ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

করোনাকালেই বিরল বর্ষা উৎসব

কত বেদনার বিষণ্ণ মেঘে ভেসে ভেসে এলে তুমি অবশেষে

প্রকাশিত: ২৩:০১, ১৬ জুন ২০২১

কত বেদনার বিষণ্ণ মেঘে ভেসে ভেসে এলে তুমি অবশেষে

মোরসালিন মিজান ॥ আহা, কতদিন পর! মঞ্চে গান হলো। নাচ হলো। বাদ গেল না কবিতাও। সব মিলিয়ে বিরল এক বর্ষা উৎসব। করোনা সংক্রমণের এ পর্যায়ে এসে শিল্প সংস্কৃতির চর্চা যখন স্থবির, যখন কিছুই আর এগোচ্ছে না তখন রাজধানীতে এমন একটি উৎসব আয়োজন বিরাট চমক বৈকি! আষাঢ়ের প্রথম দিনে মঙ্গলবার এ চমক দেয় বর্ষা উৎসব উদ্যাপন পরিষদ। সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর ব্যানারে এত বছর যে বর্ষা উৎসবটি আয়োজন করা হয়েছে সেটিই এবার পরিষদের নামে আয়োজন করা হয়। ভেন্যুও বদলেছে। চারুকলার বকুলতলা, শিল্পকলা বা বাংলা একাডেমি চত্বরে অনুমতি মেলেনি। তাই পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়ায় হলো বর্ষা উৎসব। তারও আগে থেকে বৃষ্টি হচ্ছিল রাজধানীতে। বর্ষার আগমনী ঘোষণা করছিল প্রকৃতি। আষাঢ়ের প্রথম দিনেও বারিধারা অব্যাহত ছিল। এর মধ্যেই দীননাথ সেন রোডে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী সীমান্ত গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে পৌঁছেন শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা। গ্রন্থাগার সংলগ্ন ছোট মঞ্চেই বড়সড়ো বর্ষা উৎসবের আয়োজন করা হয়। বড় বলতে, বিগত দিনের মতো বড় নয়। করোনাকালে সবই সীমিত পরিসরে হচ্ছে। এ উৎসবটিও বলা চলে তাই। ঋতুভিত্তিক উৎসবে বাড়তি কৌত‚হল নিয়ে যোগ দেন স্থানীয়রা। সকালে হাওয়াইন গিটারে প্রিয় সুর বাজিয়ে বর্ষাকে আবাহন করেন মোহাম্মদ হাসানুর রহমান। এরপর উপর্যুপরি গান নাচ। বর্ষার প্রকৃতি ও মানুষের মনের আবেগকে যুগ যুগ ধরে তুলে ধরছে যেসব গান সেগুলো কখনও একক, কখনও সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশ করেন শিল্পীরা। বর্ষা বন্দনায় কেউ আশ্রয় করেন রবীন্দ্রনাথের গান। কেউ বেছে নেন নজরুলকে। আর লোকগানের যে জাদু সে তো চিরকালের। খ্যাতিমান শিল্পী কাননবালা সরকারের ‘আষাঢ় মাইসা বৃষ্টিরে’ গানটি সে জাদুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। রবীন্দ্রনাথের গান ‘আবার এসেছে আষাঢ়’ গেয়ে শোনান মহাদেব ঘোষ। বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি নজরুল সংগ্রহ থেকে বেছে নেন ‘বরষা এলো ঐ বরষা’ গানটি। রবীন্দ্র ও নজরুলসঙ্গীতের স্বনামধন্য শিল্পীদ্বয়ের পরিবেশনায় বরাবরের মতোই নবীন বর্ষা যেন প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। বাদ যায়নি আধুনিক গানও। শ্রাবণী গুহ রায় গাইছিলেন কিংবদন্তি গীতিকার আবু হেনা মুস্তফা কামালের লেখা ও আবদুল আহাদের সুর করা বিপুল জনপ্রিয় ‘অনেক বৃষ্টি ঝরে’ গানটি। কত বেদনার বিষণœ মেঘে ভেসে ভেসে/এলে তুমি অবশেষে...। এত হৃদয় স্পর্শ করা কথা সুর, সেই সঙ্গে গায়কী, শ্রোতারা যেন উপহার হিসেবেই নিয়েছিলেন। দলীয় সঙ্গীতে বর্ষাকে বরণ করে নেয় সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, বাফাসহ কয়েকটি সংগঠন। অবশ্য উৎসবের আমেজটুকু ছড়িয়ে দিতে বিশেষ ভ‚মিকা রাখে নৃত্যায়োজন। স্পন্দনের শিল্পীরা নজরুলের ‘মেঘের ডমরু’ গানটির সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন। বাফার শিল্পীরা নাচেন ‘রুমঝুম কে বাজায়’ গানের সঙ্গে। বর্ষা নিয়ে কবিতাও অজস্র। সেইসব কবিতা থেকে আবৃত্তি করে শোনান দুই বাচিক শিল্পী বেলায়েত হোসেন ও আহসানউল্লাহ তমাল। এসবের বাইরে ছিল বর্ষাকথন। পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. নিগার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট ছাড়াও বর্ষা নিয়ে কথা বলেন সীমান্ত গ্রন্থাগারের সভাপতি মোরশেদ আহমেদ চৌধুরী। তারা বলেন, বর্ষার বৃষ্টি প্রাণ প্রকৃতিকে নতুন করে জাগিয়ে তুলে। বাংলার মাটিকে রসালো করে। উর্বর করে। তবে এবার এই বর্ষার কাছেই আমাদের প্রার্থনা, করোনা মহামারী ধুয়ে মুছে নিয়ে যাও। রক্ষা করো আমাদের।
×