ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

টঙ্গী-গাজীপুর বিআরটি'র ভাঙাচোরা সড়কে যানজটে লাখো জনজীবন স্থবির

প্রকাশিত: ২০:০০, ১৬ জুন ২০২১

টঙ্গী-গাজীপুর বিআরটি'র ভাঙাচোরা সড়কে যানজটে লাখো জনজীবন স্থবির

নিজস্ব সংবাদদাতা, টঙ্গী ॥ ঢাকা-টঙ্গী-গাজীপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কে টঙ্গী ব্রীজ থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটারের মহাসড়কের রাস্তা পাড়ি দিতে এখন ৪ থেকে ৫ ঘন্টা সময় লেগে যাচ্ছে। এমন মহা ভোগান্তি কবে শেষ হচ্ছে এমন নির্দিষ্ট আশা দিতে পারছেন না প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তবে তাঁরা আশা করেছেন, ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে টঙ্গী-গাজীপুর বিআরটি প্রকল্পের কাজ শেষ করার সব ব্যবস্হা হাতে নেয়া হয়েছে। বিআরটি প্রকল্পের চলমান কাজে বিকল্প পার্শ্ব রাস্তা তৈরী না করে নির্মাণ কাজ চালানো এবং ভাঙাচোরা-খানাখন্দক হয়ে যাওয়া রাস্তা মেরামত না করায় এ অবস্হা দেখা দিয়েছে বলে গাড়ী চালক ও স্হানীয়রা জনকণ্ঠকে জানাচ্ছেন। যানবাহনের মহাযানজটে গত ৩ দিনের অবস্হা ভয়াবহ আকার ধারন করেছে টঙ্গী গাজীপুর মহাসড়কের এ সড়কটিতে। সমস্যা সমাধনে গাজীপুর মহানগর পুলিশ এবং বিআরটি প্রকল্পের শীর্ষ স্হানীয় কর্মকর্তারা বুধবার এ সড়কের টঙ্গী চেরাগআলী মার্কেট এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শনে আসেন। এ সময় বিআরটি প্রকল্পের অতিরিক্ত সচিব নীলিমা আক্তার জনকণ্ঠকে বলেন, রাস্তার কাজের সময় বর্ষাকালের বৃষ্টির পানি জমে ভালো রাস্তাগুলোও ভেঙেচুরে তছনছ হয়ে গেছে। রাস্তার পাশের ড্রেনগুলো পরিস্কারের কাজও হাতে নেয়া হয়েছে। মহাসড়কের যানজট কমাতে রাস্তার ভাঙাচোরা খানাখন্দ মেরামতের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। আশা করছি, দু-তিন দিনের মধ্যে টঙ্গী গাজীপুর মহাসড়কে এমন ভয়াবহ যানজট থাকবে না। এখানকার এখন প্রধান সমস্যা হচ্ছে, ট্রাফিক জ্যাম। রাস্তায় গাড়ি বেশী হয়ে যাওয়াতেও এমন জ্যামেরও একটি কারন। বুঝতে পারছি জনগণের চরম অসুবিধা হচ্ছে। এখন যত তাড়াতাড়ি রাস্তা ক্লিয়ার করতে পারি সে ব্যবস্হাও আজ নেয়া হয়েছে। সর্বাত্মক চেষ্টা করছি জনগনের চরম দুর্ভোগ নিরসনে। আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে বিআরটির পুরো কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়েই কাজ শেষ হয়ে যাবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বিআরটির প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম, বিআরটি দক্ষিণ অংশের প্রকল্প পরিচালক লিয়াকত আলী, গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বরকত উল্লাহ এবং পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, মামুন এবং ওসি শাহ আলম টঙ্গী পশ্চিম থানা। টঙ্গী-গাজীপুর মহাসড়কে যানজটের জন্য বেশ কয়েকটি কারণকে চিহ্নিত করেছে গাজীপুর মহানগর পুলিশ। এগুলো হচ্ছে, মহাসড়কের ভাঙাচোরা খানাখন্দ রাস্তা মেরামত না করা, পর্যাপ্ত ফুটপাত না থাকা। পাশাপাশি যান চলাচলে পর্যাপ্ত ব্যবস্হা না করে রাস্তায় নির্মাণ কাজ চলানো, মহাসড়কের পাশে অবৈধ পার্কিং, ধীর গতি ও অনুমোদনহীন যানবাহন মহাসড়কে চলে আসা, রাস্তা দখল করে দোকানপাট বসানো ও গণপরিবহনের বাস ট্রাক যত্রতত্র থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করানো। বুধবার সড়কটির বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের বিভিন্ন অংশে পিচঢালাই উঠে বড় বড় গর্ত হয়ে গেছে। চলমান গাড়ি গুলো হুমড়ি খেয়ে পড়ছে ভাঙা গর্তে। এসব গর্তে জমে আছে পানি। পানির নিচের এসব গর্তে উল্টে পড়ে চলমান যানবাহন। এদিকে টঙ্গী ব্রীজ থেকে গাজীপুরা পর্যন্ত বিআরটি কাজের দক্ষিণ অংশেই মূলত যানজটের তীব্রতা সব চাইতে বেশী দেখা গেছে। রাস্তার দুপাশের এক পাশে ৩ লেন থেকে ৪ লেন ফাঁকা থাকা সত্বেও ভাঙাচোরা খানাখন্দ রাস্তায় যানচলাচল একেবারেই অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। টঙ্গী গাজীপুরা পর্যন্ত রয়েছে মাত্র ৫ কিলোমিটারের রাস্তা। বিআরটি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা টঙ্গী ব্রীজ থেকে গাজীপুরা পর্যন্ত দেখভালের ব্যবস্হা নিলে এমন অবস্হা থাকতো না বলে গাড়ি চালক ও স্হানীয়রা জনকণ্ঠে জানাচ্ছেন। এদিকে টঙ্গী গাজীপুর মহাসড়কের মহাযানজটের তীব্রতা মঙ্গলবার থেকে উত্তরা, এয়ারপোর্ট ছাড়িয়ে মহাখালী পর্যন্ত গ্রাস করে পুরো রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে অফিস গামী, অফিস ফেরতরা পড়েছেন চরম বিপাকে। জীবিকা নির্বাহে খেটে-খাওয়া মানুষরা যেতে পারছেন এক স্হান থেকে অন্য স্হানে। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষের জীবনযাত্রা। গাড়ি-ঘোড়া যানজটের কবলে পড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে রাস্তায়। নষ্ট হচ্ছে মানুষের কর্ম ঘন্টা। স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়ও দেখা দিয়েছে নানা অচলাবস্থা। গাড়িতে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকে অবশেষে পায়ে হেঁটেও পথ পাড়ি দিতে পারছেন না যাত্রী বা পথচারীরা। ভাঙাচোরা রাস্তা মানুষদের চলাচলেও দেখা দিয়েছে চরম অচলাবস্থা।
×