ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত-নিউজিল্যান্ড টেস্ট শ্রেষ্ঠত্বের দ্বৈরথ

প্রকাশিত: ২৩:২৮, ১৮ জুন ২০২১

ভারত-নিউজিল্যান্ড টেস্ট শ্রেষ্ঠত্বের দ্বৈরথ

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ ওয়ানডে ও টি২০তে বিশ্বকাপসহ একাধিক বৈষয়িক আসর থাকলেও আভিজাত্যের টেস্ট আঙ্গিনায় তেমন কিছু ছিল না। নির্দিষ্ট সময় পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা দলের হাতে উঠতো শ্রেষ্ঠত্বের স্মারক। সাদা পোশাকের ক্রিকেটকে আরও জনপ্রিয় করে তুলতে এই প্রথম ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন করছে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর যাত্রা শুরু হওয়া প্রায় আড়াই বছর মেয়াদী এ আয়োজন চ‚ড়ান্ত পরিণতির পথে। নিরপেক্ষ ভেন্যু ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটনে টেস্ট বিশ্বকাপের শিরোপা লড়াইয়ে মুখোমুখি বিরাট কোহলির ভারত ও কেন উইলিয়ামসনের নিউজিল্যান্ড। একদিকে রোহিত শর্মা, জাসপ্রিত বুমরাহ, রবিচন্দ্রন অশ্বিন অন্যদিকে ডেভন কনওয়ে, রস টেলর, ট্রেন্ট বোল্ট, ৫ দিনব্যাপী ব্যাট-বলের এক ক্ল্যাসিক্যাল দ্বৈরথ। চার হাজার দর্শক এবং রোজ বোলে বৃষ্টির শঙ্কা মাথায় নিয়ে বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টায় শুরু টেস্ট শ্রেষ্ঠত্বের এ দ্বৈরথ। গত বিশ্বকাপের ঠিক পরপর ঐতিহ্যের এ্যাশেজ দিয়ে শুরু হওয়া আইসিসি ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের খেলাগুলো শুরু থেকেই জমে উঠেছিল, দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলো পেয়েছিল বাড়তি মাত্রা। দারুণ কিছু টেস্টও দেখেছিল বিশ্ব ক্রিকেট। কিন্তু হঠাৎই করোনায় এলোমেলো হয়ে যায় সবকিছু। বাতিল অথবা স্থগিত হয়ে যায় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ। পরিবর্তিত পরিস্থিতি, কঠোর বায়োবাবল, দর্শকশূন্য গ্যালারি ও বদলে যাওয়া নিয়ম-কানুনের মধ্য দিয়ে খেলা মাঠে গড়ালেও সূচী অনুযায়ী সব দল সব সিরিজ খেলতে পারেনি। ফলে বাধ্য হয়ে পয়েন্ট টেবিলে শতকরা সাফল্যের হার বিবেচনায় নিয়ে দুই ফাইনালিস্ট নির্ধারণ করে আইসিসি। মোট ৬টি সিরিজে ১২ টেস্টে জয়, ৪ হার ও ১ ড্রয়ে ৫২০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের এক নম্বরে কোহলির ভারত। সাফল্যের হার শতকরা ৭২.৭২ ভাগ। ৫টি সিরিজে ৭ জয় ও ৪ হারে নিউজিল্যান্ডের পয়েন্ট ৪২০। কিউইদের সাফল্যের হার শতকরা ৭০.০ ভাগ। ৮ এবং ১১টি করে টেস্ট জেতার পরও শতকরা সাফল্যে পিছিয়ে থাকায় বাদ পড়ে অস্ট্রেলিয়া (৬৯.২) ও ইংল্যান্ড (৬২.৪)। করোনার কারণে অস্ট্রেলিয়া দল তাদের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর বাতিল করলে অনেক আগেই নিউজিল্যান্ডের ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যায়। আর গত ফেব্রæয়ারি-মার্চে ঘরের মাঠে চার টেস্টের সিরিজে ইংল্যান্ডকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে কোহলির ভারত। সদ্য ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ডকে দুই টেস্টের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে হারিয়ে প্রস্তুতিটা দারুণভাবে সেরে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফিরেছেন নিয়মিত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। লর্ডসে ইংলিশদের বিপক্ষে অভিষেকেই ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ইতিহাস গড়া ডেভন কনওয়ে (২০০) আছেন ফাইনালের মঞ্চে। ফিরেছেন তারকা পেসার ট্রেন্ট বোল্টও। অভিজ্ঞ টিম সাউদির সঙ্গে দ্রæতগতির নেইল ওয়াগনার ও দীর্ঘদেহী কাইল জেমিসনকে নিয়ে কিউদের পেস আক্রমণ সত্যি দুর্দান্ত। কোচ গ্যারি স্টিড স্বীকার করেছেন, প্রতিটি পজিশনে একাধিক প্রতিদ্ব›দ্বী খেলোয়াড় থাকায় টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের জন্য একাদশ বেছে নেয়ার কাজটি মোটেই সহজ নয়। অফফর্মের কারণে মিচেল স্যান্টনার বাদ পড়ায় সুযোগ পেতে পারেন বিশেষজ্ঞ স্পিনার আইজাজ প্যাটেল। অন্যদিকে মধ্যপথে আইপিএল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেশ কিছুদিন খেলার বাইরে থাকা ভারতীয় দল ইংল্যান্ডে এসেও আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়নি। তবে নিজেদের মধ্যে ভাগ হয়ে প্রস্তুতি সেরেছে কোহলি এ্যান্ড কোং। পনের সদস্যের ভারতীয় দলেও আছেন পাঁচ পেসার- যেখানে জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ শামি আর ইশান্ত শর্মার নাম আলাদা করে বলতে হবে। ইংল্যান্ডের কন্ডিশন পেসারদের জন্য সহায়ক হলেও রোজ বোলের ইতিহাস বলে এখানে ম্যাচের শেষ দুদিনে স্পিনাররাও সুবিধা পাবেন। পিচ কিউরেটরও সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। সুতরাং রবীন্দ্র জাদেজা আর রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মধ্য থেকে একাদশে কে জায়গা পান সেটিই দেখার অপেক্ষা। ওপেনিংয়ে রোহিত শর্মার সঙ্গী হবেন শুভমান গিল। টপঅর্ডারে কোহলির সঙ্গে আছেন টেস্ট স্পেশালিস্ট চেতেশ্বর পুজারা। আর একটি সেঞ্চুরি পেলেই ‘অধিনায়ক’ হিসেবে রিকি পন্টিংকে (৪১টি) ছাড়িয়ে সর্বাধিক আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়বেন কোহলি (৪১টি)। মিডল অর্ডারে ক্ল্যাসিক্যাল অজিঙ্কা রাহানে আর ফর্মের তুঙ্গে থাকা উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান ঋষভ পন্থ। অলরাউন্ডার জাদেজা-অশ্বিনদের নিয়ে ব্যাটিং লাইন বেশ লম্বা। সেক্ষেত্রে লড়াইটা হতে পারে ভারতের ব্যাটিং ‘বনাম’ নিউজিল্যান্ডের বোলিংয়ের মধ্যে। সাউদাম্পটনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস, ৫ দিনের টেস্টের প্রতিদিনই থাকছে বৃষ্টির সম্ভবনা। ফাইনালে অবশ্য রিজার্ভ ডে’র ব্যবস্থা আছে। তবে সেটি কেবল প্রাকৃতিক কারণে নির্ধারিত ৫ দিনের সময় নষ্ট হলে। ম্যাচে সময় নষ্ট হলে তা ম্যাচ রেফারি দুই দলকে নিয়মিতই জানাবেন। রিজার্ভ ডেতে খেলা যাবে কিনা সেটাও ৫ দিনের শেষ ঘণ্টার খেলার আগে ঘোষণা দেবেন ম্যাচ রেফারি। টেস্ট ড্র হলে দু’দলকেই যুগ্ম-চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হবে। ১৯৫৫ থেকে ২০২০ পর্যন্ত মুখোমুখি ৫৯ টেস্টের ২১টিতে জিতে পরিসংখ্যানে এগিয়ে ভারত। ১২ ম্যাচে জয় নিউজিল্যান্ডের। ড্র ২৬। গত বছর ফেব্রæয়ারিতে ঘরের মাঠে সর্বশেষ দেখায় কোহলিদের ২-০ ব্যবধানে ‘হোয়াইটওয়াশ’ করেছিল কেন উইলিয়ামসনের দল।
×