ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রাসঙ্গিকতা

প্রকাশিত: ২২:৩৯, ১৯ জুন ২০২১

মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রাসঙ্গিকতা

এটি সর্বজনবিদিত যে, কোন জাতিরাষ্ট্রের টেকসই আর্থসামাজিক উন্নয়ন মূল্যায়নে দক্ষ জনগোষ্ঠী প্রণিধানযোগ্য নিয়ামক হিসেবে বিবেচিত। মুক্তির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তাঁর নেতৃত্বে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার উদ্দেশ্যে সূচনালগ্ন থেকেই মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রায়োগিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে তাঁর আজীবন লালিত স্বপ্ন ও সংগ্রামের অমিত ফসল স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন ও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ বিনির্মাণে ‘এসো দেশ গড়ি’ প্রত্যয়কে অবিচল ধারণ করেই মানবসম্পদ উন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। সুপরিকল্পিত কর্মকৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে নিরলস মেধা, নিষ্ঠার সমন্বয়ে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি, ধর্মীয়, নৈতিক শিক্ষাকে একীভূত করে আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক গুণগত শিক্ষার মানদ-কেই মানবসম্পদ উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুরূপে চিহ্নিত করেন। সচেতন মহল সম্যক অবগত আছেন যে, মানবসম্পদ উন্নয়নের মৌলিক অনুষঙ্গ হচ্ছে উদ্দিষ্ট সমাজের সমৃদ্ধ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতির বিশ্বখ্যাত মহাকাশ বিজ্ঞানী শিক্ষা, জ্ঞানার্জনে তাঁর অর্জিত অভিজ্ঞতা ও দর্শন থেকে উচ্চারিত মহামূল্যবান বাণীগুলো বর্তমান সময়ের জন্য অত্যন্ত প্রযোজ্য। ‘একটি ভাল বই এক শ’ ভাল বন্ধুর সমান, কিন্তু একজন ভাল বন্ধু একটি লাইব্রেরির সমান। সফলতার গল্প পড়ো না। কারণ তা থেকে তুমি শুধু গল্পটাই পাবে। ব্যর্থতার গল্প পড়ো, তাহলে সফল হওয়ার কিছু উপায় পাবে। তুমি যদি সূর্যের মতো আলো ছড়াতে চাও তাহলে আগে সূর্যের মতো পুড়তে শেখ। উদার ব্যক্তিরা ধর্মকে ব্যবহার করে বন্ধুত্বের হাত বাড়ান, কিন্তু সঙ্কীর্ণমনস্করা ধর্মকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। জীবন ও সময় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। জীবন শেখায় সময়কে ভালভাবে ব্যবহার করতে আর সময় শেখায় জীবনের মূল্য দিতে।’ উল্লেখ্য, প্রয়োজনীয় বার্তাগুলো নিত্যদিনের জীবনযাপনে কতটুকু মনুষ্যত্ব, মানবিক মূল্য সংযোজন করে তা ভেবে দেখার আবশ্যকতা অত্যধিক। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২০ সূত্রমতে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন এজেন্ডার মূল লক্ষ্য হচ্ছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি মানবসম্পদ উন্নয়ন। লক্ষ্য পূরণে সরকার ২০১৯-২০ অর্থবছরে আর্থসামাজিক খাতে ২৩.৬৭ শতাংশ হারে বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়নের বিভিন্ন খাত তথা শিক্ষা ও প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, নারী ও শিশু, সমাজকল্যাণ, যুব ও ক্রীড়া উন্নয়ন, সংস্কৃতি, শ্রম ও কর্মসংস্থানে ব্যয় করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর আলোকে মানসম্মত দক্ষ, যোগ্য মানবসম্পদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বহুবিধ কর্মসূচীর মধ্যে অন্যতম ছিল মহিলা শিক্ষক নিয়োগ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা, উপবৃত্তি ও ছাত্র-শিক্ষক সংযোগ ঘণ্টা বৃদ্ধি। স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা খাতে সরকারের নেয়া অগ্রাধিকারভিত্তিক বিভিন্ন কর্মকা-ের ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এ সংক্রান্ত সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। উক্ত কারণেই বাংলাদেশ দুবার জাতিসংঘ সাউথ সাউথ এ্যাওয়ার্ড লাভ করে। বিগত ও সমসাময়িক বাজেট বিশ্লেষণ মানবসম্পদ উন্নয়নের সঠিক চিত্র যথাযোগ্য অনুধাবনের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শতকরা ৬০ ভাগ মহিলা শিক্ষক নিয়োগের বিধি প্রবর্তনের ফলে মহিলা শিক্ষকের হার ১৯৯১ সালের ২১.০৯ শতাংশ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৬৪.৫২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট খাতগুলোকে পূর্ণতাদান ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কার্যকরণে ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে মানবসম্পদ উন্নয়নে যথাক্রমে ১ লাখ ৪০ হাজার ২২২ কোটি (মোট বাজেটের ২৪.৬৯ শতাংশ) এবং ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৪৭ কোটি (মোট বাজেটের ২৫.৮১ শতাংশ) বরাদ্দ রাখা হয়েছে। জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২০ অনুযায়ী মানব উন্নয়ন সূচকে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৩তম, যা ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে ছিল যথাক্রমে ১৪২, ১৩৯ ও ১৩৬তম। মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহ অর্থাৎ মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তানের অবস্থান বাংলাদেশের নি¤œতর পর্যায়ে হলেও ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভূটানের অবস্থান এখনও বাংলাদেশের উর্ধে। অতএব, সূচকে এসব উর্ধমুখী দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম বিবেচনায় নিয়ে আমাদেরও উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছনোর চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। যদিও বিগত কয়েক বছর থেকে মানব উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট খাতসমূহে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি পাচ্ছে তথাপি এসব ক্ষেত্রে যৌক্তিক পর্যলোচনায় বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি অপরিহার্য। শিক্ষা ও প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ, নারী ও শিশু, সমাজকল্যাণ, যুব ও ক্রীড়া উন্নয়ন, সংস্কৃতি, শ্রম ও কর্মসংস্থান মানবসম্পদ উন্নয়নের অন্যতম চাবিকাঠি হিসেবে এসব খাতের বাজেট বরাদ্দ শুধু বৃদ্ধি করলে চলবে না, সংশ্লিষ্ট কর্মসূচীসমূহের যথাযথ বাস্তবায়ন ও কাক্সিক্ষত ফলাফল সম্পর্কে বিস্তৃত ধারণা অতীব প্রয়োজন। এর জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন এবং ধারাবাহিকতা ব্যাহত হওয়ার প্রতিবন্ধকতাসমূহ চিহ্নিত করতে হবে। সুখের বিষয় হচ্ছে বিগত বছরের তুলনায় এটি বৃদ্ধি পেয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে সংশ্লিষ্ট খাতসমূহে মোট বাজেটের ২৯.৪ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হলেও জাতীয় বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়ানোর মাধ্যমে বাস্তবসম্মত কর্মসূচী প্রতিপালনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার স্তরে লিঙ্গ বৈষম্যের তুলনামূলক ব্যবধান নিম্নমুখী হলেও প্রজনন হার হ্রাস, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস, যক্ষ্মা ও এইডসের বিস্তার রোধ, গড় আয়ু বৃদ্ধি ইত্যাদির ক্ষেত্রে উর্ধমুখী অগ্রগতি শুধু দেশে নয়, বিশ্ব পরিমন্ডলেও দেশ ও সরকার বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে। সৃজনশীল, কর্মমুখী, বিজ্ঞানধর্মী, উৎপাদন সহায়ক শিক্ষায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরি করার জন্য অধিকতর মনোযোগ আকর্ষণের দাবি রাখে। জনমুখী উন্নয়ন ও প্রগতিতে নেতৃত্বদানের উপযোগী মননশীল, যুক্তিবাদী, নীতিবান, অসাম্প্রদায়িক, কুসংস্কারমুক্ত, পরমতসহিষ্ণু, দেশপ্রেমিক এবং মানবিক নাগরিক যথার্থ অর্থে গড়ে তোলা না গেলে রূপকল্প ২০২১ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সঙ্কটমুখী হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর সফল বাস্তবায়নের জন্য নিবিড় শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন অবধারিত। এটি নিঃসন্দেহে সমাদৃত যে, নিরক্ষরতা দূরীকরণে প্রাথমিক শিক্ষার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রাথমিক শিক্ষা খাতে মোট ২৬ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ তথা Inclusive and equitable quality education and ensuring life long learning for all’-এর সফল বাস্তবায়নে গ্রহণীয় উদ্যোগ যেমন উপবৃত্তি প্রকল্প, তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচী (পিইডিপি-৩), রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (রস্ক) প্রকল্প, দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচী এবং মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পসহ (৬৪ জেলা) আরও কিছু প্রকল্প অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ৪৯,৫৩৯। ২০১৯ পর্যন্ত এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৩৪,১৪৭ (ব্র্যাক সেন্টার, শিশুকল্যাণ ও মাদ্রাসাসহ)। প্রাথমিক শিক্ষায় ছাত্রী ভর্তির সংখ্যা ও হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তুলনামূলক পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ১৯৯১ সালে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির অনুপাত ছিল ৫৫:৪৫, যা বর্তমানে প্রায় ৮১:৮৪-এ উন্নীত হয়েছে। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হারও ক্রমাগত হ্রাস পেয়ে ২০২০ সালে ১৮.৮ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ২০১৫ সালে ছিল ২০.৪ শতাংশ। দেশবাসীসহ সমগ্র বিশ্ব অবগত আছে ২০১৫-২০২১ ছয় বছরে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) কর্তৃক দুটি ত্রিবার্ষিক পরিশুদ্ধ মূল্যায়নে বাংলাদেশ এ বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়। এই উত্তরণের পিছনে মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা এই তিনটি প্রধান সূচককেই প্রাধান্য দেয়া হয়। এর দুটি সূচকে সক্ষমতা অর্জনের শর্তে উন্নয়ন অবস্থান নির্ধারণ করা হলেও মহান স্রষ্টার অপার কৃপায় এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনা সরকারের অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতিতে দেশকে এগিয়ে নেয়ার অভিযাত্রার সাফল্য হিসেবে তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ অগ্রগণ্য অবস্থান নিশ্চিতে সক্ষম হয়। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) সামষ্টিক পর্যালোচনায় মাথাপিছু আয়ের সীমারেখা হচ্ছে কমপক্ষে ১ হাজার ২ শত ৩০ মার্কিন ডলার। অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয় হচ্ছে বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় হচ্ছে ২ হাজার ২ শত ২৭ মার্কিন ডলার। মানবসম্পদ উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার সূচকে যথাক্রমে প্রয়োজনীয় ৬৬ ও ৩২ বা তার চেয়ে কম শতাংশের বিপরীতে বাংলাদেশের অর্জন ছিল ৭২.৯ এবং ২৪.৮ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকসহ প্রায় খ্যাতিমান সংস্থার মতানুসারে আর্থসামাজিক খাতে অধিকাংশ সূচকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়াকে ছাড়িয়ে গেছে। সম্প্রতি সময়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে ২০২৪ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক তৃতীয় ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উল্লেখ্য সূচকসমূহের ধারাবাহিকতার বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। প্রাসঙ্গিকতায় মানবসম্পদ উন্নয়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও দৃশ্যমান সফলতা নিশ্চিতকরণে মনোযোগী হওয়ার জন্য তাঁর যথার্থ বার্তাটি ছিল প্রারব্ধ সময়োপযোগী। মানবসম্পদ উন্নয়নের সমূহ সম্ভাবনাকে অত্যুজ্জ্বল করার নানামুখী উদ্যোগ অতিসম্প্রতি নতুন সফলতার দ্বার উন্মোচন করেছে। ১৪ জুন, ২০২১ প্রকাশিত জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক প্রতিবেদন ও ১৬ জুন, ২০২১ গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ছয় বছর আগে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) স্থির করার পর যে তিনটি দেশ তাদের আগের অবস্থান থেকে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বিশ্বের ১৬৫ দেশের মধ্যে এবারের এসডিজি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯তম এবং ২০১৭ সালে ১৫৭ দেশের মধ্যে ছিল ১২০তম। এসডিজি লক্ষ্য পূরণের পথে ২০১০ সালের পর পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোই বেশি এগিয়েছে এবং ২০১৫ সালের পর সবচেয়ে বেশি এগিয়েছে বাংলাদেশ, আইভরি কোস্ট ও আফগানিস্তান। বর্তমানে এসডিজি সূচকে বাংলাদেশের সামগ্রিক স্কোর ১০০-এর মধ্যে ৬৩.৫। ২০২০, ২০১৯, ২০১৫ ও ২০০০ সালে এই স্কোর ছিল যথাক্রমে ৬৩.২৬, ৬৩.০২, ৫৯.০১ ও ৫৭.৫৬। অন্য দুটি দেশের মধ্যে আইভরি কোস্ট ৫৭.৫৬ স্কোর নিয়ে ১৩১তম এবং আফগানিস্তান ৫৩.৯৩ স্কোর নিয়ে ১৩৭তম অবস্থানে রয়েছে। ২০১৫ সালে দেশ দুটির স্কোর ছিল যথাক্রমে ৫৩.৩৫ এবং ৪৯.৬৩। তালিকায় ৮৫.৯ স্কোর নিয়ে সবচেয়ে ভাল অবস্থানে আছে ফিনল্যান্ড এবং ৩৮.২৭ স্কোর নিয়ে সবনিম্ন পর্যায়ে আছে আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র। বিগত বছরগুলোতে স্কোরের দিক দিয়ে অত্যধিক অবনতি ঘটেছে ভেনিজুয়েলা, টুভালু ও ব্রাজিলের। বস্তুতপক্ষে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগ, আত্মমর্যাদা, আত্মসমালোচনা, আত্মপ্রত্যয়ের আদর্শ পরিপূর্ণ আত্মস্থ করে অর্থ, ক্ষমতা, আধিপত্য, দুর্বৃত্তায়নের হিংস্র প্রবৃত্তি পরিহারে অসাম্প্রদায়িক শোষণমুক্ত মানবিক সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় সোনার মানুষ সৃজনে মানবসম্পদ উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ থেকে নিম্নতর পর্যায় পর্যন্ত মেধা, যোগ্যতা, দক্ষতা, সততা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতায় পরিপুষ্ট হয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, কর্তাব্যক্তিদের যৌক্তিক, যৌগিক ইতিবাচক প্রয়াস, রসায়ন অবশ্যই সুষ্ঠু ও সুস্থ সমাজ প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে। প্রধানমন্ত্রীর অকুতোভয় নেতৃত্বে দেশকে প্রাগ্রসর সমাজে পরিণত করার অদমনীয় সঙ্কল্প কখনই পরাভূত হবে না- সমগ্র দেশবাসীর মতো আমিও দৃঢ়ভাবে তা বিশ্বাস করি। লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
×