ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কলাপাড়ায় কৃষকরা মালচিং পদ্ধতির আবাদে নেমেছেন

প্রকাশিত: ১৩:৩৮, ১৮ জুন ২০২১

কলাপাড়ায় কৃষকরা মালচিং পদ্ধতির আবাদে নেমেছেন

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী ॥ দুর থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই যে এটি একটি কৃষকের সবজির খামার। কাছে গেলেই বোঝা যায়। লক লক করে বেড়ে উঠেছে সবজিসহ ফসলের গাছগুলো। দীর্ঘ খরার পরে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসও কোন ক্ষতি করতে পারেনি। গাছের গোড়ার মাটি পর্যন্ত বিরামহীন বৃষ্টিতে ধুয়ে যেতে পারেনি। এমন পদ্ধতিতে খেত তৈরি করেছে সবজি চাষী জাকির গাজী। মানুষটি বহুমুখি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। গবাদিপশু পালন করেন। ধানের চাষ করেন। তবে ১২ মাস করেন সবজির আবাদ। জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে ছোট-খাটো ঝড় জলেচ্ছ্বাস যেন খেতের ক্ষতি করতে না তেমন পরিকল্পনা করেই সবজির আবাদ করেছেন। স্কেভেটর (ভেকু) মেশিন দিয়ে জমির মাটি কেটে জমি থেকে তিন ফুট উচু বেড করেছেন। মাঝখানে ছোট ক্যানেল রয়েছে পানি সংরক্ষণের জন্য। বেডের উপরও এক জাতীয় পলিথিন দিয়েছেন। এটিকে মালচিং পেপার বলা হয়। তাই এই পদ্ধতিকে বলা হয় মালচিং পদ্ধতি। পলিথিন পেপারটির এক পাশ সাদা, অপর দিকটা কালো। সাদা দিকটি উপরে রাখা হয়। যেখানে বীজ রোপন করেছেন সেই জায়গার মালচিং পেপার কেটে গোল করে দিয়েছেন; যেন চারা গজিয়ে উপরে বেড়ে উঠতে পারে। আর বৃষ্টিসহ পানিতে যেন চারা কিংবা গাছের গোড়ার মাটি ধুইয়ে যেতে না পেরে তার জন্য এই পদ্ধতি। এ বছর নতুন এই পদ্ধতিতে জাকির গাজী দুই বিঘা জমিতে বেগুন, পেপে, তরমমুজ, বোম্বাই ও কাঁচা মরিচের আবাদ করেছেন। জানালেন জাকির গাজী, এই পদ্ধতিতে রাসায়নিক সার খুবই কম লাগে। পোকামাকড়ের উপদ্রব নেই বললেই চলে। এখন ফুল ও ফল ধরেছে কতেক গাছে; কিন্তু কোন কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়নি। যশোর এক রোল মালচিং পেপার (পলিথিন) কিনতে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা লেগেছে। ৫০০ কেজির মতো পেপার থাকে এক রোলে। দুই বিঘা জমিতে এ বছর তৈরিসহ এখ নপর্যন্ত ৭০ হাজার টাকা খরচ লেগেছে বলে জানালেন জাকির গাজী। তিনি জানান, এলাকার ওমর ফারুক দুই বিঘা এবং হান্নান গাজীও ২০ শতক জমিতে এই পদ্ধতির কৃষি আবাদ করেছেন। সরল জমি থেকে তিন ফুট উচু ক্ষেত গুলো জলাবদ্ধতার ঝুঁকি নেই। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কুমিরমারা গ্রামে মালচিং পদ্ধতির সবজিসহ কৃষির আবাদ এই প্রথম দেখা গেল। কৃষক জাকির গাজী জানালেন, ২০ কাঠার জমিতে যে পরিমান ফলন পাওয়া যায় তা মালচিং পদ্ধতিতে দুই কাঠায় ওই পরিমান ফলন পাওয়া যাবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল মান্নান জানান, এই পদ্ধতিতে বহুমুখি সুবিধা রয়েছে কৃষকের। বর্ষায় জলাবদ্ধতার ঝুঁকি নেই। গোড়ার মাটি ধুইয়ে যাবেনা। শুকনো মৌসুমে মাটির ময়েশ্চার থাকবে। ফলন অনেক বেশি পাবে কৃষক। সার ও কীটনাশক খুব কম প্রয়োজন হবে। বর্তমানে জলবায়ুর পরিবর্তন জনিত ঝুঁকিতে এই পদ্ধতির কৃষি-সবজির আবাদ খুবই লাভজনক। তারাও কৃষককে এই পদ্ধতির চাষাবাদে আগ্রহ সৃষ্টি করাচ্ছেন। পরামর্শ দিচ্ছেন।
×