ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

একযুগ পর চউকের তিন আবাসন প্রকল্প

প্রকাশিত: ২৩:২১, ১৫ জুন ২০২১

একযুগ পর চউকের তিন আবাসন প্রকল্প

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম মহানগরীতে বাড়ছে জনসংখ্যা, বেড়েছে কর্মব্যস্ততা। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়ে চললেও বাড়েনি আবাসন। গত একযুগেও নতুন কোন আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারেনি দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। এতে সেই সীমিত আয়তনের মধ্যে ক্রমেই ঘিঞ্জি নগরে রূপ নিচ্ছে চট্টগ্রাম। এদিকে তেমন নজরই ছিল না চউকের। অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে তিনটি প্রকল্প। এরমধ্যে একটি দৃশ্যমান হবে এ বছর। বাকি দুটির সমীক্ষা চলছে বলে জানিয়েছে চউক। চউক মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী, আবাসনের জন্য প্রতিবছর ৫০ একর ভূমির প্ল্যান এরিয়া করার কথা। কিন্তু গত একযুগে একটিও হয়নি। সর্বশেষ ২০০৮ সালে হয়েছিল অনন্যা আবাসিক এলাকায়। সেখানে ১ হাজার ৭৪৭টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। এর আগে কল্পলোক দ্বিতীয় পর্যায়ে ১ হাজার ৩৫৫ এবং ২০০৬ সালে কল্পলোক প্রথম প্রকল্পের ৪২৪টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ১২টি আবাসিক প্রকল্প ৬ হাজার ৬৬০টি প্লট দিয়েছে চউক। এর বাইরে মহানগরীর কাজির দেউড়ি এলাকায় ৬৪টি ফ্ল্যাট। নতুন আবাসন তৈরিতে সংস্থাটির কাজ এটুকুই। চউকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাই স্বীকার করছেন যে, আবাসনের ক্ষেত্রে জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ হয়নি। বিশেষ করে বিদায়ী চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের সময়ে সকল মনোযোগ ছিল ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং জলাবদ্ধতা নিরসনের দিকে। এসব কাজে বড় বড় হলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আবাসন প্রকল্প হয়নি একটুও। অথচ, এ সময়ের মধ্যে মহানগরীতে জনসংখ্যা বেড়েছে, সরকারী- বেসরকারী অফিস এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিলম্বে হলেও চউক এখন নতুন আবাসনের কথা ভাবছে। মহানগরীতে এখন বিবেচনায় রয়েছে তিনটি নতুন আবাসন প্রকল্প। এরমধ্যে নতুন হওয়া বায়েজিদ লিঙ্ক রোডে হতে যাচ্ছে ২০ একর ভূমিতে একটি প্রকল্প। এর ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ডিএপি) এরমধ্যেই গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানে হবে ১৬৭টি আবাসিক এবং ১৮টি বাণিজ্যিক প্লট। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫৭ কোটি ৮২ লাখ ৫২ হাজার টাকা। সেখানে হবে তিন কাঠার ১২৬, চার কাঠার ৭ এবং পাঁচ কাঠার ৩৪টি প্লট। এছাড়া ১৮টি বাণিজ্যিক প্লট, ৩৬ দশমিক ৫ কাঠার ওপর এপার্টমেন্ট বøক এবং দুটি ইউটিলিটি বøক থাকবে। থাকছে সবুজ বেষ্টনী, কৃত্রিম হ্রদ ও খেলার মাঠ। ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া হাটহাজারীতে স্যাটেলাইট সিটি এবং বায়েজিদ লিঙ্ক রোডের পাশে আরও একটি আবাসিক প্রকল্পের পরিকল্পনা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। এ দুটি প্রকল্প হবে বেশ বড়। হাটহাজারীতে ২ হাজার একর জায়গার ওপর হবে স্যাটেলাইট সিটি। আর বায়েজিদ লিঙ্ক রোডের কাছাকাছি ৩ হাজার একর জায়গার ওপর গড়ে উঠবে আরেকটি আবাসন প্রকল্প। এরজন্য লিঙ্ক রোড থেকে এক কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক করা হবে। চউকের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস জনকণ্ঠকে বলেন, বায়েজিদ লিঙ্ক রোডের পাশের ২০ একর ভূমিতে আবাসন প্রকল্পটি হবে অল্প সময়ের মধ্যে। এ প্রকল্পটির ভূমির পরিমাণ ২০ একরের মধ্যে হওয়ায় একনেকে যেতে হবে না। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় নিজস্ব এখতিয়ারে এর অনুমোদন দিতে পারে। সাধারণত ২০ একরের বেশি ভূমি হলে একনেকের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। সে কারণে ২ হাজার একর এবং ৩ হাজার একরের হাটহাজারী স্যাটেলাইট সিটি এবং বায়েজিদ আবাসন প্রকল্পের জন্য একনেক থেকে অনুমোদন পেতে হবে। যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে নতুন আবাসন প্রকল্প হচ্ছে না, সেহেতু একনেকও এগুলোর অনুমোদন করবে বলে আমরা আশাবাদী। বড় দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নে কোন পাহাড় কাটতে হবে না বলে জানান চউকের শীর্ষ পর্যায়ের এ কর্মকর্তা। বায়েজিদ লিঙ্ক রোডের ২০ একরের আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় ৩৫৮ কোটি টাকা। এ অর্থ ব্যাংক থেকে নিতে গেলে সুদ বেশি আসবে। সে বিবেচনায় কম সুদে বিদেশ থেকে ঋণ গ্রহণের চিন্তা করছে চউক।
×