ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বে মহামারীর মধ্যেও বাস্তুচ্যুত হয়েছে রেকর্ডসংখ্যক মানুষ ॥ জাতিসংঘ

প্রকাশিত: ২১:২১, ১৮ জুন ২০২১

বিশ্বে মহামারীর মধ্যেও বাস্তুচ্যুত হয়েছে রেকর্ডসংখ্যক মানুষ ॥ জাতিসংঘ

অনলাইন ডেস্ক ॥ প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস মহামারীর মধ্যেও সারাবিশ্বে থেমে নেই সহিংসতা, সংঘাত, নিপীড়ন কিংবা মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনা। এতে বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে রেকর্ড ৮ কোটি ২০ লাখে । জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এ তথ্য জানিয়েছে। বাস্তুচ্যুত মানুষের এই সংখ্যা এক দশকে দ্বিগুণ হয়েছে, তার মানে বিশ্বে ১ শতাংশেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ইউএনএইচসিআর শুক্রবার বার্ষিক ‘গ্লোবাল ট্রেন্ডস রিপোর্টে’ এ সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারীর মধ্যে মানুষের চলাফেরা সীমিত থাকায় বিদেশে আশ্রয় চাওয়া মানুষের সংখ্যা কমাসহ সামগ্রিকভাবে অভিবাসন কমেছে। তারপরও গতবছর নানা বাধা-নিষেধের মধ্যেও বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১ কোটি ১২ লাখ মানুষ, যা ২০১৯ সালের চেয়ে বেশি। বেশিরভাগ মানুষই বাড়িঘর ছাড়া হয়েছে নিপীড়ন, সংঘাত, সহিংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়ে। করোনাভাইরাসের কারণে আন্তর্জাতিক সীমানা পেরোনোয় নিষেধাজ্ঞা থাকায় বহুসংখ্যক মানুষ নিজ দেশের ভেতরেই বাস্তুচ্যুত হয়েছে। মোট বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষের অর্ধেকের বেশি, অর্থাৎ, ৪ কোটি ৮০ লাখ মানুষই অভ্যন্তরীনভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়ে যাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র, বলছে ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটি আরও বলছে, ২০২১ সালে করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধ শিথিল হয়ে গেলে সংঘর্ষ, সংঘাত আরও বেড়ে যেতে পারে। পাশাপাশি খারাপের দিকে যাবে খাদ্য সংকট। চরম আবহাওয়া এবং মহামারীর কারণে সংকট আরও প্রকট হবে। দক্ষিন সুদান, মধ্য আফ্রিকান রিপাবলিক ও সিরিয়ায় দেখা দিতে পারে দুর্ভিক্ষ। বিশ্বব্যাপী চরম দরিদ্র মানুষের সংখ্যাও আরও বাড়তির দিকে যাবে। ইউএনএইচসিআর এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারীর কারণে মানুষের পালিয়ে আরেক দেশের সীমানা পেরোনো কঠিন হয়ে পড়লেও কিছু দেশ বাস্তুচ্যুত মানুষদের আশ্রয় দিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র থেকে লড়াইয়ের মুখে পালিয়ে আসা মানুষদের উগান্ডা তাদের সীমানায় ঢুকতে দিচ্ছে। সেখানে তাদের কোভিড পরীক্ষাও করা হচ্ছে। বিদেশে বাস্তুচ্যুত এই মানুষদের দুই-তৃতীয়াংশই এসেছে মাত্র ৫ টি দেশ থেকে। এর মধ্যে আছে সিরিয়া। দেশটিতে ১০ বছরের গহযুদ্ধে ১ কোটি ৩৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যা দেশটির জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি। এসব মানুষের প্রায় অর্ধেকই বিদেশে চলে গেছে। আর বাকীরা দেশের ভেতরেই বাড়িঘর ছাড়া হয়ে আছে। বিদেশে বাস্তুচ্যুত প্রায় তিন-চতুর্থাংশ মানুষই আশ্রয় নিয়ে আছে প্রতিবেশী দেশগুলোতে। বাস্তুচ্যুত এসব মানুষদের মধ্যে বাড়ছে শিশুর সংখ্যা। ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া প্রায় ১০ লাখ নবজাতক জন্মের পর থেকেই শরণার্থী হিসেবে বেড়ে উঠছে। ফলে অনিশ্চয়তার মুখে আছে তাদের ভবিষ্যৎ। তবে ইউএনএইচসিআর বলছে, এই অন্ধকারের মধ্যেও আছে কিছু আশার আলো। কিছু দেশ এই শরণার্থীদের নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এ বছরই ৬২ হাজার ৫শ’ এবং ২০২২ সালে ১২৫,০০০ শরণার্থী নেবে বলে কথা দিয়েছে। আর ভেনেজুয়েলার ১০ লাখের বেশি শরণার্থীকে স্থায়ী মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলম্বিয়া।
×