ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মানবপাচার চলছেই

প্রকাশিত: ২০:৩৬, ১৭ জুন ২০২১

মানবপাচার চলছেই

বর্তমানে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব করোনা মহামারীর মারাত্মক সংক্রমণে বিপর্যস্ত। করোনার এমন দুর্যোগেও এক দেশ থেকে অন্যত্র যাওয়ার অভিবাসন প্রক্রিয়াও চলমান। ফলে মানব পাচারের মতো ঘৃণ্য অপকর্মও থেমে থাকার কোন সুযোগ দৃশ্যমান হচ্ছে না। বরং আন্তর্জাতিক সীমানায় এই অভিবাসন প্রক্রিয়ায় এক স্থান থেকে আরেক দেশে চলে যাওয়ার ভয়ঙ্কর তথ্যও সব সময় উঠে আসছে। সাগর পাড়ি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপ যাত্রার যে দুর্বিষহ চিত্র উঠে আসছে, তা করোনাকালেও এক দুঃসহ দুঃস্বপ্ন বলা যায়। নিজ দেশ থেকে তুলনামূলক ভাল পেশার প্রলোভনে কিছু মানুষ অন্য জায়গায় যেতে একেবারে মরিয়া হয়ে ওঠে। বৈধ পথে যেতে ব্যর্থ হলে অবৈধ যাত্রার শামিল হতে তারা কোন কিছুর পরোয়া করে না। গন্তব্য শুধু অন্য দেশে গিয়ে অপেক্ষাকৃত ভাল থাকার সুযোগ তৈরি করা। সোজা রাস্তায় সব সময় যাওয়ার সম্ভব হয় না। ফলে বিকল্প পথে খপ্পরে পড়তে হয় এক সংঘবদ্ধ দালাল চক্রের হাতে। অথচ নির্বিঘেœ, নিশ্চিন্তে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে কাক্সিক্ষত ইউরোপে যাওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। বিপন্ন অবস্থায় ধরা পড়ার আশঙ্কা থাকে পদে পদে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কঠোর নজরদারির ফাঁকফোকরে এমন অনৈতিক বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলার মাঝপথে ধরা পড়ার যে চিত্র উঠে আসে তাও কোনভাবেই প্রত্যাশিত নয়। সম্প্রতি সমুদ্র পথে ইউরোপ যাওয়ার প্রাক্কালে লিবিয়ার কোস্ট গার্ডের হাতে ধরা পড়ে ১৬৪ বাংলাদেশী অভিবাসী। যারা উন্নত পেশার আকাক্সক্ষায় ইতালি, ফ্রান্স এসব দেশে পাড়ি জমাতে শুরু করে সমুদ্রযাত্রা। তারও আগে ইউরোপের মেসিডোনিয়াতে যাওয়ার সময় ২০ বাংলাদেশী সংশ্লিষ্ট পুলিশের হাতে আটক হওয়ার ঘটনা গণমাধ্যমে উঠে আসে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করলে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নড়েচড়ে বসে। মানব পাচারকারী চক্রের অনুসন্ধানে তৎপর হয়ে ওঠে। অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। সিংহভাগ নারী ও শিশু পাচার হয় এমন তথ্য নতুন নয়। অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া দুর্বল-অসহায় নারী এবং অবোধ শিশু-কিশোররাই এই দালাল চক্রের জালে আটকা পড়ে বিদেশে পাচার হয়। শুধু তাই নয়, সেখানেও প্রত্যাশিত পেশা না পেয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপনের ভয়ঙ্কর দৃশ্যও উঠে আসে। অবৈধভাবে অভিবাসন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হতে অসহায় ও কাজপ্রত্যাশী মানুষগুলো নিজ দেশের সহায় সম্পদ বিক্রি করে একেবারে নিঃস্ব হয়ে ভিন দেশে পাড়ি জমায়। যার শেষ পরিণতি নৃশংস এবং মর্মান্তিক। গত বছর ২৬ বাংলাদেশী সমুদ্রপথে ইউরোপ যাওয়ার সময় লিবিয়ার সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনাও সবাইকে হতবাক করে দেয়। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন অপরাধীরা যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেত তবে মানবপাচার কমে যেত অনেকাংশে। ইতোমধ্যে লিবিয়ায় মানব পাচার চক্রের অর্ধশতাধিক দালাল আটক হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা এবং তদন্তও শুরু হয়েছে। ২০১২ সালে মানবপাচার প্রতিরোধ দমন আইনটি প্রণীত হলেও সিংহভাগ মামলা এখন পর্যন্ত কোন আলোর মুখ দেখেনি। ১ লাখ ৮০ হাজার ৬৭৫টি মামলা এখনও বিচারাধীন অবস্থায় আটকে আছে। এসব মামলার যথাযথ আইনী সমাধানে বিঘœ ঘটলে সমস্যার সমাধান হবে না।
×