ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মদ-জুয়া-বার ইস্যুতে সংসদ উত্তপ্ত, পাল্টাপাল্টি বক্তব্য

প্রকাশিত: ২২:৪৩, ১৮ জুন ২০২১

মদ-জুয়া-বার ইস্যুতে সংসদ উত্তপ্ত, পাল্টাপাল্টি বক্তব্য

সংসদ রিপোর্টার ॥ করোনার কারণে নিরুত্তাপ সংসদ অধিবেশন মদ-জুয়া-বারের ইস্যুতে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, চ্যালেঞ্জ-পাল্টা চ্যালেঞ্জে বৃহস্পতিবার কিছু সময়ের জন্য উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। পয়েন্ট অব অর্ডারে সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যরা মদ ও জুয়ার বিস্তারে একে অপরকে দোষারোপ নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্কও হয় অধিবেশনে। জিয়াউর রহমান মদের লাইসেন্স দিয়েছে এটা প্রমাণ করতে পারলে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ সংসদ থেকে পদত্যাগের চ্যালেঞ্জ দিলে সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী সেই সময় জারিকৃত আইন তুলে ধরে বিএনপির ওই সংসদের পদত্যাগের আহŸান জানালে সরকারী দলের সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়িয়ে তাঁকে স্বাগত জানান। তবে উভয়ই রাজধানীর বিভিন্ন বিভিন্ন ক্লাবের আড়ালে মদ-জুয়ার ও ডিজে পার্টি বন্ধে কঠোর হতে সরকারকে আহŸান জানান। অন্যদিকে বাজেটের ওপর আলোচনার সময় বিএনপির হারুনুর রশীদ নিজেকে একমাত্র বিরোধী দলের নেতা দাবি করলে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সব সদস্যের তীব্র প্রতিবাদের মুখে স্পীকার তাঁর সেই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার ঘোষণা দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বিতর্কের সূত্রপাত করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এ অনির্ধারিত বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য ও প্রবীণ সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বিএনপির হারুনুর রশীদ, তরিকত ফেডারশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এবং বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা। আলোচনায় অংশ নিয়ে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বাংলাদেশে মদ ও জুয়ার লাইসেন্স দেয়ার জন্য বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, এত বোট ক্লাব, জিয়াউর রহমান স্টিমার ক্লাব করেছিল। লাকী খানের ঝাঁকি নাচের কথা কী ভুলে গেলেন? হিযবুল বাহার স্টিমারে যুব ও ছাত্র নেতাদের নিয়ে জিয়াউর রহমানের প্রমোদ ভ্রমণের কথা কেউ ভুলে যায়নি। জিয়াউর রহমানই এগুলো করেছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এদেশে মদ-জুয়ার লাইসেন্স বন্ধ করে দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান এসে আবার চালু করেছিল। যারা অপরাধের শুরু করেছে, তাদের আগে বিচার করা উচিত। ওখান থেকে ধরতে হবে। সরকার কোন মুসলমানকে মদের পারমিশন দেয়নি। বিএনপিই দিয়েছিল। তাই বন্ধ করতে গেলেই আপনারাই (বিএনপি) চিল্লাচিল্লি করে বলবেন, ফরেনারদের পারমিশন লাগবে। এ বিষয়ে বিএনপির হারুনুর রশীদ ফ্লোর নিয়ে বলেন, আমাদের বিরোধী দলের একজন সংসদ সদস্য একটি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু সিনিয়র এক সদস্য (শেখ সেলিম) কোথায় চলে গেলেন? বাংলাদেশে অনেক বিদেশী থাকেন। এছাড়া অন্য ধর্মের মানুষদের জন্য, ডোমদের জন্য মদের বৈধতা আছে। কোন মুসলমানের জন্য আইনে অনুমতি নেই। জিয়াউর রহমান যদি মুসলমানদের মদের লাইসেন্স দিয়ে থাকেন যদি প্রমাণ করতে পারেন আমি সদস্য পদ ছেড়ে দেবো। তিনি বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি। এসব ক্লাবে মদের ব্যবসার সঙ্গে সরকারী লোক জড়িত। আমি চ্যালেঞ্জ করছি। পুলিশ এসব জায়গা থেকে টাকা নেয়। প্রধানমন্ত্রী কোন দলের নয়, উনি রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী। এসব খুঁজে দেখা হোক। বিএনপির হারুনুর রশীদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, ‘হারুন সাহেবের সদস্য পদ আজই ছেড়ে দেয়া উচিত। উনি বললেন, জিয়াউর রহমান মুসলমানদের মদ খাওয়ার পারমিশন দেননি। উনি দেখাক, আইনে কোথায় বলা আছে মুসলমানরা মদ খেতে পারবেন না। আইন এখানে এনে দেখাক। পদ ছেড়ে দিক।’ এর আগে আলোচনার সূত্রপাত করে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, কয়েকদিন ধরে উত্তরা বোট ক্লাব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। কে করল এই ক্লাব? এই ক্লাবের সদস্য কারা? শুনেছি ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা দিয়ে এই ক্লাবের সদস্য হতে হয়। এত টাকা দিয়ে কারা সদস্য হয়? আমরা তো ভাবতেই পারি না। সারাজীবন এত ইনকামও করি নাই। তিনি আরও বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাবে মদ খাওয়া হয়। জুয়া খেলা হয়। বাংলাদেশে মদ খেতে হলে লাইসেন্স লাগে। সেখানে গ্যালন গ্যালন মদ বিক্রি হয়। লাইসেন্স নিয়ে খেতে হলে এত মদ তো বিক্রি হওয়ার কথা নয়। সরকারী কর্মকর্তারা এখানে কীভাবে সদস্য হয়? এত টাকা কোথা থেকে আসে? অভিজাত এলাকায় ডিজে পার্টি বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে এই সংসদ সদস্য বলেন, রাজধানীর গুলশান-বারিধারা এলাকায় ডিজে পার্টি হয়। সেখানে ড্যান্স হয়। মদ খাওয়া হয়। এসব আমাদের আইনে নেই, সংস্কৃতিতে নেই, ধর্মে নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলব, আপনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন কেন এসব হচ্ছে? কেন বন্ধ করা হবে না? ওইসব ক্লাবের সদস্য কারা হয়? বোট ক্লাবের জায়গার একজন মালিক আছে। তিনি যেতেও পারেন না। এসব দেখতে হবে। পরে জাতীয় পার্টির সদস্য বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ মশিউর রহমান বলেন, এখানে রাষ্ট্রীয় কিছু বিষয় আছে। বঙ্গবন্ধু লাইসেন্স দেননি। ২১ বছরে আইনকে মিসইউজ করে এটা করা হয়েছে। বিদেশীদের এ্যারেঞ্জমন্টের জন্য এটা করেছে। ক্লাবগুলোতে একজন ডাক্তার দিয়ে সার্টিফিকেট নিয়ে নেয়, দৈনিক মদ খেতে হবে। তারপর মুসলমানদের নামে পারমিট নেয়া হয়। বিএনপি এই লাইসেন্স দিয়েছিল। এখন কোন মুসলমান যদি মদ খায় সেখানে সরকারের কিছু করার নেই। এ সময় নিখোঁজ রংপুরের ইসলামিক বক্তা আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনানকে দ্রæত খুঁজে বের করার দাবি জানান তিনি।
×