ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এ্যান্টিবডি থেরাপি এবং নতুন ওষুধ

করোনা মোকাবেলায় আশার আলো- বিজ্ঞানীদের নিরন্তর চেষ্টা

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ১৮ জুন ২০২১

করোনা মোকাবেলায় আশার আলো- বিজ্ঞানীদের নিরন্তর চেষ্টা

অপূর্ব কুমার ॥ করোনার চিকিৎসায় নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। অতিমারী করোনায় যখন গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত ঠিক তখনই বিজ্ঞানীদের দুটি পৃথক দল চিকিৎসা পদ্ধতি ও নতুন একটি ওষুধ আবিষ্কার করে আশার আলো দেখিয়েছেন। করোনা সংক্রমণ শুরুর মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই জরুরী ভিত্তিতে টিকা আবিষ্কার করে বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণ রোধে সবচেয়ে কার্যকর হিসেবে টিকাই ব্যবহার হচ্ছে। এখন আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় এ্যান্টিবডি চিকিৎসা পদ্ধতি এবং ২ ডিজি নামের একটি ওষুধ বের করেছেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক রেজেনেরোন ফার্মাসিটিউক্যালসের মনোক্লোনাল এ্যান্টিবডি চিকিৎসা নিয়ে এসেছে। এছাড়া ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়ার ছাড়পত্র পাওয়া ডিআরডিওতৈরি ওষুধটি করোনা চিকিৎসায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল আনছে। বুধবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বল্পমূল্যের স্টেরয়েড ব্যবহারে কোভিড-১৯-এ মৃত্যু ঠেকানোর পদ্ধতি আবিষ্কারের ঠিক এক বছর পর গবেষকেরা বলছেন, তাঁরা জীবন বাঁচানোর আরও একটি চিকিৎসা বের করেছেন। তবে এই চিকিৎসা পদ্ধতটি বেশ ব্যয়বহুল। এতে খরচ পড়বে এক হাজার থেকে দুই হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড। এই চিকিৎসায় করোনাভাইরাস নিষ্ক্রিয় করার জন্য শরীরে এ্যান্টিবডি দেয়া হয়। পরীক্ষায় দেখা গেছে, গুরুতর অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রতি ৩ জন রোগীর মধ্যে ১ জনের সেরে ওঠায় ভূমিকা রাখছে এই চিকিৎসা। আর প্রতি ১০০ রোগীর মধ্যে ৬ জনের জীবন বাঁচিয়েছে এটা। তবে যাঁদের শরীরে নিজ থেকে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোন এ্যান্টিবডি তৈরি হয়নি, তাঁদের এই চিকিৎসা দেয়া উচিত। ট্রায়ালে এই চিকিৎসা নেয়া কিম্বার্লি ফিদারস্টোন বলেন, আমার নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। কারণ আমি যখন হাসপাতালে ভর্তি হলাম, সে সময় এই ট্রায়াল শুরু হলো। আর আমি এই দারুণ চিকিৎসা নিতে পারলাম। তিনি বলেন, আমি এ কারণেও খুশি যে চিকিৎসাটি নিয়ে এর সফলতা পাওয়ার প্রক্রিয়ার অংশ হতে পেরেছি। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক রেজেনেরোন ফার্মাসিউটিক্যালস এই মনোক্লোনাল এ্যান্টিবডি চিকিৎসা নিয়ে এসেছে। শ্বেত রক্তকণিকা ক্লোন করে তৈরি করা এই এ্যান্টিবডি করোনাভাইরাস যেন মানবদেহের কোষে সংক্রমণ এবং বংশবিস্তার করতে না পারে, সেই কাজটি করে। যুক্তরাজ্যে হাসপাতালে ভর্তি প্রায় ১০ হাজার রোগীর ওপর এই এ্যান্টিবডি থেরাপির পরীক্ষা চালানো হয়েছে। এতে দেখা গেছে, মৃত্যুর ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার সময়ও কমে আসছে (গড়ে চার দিন করে)। ভেন্টিলেটরের প্রয়োজনও উল্লেখযোগ্য হারে কমছে। গবেষণায় যুগ্মভাবে নেতৃত্ব দেয়া স্যার মার্টিন ল্যানড্রে বলেন, দুটি এ্যান্টিবডির মিলিত রূপ শিরায় প্রবেশ করানোয় তাঁদের মৃত্যুঝুঁকি পাঁচ ভাগের এক ভাগ কমে গেছে। ভারতে করোনা চিকিৎসায় ২ ডিজি নামের ওষুধ অনুমোদন ॥ সম্প্রতি ভারতের করোনা পরিস্থিতি নাজুক আকার ধারণ করায় তা রুখতে ডিআরডিওর তৈরি ওষুধকে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবহারের ছাড়পত্র দিয়েছিল ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া। গত সোমবার থেকে এখন ভারতের বাজারে এই ওষুধটি পাওয়া যাচ্ছে। ড্রাগ ২ ডিঅক্সি ডি গøুকোজ বা সংক্ষেপে ২ ডিজি নামে ওষুধটির প্রথম ব্যাচে রয়েছে ১০ হাজারটি ডোজ। যা ব্যবহার করা হচ্ছে করোনা রোগীদের চিকিৎসায়। পাউডার আকারে ওষুধটি পানিতে মিশিয়ে খেতে হয়। সংস্থার পক্ষ থেকে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, রোনার চিকিৎসার জন্য ২ ডিজি ওষুধের প্রথম ব্যাচটি বাজারে এসেছে। যাতে রয়েছে ১০ হাজারটি ডোজ। এই ওষুধে ব্যবহারে দ্রæত সেরে উঠছে করোনা রোগী। উপসর্গ কমাতেও দারুণ কাজ করছে। ওষুধটি রোগীর অক্সিজেন নির্ভরতাও কমিয়ে আনছে। ওষুধটি চিকিৎসক অনন্ত নারায়ণ ভাটসহ ডিআরডিও’বৈজ্ঞানিকদের একটি দল তৈরি করেছে। ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার মেডিসিন এ্যান্ড এ্যালিড সায়েন্স এবং হায়দরাবাদের ডক্টর রেড্ডি’স ল্যাবের সহায়তায় ডিআরডিওগবেষণাগারে তৈরি করা হয়েছে এই ওষুধ। তৃতীয় দফার ট্রায়ালের পর ডিআরডিওর তৈরি ওষুধকে জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োগের ছাড়পত্র দেয়া হয়।
×