ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাজেটের ওপর সংসদে আলোচনা

অপশক্তিকে পরাজিত করে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে

প্রকাশিত: ২৩:০৪, ১৬ জুন ২০২১

অপশক্তিকে পরাজিত করে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারী দলের মন্ত্রী-এমপিরা বলেছেন, পাকিস্তানী পেতাত্মারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে এখনও নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। বিএনপি এখনও তাদের স্বভাব না বদলিয়ে জঙ্গী-সন্ত্রাসী-সাম্প্রদায়িক অপশক্তিদের নিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রদায়িক এই অপশক্তিকে সর্বশক্তি দিয়ে পরাজিত করে দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। এই ভাইরাসদের পুষে না রেখে, তাদের কোন ছাড় না দিয়ে বরং ধ্বংস করতে হবে। অন্যদিকে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা এমপিদের মতো দেশের আমলা, ব্যবসায়ীসহ প্রশাসনিক উর্ধতন কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব হালনাগাদ করার দাবি জানান। মঙ্গলবার স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এ দাবি জানান। আলোচনায় অংশ নেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সরকারী দলের হুইপ আতিউর রহমান আতিক, মেহের আফরোজ চুমকি, মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান, মোহাম্মদ এবাদুল করিম, শহীদুল ইসলাম বকুল, বেগম সুলতানা নাদিরা, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু, আহসান আদেলুর রহমান এবং বিএনপির জিএম সিরাজ ও ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। আলোচনায় অংশ নিয়ে জাসদ সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক বলেন, দেশ আজ করোনা-জঙ্গী-দুর্নীতি, এই তিন ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। জামায়াত-হেফাজত ও তেঁতুল হুজুররা আসলে কোন আলেম নয়, এরা মুখোশ পরা জঙ্গী। তারা রাজাকারপন্থী ও পাকের (পাকিস্তানী) অনুচর। তিনি বলেন, বিএনপি তাদের পুরনো স্বভাব না বদলিয়ে জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা এখনও জঙ্গী-সন্ত্রাসী তেঁতুল হুজুরদের রক্ষা করার জন্য বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েই চলেছে। তিনি বলেন, এই তিন ভাইরাস পুষে রেখে জীবনও বাঁচবে না, জীবিকাও বাঁচবে না। তাদের কোন ছাড় না দিয়ে ধ্বংস করতে হবে। জঙ্গী-দুর্নীতি-করোনা এই তিন ভাইরাসকে ধ্বংস করে সুশাসন ও সমাজতন্ত্রের পথে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, এখন জাতির এক নম্বর অগ্রাধিকার হওয়া উচিত টিকা সংগ্রহ। টিকা নিয়ে সমন্বয়হীনতা ও তুঘলকি কাণ্ড বন্ধ করতে হবে। দেশে টিকা উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। এক বছরের মধ্যে সবাইকে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। করোনাভাইরাসকে পরাজিত করতে হবে। করোনাভাইরাসকে পরাজিত করতে না পারলে সব অর্থহীন হয়ে যাবে। তিনি বলেন, প্রতি বছরই বাজেটের আকার বাড়ছে। দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। মানুষ সুফল পাচ্ছে। উন্নয়নের সঙ্গে দুর্নীতিও বাড়ছে। অনেকে দুর্নীতিকে উন্নয়নের অনুষঙ্গ মনে করলেও আমি তা মনে করি না। আমি বিশ্বাস করি দুর্নীতিমুক্ত উন্নয়ন সম্ভব। এতে উন্নয়নের গতি কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। দেশ শাসনেও সুশাসন দরকার। বাজেটে বাস্তবায়নেও সুশাসন দরকার। চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের সিন্ডিকেট ধ্বংস করতে হবে। কালোটাকা বাজেয়াফত করতে হবে। তারেক-কোকোর পাচারকৃত অর্থের মতো বেগম পল্লীর (কানাডা) সেকেন্ড হোমের পাচারের অর্থও ফেরত আনতে হবে। দুর্নীতিবাজদের কারাগারে পাঠাতে হবে। বিএনপি এমপিদের অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বাজেট নিয়ে ১২ বছর ধরে বিরোধী দলের মুখে একই কথা শুনছি। প্রতিবারই একই কথা, বাজেট বাস্তবায়ন হবে না, দেশের উন্নয়ন হবে না! তিনি বলেন, সারাবিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেলের স্বীকৃতি পেয়েছে, এই অর্জন রাতারাতি আসেনি। দেশের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা প্রতিবেশী অনেক দেশের চেয়ে বেশি। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের গত ১২ বছরের প্রচেষ্টার ফসল। তিনি বলেন, আসলে তারা (বিএনপি) সমালোচনার জন্য সমালোচনা করেন, কিন্তু এই বাস্তবতা তাঁরাও স্বীকার করবেন। পাকিস্তান আজ বাংলাদেশ থেকে ৪৫ ভাগ পিছিয়ে, সবকিছুতেই পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে। পাকিস্তানের থেকে বাংলাদেশের এই এগিয়ে যাওয়া দেখেই হয়তো তাদের (বিএনপি) এত গাত্রদাহ হচ্ছে। তাদের মুখে সরকারের এত অর্জনের কোন কিছুরই প্রশংসা আমরা শুনতে পাই না। তিনি বলেন, বিএনপি শুধুমাত্র রাজনীতির কারণে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার কথা বলছে, অথচ যে হাসপাতালে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন সেটার আমিও একজন মালিক। সেখানে বিশ্বের সর্বোচ্চ চিকিৎসা তাঁকে দেয়া হচ্ছে। বিএনপির জি এম সিরাজ সরকারের সমালোচনা করে বলেন, দেশে গণতন্ত্র আজ নির্বাসনে, মানবাধিকার ভ‚লুণ্ঠিত। বাংলাদেশে আজ দ্রæততম সময়ে অনেকে মিলোনিয়ার হয়ে যাচ্ছে, সরকারের সকল প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আজ দুর্নীতির মডেলে পরিণত হয়েছেন। দ্রæত এমন স্পর্শকাতর মন্ত্রণালয়ে একজন সৎ ও অভিজ্ঞ কাউকে দিলে দেশের মানুষ উপকৃত হবে। তিনি বলেন, দেশের ৭০ ভাগ মানুষের আয় আজ কমে গেছে। বাজেটে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী ভ্যাকসিন দিলে, দেশের ১০ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে ৮ থেকে ১০ বছর সময় লাগবে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া ভীষণ অসুস্থ। মেডিক্যাল বোর্ড তাঁকে দ্রæত বিদেশে পাঠানোর জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। আমাদের অনুরোধ, তাঁর জীবন রক্ষায় অতিদ্রæত বিদেশে পাঠানো হোক। জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু এমপিদের মতো দেশের সকল আমলা, ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের কর্মকর্তার সম্পদের হিসাব আপটুডেট করার দাবি জানিয়ে বলেন, আমরা যারা এমপি আছি, আমাদের সম্পদের হিসাব নির্বাচনের হলফ নামায় দেয়া আছে। কিন্তু বাংলাদেশে যারা আমলা আছেন, সামরিক-বেসামরিক ও ব্যবসায়ী আছেন, যাদের সুন্দর সুন্দর বাড়ি, দামি গাড়ি- তাদের প্রত্যেকের সম্পদের হিসাব আপটুডেট নেয়া হোক। সিএফআই প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি বছর দেশ থেকে ৭৫৬ কোটি ৭৩ লাখ ডলার পাচার হয়। অথচ অর্থমন্ত্রী পাচারকারীদের নাম দিতে বলেছেন! আমরা কেন না দেব? আপনার অনেক সংস্থা আছে, সেগুলো দিয়ে বের করুন। ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১০ কোটি মানুষকে এক বছরের মধ্যে টিকা দেন, তাহলে বাজেট ফলপ্রসূ হবে। অন্যথায় বাজেট ফলপ্রসূ হবে না। বিএনপির অপর সদস্য রুমিন ফারহানাও খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়ে বলেন, ক্ষমতায় থাকতে হলে দরকার আমলা-ব্যবসায়ীদের। সেজন্য তাদের জন্য এই বাজেট, জনগণের জন্য নয়। করোনাকালে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ। ২০ ভাগ মধ্যবিত্ত দরিদ্র হয়ে গেছে। অথচ স্বাস্থ্য খাতে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি চলছে। তিনি বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আরোপিত ১৫ ভাগ করারোপের প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবি জানান। সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, শত প্রতিক‚লতা পেরিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে দুর্বার গতিতে উন্নয়নের মহাসড়ক দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। করোনা মোকাবেলায় বিশ্ব নেতাদের প্রশংসা পাচ্ছেন। কিন্তু পাকিস্তানকে সবক্ষেত্রে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া, এটা বিএনপিসহ তাদের জোটভুক্ত অপশক্তিদের সহ্য হচ্ছে না। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গার্ড অব অনার প্রদানের সময় নারী ইউএনওর পরিবর্তনের প্রস্তাবের সমালোচনা করেন।
×