ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জিডিপির এক শতাংশ অর্থ জলবায়ু অর্থায়নে ব্যয়ের দাবি

প্রকাশিত: ২০:৫৬, ১৮ জুন ২০২১

জিডিপির এক শতাংশ অর্থ জলবায়ু অর্থায়নে ব্যয়ের দাবি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রতি বছর কমপক্ষে জিডিপির এক শতাংশ অর্থ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে নাগরিক সমাজ। বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত ‘জীবন ও জীবিকার অগ্রাধিকার : ন্যায্যতা ও সুশাসন’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন এ দাবি জানান। এ সময় বক্তারা বলেন, জলবায়ু বাজেটের পরিচালন ব্যয় কমিয়ে উন্নয়ন খাতে প্রতিবছর কমপক্ষে ১০ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধি করতে হবে। জলবায়ু অর্থায়নে অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহে প্রয়োজনে বিদ্যুত-গ্যাস-পানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, দূষণকারী যানবাহন, বিমান ভ্রমণ ও বিমানে মালামাল পরিবহনের ওপর ‘সবুজকর’ আরোপ করতে হবে। এই অর্থ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ব্যয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রবর্তিত ‘বাংলাদেশে ক্লাইমেট ফিসক্যাল ফ্রেমওর্য়াক’ এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রতিটি বিভাগের জন্য পৃথক ‘স্থানীয় (জেলা ভিত্তিক) ক্লাইমেট ফিসক্যাল ফ্রেমওর্য়াক’ তৈরি করতে হবে। জাতীয় জলবায়ু কমিশনের আওতায় জলবায়ু অর্থায়নকে বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে সমন্বিতকরা যেতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, গৃহীত বেশির ভাগ জলবায়ু প্রকল্পগুলো ‘জনগণের জন্য’ প্রণীত হলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা ‘প্রকৃত জনগণ সম্পৃক্ত’ হয়ে উঠে না। তাই জলবায়ু প্রকল্পগুলোতে ‘স্থানীয় প্রভাবসমূহকে’ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এবং ‘স্থানীয় অগ্রাধিকার’ নির্ধারণের মাধ্যমে সর্বাপেক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে বিপন্ন জনগোষ্ঠী বিশেষত নারী, বয়োজ্যেষ্ঠ, ও শিশুর জন্য চাহিদা মাফিক প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। বক্তারা জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য অবিলম্বে বিশেষ কর্মসূচী চালুর দাবি জানান এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়ে একটি আইনী বিধি বিধান তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করার পরামর্শ দেন। নেটওয়ার্ক অন ক্লাইমেট চেঞ্জ, বাংলাদেশ (এনসিসি’বি) এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং সভাপতিত্ব করেন এনসিসিবির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ড. মুহাম্মদ ফররুখ রহমান। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক এবং ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি কাওসার রহমান, সিনিয়র সাংবাদিক এবং সুন্দরবন ও উপক‚ল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র এবং সেইভ দ্য চিলড্রেনের সিনিয়র অফিসার মোজাম্মেল হক। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এনসিসি’বির রিসার্চ এ্যান্ড এ্যাডভোকেসি এ্যাসোসিয়েট মিসেস প্রতীতি কামাল। সূচনা বক্তব্যে ড. মুহাম্মদ ফররুখ রহমান বলেন, করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাবে জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবেলা জটিলতর হয়ে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সক্রিয় জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও জলবায়ু ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে নাগরিক সমাজের সুদৃঢ় অবস্থান থাকা সত্তে¡ও ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য অগ্রাধিকারভিত্তিতে অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে না। এমনকি জলবায়ু কার্যক্রমে তাদের কার্যকরী অংশগ্রহণের বিষয়গুলো এখনও অমীমাংশিত রয়েছে। সরকারকে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে। বিসিসিজেএফ সভাপতি কাওসার রহমান বলেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বাজেটের অর্থ বিগত বছরগুলো থেকে তুলনামূলক কমেছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বাজেট খরচের কর্মদক্ষতাও অনেক কমেছে। কর্মদক্ষতা বাড়াতে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি। উন্নয়ন কর্মী মোজাম্মেল হক ঘোষিত বাজেটে বিপন্ন জনগোষ্ঠী বিশেষত শিশু, নারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় শিশু, নারী, তরুণ জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্তা বৃদ্ধি করতে হবে। অনুসরণযোগ্য কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। সাংবাদিক নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসলেই উপক‚লীয় অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই অবহেলিত উপক‚লীয় অঞ্চল নিয়ে দ্রæত কাজ না করা হলে সরকারের এই শত শত উন্নয়ন সাগরে পানিতে ডুবে যাবে। এতে বাংলাদেশের অর্থ সামাজিক ক্ষতির সাথে জনজীবন বিপর্যস্ত হবে।
×