ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতারণায় জড়িত ৪ জন গ্রেফতার

আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে পালিয়েছে ডাচ্-বাংলা কর্মকর্তা

প্রকাশিত: ২৩:১০, ১৭ জুন ২০২১

আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে পালিয়েছে ডাচ্-বাংলা কর্মকর্তা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ঢাকার এডিসি ডিভিশনে সিনিয়র অফিসার মীর মোঃ শাহারুজ্জামান ওরফে রনি ভয়ঙ্কর প্রতারক বলে অভিযোগ। তিনি ব্যাংকের আইটি অফিসার হিসেবে কর্মরত থাকার সুবাদে এটিএমের ইলেক্ট্রনিক জার্নালের তথ্য পাল্টে ৬৩৭টি এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ১৩৬৩টি লেনদেন করেন। এভাবে অভিনব পন্থায় তিন বছরে ২ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার টাকা টাকা আত্মসাত করে দেশ ত্যাগ করেন প্রতারক রনি। যা সিনেমার গল্পকে হার মানিয়েছে। ব্যাংক থেকে জালিয়াতির অভিযোগ পেয়ে ডিবি পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে সায়মা আক্তার, আল-আমিন বাবু, মেহেদী হাসান মামুন ও আসাদুজ্জামান আসাদ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪টি মোবাইল জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও ডিবি তদন্তে রনির স্ত্রীর এ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থের সন্ধান পায়। বুধবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, ২০১৮ সাল থেকে শাহারুজ্জামান ডাচ বাংলা ব্যাংকে এডিসি ডিভিশনে সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত অবস্থায় অর্থ আত্মসাত শুরু করেন। তার নেতৃত্বে তখন থেকে এই অভিনব প্রতারণার কাজটি চলছিল। বর্তমানে রনি দেশের বাইরে আত্মগোপন করায় তাকে গ্রেফতারে আইনী প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার জানান, কয়েক ধাপে এই টাকা আত্মসাত করা হয়। প্রথম ধাপে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের কোন অনুমোদিত এজেন্টের মাধ্যমে স্যালারি বা অন্য এ্যাকাউন্ট খোলা হতো। এরপর আবেদনকৃত এ্যাকাউন্ট ও এটিএম কার্ড তৈরি হওয়ার পর গ্রাহকের কাছে পাঠানোর জন্য স্ব-স্ব এজেন্টের কাছে হস্তান্তর করা হতো। এজেন্টদের কাছ থেকে ডিবিবিএল এটিএম কার্ডগুলো টাকার বিনিময়ে গ্রাহককে না দিয়ে ওই চক্রের কাছে হস্তান্তর করতো ওই চক্র। পরের ধাপে চক্রটি টাকা এটিএম বুথ থেকে তোলার সময় আইটি অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করতো। এরপর টাকা তোলার পর লেনদেনের তথ্য জার্নাল থেকে মুছে দেয়া হতো বা টাকা উত্তোলনের আগ মুহূর্তে এটিএম বুথের সঙ্গে সার্ভারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। এরই মধ্যে আইটি অফিসার জার্নালে বিভিন্ন পরিবর্তনের মাধ্যমে সাকসেসফুল মেসেজকে আনসাকসেসফুল মেসেজে রূপান্তরিত করে দিতেন তিনি। ফলে ওই মেসেজ পরবর্তীতে জার্নাল সার্ভারে গেলেও তা আর সাকসেসফুল মেসেজ হিসেবে গণ্য হতো না। পরের ধাপে টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তি ব্যাংকের হটলাইনে ফোন করে অভিযোগ করতেন যে, এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলনের সময় তার ব্যালান্স কেটে নেয়ার পরও তিনি এটিএম বুথ থেকে টাকা পাননি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের আইটি অফিসার অভিযোগের সত্যতা যাচাই করেন। প্রাথমিকভাবে তিনি দেখেন, কার্ডটি এটিএম বুথে প্রবেশ করানো হয়েছিল কিনা এবং হয়ে থাকলে সৃষ্ট জানাল সাকসেসফুল কিনা। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের আইটি অফিসার যখন দেখেন যে, টাকা উত্তোলনের জন্য কার্ডটি এটিএম বুথে প্রবেশ করানো হয়েছিল কিন্তু জার্নালটি আনসাকসেসফুল। তখন আইটি অফিসার অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ্যাকাউন্টে আবার ব্যালান্স সমন্বয় করে দিতেন। এভাবে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম মনিটরিং রোস্টার টিমে কর্মরত থাকা অবস্থায় শাহারুজ্জামান রনি উপস্থিত থেকে এবং কৌশলের মাধ্যমে বিভিন্ন এটিএমের ইলেক্ট্রনিক জার্নাল পরিবর্তন করে ৬৩৭টি এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ১৩৬৩টি লেনদেন করে দুই কোটি ৫৭ লাখ এক হাজার টাকা আত্মসাত করেন। এক পর্যায়ে ব্যালেন্সে অসামঞ্জস্যতার বিষয়টি অডিট টিমের নজরে আসে। তারা কয়েকজনকে সন্দেহের তালিকায় রেখে মামলা করেন। কিন্তু রনি ততদিনে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যান। অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার জানান, বর্তমানে তিনি দেশের বাইরে আত্মগোপনে রয়েছেন। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
×