ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পরীমনি কাণ্ডে নতুন মোড়

নাসির ও অমির তিন রক্ষিতা কারাগারে

প্রকাশিত: ২৩:২৪, ২০ জুন ২০২১

নাসির ও অমির তিন রক্ষিতা কারাগারে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরীমনি কাণ্ডে গ্রেফতারকৃত নাসির ও অমির তিন রক্ষিতাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শনিবার একটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক উদয় কুমার মণ্ডল ৩ দিনের রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে হাজির করেন। তিন আসামি হলেন- লিপি আক্তার, সুমি আক্তার ও নাজমা আমিন স্নিগ্ধা। একই সঙ্গে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। এদিকে দক্ষিণখান থানায় অমির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মানবপাচার মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেছে পুলিশের অপরাধ বিভাগ সিআইডি। ঢাকা বোট ক্লাবে অভিনেত্রী পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টা মামলায় গ্রেফতারকৃত অন্যতম আসামি অমিকে দেশের শীর্ষ মানবপাচারকারী হিসেবে সন্দেহ করছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। সিআইডি বেশ গুরুত্ব দিয়েই মানবপাচার মামলাটি তদন্ত করবে বলে জানিয়েছেন একজন কর্মকর্তা। এ ছাড়া আলোচিত এ মামলার বাদী পরীমনি এখন জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। আদালত সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ধীমান চন্দ্র মণ্ডলের আদালত এই তিন রক্ষিতাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামিদের তিন দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করেন। পরে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। এর আগে ১৫ জুন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিভানা খায়ের জেসির আদালত তাদের তিনজনের তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অপরদিকে নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমির সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত সোমবার দিবাগত রাতে ডিবির গুলশান জোনাল টিমের উপ-পরিদর্শক মানিক কুমার সিকদার বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। জানা গেছে, ঢাকা বোট ক্লাবে পরীমনির ওপর জুলুম ও নির্যাতনের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হলেও এখন তদন্তে নতুন মোড় নিয়েছে। পরীমনির অভিযোগের চেয়ে আসামি অমির বিরুদ্ধে আনীত মানবপাচারের অভিযোগগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে দক্ষিণখান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন আব্দুল কাদির নামের একজন ভিকটিম। মামলায় অমি ছাড়াও আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলো, জসিম মাস্টার, সালাউদ্দিন, মোস্তফা ও পারভেজ। এছাড়া এই মামলায় আরও পাঁচজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। সিআইডির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মামলার তদন্ত বুঝে নিয়ে মাঠে নেমেছে সিআইডি। অভিযান চালিয়ে অমির অফিস থেকে জব্দ করেছে তিনটি গাড়ি ও ১৭টি হার্ডডিস্ক। অমিকে সুবিধাজনক সময়ে রিমান্ডে আনার জন্য আবেদন করা হবে। এছাড়া এ মামলার অপর আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছে সিআইডি। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা জোনের ডিসি সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকরদে জানান, এর আগে অমির বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। মামলাগুলো হলো, পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলা এবং পাসপোর্ট অপরাধ আইনে মামলা। পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলার দ্বিতীয় প্রধান আসামি তুহিন সিদ্দিকী অমি। তিনিই পরীমনিকে ফাঁদে ফেলার মূলহোতা। এ বিষয়ে দক্ষিণখান থানার পুিলশ জানিয়েছে, অমির বাবার আদম ব্যবসার অফিস থেকে বিপুল পরিমাণ পাসপোর্ট জব্দ করার পর মানবপাচারের বিষয়টি সামনে আসে। এটা জানতে পেরে যারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন তাারা থানায় আসতে থাকে। তাদেরই একজন কাদির। তার মতো এমন আরও অনেকেই মানবপাচারের অভিযোগে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে- শতশত কর্মী বিদেশে পাঠিয়ে ও প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকার মালিক হন অমি। বিদেশে কর্মী পাঠানোর সূত্র ধরে সাবেক এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের সঙ্গে অমির পরিবারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। তাদের আলিশান একাধিক বাড়িতে রয়েছে সুইমিং পুলও। অমি গ্রামের বাড়িতেও বিপুল সম্পদ গড়েছেন। মালয়েশিয়া ও দুবাইয়ে সেকেন্ড হোমও গড়েছেন। ক্লাবপাড়ায় অমিও একজন পরিচিত মুখ। তার বাবা তোফাজ্জল হোসেন একজন নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন। অনেক বছর ধরে মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুরে তিনি কাজ করে ঢাকার আশপাশে জমি ক্রয় করেন। বর্তমানে তার অঢেল সম্পদ রয়েছে। একমাত্র সন্তান হওয়ায় এর উত্তরাধিকারী অমি। অমি ৭/৮ বছর আগে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক হন। এরপর দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রফতানি করেন। এ সুযোগে আদম পাচার করে প্রচুর অর্থ আয় করেন। এই অর্থের দাপটে অমি নানা অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়েন। রাজধানীর উত্তরা ও আশকোনায় তাদের একাধিক বাড়ি ও প্লট রয়েছে। দক্ষিণখানে রয়েছে তার বালাখানা। জানা গেছে, ডিবি পুলিশের হেফাজতে বর্তমানে ৭ দিনের রিমান্ডে থাকা আসামি নাসির ইউ মাহমুদের কাছ থেকে পরীমনিকে সেই রাতে ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগ সম্পর্কে এখনও তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে। বোট ক্লাবের ঘটনায় কী নিয়ে অমি ও পরীর বিরোধ হয়েছিল, সেটাও নিশ্চিত হতে পারেনি ডিবি। তবে অমির সঙ্গে পরীমনির আগে থেকেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল বলে নিশ্চিত হয়েছে তদন্তকারীরা। ঢাকা জেলা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তাও নিশ্চিত করেছেন- পরীমনির সঙ্গে আগে থেকেই অমির পরিচয়, এমনকি ঘনিষ্ঠতা। রাজধানীতে তারা একসঙ্গে বিভিন্ন সময় ঘুরে বেড়িয়েছেন। পরীমনির কস্টিউম ডিজাইনার জিমির মাধ্যমে অমির সঙ্গে এই পরিচয় হয়। অমির দুবাইয়ের বাড়িতেও পরীমনি গিয়েছেন। ডিবি জানিয়েছে, পরীর কস্টিউম ডিজাইনার জিমির মাধ্যমে তাদের মধ্যে সম্পর্ক। প্রায়ই অমি পরীমনির বাসায় আসত। ঘটনার দিন অমিই পরীকে ওই ক্লাবে যেতে বলে। এদিকে গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবে ভাংচুর করার অভিযোগের পর থেকেই মিডিয়ায় কথা বলা থেকে বিরত রয়েছেন পরীমনি। তার ফোনটিও অনবরত বন্ধ রয়েছে। তবে তার পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, গত তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন পরীমনি। পাশাপাশি শ্বাসকষ্টও রয়েছে তার। প্রাথমিকভাবে এগুলো করোনার উপসর্গ হলেও এই বিষয়ে নিশ্চিত কোন খবর পাওয়া যায়নি। চিকিৎসকদের মতে, জ্বর ও শ্বাসকষ্টকে প্রাথমিকভাবে করোনার অন্যতম উপসর্গ ধরা হলেও রোগী যে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তা নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না। উল্লেখ্য, গত রবিবার রাতে নিজের ফেসবুক পেজে নিজেকে ধর্ষণচেষ্টা, হত্যাচেষ্টা ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন পরীমনি। বিচার চেয়ে আবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী বরাবর। তারপরই হৈচৈ পড়ে যায়। বনানী থানায় নাসির ও অমিসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে ৫ জনকেই গ্রেফতার করে। তাদের সাত ও তিনদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। গতকাল শনিবার নাসির ও অমির তিন রক্ষিতাকে আদালতে পাঠানো হলে সেখান থেকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়।
×