ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এবার ঢাকা ব্যাংকের বংশাল শাখার ভল্ট থেকে পৌনে ৪ কোটি টাকা উধাও

প্রকাশিত: ১৯:১৮, ১৮ জুন ২০২১

এবার ঢাকা ব্যাংকের বংশাল শাখার ভল্ট থেকে পৌনে ৪ কোটি টাকা উধাও

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার ঢাকা ব্যাংকের পুরানো ঢাকার বংশাল শাখার ভল্ট থেকে তিন কোটি ৭৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকা উধাও হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনা পুলিশ ব্যাংকের শাখার সিনিয়র অফিসার ভল্ট ইনচার্জ রিফাতুল হক (৩২)ও ম্যানেজার (অপারেশন) এমরান আহমেদকে (৪৫) গ্রেফতার করেছে। পরে তাদেরকে ৫৪ ধারায় আদালতে পাঠিয়েছি। পরে গ্রেফতারকৃত ব্যাংকের কর্মকর্তাদেরকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। শুক্রবার বিকেলে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ-উর-রহমান তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এদিন বিকেলে বংশাল থানার উপপরিদর্শক প্রদীপ কুমার সরকার ৫৪ ধারায় আসামিদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। এসআই প্রদীপ কুমার আবেদনে বলেন, আসামিরা ব্যাংকের ভল্টের টাকার দায়িত্বে ছিলেন। ভল্টের চাবি তাদের কাছেই ছিল। বৃহস্পতিবার ব্যাংকের অডিট টিম অডিট করার সময় ব্যাংকের ভল্টে থাকা ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকার হিসাবে গরমিল পান। ব্যাংকের ম্যানেজার আবু বক্কর সিদ্দিকের কাছে অডিট টিম টাকা গড়মিলের স্টেটমেন্ট দাখিল করেন। তখন আবু বক্কর সিদ্দিক অডিট টিমের স্টেটমেন্টের ভিত্তিতে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আসামিরা তাৎক্ষণিকভাবে টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করেন। আবেদনে আরও বলা হয়, ম্যানেজার তখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে অডিট টিমের সহায়তায় আসামিদের আটক করেন। ওদিন রাতে আসামিদের থানায় হাজির করে আবু বক্কর সিদ্দিক বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। ওসি পর্যালোচনা করে দেখতে পান অভিযোগটি দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় অপরাধ। যা তদন্তের ক্ষমতা দুর্নীতি দমন কমিশনের শিডিউলভুক্ত। দুদক ঘটনার তদন্তের ব্যবস্থা করবে। এ অবস্থায় আসামিদের আটক করে আদালতে না পাঠালে তারা পালিয়ে যেতে পারেন। তাছাড়া প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করেছেন। ঘটনার বিষয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অভিযোগকারীর অভিযোগসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দুদককে অবহিত করা হয়েছে। দুদক আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আগে পর্যন্ত আসামিদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন এস আই প্রদীপ কুমার সরকার। অপরদিকে আসামিপক্ষে তাদের আইনজীবী জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক নিবেদন মতে আসামিদের কারাগারে পাঠিয়ে আগামী ২১ জুন জামিন শুনানির দিন ধার্য করেন। বংশাল থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) আবুল কালাম ভূঁইয়া জানান, বৃহস্পতিবার ঢাকা ব্যাংকের বংশাল শাখার তিন কোটি ৭৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকা সরানোর বিষয়টি ধরা পড়ার পর রাতেই ব্যাংকের ওই দুই কর্মকর্তাকে পুলিশে দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রিফাত টাকা সরানোর অভিযোগ স্বীকার করেছেন। বংশাল থানার ওসি(তদন্ত) মোঃ রেজাউল জানান, ঢাকা ব্যাংকের বংশাল শাখার ভল্ট থেকে তিন কোটি ৭৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকা উধাওয়ের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা রিফাতুল হক ও এমরান আহমেদকে সোপর্দ করেছেন। তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান, এ বিষয়ে একটি মামলা হবে। পরে মামলাটি দুদকে চলে যাবে। আসামিদেরও আমরা দুদকে হস্তান্তর করে দেব। বিষয়টি দুদক তদন্ত করে দেখবে। এ ব্যাপারে ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হক সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টি নিয়ে আমাদের কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত যতটুকু আমরা জানি, ৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকার মত গড়মিল পাওয়া গেছে। বাকিটা পরে জানা যাবে। এদিকে বুধবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, কয়েক দিন আগেই ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে ওই ব্যাংকের এডিসি ডিভিশনে সিনিয়র অফিসার মীর মোঃ শাহারুজ্জামান ওরফে রনি এটিএমের ইলেট্রনিক জার্নালের তথ্য পাল্টে ৬৩৭টি এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ১৩৬৩টি লেনদেন করেন। এভাবে অভিনব পন্থায় তিন বছরে ২ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার টাকা টাকা আত্মসাৎ করে দেশ ত্যাগ করেন তিনি। পরে ব্যাংক থেকে ডিবি পুলিশকে অভিযোগ করলে মঙ্গলবার রাতে এ ঘটনায় জড়িত সায়মা আক্তার, আল-আমিন বাবু, মেহেদী হাসান মামুন ও আসাদুজ্জামান আসাদ নামে চারজনকে গ্রেফতার করে। কিন্তু মূলহোতা রনি পলাতক রয়েছে। তিনি এখনও দেশে বাইরে। এ ঘটনাটিও ব্যাংকের অডিটে ধরা পড়ে। তবে ততদিনে ঘটনার মূল হোতা রনি চলে গেছেন ধরাছোয়ার বাইরে।
×