ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ১৬ জুন ২০২১

পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

অপরাধ শুধু কতিপয় সমাজবিরোধীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না- বরং তার বহুল বিস্তার ঘটে নানাভাবে নানা ক্ষেত্রে। এমনকি সমাজের সুরক্ষার চাবিকাঠি যাদের হাতে থাকে সেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও দুর্নীতি থেকে আরম্ভ করে অনেক ন্যক্কারজনক অপকর্মে ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত হয়ে পড়ে। যারা আইনকে সর্বশক্তি দিয়ে সুরক্ষা দেন, অপরাধ দমনের ন্যায়নিষ্ঠতায় সম্পৃক্ত থাকেন তারাও যে কতভাবেই না অনৈতিক এবং অশুভ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে যান সেটাও প্রায়ই দৃশ্যমান হতে থাকে। এমনিতে পুলিশের কাজকর্ম নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের ওজর অভিযোগের অন্ত নেই। বিশেষ করে সমাজের প্রভাবশালীদের সেবা করতে গিয়ে নিরীহ জনগণের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব হয় না অনেক সময়। হত্যা, গুম, ধর্ষণ, ছিনতাই এমন সব অপকর্মে অসহায় মানুষ পুলিশের কাছে যথার্থ সাড়া পায়নি, এই অভিযোগ অনেক পুরনো। তা ছাড়াও সমাজের আনাচে-কানাচে ঘটে যাওয়া অনেক গুরুতর অপরাধের সঙ্গে পুলিশের যোগসাজশের কাহিনীও নতুন নয়। ফলে পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা বরাবরই ছিল নড়বড়ে। সম্প্রতি নতুন এক মাত্রা যোগ হয়েছে পুলিশের সরাসরি ঘৃণ্য অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার জঘন্য চিত্রে। কিছু দিন আগে চট্টগ্রামে মিতু হত্যা মামলায় পুলিশ কর্মকর্তা স্বামী বাবুল আক্তারকে আটক করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনাও উঠে আসে। অর্থাৎ দোষী সাব্যস্ত হলে পুলিশকে আইনের কাঠগড়ায় নিয়ে আসাটাও বর্তমান সময়ের এক অপরিহার্য কর্মবিধি। রবিবার কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ সড়কের পাশে পুলিশের সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) সৌমেন রায় দিনেদুপুরে প্রকাশ্যে গুলি করে স্ত্রী, সন্তান এবং শাকিল খান নামক এক যুবককে হত্যা করার লোমহর্ষক কাহিনী সবাইকে হতবাক করে দেয়। এই পুলিশ কর্মকর্তা খুলনার ফুলতলা থানায় কর্মরত ছিলেন। পুলিশ হত্যাকারীকে আটক করে কারাগারে প্রেরণ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে তার দ্বিতীয় স্ত্রী আসমা খাতুনের সঙ্গে শাকিল খানের অবৈধ সম্পর্কের সন্দেহেই তাদের খুন করা হয়। ৮ বরের ছেলে রবিনকেও মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করা হলে সেও মারা যায়। তবে খুনী সৌমেনকে চারপাশের লোকজন ঘিরে ধরে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে হত্যাকারীকে আটক করে। বিচারিক প্রক্রিয়ায় তার জঘন্য অপরাদের আইনী কার্যক্রম শুরু করা থেকে শাস্তির বিধান নিশ্চিত করাও আইনী দায়। ইতোমধ্যে এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরু করা হয়েছে। তবে অপরাধী যাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায় সেটাও কঠোর নজরদারিতে নেয়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। এর আগে বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানায় ৪ শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা ও শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর ব্যাপারে তৎকালীন ওসি মোঃ আবুল কালামসহ ৭ পুলিশ সদস্য ও সমাজসেবা অফিসারকে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সিনিয়ার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ এনায়েত উল্লাহর ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে তাকে দেওয়ানি মামলার দায়িত্ব অর্পণ করে আদালত, যা এক প্রকার শাস্তিই বলা যেতে পারে। এ সবই দৃষ্টান্তমূলক ঘটনার শুধু উদাহরণ হয়ে থাকলে চলবে না, সুষ্ঠু বিচারিক প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্টদের আশু শাস্তিও জরুরী। জনগণ তেমনই প্রত্যাশা করছে।
×