ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চীন ন্যাটোর জন্য হুমকি

প্রকাশিত: ২১:০৮, ১৬ জুন ২০২১

চীন ন্যাটোর জন্য হুমকি

ব্রাসেলস শীর্ষ বৈঠকে ন্যাটো নেতৃবৃন্দ চীনের সামরিক হুমকি সম্পর্কে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, চীনের আচরণ একটি ধারাবাহিক চ্যালেঞ্জ। চীন দ্রæত তাদের পরমাণু অস্ত্র ভাণ্ডারের সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছে এবং তাদের সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন সম্পর্কে বিশ্বকে অন্ধকারে রাখছে। তারা রাশিয়ার সঙ্গেও সামরিক সহযোগিতা করছে। ন্যাটো প্রধান জেন্স স্টলটেনবার্গ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, সামরিক ও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে চীন ন্যাটের কাছাকাছি চলে আসছে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, ন্যাটো চীনের সঙ্গে স্থায়ুযুদ্ধ চায় না। খবর বিবিসির। ন্যাটো ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার ৩০টি দেশের একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক ও সামরিক জোট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কমিউনিস্ট বিশে^র সম্প্রসারণবাদী হুমকি মোকাবেলায় এই জোট গঠিত হয়। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে চীনা মিশন বলেছে, ন্যাটো চীনের শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের অপবাদ দিচ্ছে। টুইটারে এক বিবৃতিতে চীনা প্রেসিডেন্ট শি বলেছেন, চীন এমন একটি প্রতিরক্ষা নীতির বিষয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ যা আত্মরক্ষামূলক। বিবৃতিতে বলা হয়, চীন কারও প্রতি ধারাবাহিক চ্যালেঞ্জ হবে না, তবে ধারাবাহিক চ্যালেঞ্জ আমাদের নিকটবর্তী হলে আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকব না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ন্যাটো নেতৃবৃন্দ জোটের উদ্দেশ্য ও তহবিল নিয়ে বিতর্ক করায় জোটে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জোটে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক অবদান এবং ইউরোপীয় শরীকদের রক্ষায় মার্কিন অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন তুললে ন্যাটোতে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ট্রাম্পের পর ক্ষমতায় এসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই প্রথম ন্যাটো শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিলেন। তিনি ৭২ বছরের পুরনো এই জোটের শরীকদের প্রতি আমেরিকার অঙ্গীকারের কথা জোরালোভাবে তুলে ধরে তাদের আশ্বস্ত করতে চাইছেন। বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের দিক থেকেও ন্যাটো খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতিষ্ঠাকালীন সনদের ৫ ধারা মেনে চলতে জোটের পবিত্র দায়িত্ব রয়েছে যাতে বলা হয়েছে আক্রান্ত হলে ন্যাটোর সদস্যরা পর¯পরের প্রতিরক্ষায় এগিয়ে আসবে। বুধবার জেনেভায় ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার আসন্ন শীর্ষ বৈঠক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে বাইডেন রুশ প্রেসিডেন্টকে ‘যোগ্য প্রতিপক্ষ’ বলে মন্তব্য করেন। অন্যদিকে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন ও জোট সৈন্যরা চলে যাওয়ার পর কাবুল বিমানবন্দর চালু রাখতে ন্যাটো অর্থ প্রদানে রাজি হয়েছে। বিদেশী সৈন্য চলে যাওয়ার পর কাবুল বিমানবন্দর প্রহরা ও চালু রাখতে ন্যাটো সদস্য তুরস্ক প্রস্তাব দিয়েছে। ন্যাটো শীর্ষ বৈঠক শেষে মঙ্গলবার ব্রাসেলসে এক ইশতেহারে বলা হয়েছে, চীনের দৃশ্যমান অভিলাষ ও বেপরোয়া আচরণ নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা এবং জোটের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ধারাবাহিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। আমরা চীনের অবিরত স্বচ্ছতার অভাব এবং তথ্য শূন্যতার কারণে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছি। ন্যাটো প্রধান স্টলটেনবার্গ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা নতুন করে স্থায়ুযুদ্ধে প্রবেশ করছি না এবং চীন আমাদের প্রতিপক্ষ নয়, শত্রæও নয়। তবে তিনি বলেন, চীনের উত্থানে আমাদের নিরাপত্তার প্রতি যে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে তা আমাদের জোটের সঙ্গে একত্রে মোকাবেলা করতে হবে। উল্লেখ্য, চীন হচ্ছে বিশে^র অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি। দেশটির ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি চীনের রাজনীতি, দৈনন্দিন জীবন এবং সমাজের ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ রেখে চলেছে। চীনের সামরিক বাহিনী বর্তমানে বিশে^র বৃহত্তম সশস্ত্র বাহিনী যার সক্রিয় সদস্য সংখ্যা ২০ লাখের উপরে। এ অবস্থায় ন্যাটো চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক সক্ষমতায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে। চীনকে তারা জোট সদস্যদের নিরাপত্তা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবেধের প্রতি হুমকি বলে গণ্য করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন আফ্রিকায় সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করায় ন্যাটো আরও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
×