ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লালমনিরহাট সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরুসহ পাচার হচ্ছে নারী, শিশু

প্রকাশিত: ২২:০০, ১৬ জুন ২০২১

লালমনিরহাট সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরুসহ পাচার হচ্ছে নারী, শিশু

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট ॥ জেলার একাধিক সীমান্ত পকেট দিয়ে আজ বুধবার ভোর রাতে বানের পানির মত ভারতীয় গরু চোরাই পথে এসেছে। এসব গরুর মধ্যে পানবাড়ি বিজিবি ১৩টি ভারতীয় গরু আটক করেছে বলে জানা গেছে। গতরাতে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে গরু ও নারী শিশু পাচারের বেশ কিছু ছবি এই প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌচ্ছে। জানা গেছে, জেলার ২৮৫ কিঃ মিঃ ভারতীয় সীমান্ত রয়েছে। এই সীমান্তের প্রায় ৭৪ কিঃমিঃ কাঁটাতারের বেড়াবিহীন অবস্থায় রয়েছে। কাঁটাতারের বেড়াবিহীন সীমান্ত গুলো প্রায় উম্মুক্ত। বুড়িতিস্তা, ধরলা ও তিস্তা নদী দ্বারা বেষ্টিত। কোথাও কোথাও রয়েছে দূর্গম চরাঞ্চল। সীমান্তের এই দূর্বলাতার সুযোগ নিয়ে কোরবানির ঈদে গরুর চাহিদার উপর নির্ভর করে গরু পাচারকারিরা বেপোরয়া হয়ে উঠেছে। সীমান্তের দহগ্রাম, দৈইখাওয়া, কালীগঞ্জ, চাপারহাট, গোড়ল, কুটিয়ামঙ্গল, দূর্গাপর ও মোগলহাট সীমান্ত দিয়ে দেদারছে ভারতীয় গরু আসছে। এসব ভারতীয় গরুর বেশির ভাগ ধরলা নদী দিয়ে নৌপথে কাঁঠালবাড়ি ও বড়বাড়ি হাটে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে। ভোররাতে তিস্তা নদী পাড় হয়ে নীলফামারী জেলার জলঢাকা ও ডোমার দিয়ে দেশের অন্যত্র গরু পাচার হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও সপ্তাহের শনিবার - বুধবার জেলার কালীগঞ্জের শিয়াল খাওয়ায়হাট। শুক্রবার - সোমবার চাপারহাট, শনিবার - মঙ্গলবার দূরাকুটিহাটে শতশত ভারতীয় গরু চোরাইপথে এসে বিক্রির জন্য উঠে। এই সব গরু প্রকাশ্য বিক্রি হয়ে দেশে বিভিন্ন জেলা ঢাকা, চট্রগ্রাম, কুমিল্লা, বগুড়া, রংপুর সহ নানা স্থানে ট্রাকভর্তি করে পাচার হয়ে চলে যায়। প্রতিটি পয়েন্টে বিভিন্ন আইনশৃংখলা বাহিনীকে অর্থ দিয়ে মেনেজ করা হয়। কালী গঞ্জের মিয়াল খাওয়া হাটের গরু বিক্রির রশিদ দিয়ে পাচার হয়ে আসা গরু বৈধতা পাচ্ছে। চোরাচালানি সূত্রে জানা গেছে, এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পাচার হয়ে আসা গরু গুলোর নামে অর্থেও বিনিময়ে রিসিভ কাটে। ফলে আইনশৃংখলাবাহিনী তল্লাসিতে গিয়ে হাটের স্লীপ দেখে ফিরে আসে। প্রকৃত অর্থে এটা অযুহাত মাত্র। একজোড়া ভারতীয় গরু পাচার হয়ে আসেলে সীমান্তরক্ষীবাহিনী তাদের স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার টাকা উৎকোচ পেয়ে থাকে। অন্যান্য বাহিনী, রাজনৈতিক কর্তা, মাস্তান তো রেসিও অনুয়ায়ী অর্থ পেয়ে থাকে। এভাবে প্রকাশ্য গরু পাচার হয়ে এসে হাটে বিক্রি হচ্ছে। এই গরুর অবৈধ অর্থেও কারণে সীমান্ত সংলগ্ন হাটের এজারাদার ও চেয়ারম্যান, মেম্বার গণ কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। অনেকে গরুর ব্যবসার পাশাপশি হুন্ডির ব্যবসা করছে। এদিকে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার উপর দিয়ে একই কায়দায় নারী, শিশু ও মানুষ পাচার হয়ে আসছে ও যাচ্ছে। এই সব নারীকে ভারতীয় পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয়া হয়। পাচার হয়ে যাওয়া নারীরা পাচারের সময় সীমান্তে যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার খবর পাওয়া যায়। কিন্তু মাফিয়া এই চক্রের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পায়না। বহস্যজন কারণে আইনমৃংখলা বাহিনীর সদস্যগণ কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। বুধবার সীমান্তের গরু পাচারের ও নারী, শিশু এবং মানুষ পাচারের ছবি এই প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌচ্ছেছে। পাচার সংক্রান্ত বিষয়ে বিজিবি’র উর্ধতণ কর্মকর্তাদের ফোন দিলে তারা ফোন রিসিভ করেনি। লালমনিরহাট ২৮৫ কিঃমিঃ সীমান্তে লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি, রংপুর ৫১ বিজিবি ও রংপুর ৬১ বিজিবি দায়িত্ব পালন করে আসছে। সীমান্তে কঠোরভাবে দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে তিনটি পৃথক ব্যাটালিয়ন দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সীমান্তে হঠাৎ গরুপাচার, মাদক পাচার, নারী, শিশু পাচার ও মানুষ পাচার সহ নানা অবৈধ সীমান্ত ব্যবসা বেড়ে গেছে। অনুসন্ধানে বেড়ে আসছে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য। লালমনিরহাট সীমান্তের গোড়ল ও চাপারহাট গত রাতে প্রায় ২০টি বাঁশের চরকা বা কপি কলের মাধ্যমে শতাধিক গরু এসেছে। এই সব গরু সীমান্ত গ্রামের বাড়ি গুলোতে অবস্থান করেছে। আজ বুধবার শিয়াল খাওয়া হাটে প্রায় ২/৩ শতাধিক চোরাই পথে আসা ভারতীয় গরু উঠেছে। বানের পানির মত ভারতীয় গরু আসায় স্থানীয় খামারিগণ আর্থিক ঝুঁকির মধ্যে পড়ার আশংকা করছে। এভাবে গরু আসলে দেশী খামারে লালন- পালন করা গরু দাম ঈদে পাওয়া যাবে না। সরকারকে কঠোরহস্তে ভারতীয় গরু পাচার রোধে পদক্ষেপ নিতে বলেছে খামারিগণ। জেলার পানগ্রাম উপজেলার পান বাড়ি সীমান্তে বিওপি সূত্রে জানা গেছে, আজ বুধবার তারা দহগ্রাম হতে ১৩টি ভারতীয় গরু আটক করেছে। গরু আটক অভিযান অব্যহ্নত আছে।
×