ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নাটোরের দুটি পৌরসভায় লকডাউন বাড়ল

প্রকাশিত: ২৩:১২, ১৬ জুন ২০২১

নাটোরের দুটি পৌরসভায় লকডাউন বাড়ল

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ নাটোরের দুটি পৌরসভার লকডাউনের মেয়াদ আরও সাতদিন বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া দিনাজপুর সদর ও চুয়াডাঙ্গার ভারত সীমান্তবর্তী দামুড়হুদা উপজেলায় লকডাউন শুরু হয়েছে মঙ্গলবার থেকে। এসব জায়গায় কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। নাটোর পৌরসভা এবং সিংড়া পৌরসভা এলাকায় চলমান লকডাউনের মেয়াদ আরও ৭ দিন বাড়ানো হয়েছে। জেলার এই দুটি পৌরসভায় করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি এবং মৃত্যুর হার বাড়ায় মঙ্গলবার দুপুরে এই সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় আগামী ২২ জুন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহরিয়াজ। সভায় জেলা প্রশাসক জানান, জেলায় করোনা সংক্রমণ এখনও উর্ধমুখী, মৃত্যুর সংখ্যাও ক্রমাগত বাড়ছে। সভায় চলমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে কঠোর বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, চলমান বিধিনিষেধে ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল ছাড়া সংশ্লিষ্ট এলাকায় জনসাধারণ ও অন্যান্য যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ অব্যাহত থাকবে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া জনসাধারণকে বাড়ির বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকার এবং সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। জেলা প্রশাসক জানান, কর্মহীন মানুষের খাদ্য সঙ্কট দেখা দিলে এ ব্যাপারে প্রশাসনিক সহায়তা দেয়া হবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা, সিভিল সার্জন ডাঃ কাজী মিজানুর রহমান, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ গোলাম মোস্তফা, নাটোর সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ পরিতোষ কুমার রায় ও আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ মঞ্জুর রহমান, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান প্রমুখ। দামুড়হুদায় লকডাউন শুরু ॥ চুয়াডাঙ্গার ভারত সীমান্তবর্তী দামুড়হুদা উপজেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ১৪ দিনের লকডাউন শুরু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ জেলায় নতুন করে ৫০ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে। দামুড়হুদা উপজেলায় একদিনে ২৫ জন করোনা শনাক্ত হয়। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে জেলা প্রশাসন ১৪ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে। মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়ে আগামী ২৮ জুন পর্যন্ত মধ্য রাত পর্যন্ত লকডাউন কার্যকর থাকবে। ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দোকান ব্যতীত সব কিছুই বন্ধ রয়েছে লকডাউনে। দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলারা রহমান বলেন, লকডাউন সফল করার জন্য উপজেলা প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় আমরা মাঠে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দিনাজপুরে লকডাউন শুরু ॥ করোনা সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে দিনাজপুর সদরে শুরু হয়েছে সাত দিনের কঠোর লকডাউন। জেলা প্রশাসনের জারি করা এই লকডাউন চলবে আগামী ২১ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত। তবে কঠোর এ লকডাউনে মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, কার-মাইক্রোবাসসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল এবং ওষুধ ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ছাড়া দোকানপাট বন্ধের ঘোষণা থাকলেও, বাস্তব চিত্র ভিন্ন। সকাল থেকে দিনাজপুর শহর ও আশপাশের রাস্তাঘাটে যানচলাচল স্বাভাবিকই রয়েছে। আদেশ অমান্য করে খোলা হয়েছে অত্যাবশ্যকীয় ছাড়াও অনেক দোকানপাট। মাস্ক ছাড়াই অনেককে ঘোরাফেরাও করতে দেখা গেছে। এমন অবস্থা চললেও শহরের কোথাও প্রশাসনের তৎপরতা চোখে পড়েনি। শহরের বড়বন্দর, কালিতলা মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় দোকানপাট প্রায়ই খোলা রয়েছে। স্বাভাবিক রয়েছে যান চলাচল। ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা, ভ্যান, মোটরসাইকেল, সাইকেল ও মানুষের সমাগম দেখলে বোঝার উপায় নেই কোথাও লকডাউন আছে। শহরের বাইরের অবস্থা আরও নাজুক। গোপালগঞ্জ বাজার, বটতলী, সুইহারী, চৌরঙ্গী মোড়, গুঞ্জাবাড়ী, রাজবাড়ী, গাবুড়া বাজারসহ সবখানেই মানুষের অবাধ চলাচল দেখা গেছে। খোলা রয়েছে দোকানপাটও। অনেকেই জানেনই না যে এ উপজেলায় লকডাউন চলছে। দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী বলেন, শহরে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় একশ’র মতো ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা আটক করে পুলিশ লাইন মাঠে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, অভিযান অব্যাহত থাকবে। পুলিশ সুপার মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, শহরের প্রবেশ পথগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শহর থেকে কাউকে বের হতে দেয়া হচ্ছেনা। অনুরূপভাবে বাইর থেকে শহরেও কাউকে টুকতে দেয়া হচ্ছেনা। ৩টি ওয়ার্ডে কঠোর বিধিনিষেধ ॥ কুড়িগ্রামে করোনা সংক্রমণ মারাতœক আকার ধারণ করেছে। আর এ সংক্রমণ কমাতে সদর উপজেলার পৌরসভার ২, ৩ ও ৭ নং ওয়ার্ডে চলাচলে বিশেষ বিধিনিষেধ জারি করছে জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে এ বিধিনিষেধ কার্যকর হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের যৌথভাবে করোনা প্রতিরোধ কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে পৌরবাজার, জিয়াবাজারসহ এসব ওয়ার্ডে যানচলাচল ও জনসমাগমে বিধিনিষেধ আরোপ থাকবে বলে জানানো হয়। জেলায় গত এক সপ্তাহ ধরে করোনা শনাক্তের উর্ধগতি চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৯ জনের, এতে আরো শনাক্ত হয়েছে ১৯ জন। মাগুরা শহর ও মহম্মদপুরে লকডাউন চলছে ॥ করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো মাগুরা শহর ও মহম্মদপুর উপজেলায় লকডাউন চলছে। লক-ডাউনের কারণে শহরের প্রবেশ পথে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেট দেয়া হয়েছে। লোক চলাচল কমে গিয়েছে এবং মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, রিক্সা চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষথেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। জনগণকে সচেতন করতে চলছে মাইকিং। রবিবার বিকেলে জেলা প্রশাসন ও মহম্মদপুর উপজেলা এই লকডাউন ঘোষণা করে। ঘোষিত লকডাউন অনুযায়ী লকডাউন চলাকালে মাগুরা শহরে ও মহম্মদপুর উপজেলা শহরে জরুরী পরিষেবা ব্যতীত সব ধরনের যানবাহন বন্ধ থাকবে। সন্ধ্যার পর থেকে ওষুধ ও খাবারের হাটেল ব্যতীত সব ধরনের দোকান বন্ধ থাকবে। মাগুরা শহরে কতদিন লকডাউন চলবে তা বলা হয়নি তবে মহম্মদপুরে সাতদিন লকডাউন চলবে।
×