ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দেয়া হচ্ছে সারাদেশে ৬৭ কেন্দ্রে

গণটিকাদান কর্মসূচী শুরু

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ২০ জুন ২০২১

গণটিকাদান কর্মসূচী শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশব্যাপী দ্বিতীয় ধাপে গণটিকাদান কর্মসূচী শুরু হয়েছে। শনিবার সকালে প্রতিটি জেলায় একটি কেন্দ্রে চীনের সিনোফার্মের টিকা দেয়ার মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর এ কর্মসূচী শুরু করেছে। ঢাকা শহরের চারটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল টিকাদানের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সব মিলে সারাদেশে মোট ৬৭টি টিকা কেন্দ্র রয়েছে। হাতে থাকা টিকাদান শেষ হলে মোট জনসংখ্যার ৩ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হবে। মুগদা হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ অসিম কুমার নাথ বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা সাতটি সরকারী ও বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দিচ্ছি। আমরা সিনোফার্মের দুই হাজার চার শ’ ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছি। যারা নিবন্ধন করেছেন, কিন্তু, এখনও ভ্যাকসিন পাননি, তারা পরে পাবেন। কারণ, চাহিদার তুলনায় ভ্যাকসিনের পরিমাণ কম। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ খলিলুর রহমান জানান, প্রাথমিকভাবে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের দিয়ে এই টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত ২৫ মে প্রথম দিনেও মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের এই টিকা দেয়া হয়। তাদের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। সরেজমিনে দেখা গেছে, মুগদা হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল ৮টা থেকে টিকাদান কর্মসূচী শুরু হয়েছে। যা বিকেল তিনটায় শেষ হবে। তবে সাধারণ নিবন্ধনকারীরা শনিবার টিকা পাননি। শুধু মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের মুগদা হাসপাতালে টিকা দেয়া হয়েছে। রাজধানীর চারটি কেন্দ্র হলো : ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এসব হাসপাতালে একটি করে টিকা কেন্দ্র হবে এবং প্রতি কেন্দ্রে দুটি করে বুথ রয়েছে। তাছাড়া ঢাকা জেলা বাদে প্রতি জেলায় একটি করে ভ্যাকসিনেশন কেন্দ্র হবে এবং প্রতিটি কেন্দ্রে ২টি করে বুথ রয়েছে। তবে বুথ চালু করতে হয়েছে টিকা গ্রহিতার সংখ্যার ওপর নির্ভর করে। এছাড়া যেসব জেলায় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নেই, সেসব জেলায় সিভিল সার্জন জেলা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে জেলা সদর হাসপাতাল অথবা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের যে কোন একটিকে জেলা ভ্যাকসিনেশন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা দেবেন এবং ওই কেন্দ্রে দুটি বুথ থাকার কথা রয়েছে। টিকা কেন্দ্র শুক্রবার ও সরকারী ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে নিবন্ধন করা ব্যক্তিরা সিনোফার্মের টিকা পাবেন। এ পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৭২ লাখ ৪৮ হাজার ৮২৯ জন। তাদের মধ্যে ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন। এই টিকার দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় আছেন প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। তাদের দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে সিনোফার্ম বা ফাইজারের টিকা দেয়া হবে কিনা, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। দেশে টিকাদান কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাতৃ, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্য কর্মসূচীর আওতায়। হাতে থাকা টিকা দেয়া শেষ হলে দেশের ৩ শতাংশ মানুষ আপাতত টিকার আওতায় আসবেন। স্বাস্থ্য অধিদফতর তাদের নির্দেশনায় ১০ ধরনের মানুষকে চীনের টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়েছে। অধিদফতর বলেছে, বাংলাদেশে বসবাসরত সব চীনা নাগরিক এই টিকা পাবেন। নির্ধারিত টিকা কেন্দ্রে ইতোমধ্যে নিবন্ধন করা ব্যক্তিরা, যারা এখনও কোন টিকা পাননি, তারা চীনের টিকা পাবেন। টিকা না পাওয়া সরকারী স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ সদস্যদের এই টিকা দেয়া হবে। জনশক্তি উন্নয়ন ব্যুরো কর্তৃক অনুমোদিত বিদেশগামী বাংলাদেশী অভিবাসী কর্মীরা এই তালিকায় আছেন। এই টিকার অগ্রাধিকারের তালিকায় আছেন সরকারী- বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থী এবং সরকারী নার্সিং ও মেডিক্যাল কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের এই টিকা দেয়া হবে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সরকারী প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই টিকা পাবেন। প্রকল্পের তালিকায় আছে পদ্মা সেতু প্রকল্প, মাতারবাড়ী বিদ্যুত প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, এক্সপ্রেস হাইওয়ে প্রকল্প, রূপপুর বিদ্যুত প্রকল্প ও রামপাল বিদ্যুত প্রকল্প। এ ছাড়া ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং কোভিড-১৯ মৃতদেহ সৎকারে জড়িত ব্যক্তিরা সিনোফার্মের এই টিকা পাবেন। সিনোফার্মের টিকার প্রথম ডোজের সঙ্গে দ্বিতীয় ডোজের ব্যবধান নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ সপ্তাহ বা ২৮ দিন। এছাড়া ভ্যাকসিন কেন্দ্রের অন্য ব্যবস্থাপনা আগের মতোই প্রস্তুত করার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের স¤প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) পরিকল্পনা অনুযায়ী, নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহে যারা আগে নিবন্ধন করেছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন পাননি, তাদের ভ্যাকসিন দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কেন্দ্র থেকে এসএমএস’র মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জানাতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে কেন্দ্র পরিবর্তন করে ভ্যাকসিন নেয়ার সুযোগ থাকছে না। সিনোফার্মের এই ভ্যাকসিন ১৮ বছরের নিচে কাউকে দেয়া হবে না। ভ্যাকসিন গ্রহণের সময় জ্বর থাকলে বা অসুস্থ থাকলে, ভ্যাকসিনজনিত এ্যালার্জির পূর্ব ইতিহাস থাকলে, প্রথম ডোজ গ্রহণের পর মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে তিনি এ ভ্যাকসিন নিতে পারবেন না। অনিয়ন্ত্রিত দীর্ঘমেয়াদী রোগ, যেমন- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ঘা, এ্যাজমা, কিডনি রোগ, ডায়ালাইসিস নিচ্ছেন এমন ব্যক্তি, ক্যানসারে আক্রান্ত এবং স্বল্প রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জনগোষ্ঠীর ভ্যাকসিন দেয়ার ক্ষেত্রে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। টিকার আওতায় ৩ শতাংশ মানুষ \ জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, গণরোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করতে হলে জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭০ শতাংশকে টিকার আওতায় আনার প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত যে পরিমাণ টিকা পেয়েছে, তাতে ৩ শতাংশ মানুষকে দুই ডোজ করে টিকা দেয়া সম্ভব হবে। বাংলাদেশ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কেনা অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পেয়েছে ৭০ লাখ। একই টিকা উপহার হিসেবে পেয়েছে ৩৩ লাখ। দুই ডোজ করে এই টিকা ৫১ লাখ মানুষকে দেয়া সম্ভব। তবে বাস্তবে পূর্ণ দ্বিতীয় ডোজ পাচ্ছেন ৪৩ লাখ মানুষ। অন্যদিকে, চীনের সিনোফার্মের টিকা বাংলাদেশ পেয়েছে ১১ লাখ। এই টিকা দুই ডোজ করে সাড়ে ৫ লাখ মানুষকে দেয়া যাবে। পাশাপাশি করোনার টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে বাংলাদেশ ফাইজারের টিকা পেয়েছে ১ লাখ। এই টিকার দুই ডোজ করে ৫০ হাজার মানুষকে দেয়া সম্ভব হবে। সিনোফার্ম ও ফাইজারের টিকা দুই ডোজ করে ৬ লাখ মানুষকে দেয়া যাবে। সব মিলিয়ে অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকা, সিনোফার্ম ও ফাইজারের টিকার দুই ডোজ করে পাচ্ছেন মোট ৪৯ লাখ মানুষ। তারা দেশের জনসংখ্যার মাত্র ৩ শতাংশ।
×