ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অভিযোগ অস্বীকার করতে পারছেন না নাসির ও অমি

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ১৭ জুন ২০২১

অভিযোগ অস্বীকার করতে পারছেন না নাসির ও অমি

আজাদ সুলায়মান ॥ আলোচিত চলচ্চিত্র অভিনেত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করতে পারছেন না রিমান্ডে থাকা প্রধান আসামি নাসির উদ্দিন আহমেদ ও অমি। সাত দিন রিমান্ডের প্রথম দিনের জিজ্ঞাসাবাদে সেই রাতের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। প্রথমে তারা অস্বীকার করলেও পরে সেই রাতের ভিডিও ফুটেজ দেখার পর তারা চুপসে যান। ফুটেজে দেখা যায়, রাত বারোটার দিকে পরীমনি ক’জনকে নিয়ে অত্যন্ত স্বাভাবিক অবস্থায় ক্লাবে ঢোকেন। কিন্তু পরে বের হওয়ার সময় তাকে অচেতন অবস্থায় অন্যদের সহায়তায় ধরাধরি করে গাড়িতে তোলা হয়। এদিকে বুধবার আসামি অমির আরও দুই সহযোগী বাছির ও মশিউর মিয়াকে গ্রেফতার করে দুদিনের রিমান্ডে নিয়েছে দক্ষিণখান থানা পুলিশ। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ১০২টি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়। তাদের মানবপাচারকারী সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি শিকদার মোহাম্মদ শামীম। দক্ষিণখান থানা পুলিশ জানায়, পরীমনিকে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় গ্রেফতার তুহিন সিদ্দিকী অমির দুই সহযোগী বাছির ও মশিউর মিয়ার দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। বুধবার তাদের ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর পাসপোর্ট আইনে করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস তাদের দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, আলোচিত এ ঘটনাটি বেশ স্পর্শকাতর হিসেবে দেখা হচ্ছে। মামলা দায়েরের পর থেকেই আসামি গ্রেফতার, তাদের রিমান্ডে নেয়া এবং জিজ্ঞাসাবাদে বেশ সতর্ক ও সক্রিয় রয়েছে তদন্তকারীরা। নাসির পরীমনিকে জোরপূর্বক মদ খাওয়ানোর ঘটনা অস্বীকার করতে পারেননি। ফুটেজে দেখা যায়, ঢাকা বোট ক্লাবে প্রবেশের সময় পরীমনি স্বাভাবিক ও সুস্থ থাকলেও বের হওয়ার সময় তিনি প্রায় অচেতন ও অসুস্থ ছিলেন। সময় তখন রাত ১২টা ২২ মিনিট। ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে একটি কালো গাড়ি থামে। গাড়িটি ছিল বোট ক্লাবের সদস্য তুহিন সিদ্দকী অমির। গাড়ির সামনের দরজা থেকে নামেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। পেছনের ডান পাশের দরোজা দিয়ে বের হন গ্রেফতার হওয়া অমি, পরীমনির কস্টিউম ডিজাইনার জিমি ও তার বোন বনি। ক্লাবের বাইরের ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ক্লাবে ঢোকার সময় পরীমনি কালো টপস, জিন্সের প্যান্ট পরা ছিলেন। বনি লাল টপস, সঙ্গে জিন্সের প্যান্ট এবং জিমি কালো হাতাকাটা গেঞ্জি ও হাফ প্যান্ট পরা ছিলেন। অমির পরনে ছিল সাদা গেঞ্জি ও গ্যাবার্ডিনের প্যান্ট। শুধুমাত্র অমি ছাড়া বাকি সবাই মাস্ক পরে ক্লাবে প্রবেশ করেন। রিসিপশনের ক্যামেরায় তাদের চারজনকে একসঙ্গে বারে ঢুকতে দেখা যায়। তখন রিসিপশন ডেস্কে ছিলেন দুইজন এবং ডেস্কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন আরও একজন স্টাফ। রাত ২টায় রিসিপশনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, পরীমনিকে অচেতন অবস্থায় কোলে নিয়ে বের হন জিমি ও একজন সিকিউরিটি গার্ড। পেছনে দৌড়াচ্ছিলেন তার বোন বনি। তাদের পেছনে স্বাভাবিকভাবে হেঁটে যাচ্ছিলেন অমি। গাড়িতে ওঠার সময় আঙ্গুল তুলে সবাইকে ধমকের ইঙ্গিত দিতে দেখা গেছে অমিকে। এদিকে বনানী থানার বাইরের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, রাত ৩টা ৫২ মিনিটে বনানী থানায় প্রবেশ করেন পরীমনি। প্রথমে তারা ডিউটি অফিসারের রুম হয়ে থানার ভেতরে প্রবেশ করেন। পরে একজন অফিসার তাদের ডিউটি অফিসারের কাছে যেতে বলেন। পরীমনি ডিউটি অফিসারের রুমে গিয়ে তার বরাবর চেয়ারে বসেন এবং ঘটনার বর্ণনা দেন। তবে ডিউটি অফিসার তার কথা বুঝতে পারছিলেন না। পরে তাকে পুলিশের একটি গাড়িতে এভার কেয়ার হাসপাতালে পাঠানো হয়। বারের ভেতরে সিসিটিভি ফুটেজ না থাকলেও জিমি তার মোবাইলে ১৬ সেকেন্ডের মতো একটি ধস্তাধস্তির ভিডিও করেছিলেন। এতে নাসিরকে হই-হুল্লোড় ও গালমন্দ করতে শোনা যায়। এ সব ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিবির যুগ্ম-কমিশনার হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, নাসির ও অমি পরীমনির গালে থাপ্পড় মারা এবং মাটিতে ফেলে দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। মূলত তারা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ অমির গাড়িতেই পরীমনিকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। অমি না নিয়ে গেলে এমন ঘটনা নাও ঘটতে পারত। এদিকে রিমান্ডে থাকা তুহিন সিদ্দিকী অমির দুই সহযোগীকে দক্ষিণখান এলাকার একটি অফিস থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিশেষ অনুমতি ছাড়া বেআইনীভাবে পাসপোর্ট রাখার দায়ে তাদের প্রথমে আটক করা হয়। এরপর এ ঘটনায় দক্ষিণখান থানায় একটি মামলা করা হয়। ওই মামলায় অমি ও তার দুই সহযোগীকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেফতার ওই দুই সহযোগী হলেন বাছির ও মশিউর মিয়া। এ বিষয়ে বুধবার দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাহ শিকদার মোহাম্মদ শামীম দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, দক্ষিণখান থানার আশকোনা হাজী ক্যাম্প সংলগ্ন সিঙ্গাপুর ট্রেনিং সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে তুহিন সিদ্দিকী অমির। সেই প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মকর্তা বাছির ও মশিউর মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে ঢাকা জেলা পুলিশ এসে দক্ষিণখান এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। আটকের পর ঢাকা জেলা পুলিশ বাদী হয়ে দক্ষিণখান থানায় একটি মামলা করে। সেই মামলায় বাছির ও মশিউর মিয়াকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। মামলাটি পাসপোর্ট এ্যাক্টে করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১০২টি পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি তুহিন সিদ্দিকী অমির হলেও এর পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বাছির ও মশিউর মিয়া। তাদের মধ্যে একজন প্রতিষ্ঠানটির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এবং অন্যজন মার্কেটিং ডিরেক্টর। কী অভিযোগে মামলা করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশেষ কোন অনুমতি ছাড়া একটি লোক বা একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে এতগুলো পাসপোর্ট থাকা বেআইনী। সে কারণেই তাদের আটক করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় আসামি অমিও। যেহেতু অমি অন্য একটি মামলায় গ্রেফতার তাই এ মামলায় তাকে শোন এ্যারেস্ট দেখানো হবে। এ বিষয়ে পুলিশ জানায়, আশকোনায় সিঙ্গাপুর ট্রেনিং সেন্টারের মাধ্যমে অমির বাবা তোফাজ্জল হোসেন বিগত দেড় যুগ ধরে মানবপাচার ও মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানির সিন্ডিকেট টপ টেন রিক্রুটিং এজেন্সির মূল হোতা। নাসিরের সঙ্গে অমি গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন তোফাজ্জল। তাকে না পেয়ে তার দুই সহযোগী বাছির ও মশিউরকে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া অমির ক্যাশিয়ার পলাশকে গ্রেফতারের জন্য মাঠে নেমেছে পুলিশ। গত রবিবার রাত ৮টার দিকে নিজের ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দিয়ে পরীমনি জানান, ঢাকা বোট ক্লাবে তাকে হত্যা ও ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এ ঘটনায় সোমবার সকালে সাভার থানায় ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। মামলায় তিনি উত্তরা ক্লাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট নাসির ইউ আহমেদসহ ৬ জনকে আসামি করেন। এদের মধ্যে তাদের দুজনকে ৭ দিন ও ৩ জনকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে ডিবিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পরীমনির বিরুদ্ধে ভাংচুরের অভিযোগ ॥ ঢাকাই সিনেমার নায়িকা পরীমনির বিরুদ্ধে কর্মীদের সঙ্গে অসদাচরণ ও ক্লাবে ভাংচুরের অভিযোগ তুলেছে রাজধানীর গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাব কর্তৃপক্ষ। বুধবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে অল কমিউনিটি ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ক্লাবটির সভাপতি কে এম আলমগীর ইকবাল। খবর ওয়েবসাইটের। তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্লাবে কিছুদিন আগে (৮ জুন) ছোট্ট একটি অঘটন ঘটেছিল। আমাদের ক্লাব বন্ধের সময় হয়ে এসেছিল। তখন কয়েকজন লোক ক্লাবে আসেন। গেটে দায়িত্বে থাকা সিকিউরিটি গার্ডরা ফোন করে জানান, তারা কিছুক্ষণ আগে একবার এসেছিলেন। তখন তারা ফোন ও কিছু কাগজ রেখে গেছেন। সেগুলো নেয়ার জন্য আবার এসেছেন। আলমগীর ইকবাল বলেন, ‘আমাদের ক্লাবের নিজস্ব কিছু নিয়ম-কানুন আছে। বিশেষ করে কোন মেয়ে যদি ক্লাবে আসে তাহলে তাকে কিছু ড্রেস কোড মেনে আসতে হয়। সেদিন এখানে যারা এসেছিলেন তাদের মধ্যে একজন ছিলেন হাফপ্যান্ট ও স্যান্ডেল পরা। তখন আমাদের কর্মকর্তারা বলেন, আপনারা তো ক্লাবের নিয়ম ভঙ্গ করেছেন। তাদের ক্লাব থেকে এটা বলায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি আরও বলেন, ‘এই সময়ে তারা যে সদস্যদের মাধ্যমে ক্লাবে আসেন তিনিও তাদের চলে যেতে বলেন। কিন্তু তারা যেতে চাননি। পরে বাধ্য হয়ে আমাদের সেই সদস্য চলে যান। এর মধ্যে আমাদের ক্লাবের সব কর্মকর্তা চলে যান। শুধু দুজন ওয়েটার ছিল। এরই মধ্যে তারা ৯৯৯-এ কল করে পুলিশ ডাকেন। পুলিশ এলে তারা ক্লাব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তাদের হেনস্তার অভিযোগ করেন। কিন্তু বাস্তবে তখন আমাদের তেমন কেউ ছিল না। ঘটনার সময় তখন রাত ১টা থেকে দেড়টা বাজে। বরং এই সময়ে একজন আমাদের ক্লাবের ১৫টি গ্লাস, নয়টি এ্যাসট্রে, বেশকিছু হাফ প্লেট ভাঙ্গেন। পরে আমরা জানি, তার নাম পরীমনি। পুলিশ এসেও এর সত্যতা পায়। পরে পুলিশ ঘটনার বিষয়ে তাদের উর্ধতনদের জানায়। তারা ওই পুলিশ সদস্যদের চলে যেতে বলেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে আলমগীর ইকবাল বলেন, ‘ক্লাবের নিয়ম অনুযায়ী যে সদস্যের মাধ্যমে তারা এসেছিলেন, আমরা তাকে শোকজ করেছি’।
×