ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জি-৭-এর বোধোদয়

প্রকাশিত: ২০:৪৬, ১৬ জুন ২০২১

জি-৭-এর বোধোদয়

কোভিড-১৯-এর মতো ভয়াবহ ও ভয়ঙ্কর মহামারী মোকাবেলায় সমগ্র বিশ্বকে একযোগে কাজ করতে হবে- কিছু বিলম্বে হলেও বোধোদয় ঘটেছে গ্রæপ-৭ দেশভুক্ত নেতাদের। যুক্তরাজ্যের পাহাড় ও সমুদ্রসৈকত পরিবেষ্টিত মনোরম অবকাশ কেন্দ্র কারবিস বে-তে তিন দিনব্যাপী শীর্ষ সম্মেলন শেষ হয়েছে রবিবার। ইতোমধ্যেই সম্মেলনের খসড়াও চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, শিল্পোন্নত সাত দেশ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও জাপান এই জোটের সদস্য। অবশ্য এসব দেশও করোনা মহামারীতে বিপর্যস্ত হওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্থনীতিও। তদুপরি করোনা মহামারীর প্রায় ২ বছর পর ধনী দেশগুলোর নেতারা এই প্রথম মুখোমুখি বৈঠকে বসার সুযোগ পেয়েছেন। তবে যথারীতি মেনে চলেছেন সামাজিক দূরত্ব ও সুরক্ষাবিধি। জলবায়ু সুরক্ষা ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সম্মত হয়েছে ৭টি দেশ। চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন ‘নেচার কম্প্যাক্ট’ শিরোনামে। ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার অঙ্গীকার করেছেন অর্ধেকে। সবিশেষ জোর দিয়েছেন আগামীতে করোনা মহামারীর মতো রোগ-ব্যাধির বিরুদ্ধে একযোগে লড়াই করার। অঙ্গীকার করেছেন উন্নয়নশীল ও অনুন্নত বিশ্বের জন্য ১০০ কোটি ডোজ করোনার টিকা দেয়ার। অবশ্য জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন, এই টিকার পরিমাণ যথেষ্ট নয়। চীনকে ঠেকাতে একমত হয়েছেন সবাই। চীনের পরিকল্পিত বেল্ট এ্যান্ড রোডস ইনিশিয়েটিভের বিপরীতে বিল্ড ব্যাক বেটার ওয়ার্ল্ড -এর পরিকল্পনা করেছেন। তবে শঙ্কা, এই নিয়ে যেন নতুন করে কোন স্নায়ুযুদ্ধ অথবা বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু না হয়। ইতোপূর্বে করোনাভাইরাসের মতো ভবিষ্যতের মহামারী থেকে বিশ্বকে রক্ষার জন্য একটি বৈশ্বিক চুক্তিতে উপনীত হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ। বিশ্বের বিভিন্ন বিখ্যাত গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি লিখিত নিবন্ধে এই আবেদন রেখেছেন তারা। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, জার্মানির চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মেরকেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধানসহ ২০ জনের বেশি লিখেছেন নিবন্ধটি। এতে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্বে সবচেয়ে বড় হুমকির সৃষ্টি করেছে। সেক্ষেত্রে যুদ্ধের পর বিশ্বের মধ্যে যেভাবে সুসম্পর্ক গড়তে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, সেরকম একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়া অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। চলতি মহামারীতে প্রমাণিত হয়েছে, প্রত্যেক মানুষ নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত কেউই নিরাপদ নন। সে অবস্থায় আগামীতে এ জাতীয় মহামারী রুখতে এবং শান্তি সমৃদ্ধি স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একযোগে কাজ করতে হবে বিশ্বকে। উল্লেখ্য, বিশ্বের অনেক দেশ এখন পর্যন্ত করোনার ভ্যাকসিন পায়নি। সেক্ষেত্রে এ জাতীয় মানবিক বৈশ্বিক আবেদন ও আহ্বান অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে চলমান মহামারীসহ আর্থিক খাতে তারল্য সঙ্কট এবং ঋণের বোঝা লাগবে সমন্বিত বৈশ্বিক পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জাতিসংঘের হিসেবে আগামী দু’বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রায় সাড়ে ৮ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হতে পারে। এই বিপর্যয় কাটাতে একযোগে কাজ করতে হবে বিশ্বকে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোপূর্বে জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে করোনার টিকা বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন। যেটি বাস্তবায়ন হলে উপকৃত হতো বিশ্ব, টিকা পেত সব দেশ। এখন প্রয়োজন সবার জন্য বিনামূল্যে ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিশ্চিত করা, যেটি বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বাস্তবায়ন করবে বলেই প্রত্যাশা। বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ টিকা নিলেই করোনা প্রতিরোধে গড়ে উঠবে হার্ড ইমিউনিটি তথা সর্বাত্মক সুরক্ষা। এর পাশাপাশি বিশ্বকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কাজ করতে হবে একযোগে। নিতে হবে সমন্বিত পদক্ষেপ। জি-৭-এর নেতৃবৃন্দ যত দ্রæত বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবেন, বিশ্বের জন্য ততই মঙ্গল।
×