ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উৎপাদনকারী ফেরত নেবে ই-বর্জ্য

প্রকাশিত: ১৭:৫৩, ১৫ জুন ২০২১

উৎপাদনকারী ফেরত নেবে ই-বর্জ্য

অনলাইন রিপোর্টার ॥ ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক পণ্য থেকে সৃষ্ট বর্জ্য (ই-বর্জ্য) উৎপাদনকারী বা সংযোজনকারীকে ফেরত নিতে হবে। ই-বর্জ্য ফেরত নেয়ার সময় উৎপাদনকারীর কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত অর্থ বা প্রণোদনা পাবেন ভোক্তা। এমন নিয়ম রেখে ‘ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য (ই-বর্জ্য) ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২১’ প্রণয়ন করেছে সরকার। গত ১০ জুন বিধিমালাটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। এর আগে বিধিমালাটি জারি করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো ই-বর্জ্য ১৮০ দিনের বেশি মজুত করা যাবে না। আমদানি করা যাবে না পুরনো বা ব্যবহৃত ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক পণ্য। বিধিমালার কোনো শর্ত লঙ্ঘন করলে ‘বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত, ২০১০)’ এর ১৫ (১) ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড পেতে হবে। দ্বিতীয়বার একই অপরাধের ক্ষেত্রে দুই থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড বা দুই থেকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড পেতে হবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। বিধিমালায় প্রস্তুতকারক, সংযোজনকারী ও বড় আমদানিকারকের ই-বর্জ্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। বিধিমালা বাস্তবায়নের প্রথম বছর প্রস্তুতকারক, সংযোজনকারী ও বড় আমদানিকারককে উৎপাদিত ই-বর্জ্যের ১০ শতাংশ সংগ্রহ করতে হবে। দ্বিতীয় বছরে ২০ শতাংশ, তৃতীয় বছরে ৩০ শতাংশ, চতুর্থ বছরে ৪০ শতাংশ ও পঞ্চম বছরে ৫০ শতাংশ ই-বর্জ্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে বিধিমালায়। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে সরকার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করায় ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ই-বর্জ্যে উদ্বেগজনক মাত্রায় বিষাক্ত উপাদান বিষাক্ত উপাদান যেমন সীসা, মার্কারি, ক্রোমিয়াম ও আর্সেনিক বেরেলিয়াম ইত্যাদি থাকে। মানুষের স্নায়ুতন্ত্র, কিডনি, মস্তিস্ক ও হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে এসব বিষাক্ত বস্তু। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে। ই-পণ্য সামগ্রী ব্যবহারের ক্রম ঊর্ধ্বমুখীতা ই-বর্জ্যের পরিমাণ ও ক্ষতিকর প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বিধিমালাটি করা হয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। বিভিন্ন স্তরে সংশ্লিষ্টদের দায়-দায়িত্ব বিধিমালায় প্রস্তুতকারক বা সংযোজনকারী, ই-বর্জ্য মজুতকারী, ব্যবসায়ী বা দোকানদার, মেরামতকারী, সংগ্রহ কেন্দ্র, ব্যক্তিগত ভোক্তা বা বড় ব্যবহারকারীর/প্রাতিষ্ঠানিক ভোক্তা, চূর্ণকারী এবং পুনর্ব্যবহার উপযোগীকারীর দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রস্তুতকারক ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক পণ্য প্রস্তুতের সময় উৎপাদিত যে কোনো ই-বর্জ্য পুনর্ব্যবহার উপযোগী বা ধ্বংস করার জন্য সংগ্রহ করবে। সব ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক পণ্যে দেশের কোড, ক্রমিক নম্বরসহ কোম্পানি কোড বা ব্যক্তিগত পরিচয় ব্যবহার। মেরামতকারী, চূর্ণকারী ও পুনর্ব্যবহার উপযোগীকারী বরাবর ই-বর্জ্য সরবরাহ করবে। ফ্লুরোসেন্ট ও মারকারি যুক্ত বাতির ক্ষেত্রে যেখানে পুনঃচক্রায়নকারী পাওয়া যায় না, সেক্ষেত্রে এই ই-বর্জ্য মজুত এবং নিষ্পত্তির সুবিধার জন্য সংগ্রহ কেন্দ্রে সরবরাহ করবে উৎপাদনকারী। ই-বর্জ্য রাখার জন্য উৎপাদনকারী ব্যক্তিগত পর্যায়ে বা সমন্বিতভাবে সংগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করবে। ই-বর্জ্যের পরিবেশসম্মত সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যক্তিগত বা যৌথ উদ্যোগে অর্থায়নের ব্যবস্থাও করবে উৎপাদনকারী। ই-বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে ব্যবসায়ীরা বিক্রেতা ও নিবন্ধিত সংগ্রহ কেন্দ্রের নাম, ঠিকানা, টেলিফোন নম্বর এবং ই-মেইল ইত্যাদি পণ্যের গায়ে বা মোড়কে উল্লেখ বা ভোক্তা ও বড় ব্যবহারকারী ভোক্তাদের কাছে সরবরাহ করবে। মেয়াদোত্তীর্ণ, অকেজো হওয়ার কারণে ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক পণ্য ফেরত দেয়ার সময় ভোক্তাকে সরকার নির্ধারিত অর্থ বা প্রণোদনা হিসাবে দেবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, প্রত্যেক ই-বর্জ্য মজুতকারী, ব্যবসায়ী বা দোকানদার ভোক্তাদের কাছ থেকে নির্ধারিত স্থানে ই-বর্জ্য সংগ্রহ করে নিরাপদ পরিবহনের মাধ্যমে সংগ্রহ কেন্দ্রে পাঠাবেন। প্রত্যেক মেরামতকারী মেরামত প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন ই-বর্জ্য সংগ্রহ করে তা অনুমোদিত সংগ্রহ কেন্দ্রে পাঠাবে। বিধিমালা অনুযায়ী, যে ব্যক্তি পরিত্যক্ত বা ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক পণ্য বা এর অংশবিশেষ ভাঙার কাজে নিয়োজিত তিনি হচ্ছেন চূর্ণকারী। চূর্ণকারীকে অবশ্যই পরিবেশ অধিদফতরের নিবন্ধন ও ছাড়পত্র নিতে হবে। ভোক্তাকে নিবন্ধিত ব্যবসায়ী বা সংগ্রহ কেন্দ্রে ই-বর্জ্য জমা দিতে হবে বলেও বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। নিতে হবে নিবন্ধন বিধিমালা অনুযায়ী প্রত্যেক ই-বর্জ্য প্রস্তুতকারক, ব্যবসায়ী বা দোকানদার, মজুতকারী, পরিবহনকারী, মেরামতকারী, সংগ্রহ কেন্দ্র, চূর্ণকারী, পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকারী, নিলাম বিক্রেতা ও রফতানিকারককে পরিবেশ অধিদফতর থেকে নিবন্ধন নিতে হবে। দেশে ই-বর্জ্য পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না থাকলে রফতানিকারক পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদন নিয়ে তা বিদেশে রফতানি করতে পারবে বলেও বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। ই-বর্জ্য ১৮০ দিনের বেশি মজুত নয় প্রত্যেক প্রস্তুতকারক, ব্যবসায়ী বা দোকানদার, সংগ্রহ কেন্দ্র, চূর্ণকারী, মেরামতকারী এবং পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকারী ই-বর্জ্য ১৮০ দিনের বেশি মজুত রাখতে পারবে না। কিছু ক্ষেত্রে আবেদনকারীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অধিদফতর আরও ৯০ দিন পর্যন্ত বাড়াতে পারবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। ই-বর্জ্য মজুতের ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। ই-বর্জ্য যেন মাটি, পানি বা বায়ুর সঙ্গে মিশে না হয়, সেজন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমদানি করা যাবে না ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক পণ্য কোনো পুরনো বা ব্যবহৃত ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক পণ্য আমদানি করা বা দান-অনুদান বা অন্য কোনোভাবে গ্রহণ করা যাবে না। তবে গবেষণা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য অধিদফতরের অনাপত্তি গ্রহণের মাধ্যমে আমদানি বা গ্রহণ করা যাবে। প্রতিবেদন দেবে পরিবেশ অধিদফতর ই-বর্জ্যের ধরন অনুযায়ী পরিবেশ অধিদফতরের বিভাগীয় অফিস প্রতিবছর ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিবেশ অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের প্রধান কার্যালয় বিভিন্ন বিভাগ থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন একত্রিত করে তা পুনঃপরীক্ষা ও দিকনির্দেশনার জন্য প্রতিবছর ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সরকারের কাছে পাঠাবে।
×