ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোন আলেম-বুজুর্গকে গ্রেফতার করা হয়নি ॥ ধর্ম প্রতিমন্ত্রী

হজ এজেন্সি সৌদিতে অপরাধ করলেও দেশে বিচার হবে ॥ সংসদে বিল পাস

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ১৬ জুন ২০২১

হজ এজেন্সি সৌদিতে অপরাধ করলেও দেশে বিচার হবে ॥ সংসদে বিল পাস

সংসদ রিপোর্টার ॥ হজ ও ওমরা এজেন্সি সৌদি আরব গিয়ে অপরাধ করলেও বাংলাদেশে সেই অপরাধের বিচার করার বিধান রেখে ‘হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা বিল-২০২১’ পাস হয়েছে। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ওই বিলে বলা হয়েছে, হজের চুক্তি এখানে হওয়ার পরে কেউ সৌদিতে গিয়ে ঠকালে, ওই অপরাধ বাংলাদেশে হয়েছে বলে গণ্য করে এই আইন অনুযায়ী বিচার করা হবে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। পরে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানো প্রস্তাব করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা। তাদের প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। এরপর সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করেন স্পীকার। বিদ্যমান হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা নীতিমালাকে আইনে পরিণত করতেই স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এ বিলটি উত্থাপন ও পাস হলো। পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, হজ এজেন্সিগুলো অনিয়ম করলে তাদের নিবন্ধন বাতিলের পাশাপাশি সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। আর ওমরা এজেন্সি অনিয়ম করলে তারা নিবন্ধন হারানোর সঙ্গে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার মুখে পড়বে। এছাড়া জামানত বাজেয়াফত, নিবন্ধন স্থগিত, সতর্কীকরণ ও তিরস্কারের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে নতুন আইনে। সেক্ষেত্রে এজেন্সি পরপর দুইবার তিরস্কৃত হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার নিবন্ধন দুই বছরের জন্য স্থগিত হয়ে যাবে। কোন এজেন্সির নিবন্ধন বাতিল হলে ওই এজেন্সির অংশীদার বা স্বত্বাধিকারীরা পরে কখনও হজ বা ওমরা এজেন্সির নিবন্ধন পাবে না। অন্য এজেন্সির কাজেও সম্পৃক্ত হতে পারবে না বলে উল্লেখ রয়েছে পাসকৃত আইনে। বিলে আরও বলা হয়েছে, হজ ব্যবস্থাপনার জন্য সরকার এ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি গঠন করবে। হজ ও ওমরাহ এজেন্সিকে শর্ত মেনে নিবন্ধন নিতে হবে। নিবন্ধন পেতে হলে হজ এজেন্সিকে তিন বছর ও ওমরাহ এজেন্সিকে দুই বছরের ট্রাভেল এজেন্সি পরিচালনার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। হজ এজেন্সিগুলো স্বত্ব পরিবর্তন করতে চাইলে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে হজ ও ওমরা ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কোন সংবিধিবদ্ধ আইন নেই। নির্বাহী আদেশ, নীতিমালা, পরিপত্র ইত্যাদি দ্বারা এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ বিষয়ে সংবিধিবদ্ধ আইন ও বিধি-বিধানের প্রয়োজন দীর্ঘদিন যাবৎ অনুভ‚ত হচ্ছে। হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য সরকারী সংস্থাসমূহের দায়-দায়িত্ব আইনী বিধি-বিধান দ্বারা সুস্পষ্ট করা হলে তা হজ ব্যবস্থাপনাকে আরও দক্ষ ও গতিশীল করতে সহায়ক হবে। উল্লেখ্য, বিদ্যমান হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা নীতিমালাকে আইনে রূপ দিতে গত ৪ এপ্রিল বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী। পরে বিলটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। কোন প্রকৃত আলেম-বুজুর্গকে গ্রেফতার করা হয়নি ॥ হেফাজতের ইস্যুতে কোন প্রকৃত আলেম ও বুজুর্গ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে দাবি করেছেন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। তিনি বলেন, ফৌজদারি অপরাধে অপরাধ আলেম নামধারী ক্ষমতালিপ্সু রাষ্ট্র ও সমাজবিরোধী ষড়যন্ত্রমূলক কাজে জড়িত তাদেরই আইনের আওতায় আনা হয়েছে। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে হজ ও ওমরা ব্যবস্থাপনা বিলের সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর সংসদ সদস্যদের দেয়া বক্তব্যের জবাবে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।। এর আগে বিলটি যাচাই কমিটিতে পাঠানো ও সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর বক্তব্যকালে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ ও রুমিন ফারহানা সা¤প্রতিক সময় আলেম ওলামাদের গ্রেফতারের প্রসঙ্গ তুলে ধরে এর সমালোচনা করেন। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এদেশের ইসলামের জন্য যা করছেন তা সবাই জানেন উল্লেখ করে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোন পর্যায়ে কোন বুজুর্গ ব্যক্তি ও প্রকৃত আলেম গ্রেফতার বা মামলার আওতায় আসেননি। কেবলমাত্র আলেম নামধারী কিছু অর্থ ও ক্ষমতালিপ্সু ব্যক্তি যারা বিভিন্ন ফৌজদারি অপরাধে জড়িত; যারা ধর্মের নামে রাষ্ট্র ও সমাজবিরোধী ষড়যন্ত্রমূলক কাজে জড়িত তারাই আইনের আওতায় এসেছে। যদি অন্যায়ভাবে কাউকে গ্রেফতার করা হয়ে থাকে প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে জানিয়ে দিয়েছেন তাদের ছেড়ে দেয়া হোক এবং ইতোমধ্যে বহু আলেমকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যারা দোষী ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধেই এই আইনগেত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আর আইন সবার জন্য সমানভাবে চলছে। শেখ হাসিনার সরকার সকল বুজুর্গ আলেমসহ সর্বস্তরের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বিএনপির হারুনুর রশিদ অভিযোগ করেন, বর্তমান বাংলাদেশে আজকে আমরা কী দেখছি। ধর্মীয় স্কলার- যাদের আমরা আলেম বলি তারা সাংঘাতিক নিপীড়নের মধ্যে রয়েছে। তারা রিমান্ড ও গ্রেফতারে সম্মুখীন তাদের দয়া হয়ে মুক্তি দিন। না হলে দেশে ভারসাম্য নষ্ট হবে। দেশের শীর্ষ ৫৬ জন আলেমের বিরেুদ্ধে দুদক নোটিস দিয়েছে। এর আগে আমি মনে করি, আলেমদের আগে আমাদের সাড়ে ৩শ’ এমপির বিরুদ্ধে দুদক নোটিস দিলে তা সমাদৃত হতো। বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের রুমিন ফারহানা বলেন, বারবার বলা হয় বাংলাদেশের বিরাজনীতিকরণ করা হচ্ছে। বিরাজনীতিকরণ করা হচ্ছে এই অর্থে যে যদি কেউ যখন কোন ব্যক্তিকে গুম করা হয়, তার পরিবার পায় না। তখন বলে আমার ছেলে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়। তার মানে সরকারী দল না করলে, সরকারী মতের সঙ্গে না মিললেই সে হাওয়া হয়ে যেতে পারেÑ এটাই বিরাজনীতিকরণ। হারুনুর রশীদের অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, হজ ও ওমরা থেকে আমরা পরীমনি ও গুমে চলে গেছি। ইসলামী স্কলারদের আমরা সম্মান করি। কিন্তু ওয়াজের নামে কিছু কিছু আলেম বিভ্রান্তি ছড়ায়, করোনা ও ভ্যাকসিন নিয়েও বিভ্রান্তি ছড়ানো হলো। মুসলমানদের করোনা হলে নাকি ইসলাম মিথ্যা হয়ে যাবে! এই সমস্ত আলেমদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে। জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বিভিন্ন ওয়াজ ফেসবুকে শুনি একটির সঙ্গে আরেকটির কোন মিল নেই। উনারা একজন আরেক জনকে বলেন প্রকৃত মুসলমান না। ওনাদের বক্তব্য অনুযায়ী কেউই আসল মুসলমান নয়। এই সমস্ত বক্তব্য শুনলে মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে যায়।
×