ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শাকিল আহমেদ মিরাজ

সাকিবের আচরণ ও ঘরোয়া ক্রিকেটের দীনতা

প্রকাশিত: ২৩:৫৬, ১৬ জুন ২০২১

সাকিবের আচরণ ও ঘরোয়া ক্রিকেটের দীনতা

ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা। প্রায় দেড় শ’ বছরে ব্যাট-বলের এ দ্বৈরথের সঙ্গে কত না সম্মান, ভালবাসা আর ইজ্জত ইতিহাস জড়িয়ে। নব্বইয়ের দশকে আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে শচীন টেন্ডুলকর, সাঈদ আনোয়ার, ব্রায়ান লারা, এ্যান্ডি ফ্লাওয়ারদের দেখে অনেকেরই মনে আফসোস জাগত, আহ্া বাংলাদেশের কোন ক্রিকেটার কি আদৌ এখানে জায়াগ পাবেন? মনে হতো অলিক স্বপ্ন। অবিশ্বাস্য সেই স্বপ্ন বাস্তব করেছেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বে প্রথম অলরাউন্ডার হিসেবে ওয়ানডে, টেস্ট, টি২০- তিন ভার্সনেই দখল করেছেন শীর্ষস্থান। গত দেড় দর্শক বলতে গেলে তাকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে টাইগার ক্রিকেট। এসেছে স্মরণীয় সব মুহূর্ত, সোনায় মোড়ানো সব জয়। দেশের সীমা ছাড়িয়ে সাকিব হয়ে উঠেছেন বিশ্ব তারকা। সেই তিনি যখন সাত বছরে চারবার নিষিদ্ধ হন, বাজে আচরণের জন্য অসংখ্যবার শিরোনামে উঠে আসেন, তখন তাকে ঘিরে গর্বের জায়গাটা লজ্জার কালো আঁধারে ছেঁয়ে যায়। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে তার এমন বাজে আচরণে খোদ বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসানের প্রতিক্রিয়ায়ও সেটি স্পষ্ট,‘আন্তর্জাতিকভাবে এ ঘটনা এত দেশে ছড়িয়ে গেছে যে, আমাকে ক্রিকেট খেলুড়ে সব দেশে থেকে ফোন করছে। আমি ফোন ধরছি না। এগুলোর সমাধাণ না হলে ঘরোয়া লিগ খেলার কারণ দেখি না। লজ্জার চরম জায়গায় পৌঁছে গেছি আমরা। ঘরোয়া লিগে আগেও কিছু ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এবার একদম চরম বেইজ্জতি!’ বিসিবি বসের কথায় দুটি বিষয়ই পরিষ্কার। প্রথমত, সাকিবের ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মাথা নিচু করে দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, যে বাজে আম্পারিংয়ের জন্য বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের এমন কাÐ, এভাবে সেই ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে কি হবে? প্রথম ঘটনা ইনিংসের পঞ্চম ওভারে। ওভারের শেষ বলে আবাহনী অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের বিপক্ষে লেগ বিফোরের আবেদন করেন মোহামেডান অধিনায়ক সাকিব। সেটি নাকচ করে দেন আম্পায়ার ইমরান পারভেজ। এতেই ক্ষিপ্ত সাকিব লাথি দিয়ে ভাঙেন স্টাম্প। উত্তেজনা ছড়ায় ম্যাচে। ভিডিও ফুটেজে অবশ্য স্পষ্ট, আউট ছিলেন মুশফিক। আরও বড় ঘটনাটি ঘটে ম্যাচের ষষ্ঠ ওভারে। পঞ্চম বলের পর বৃষ্টি নামলে আম্পায়াররা সিদ্ধান্ত নেন খেলা বন্ধ করার। তাদের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ সাকিব একপর্যায়ে আম্পায়ারের সঙ্গে তর্ক করতে করতে স্টাম্প তুলে আছাড় মারেন! এতেও ক্ষান্ত হননি, আবাহনীর ড্রেসিং রুমের দিকে অঙ্গভঙ্গি করে প্রতিপক্ষ কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনের দিকেও তেড়ে গেছেন। পরে অবশ্য ফেসবুকে এটিকে ‘মানবিক ভুল’ এবং ভবিষ্যতে এমনটা আর হবে না বলে প্রতিশ্রæতি দিয়েও নিষিদ্ধ হয়েছেন তিন ম্যাচের জন্য। তরুণ প্রজন্মের আইডল সাকিবের একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে পড়া কখনোই ভাল উদারণ হতে পারে না। গত কয়েকদিন এটিই হয়ে ওঠে টক অব দ্য কান্ট্রি। ঝড় বয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামে। ক্ষুব্ধ এক ক্রিকেটপ্রেমীর প্রতিক্রিয়া, ‘এই বেয়াদবির জন্য তাকে কঠিন শাস্তি দেয়া উচিত। তার অহঙ্কার তুঙ্গে বলেই এমন আচরণ। ক্রিকেটে তার আর দেয়ার কিছু নেই, সে-ও বুঝে গেছে।’ সাকিবের মতো আইকন ক্রিকেটারের এমন আচরণ দেশের জন্য বাজে উদাহরণ বলেও মনে করেন অনেকে, ‘সাকিব কিশোরদের প্রেরণা। তার কাছ থেকে বার বার এমন আচরণ কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। এবার অন্তত তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।’ ভিন্ন মতও আছে, ‘বাজে আম্পারিংয়ের জ্বলন্ত উদাহরণ, কেউ প্রতিবাদ করার সাহস করেন না, সাকিব তা করে দেখিছেন!’ আরেকজন লিখেছেন, ‘দিনের পর দিন ম্যাচ ফিক্সিং সাকিবের মতো একজনের পক্ষে মেনে নেয়া অসম্ভব।’ ম্যাচের পরিস্থিতি তুলে ধরে একজনের প্রতিক্রিয়া, ‘প্রতিবারই তো আবাহনী একই কারসাজি করে টুর্নামেন্ট জেতে। অতীতে শাস্তি পেলে এমন হতো না। মাঠে কি এমন বৃষ্টি হচ্ছিল যে, ওভারের এক বল বাকি থাকতেই কভার ডাকতে হলো। ওই আম্পায়ার আর আবহনী আজীবন নিষিদ্ধ হোক।’ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক প্রধান সাবের হোসেন চৌধুরীর বক্তব্যেও ঘরোয়া ক্রিকেটের দীনতা ফুটে ওঠে, ‘আমাদের সময়ে এতটা ওপেন হতো না। গ্যালারিতে দর্শকদের মারামারি হতো। অফিসিয়ালদের মধ্যেও রেষারেষি চলত। কিন্তু মাঠে এতটা উন্মুক্তভাবে কখনও হয়নি। আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত পছন্দ না হলে হয়ত মাঠের এক সাইডে এসে নিজেদের মধ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করতাম। কিন্তু আম্পায়ারকে সরাসরি চার্জ করার ঘটনা এতটা ঘটত না।’ সাকিবের এ কা উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতেও। ক্রিকইনফো শিরোনাম করেছে, ‘ডিপিএলে রাগে এক ম্যাচে দুইবার স্টাম্প ভাঙলেন সাকিব আল হাসান।’ ভারতের সংবাদমাধ্যম কলকাতা ২৪ ঘণ্টা শিরোনাম করেছে, ‘বাইশ গজে অসভ্যতার জন্য ক্ষমা চাইলেন সাকিব’ আনন্দবাজার পত্রিকা শিরোনাম করেছে, ‘ফের বিতর্কে সাকিব, লাথি মেরে স্টাম্প ভাঙলেন, বিপক্ষ প্রশিক্ষকের সঙ্গে ঝামেলায় জড়ালেন।’ ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ডটকম সাকিবের একটি ভিডিও আপলোড করে ক্যাপশনে লিখেছে, ‘ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে দুইবার মেজাজ হারালেন বাংলাদেশী অলরাউন্ডার সাকিব, রাগ ঝাড়লেন স্টাম্পের ওপর।’ খালিজ টাইম প্রকাশ করেছে সাকিবের ক্ষমা চাওয়ার সংবাদ। এনডিটিভি লিখেছে, ‘ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে আম্পায়ারের ওপর দুইবার খেপলেন সাকিব আল হাসান।’ এর সঙ্গে ভিডিও সংযুক্ত করে দিয়েছে গণমাধ্যমটি। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে অনিয়ম আর দুর্নীতি যেভাবে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে, তাতে সাকিবের মতো একজন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের পক্ষে সেটি মাথা নিচু করে মেনে নেয়া অসম্ভব বলেই এই বিস্ফোরণ। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট বিশেষ করে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন লিগ, প্রথম বিভাগ ও দ্বিতীয় বিভাগে আম্পায়ারিং নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ বহু পুরনো। পক্ষপাতদুষ্ট আম্পায়ারিং ছাড়াও নির্দিষ্ট দলকে সুবিধা দেয়া নিয়েও বিভিন্ন সময় সমালোচিত হয়েছে ঘরোয়া ক্রিকেট। অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের পরোক্ষ ইঙ্গিতে আম্পায়াররা কোন কোন বিশেষ দলের পক্ষে সিদ্ধান্ত দিয়ে খেলার ফলে প্রভাব বিস্তার করেন। অভিযোগ আছে, ঘরোয়া ক্রিকেটে এখন সুনিপুণ পরিকল্পনায় ম্যাচ আম্পায়ার বণ্টনের মাধ্যমে ছক করা হয় ক্ষমতাবান ক্লাব বা ক্লাবগুলোকে জেতানোর! প্রশ্ন উঠতে পারে আম্পায়ারদের এখন যে বেতন কাঠামো আর যা ম্যাচ ফি তাতে, পেশাদার আম্পায়াররা কেন এভাবে নৈতিকতা বিসর্জন দেবেন? সংশ্লিষ্টরা বলছেন উত্তরটা সহজ। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রকরা অনায়াসেই তাদের টোপ দেন হয় নির্দেশ মান, নয়ত বেতন ও ম্যাচ ফি বিসর্জন দাও। তাই ঘরোয়া ক্রিকেটে বিশেষ বিশেষ দলের ম্যাচে এখন সবচেয়ে আগে নজর পড়ে আম্পায়ারদের ওপর। এদিনই যেমন, আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে আম্পায়ারিং করেছেন ইমরান পারভেজ রিপন ও মাহফুজুর রহমান লিটু। অথচ দুই বড় দলের ম্যাচ পরিচালনার জন্য এই দুজনের চেয়েও দক্ষ একাধিক আম্পায়ার, যারা আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনা করেছেন, দেশে আছেন। তারা কেন দায়িত্ব পেলেন না? উত্তরটা অবশ্য আগে থেকেই জানা। ক্ষমতাবান দলের ম্যাচ পরিচালনায় অস্বস্তিবোধ করেন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক আম্পায়াররা! সর্বোপরি ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছাকৃত ভুল আম্পায়ারিং আসলে শুধু একজন ক্রিকেটারকেই নয় পুরো ক্রিকেটকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। সদাচরণ আর অসদাচরণের শিক্ষা যেমন ঘরেই শুরু হয় তেমনি এ-কথাও সবাই মানবেন যে, ঘরোয়া ক্রিকেটের সামগ্রিক উন্নতি ছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও উন্নতি সম্ভব নয়। এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, ঘরোয়া ক্রিকেটে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা শুধু একটা টুর্নামেন্টের পয়েন্ট তালিকাই প্রভাবশালীদের অনুক‚লে সাজিয়ে দিচ্ছে না, এসবের বিষাক্ত প্রভাব পড়ছে নবীন ক্রিকেটারদের ওপর। পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিং, পেশিশক্তি প্রদর্শন এবং হীন ক্লাব রাজনীতি ভাল ক্রিকেটার হিসেবে বেড়ে ওঠার আবহাওয়াকে দূষিত করে ফেলছে। খেলতে নামার আগেই যদি কেউ জানেন আজ হারতে হবে, অথবা আজ কেউ জয় ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না, তাহলে খেলাই অর্থহীন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভাল ক্রিকেটার তৈরি করতে হলে আগে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে সত্যিকার ক্রিকেটীয় সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করার কোন বিকল্প নেই। ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিক্সিং আর বাজে আম্পারিংয়ের দোহাই দিয়ে অবশ্য ব্যক্তি সাকিবের বাজে আচরণ ঢাকার উপায় নেই। এ নিয়ে ক্যারিয়ারে বেশ কয়েকবার নিষিদ্ধ হলেন টাইগার অলউন্ডার। ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ছক্কা মারতে গিয়ে লংঅনে ক্যাচ দিয়েছিলেন সাকিব। এই আউট নিয়ে টিভি ধারাভাষ্যকাররা আলোচনা করার সময় প্যাভিলিয়নে বসে থাকা সাকিব টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েন। ক্যামেরা দেখে অশালীন ভঙ্গিতে বাজে ইঙ্গিত করেন সাকিব। আর তাতেই তিন ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হন তিনি। ওই বছরই ঘটে আরও বড় ঘটনা। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের আগে ৬ মাসের ছুটি চেয়ে বসেন সাকিব। বিসিবিকে তিনি জানান, মানসিক অবসাদ কাটাতে মাঠের বাইরে থাকতে চান। কিন্তু কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ছুটি দিতে রাজি ছিলেন না। পরে বোর্ডের মধ্যস্থতায় তিন মাসের ছুটি পান সাকিব। বিসিবির অনাপত্তিপত্র না নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে খেলতে গিয়েছিলেন সাকিব। তাকে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়ার পর রাগের মাথায় টেস্ট ও ওয়ানডে দল থেকে অবসর নেয়ার হুমকি দিয়ে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ৬ মাসের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। এ ছাড়া ২০১৫ সালের বিপিএলে সিলেট সুপার স্টার্সের বিপক্ষে ম্যাচে আম্পায়ার তানভীর আহমেদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন রংপুর রাইডার্সের সাকিব। তার আচরণে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন আম্পায়ার। এজন্য এক ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হয় তাকে। সবচেয়ে বড় শাস্তিটা পান ২০১৯ সালে। জুয়াড়ির কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর সেটি গোপন করায় দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন সাকিব, যার এক বছর ছিল স্থগিত নিষেধাজ্ঞা। ফলে আইসিসির কাছে দোষ স্বীকার করে নেয়া সাকিবকে পুরো এক বছর ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে হয়। নিষেধাজ্ঞা ছাড়াও ক্যারিয়ারজুড়ে একের পর এক অখেলোয়াড়সুলভ আচরণ করেছেন সাকিব। ২০০৬ সালে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা সাকিব ২০১০ সালে প্রথমবার বিতর্কিত কা করেন সাকিব। ভারতের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে ব্যাটিং করছিলেন তিনি। কিন্তু সাইড স্ক্রিনের পাশে এক দর্শকের নড়াচড়ায় রেগে যান। হঠাৎই ক্রিজ ছেড়ে বাউন্ডারি লাইনে ছুটে গিয়ে অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহারের পাশাপাশি ব্যাট উঁচিয়ে দর্শককে হুমকি দেন। যদিও দর্শকেরও ভুল ছিল, তারপরও বাজে আচরণ থেকে নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারেননি সাকিব। ২০১১ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ৫৮ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। এরপর সাকিবকে ইঙ্গিত করে গ্যালারি থেকে দুয়ো আসতে থাকে। সাকিব সেটিকে ভালভাবে নিতে পারেননি। দর্শকদের উদ্দেশে মধ্যমা আঙ্গুল দেখিয়ে বাজে ইঙ্গিত করেছিলেন সাকিব। ২০১৩ সালে অটোগ্রাফ চাওয়া এক দর্শকের কলার চেপে ধরে ফের বিতর্কে জড়ান সাকিব। ২৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস টি২০ ম্যাচ চলাকালে এক দর্শক সাকিবের কাছে অটোগ্রাফ চান। কিন্তু অটোগ্রাফ দিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। এতে কট‚ক্তি করলে ক্ষুব্ধ হয়ে গ্যালারিতে গিয়ে ওই দর্শকের কলার চেপে ধরে বসেন সাকিব। ২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে চলাকালে স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে এক দর্শককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন সাকিব। ওই ঘটনায় সাকিবকে নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়। কেন তিনি ড্রেসিংরুম ছেড়ে বেরিয়ে এলে, বিষয়টি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ২০১৬ বিপিএলের প্রথম কোয়ালিফায়ারে আম্পায়ারের সঙ্গে বিবাদে জড়ান ঢাকা ডায়নামাইটসের অধিনায়ক সাকিব। ফিল্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে না পেরে মাঠেই তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন এই অলরাউন্ডার। যদিও শেষ পর্যন্ত ওই ব্যবহারের জন্য শাস্তি পেতে হয়নি সাকিবকে। ২০১৯ বিশ্বকাপের আগে দলীয় ফটোসেশনে সাকিব ছিলেন অনুপস্থিত। ফটোসেশনের দিন মিরপুরের মাঠে উপস্থিত থাকলেও ফটোসেশনের ঘণ্টাখানেক আগে সাকিব সেখান থেকে বেরিয়ে যান। আবারও শুরু হয় বিতর্ক। পরে জানা যায়, সাকিব ফটোসেশনের কথা জানতেন না। চলতি বছরেই সন্তানসম্ভাবা স্ত্রীর পাশে থাকতে নিউজিল্যান্ড সফরে ছুটি নিয়েছিলেন, পরে আবার আইপিএল খেলতে ছুটি চান সাকিব। শেষ পর্যন্ত লঙ্কানদের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ বাদ দিয়ে আইপিএল খেলেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। গত ৪ জুন মোহামেডানের অনুশীলন না থাকলেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনুশীলন করেছিলেন সাকিব। এই অনুশীলনেই জৈব সুরক্ষা ভেঙেছেন তিনি। সুরক্ষা বলয়ে না থাকা একজন নেট বোলারকে নিয়ে অনুশীলন করেছেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, সাকিবের অনুশীলনের সময় সেখানে সাদা শার্ট পরা একজনকে দেখা যায়। জানা যায়, নেট বোলার ছিলেন মাস্কো সাকিব ক্রিকেট একাডেমির। আর তার সঙ্গেই সাদা শার্ট পরা ব্যক্তিটি এসেছিলেন। এমন ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে ক্ষমা চান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
×