ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা বেড়ে যাওয়ায় পর্যটনশিল্প ফের অনিশ্চয়তায়

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ২০ জুন ২০২১

করোনা বেড়ে যাওয়ায় পর্যটনশিল্প ফের অনিশ্চয়তায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দেশের পর্যটনশিল্প আবারও অনিশ্চয়তায় পড়েছে। সংক্রমণ ঠেকাতে এরই মধ্যে প্রধান সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারসহ দেশের সকল পর্যটক স্পট বন্ধের ঘোষণায় নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। করোনার প্রথম ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই দ্বিতীয় ঢেউয়ের কবলে পড়ল অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এ খাতটি। এমন সঙ্কটের মধ্যেই গত বছরের করোনায় বিভিন্ন তারকা হোটেলে চিকিৎসকদের কোয়ারেন্টাইনের বিল বাবদ ২২ কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে। গত ঈদ-উল-ফিতরের আগে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিল পরিশোধের দাবি জানিয়েছিলেন হোটেল মালিকরা। গত বছর মার্চে দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ১৮ মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকে। পাঁচ মাস পর নবেম্বরে সব খুলে দেয়ার পর কিছুটা প্রাণ ফিরতে শুরু করে। ট্যুরিজম বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, করোনা শুরুর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে পাঁচ লাখের বেশি বিদেশী পর্যটক বাংলাদেশে এসেছিল। করোনাকালে বছরজুড়ে শূন্য হয়ে পড়েন বিদেশী পর্যটক। গত বছরের নবেম্বরের পর অভ্যন্তরীণ পর্যটনে কিছুটা চাঙ্গা ভাব দেখা দিলেও করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দ্বিতীয় দফায় লকডাউন শুরু হওয়ায় আবার অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে এ খাতে। ট্যুর অপারেটরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি রাফিউজ্জামান বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত সব খাতের জন্য সরকার প্রণোদনা দিলেও কিছুই পায়নি পর্যটনশিল্প। ব্যাংকগুলো বলেছে, পর্যটনশিল্প ঝুঁকিপূর্ণ। ঋণ দিলে পরিশোধ করতে পারবে না। আমাদের বিশ্বাসযোগ্য মনে করে না তারা। এজন্য সুবিধা দেয়া হয়নি।’ তিনি প্রশ্ন করেন, ‘বইমেলা চলতে পারে, বাজারঘাট, যানবাহনসহ সব কিছু চলছেÑ তাহলে পর্যটনকেন্দ্র কেন বন্ধ থাকবে?’ দেশের অর্থনীতিতে পর্যটন খাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বছরে কমপক্ষে ১০ লাখ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যটক পাওয়া গেলে ১ কোটি লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এর সুফল ভোগ করার সুযোগ রয়েছে। পর্যটন একটি সম্ভাবনাময় খাত হওয়ার পরও জাতীয় বাজেটে তা বরাবর অবহেলিত থেকে যায়। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাজেটে মোট বরাদ্দের ১ শতাংশের কম দেয়া হয় এ খাতে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এটি কমপক্ষে ৪ শতাংশে উন্নীত করার দাবি জানায় টোয়াব। প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল এ্যাসোসিয়শনের (পাটা) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের গত বছর করা সমীক্ষা অনুযায়ী, করোনার কারণে গত বছর দেশের পর্যটন খাতে ক্ষতি হয় ১০ হাজার কোটি টাকা। তবে টোয়াবের হিসাবে এ ক্ষতির পরিমাণ আরও কম। প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। পর্যটন খাতে এমন সঙ্কটের মধ্যেই গত বছর চিকিৎসকদের সুরক্ষায় রাজধানীর বিভিন্ন তারকা হোটেলগুলোতে তাদের কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করে কর্তৃপক্ষ। সমঝোতার মাধ্যমে বিশেষ ছাড়ে এগিয়ে আসে হোটেল মালিকদের সংগঠন। তবে পরিতাপের বিষয় চার মাস অবস্থান করলেও, মাত্র এক মাসের বিল পেয়েছে হোটেল মালিকরা। জানতে চাইলে তারকা হোটেল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল এ্যাসোসিয়েশন- বিহা’র কো-চেয়ারম্যান খালেদ-উর-রহমান জানান, তার তিনটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় থাকা হোটেলের বিলই বাকি প্রায় ৫ কোটি টাকা। এমন প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকায় রাজধানীর ফার্মগেটের হোটেল গিভেন্সিও। এই হোটেলেও প্রতিদিন শতাধিক ডাক্তার থাকত। তিনি জানান, বিলের জন্য এখনও টেবিলে টেবিলে ঘুরছেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক জনকণ্ঠকে জানান, বকেয়া পরিশোধে বেশ কিছুদিন আগেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বিল পাঠানো হয়েছে। আশা করেন খুব দ্রæত সমাধান হবে। পরিশোধে ঢাকা মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে কাজ করছে বলেও জানান প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক। জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ব্যয় করতে পেরেছে মাত্র তিন হাজার ৪৯ কোটি টাকা, শতাংশের হিসাবে যা মাত্র ২৫.৪৬। এখনও অব্যয়িত রয়ে গেছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আগামী ৩০ জুনের মধ্যে সর্বোচ্চ হলেও দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় করা সম্ভব হবে না। বাকি টাকা ফেরত যাবে। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আমাদের টাকা খরচের সক্ষমতা বাড়াতে হবে, দক্ষতা বাড়াতে হবে, খরচের গুণগত মান বজায় রাখতে হবে এবং খরচের জটিলতা দূর করতে হবে। পাশাপাশি দুর্নীতি রোধ করতে হবে। সেবা বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।’
×