছেন। তাদের স্বপ্ন আজ সত্যে পরিণত হয়েছে। তারা ছন্নছাড়া জীবনে খুজে পেয়েছে মাথা গুজার ঠাঁই। এজন্য তারা খুশি হওয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিও কৃতজ্ঞ
×